somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চার অকর্মন্য একসাথে(হাসির গল্প)

২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব -দুই পূর্ব প্রকাশিতের পর

১ তিনজন দৌড়ে রাস্তার ওইপাড়ে চলে যেতে সক্ষম হল।আসাদ বেচারা শিংয়ের কাটার আঘাত খাওয়া পা নিয়ে বেশী দৌড়াতে পারলনা।সে বসে পড়ল মাটিতে।জনতা গোল করে তাকে ঘুরে ফেলল।যে যায হাতে যেই জিনিস ছিল সেটাকে অস্র বানিয়ে গুড়ুম গুড়ুম করে দিতে লাগল।কেও আখ খাচ্ছিল আখের ডান্ডা দিয়ে পিঠে দিল বাড়ি।কেও হাতের ছাতা রে বাকিয়ে দিল বাড়ী।

কার ও চিৎকার শোনা গেল।

সর সর তোরা ইবলিশের দল তোরা আমার পোলারে এরকম করি মারতাছস কেন ? আসল শয়তানগুলা তো চম্পট দিছে।এতো আমার পোলা।

জনতার মধ্যে একজন বলে উঠল এ আপনার পোলা হইলে দৌড় দিল কেন এইভাবে।

আসাদ এখন বাচার জন্য মরিয়া হয়ে বলল বাজান লোকগুলারে দেইখা ভয়ে দৌড় দিছি।

বয়স্ক লোকটির ভীড় ঠেলে বলল তোমরা সবাই যার যার কাজে যাও।বলে আসাদকে তুলে ধরল।

জনতার থেকে একটু দুরে এনে বলল ইস রে তুমি তো ভাল মার খাইছ দেখি কি করা যায় দরদ মাখা গলায় বলল বয়স্ক লোকটি।

পাশের মেয়েটি বলল চোরা চুরি করছে মাইর দিছে পাবলিক উচিত করছে।আমার ও ইচ্ছা করতাছে দুই ঘা বসাই।বাবা এসব চোর বাটপারগুলারে কেন তুমি বাচাও বাবা।

মারে সব অন্যায় দেখতে হয়না।এরা অন্যায় করছে অসহায় অবস্থায় পইড়া।

আসাদের চোখে পানি চলে আসল লোকটির কথা শুনে।সে লোকটির পা ধরে কাদতে লাগল। হ চাচাজান সত্যি তাই এই প্রথম বাজে কাজ করছি আমার জীবনে।ক্ষিধার চোটে আপনার জিনিস নিয়া পলায়ছিলাম।

তোমার আর বন্ধুরা কই? লোকটি জিজ্ঞাসা করল।

চাচা আমরা আসলে আপনরে খুজতেছিলাম জিনিস গুলা ফেরত দেওয়ার লাগি লজ্জায় সে ডাহা মিথ্যা কথা বলল যদি এই মূহূর্তে অনেক অনুশোচনা হচ্ছে এই ভাল মানুষটার জিনিস নেওয়ার জন্য।

বাকী তিনজনের মধ্যে একজনের কুকুরের সামনে পড়ল।কুকুর ঘেউ ঘেউ করে তারে তাড়া শুরু করল।

সে ও মাগো বাবাগো তারসাথে ঘেউ ঘেউ করতে সামনা সামনি ছুটতে লাগল ।কুকুরের তাড়া খেয়ে সে ভয়ে ভূলে গেল সে মানুষ না কুকুর।

দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে এক ছোট খাল পেল তাতে ঝাপ দিয়ে পড়ল।
কুকুরটা তখন ও খালের কিনারে দাড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করে চলেছে।ভাবখানা এরকম যে আমি তোরে পাহারা দিচ্ছি ।কতক্ষন তুই খালে থাকবি।খাল থেকে উঠলে তোরে খাইছি।

বাকী দুইজনের মধ্যে একজনে বাসে উঠে গেল ।

২ আজাদ একা একা রাস্তায় দাড়িয়ে রইল।নিজেকে একা আর অসহায় মনে হচ্ছে ।এটা কোন জায়গা তাও সে চেনেনা। প্রথম বারের চার বন্ধু চারজায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।তিনবন্ধুর জন্য তার চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করল।

অনেকক্ষন একা একা বসে রইল রেল লাইনের পাশে।সে এখন আছে বনানী রেল লাইনের পাশে।কিছুক্ষন ক্ষিধার যন্ত্রনায় পেট মোচড়ে ধরে বসে রইল।তারপর চোখের পানি মুছল পেঠে একটা থাপড় দিল বলল

কিছু একটা করতে হবে।কাজ করতে হবে।মেহনত করতে হবে।পেটের জন্য খাওয়ার জন্য পরিশ্রম করতে কাজ করতে হবে।সব ধান্ধা বাদ দিতে হবে।যদি অসহায় ওই পরিবারের জিনিস ছিনতাই না করত তবে কপালে এই দূর্ভোগ হতনা।তার বাকী বন্ধুরা কে কোথায় আছে কে জানে।লাফ দিয়ে উঠে দাড়াল।নিজেকে বেশ আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান মনে হল।তার পাশে দিয়ে ট্রেন চলে গেল।ট্রেন থেকে কেও কোন ঝোলা ছুড়ে মারল সেটা এসে সরাসরি তার মুখে আঘাত করল।চমকে সে বিকট লাফ দিল।তারপর দৌড়ে গিয়ে দেখার চেষ্টা করল কিছু আছে নাকি।প্যাকেটে যা ছিল তা দেখে মুখে হাসি ফুটল।প্রায় দুইদিন না খাওয়া মানুষের জন্য রাজভোগ ই বটে।দুইটা পুরানো কলা রুটি একটুকরা মাংস সম্ভবত সব বাসী সেজন্য ই ফেলে দেওয়া।কিন্তু তার এখন এসব দেখার সময় নাই।ক্ষুধার যন্ত্রনায় মরার চেয়ে খেয়ে মরি তার ভাবটা এরকম।

খেতে খেতে বিকট ঢেকুর ।সঙ্গে পানি নাই ।পানির খোজে এদিক ওদিক করতে করতে ছোট একটা ডোবার মত পেল ।বাধ্য হয়ে ডোবার ময়লা পানি একটু গিলে ফেলল এবং হড়হড় করে বমি করে সব ফেলে দিল ।তারপর শব্দ করে রাস্তার পাশে বসে কাদতে লাগল।পাশ দিয়ে যাচ্ছিল অফিস ফেরত এক চাকুরীজীবি।

এই কে?কে তুমি কাদতাছ কেন?লোকটি কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে।সে আরও জোরে ফুফিয়ে কেদে উঠল ।লোকটি ধরে তাকে উঠাল আহারে কি হইছে তোমার?চল চল আমার সাথে।পাশের এক ছোট তেহারী চায়ের দোকানে ঢুকল।

তুমি কি আমার সাথে খাবা বাবা?আমার ঘরের রান্নার ব্যবস্থা করিনা।এখান থেকে খাইয়া চইলা যাই।একা মানুষ।

দুইজনে একসাথে খেল ।লোকটির বাড়ীতে আপাতত আজাদের ঠাই সন্ধা মিলানোর পর একটু মাথা উপরে তুলে দেখল আরমান কুকুরটি আছে নাকি।যাক বদ কুকুরটা মনে হয় গেছে। তবু সাবধানের মার নাই। পা টিপে টিপে উঠল ।

আহ নাই।শীতে ঠক ঠক করে কাপতে লাগল।প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে পানিতে ডুবে ছিল।

হাটতে হাটতে অবসন্ন হয়ে যায়।এক পর্যায়ে বাড়ীর সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।

এখন খোজ করা যাক বাকী দুই অকর্মন্যের।আসাদ বেশ ভাল ই আছে।ওই ফ্যমিলির সাথে তাদের এক বড়লোক আত্মীয়ের বাসায় উঠল।বিয়ের বাড়ীর প্রচুর খাওয়া দাওয়া সবই হল থাকার জন্য ছোট একটা আশ্রয় হল।শুধু লোকের মেয়েটা যখন পাশ দিয়ে যায় হূহ চোরা বলে গাল দেয়।সেটা সে মুখ বুঝে সহ্য করে।আসলে সে তো চোরাই।

আকাশ একটা লোকাল বাসে লাফ দিয়ে উঠে পড়ছিল টাকা ছাড়া টিকেট ছাড়া।প্রথমে ড্রাইভার ভাড়া না পেয়ে থাপড় মারল।ড্রাইভারের মেজাজ সপ্তমের উপর চৌদ্দগুন হয়ে আছে তার চোরা কন্ডাকটার কোন ফাকে তার লুঙ্গীর কোচড় থেকে আজকের সব কামাই সতেরশটাকা নিয়ে পালাইছে।

রাগে ড্রাইভার দাতে কিড়মিড় করতে লাগল।অবশেষে আইডিয়া এটারে হেল্পার বানাই দেই।
অবশেষে আকাশের একধরনের আশ্রয় হল।এই বাসের হেল্পার।মন্দ না।কিছু একটা তো হল।
৩ চার বছর পরের কথা।আসাদ ট্রেনে করে যাচ্ছে।এই দীর্ঘ চার বছরে তারা চার বন্ধু একে অপরকে দেখেনি।কিন্তু বাইরে গেলে তাদের চোখ খুজতে থাকত।আল্লাহ একদিন অবশ্যই তার বন্ধুদের সাথে তাকে মিলিয়ে দিবেন এই বিশ্বাস তার দৃঢ়।আজ সে চারবছর বাদে তার গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছে।তার সামনে এক উলোঝুলো মার্কা লোক বসে তার কাধে হনুমান না বাদর কে জানে।লোকটার খবর নাই।সে নাক ডাকিয়ে একমনে ঘুমিয়ে যাচ্ছে।এই হনুমান এক একবার একজনকে পছন্দ করছে আর আও আও করে জিহবা বের করে ভেংচি কেটে যাচ্ছে।

আসাদের পাশে বসেছে এক দম্পতি।তাদের পাচ ছয় বছরের ছেলে চিৎকার করে কান্না শুরু করল

বাবা আমারে ভেঙায়।বাচ্চাটা বানরটারে জবাবে একটা ভেংচি কেটে দিল।বানরটা এতে মহা খুশী ।উত্তেজিত হয়ে সারা সিটে শব্দ করে মাথা দুলিয়ে সার্কাসের ভঙ্গিতে সিটের উপর থেকে নিচে গড়িয়ে নামছে।মাঝে মাঝে দুই হাতে তালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে।

ছোট বাচ্চা ছেলেটিকে শিম্পান্জী বানর টার অনেক মনে ধরেছে।বাচ্চাকে তার নিজের গোত্রের মনে হচ্ছে।নাচতে নাচতে ছেলেটকে ধরতে আসার চেষ্টা করতে ছেলের বাবা ভয় পেয়ে ব্যাগের বেল্ট দিয়ে বাড়ি দিয়ে সরিয়ে দিল।বানরটি উল্টে গিয়ে পড়ল এক লোকের কোলে।রেগে কাই হয়ে বানরের মালিকের কাছে ছুটে আসল।

এই শি্পান্জীরে কিন্তু জানালা দিয়ে ছুইড়া ফালামু।এটারে বাইন্ধা রাখেনা কেন?

কেন ভাই আমার পোলা কি করছে আপনার সঙ্গে?এতক্ষনে শিম্পান্জীর মালিক ঘুম থেকে উঠে কথা বলল।

বানরটা মাথা নাড়িয়ে ক্রমাগত ভেংচি দিয়ে যাচ্ছে।
চুপ থাক বানরের বাচ্চা ভূড়ি গালায় দিব।বানরের দিকে ভেংচি কেটে বলল।

বানরটা সিটের উপর জোরে জোরে লাফিয়ে লাফিয়ে এখন ভেংচি কাটছে।

লোকটা বানরটাকে থাপড় দিতে গিয়ে আসাদের সঙ্গে চোখাচোখি।

চার বৎসর পরে দুই বন্ধুতে দেখা।আজাদ আসাদ দুইজন দুইজনকে পাগলের মত জড়িয়ে ধরল।
নির্দিষ্ট ষ্টেশনে দুইজনে নেমে পড়ল ।সি এন জি র অপেক্ষা করতে লাগলেন।হঠাৎ দুইজনের চোখ চলে গেল সামনে সানগ্লাস পরিহিত দুইজন ব্যাক্তির দিকে।দুইজন সানগ্লাস খুলে অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আরমান আকাশ।

চার অকর্মন্য বন্ধুর মিলন হল।তবে এবার তারা আগের মতন অকর্মন্য না সবাই এখন বেশ কর্মঠ।সবাই কাজ করছে মোটামুটি।মাবাবা ভাই বোন আত্মীয়স্বজনের জন্য অনেক গিফট সহ ফিরেছে।মাবাবা সবাই অনেক খুশী।কোলে বসিয়ে সব ছেলেকে চুমু খাচ্ছে।

চার বন্ধু এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে আরেকটা ডিসিশান নিল এবার তারা আবার এস এস সি পরীক্ষা দিবে।এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পাস তারা করবেই এবং একসাথে ই করবে।

সমাপ্ত ।
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×