আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন
"মানুষ হইতে হবে" --- এই তার পণ,
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান,
নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ ?
হাত, পা সবারই আছে মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয় ?
সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়,
আসে যার চোখে জল মাথা ঘুরে যায় |
সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ ---
"মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন" |
কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার
সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,
হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান
তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ
--------------------------------------------------------------------------
কুসুমকুমারী দাশ একজন বাঙালি মহিলা কবি। কবির জ্যেষ্ঠ পুত্র কবি জীবনানন্দ দাশ। তার রচিত "আদর্শ ছেলে", যার প্রথম চরণ "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে", বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
কবি কুসুমকুমারী দাশ বাখরগঞ্জ জেলার বরিশাল শহরে ২১ শে পৌষ ১২৮৯ বঙ্গাব্দে এক বিদ্যানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চন্দ্রনাথ দাস এবং মাতা ধনমণি। চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় "গৈলা" গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন। কুসুমকুমারী একটি পারিবারিক পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর বালিকাদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তাঁর বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।
প্রবেশিকা শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ সালে তাঁর বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশন-এর প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাসের সঙ্গে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান। বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী যোগদান করতেন। তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই, বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঘোত্সবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমন একটি স্বাভাবিক স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন যে, শুধু মহিলাদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কর্মভার কাজ করেছেন।
তাঁর মৃত্যু হয় কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউ এর বাড়িতে।
আরো তথ্য পাওয়া যাবে এখানে