১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল আমার ঢাকাতে অধ্যয়নরত সময়। এই সময়ে আমি ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। প্রতিদিন বা প্রায়ই চলাফেরা করতে হত আমার এরকম সহপাঠি ও বন্ধুর সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ জন। এর মধ্যে তপন, রিজু, শফিক ও আক্তার গাওছিয়া মার্কেট সহ বই মেলায় ভীরের মধ্যে মেয়েদের শ্লীলতাহানি করত। তপন ও আক্তার আমাকে দুইবার ঐ ঘৃণ্য কাজে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছে। আমি ওদের ভয়ানক গালাগালি সহ ও সব পরিহার করতে বলেছি।
তাহলে এই ২০ জন যারা দেশের সবচেয়ে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা তাদের মধ্যে ৪ জন পাওয়া গেল যারা প্রচন্ড বিকৃত মানসিকতার অধিকারী কিংবা মোক্ষম সূযোগে ধর্ষণ করতে ইচ্ছুক। যার শতকরা হিসেব ২০%।
এখন কথা হলো কেন তপন, রিজু, শফিক বা আক্তার ধর্ষণাভ্যাসে আসক্ত হবে? এর পিছনে রয়েছে মূলত কিছু সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণ।
-----সামাজিক কারনঃ বেকার ছেলে তা তার বয়স ১৮+ হোক সমস্যা নেই, সে যেহেতু এখনও কর্মজীবনে প্রবেশ করেনি তাই তার মেয়ে বন্ধু থাকা উচিৎ নয়। কিছু কিছু পরিবারের এই উপলব্ধি তাদের ছেলে মেয়েদের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট করে। আইন প্রয়োগে কতৃপক্ষের ব্যর্থতাও সমানভাবে দায়ী।
-----ধর্মীয় কারনঃ মোসলমান ও আরও কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ছেলে-মেয়েদের বয়স ১০+ হলেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। এমনকি ৯ বছর বয়সে আয়েশা (রাঃ) আমাদের নবী করিম হয়রত মোহাম্মদ (সঃ) বিয়ে করেছিলেন সে কথাও আমরা জানি। এভাবেই যখন এইসব কোমলমতি শিশুদের আলাদা করে নারী হিসেবে দেখা হয় এবং বিকৃত মানসিকতার পুরুষদের চোখের আড়াল করার প্রবনতা বাড়ে তখন নব যৌবন প্রাপ্ত তরুণদের তাদের প্রতি সীমাহীন আগ্রহ দেখা যায়। দুই দিন আগেও যে বালিকা ছিল তার সহপাঠী ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে সে হয়ে ওঠে তার কাছে এক কামনার আধার, পরিপূর্ণ রমণী। কাজেই কৌতুহল ও বুভূক্ষু শরীরের যৌন কামনা থেকেই তার মধ্যে ধর্ষণাকাংখ্যা জন্মে।
-----অর্থনৈতিক কারণঃ খুব অল্প বয় থেকেই অনেক ছেলেদের পতিতালয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়। বলাবাহুল্য উপরে যে ৪ জনের নাম বললাম তাদের কাছে তাদের পতিতালয়ে যাওয়ার কাহিনীও শুনেছি। নৈতিক অবক্ষয় তাদের যখন এভাবেই শুরু হয় তখন অভ্যাসের কারণেই হোক কিংবা টাকা পয়সার টানা-টানিতেই হোক তারা সুযোগ পেলেই ধর্ষণকারী হয়ে ওঠে। এই ক্ষত্রে ১৯৯৩-৯৪ সালে তপনের জগন্নাথ হল কেন্দ্রিক একটা ঘটনার কথা বলি। আমার স্পষ্ট মনে আছে তপন আমাকে বলেছিল ওই সময়ে মিরপুর বাংলা কলেজে পড়া যে সমস্ত মেয়েরা ওর রুমে বেড়াতে আসছিল তাদের দুইজনের একজনকে তপন ওর রুমে দেয়ালে ঝুলানো ঠাকুরের মূর্তি ধরে মোসলমান হয়ে যাবে এ কথা বলে সেক্স করেছিল। আর আরেকজনকে প্রতারণামূলকভাবে শয্যাসঙ্গিনী করেছিল আরেকজন। পরে যখন তাদের মধ্যে একজন প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় তখন ঐ ক্যাডার ছেলে কাটা রাইফেল বের করে ঐ মেয়েকে ভয় দেখিয়ে আর ওমুখো হতে নিষেধ করে। আমি খুব হেসেছিলাম এইজন্য যে একটা মোসলমান মেয়েকে তপন প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছিল ঠাকুরের মূর্তি ধরে কসম কেটে। আমার ধারণা তপনের যদি পতিতাদের এফোর্ড করার মত যথেষ্ট টাকা থাকত তাহলে তপন ঐ প্রতারণার কাজ করত না। তদ্রূপ যাদের টাকা আছে এবং বিকৃত মানসিকতার অধিকারী তারা টাকা ও ক্ষমতাকে কখনো কখনো ডিরেক্টলি আবার কখনো কখনো ইন্ডিরক্টলি ধর্ষণের কাজে ব্যবহার করে।
এবার আসি আরবদের কাহিনীতে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার আরব দেশের প্রস্তাবিত একটি চাকুরীর প্রস্তাব লুফে নিয়েছে। আর তা হল আরব দেশগুলোতে গৃহ কাজের জন্য পরিচারিকার চাকুরী। কি এমন ব্যাপার ঘটলো যে শুধুমাত্র বাংলদেশই এই সূবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেল?
মূল কথা হলো- ফিলিপিন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শীলংকা, নেপাল ও ভারত আরবীয় দেশগুলোতে 'ডমেস্টিক ইউমেন টর্চারের' কারণে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল।
কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেল ঐ সমস্ত আরব দেশে এক এক জন গৃহকর্মী একই পরিবারের পিতা, পুত্র ও জামাতা দ্বারা ধর্ষিতা হয়। বাংলাদেশ যেখানে ঐ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নারীদের সন্মানার্থে ঐ সমস্ত দেশগুলোর সাথে যোগ দেবে তা না করে নারী শ্রমিক পাঠানোর জন্য চুক্তি করে বসল। ঐ সময়ে অর্থাৎ ২০১৩/১৪ সালের ঐ চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন তৎকালীন শ্রম মন্ত্রী জনাব খন্দকার মোসারফ হোসেন। বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো ঐ সময় বলতেছিল- 'বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় তদারকিতে আরব দেশগুলোতে পতিতা পাঠানোর চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করল'।
১৭ই ফেব্রুয়ারী ২০১৭
যুক্তরাজ্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭