somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)
নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার 'কলম'।

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-৩)

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৯ মে সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম প্লাসা ম্যাগবা চত্বরে।চাইনিজ একটি প্রতিষ্ঠানের তত্বাবধানে পূর্ণগতিতে চলছে বৈশাখী মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ।বার্সেলোনা বাংলাদেশ সমিতির নেতৃবিন্দের অনেকের সাথে দেখা এবং একসাথে সকালের নাস্তা হলো একটি বেকারির দোকানে।বৈশাখের এই আয়োজন বৈশাখ মাসে না হলেও এই দিনে বার্সেলোনার প্রকৃতিতে ছিলো পূর্ণ বাংলার বৈশাখের স্বরুপ।সূর্য তেজস্ক্রিয় রূপে আকাশে অবস্থান নিয়েছে,বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে কাল বৈশাখীর গতিবেগে।মাঠে স্থাপিত ষ্টলগুলো প্রবল বাতাসের তোড়ে একবার উল্টে গেলো।স্বেচ্ছাসেবকের দল বিরক্ত না হয়ে আবার স্টলগুলোক পুন-স্থাপনের কাজে লেগেগেলেন। কারন প্রবাসের বৈশাখী আয়োজনে এটা যেন প্রকৃতির এক বাড়তি উপহার।


কাব্য কামরুল দম্পতি ও হাসনাত জাহান আপা রয়েছেন এখানকার দুটি বাঙ্গালী পরিবারের সঙ্গে।ভেবেছিলাম ওনারা হয়তো সকালে এই মেলার স্থলে চলে আসবেন।পরে এক সাথে ঘুরতে বের হওয়া যাবে।অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম ওনাদের জন্য।উজ্জ্বল ভাই মেলার মাঠ প্রস্তুতের সহযোগীতায় ব্যস্ত ,সেও ওনাদের সম্পর্কে কিছু বলতে পারলোনা।হাসনাত আপা মুঠোফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করেননা ,আর কাব্য কামরুলের সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব হলোনা,তাছাড়া কাব্য কামরুল বিকেলে বৈশাখী মঞ্চে পূঁথি পাঠ করবেন সে জন্য তার প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে।তাই তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবেনা ভেবে উজ্জ্বল ভাইকে বলে একাই ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়লাম অচেনা বার্সেলোনার পথে।প্লাসা ম্যাগবা থেকে প্লাস দো কাতালোনিয়া পর্যন্ত আমার আয়ত্বের মধ্য,তাই প্লাস দো কাতালোনিয়া এসে সিদ্ধান্ত নিলাম এখান থেকে যে বড় সরণিগুলো বিভিন্ন দিকে বেরিয়ে গিয়েছে এর যে কোন একটি সরণি ধরে যত দূর ইচ্ছে হেঁটে শহর দেখতে দেখতে অজানা একটি স্থানে গিয়ে পৌঁছুবো। একটি সরণির দিকে তাকিয়ে রাস্তার দু ধারের স্থাপনার শেষ সীমান্তে চোখে ধরা পড়লো অরণ্যে-ঘেরা সুউচ্চ পাহাড়।এই সরণি ধরে কিছু পথ হাটার পর পাহাড়টির দিকে তাকিয়ে মনে হলো এর চূড়ায় একটি খ্রীষ্ট ধর্মীয় গীর্জা রয়েছে।গীর্জাটিকে লক্ষ্য করে হাঁটা শুরু করলাম।হাঁটতে হাঁটতে কোন এক পর্যায়ে অনুমান করে সংক্ষিপ্ত পথ খুজে বের করতে গিয়ে মূল পথটিই হারিয়ে ফেললাম।আর ইচ্ছে হলোনা লক্ষ্য স্থলের দিকে ছুটতে।তাই এলোমেলো ভাবে হাঁটতে শুরু করলাম।প্রথম দিনের আগমন ও ঘোরাঘুরির পর বার্সেলোনা সম্পর্কে যে ধারনা তৈরী হয়ছিলো তা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করলো।এলোমেলো হেটে আমি বার্সেলোনার যে এলাকায় চলে এসেছি সেটি নতুনরূপে পরিকল্পিত ভাবে নগরায়ন করা হয়েছে।বৃক্ষে শোভিত সড়কগুলোর দু ধার দিয়ে গড়ে উঠেছে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর উচ্চতর ভবন।রাস্তার মাঝে কোথাও কোথাও ছোট আকারের শিশুদের খেলাধুলার পার্ক।এই শহরে কোন পথচারী যেন সুপেয় পানির কষ্ট না পায় সে কথা ভেবেই যেন শহরের আনাচে কানাচে তৈরী করে রাখা হয়েছে পানির কল।তবে বার্সেলোনার পানির কলগুলোর একটি বিশেষত্ব রয়েছে,তা হলো প্রতিটি কলের উপরে বসানো রয়েছে বিশেষ কোন ব্যক্তিত্বের ভাস্কর্য,সাথে তার জীবন বৃত্তান্তের টীকা আকারে ছোট্ট বিবরণী,আবার অনেক ভাস্কর্য শুধুই দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম মাত্র।










রৌদ্রজ্জ্বল দিনে বার্সেলোনার তপ্ত পথে হাঁটতে হাঁটতে একটু শীতল ছায়ার খোঁজে ঢুকে পড়লাম একটি উঁচু গলির পথ ধরে একটা আবাসিক এলাকার মধ্যে।কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটি পাহাড়ের সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লাম,পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে মাঝারি বাউন্ডারি ওয়ালের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে সরু রাস্তা।সরু রাস্তা দিয়ে একটু হাঁটতেই দেখলাম একটি লোহার গেটের সামনে সাইনবোর্ডে কাতালান ভাষায় লেখা JARDIN DEL TURO DEL PUTGET , বুঝলাম এটি একট পাহাড়ী বাগান।জনমানবশূন্য বাগানটির প্রবেশ পথ উন্মুক্ত দেখে কিছুটা ভীতি নিয়েই ডুকে পড়লাম। বৃক্ষরাজী, বুনো ফুল এবং তৃনলতায় ঢাকা জংলা পাহাড়ের কোল ঘেঁসে বেয়ে উঠে গিয়েছে সরু পিচ ডালা পথ।সেই পথ ধরেই ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকলাম। পাহাড়ী এই বাগানের প্রথম ধাপে তৈরি করে রাখা হয়েছে শিশুদের জন্য ছোট আকারের পার্ক,কিছু শিশু কিশোর সেখানে গাছের ছায়ায় আপন মনে খেলছে।এই বেয়ে চলা রাস্তার পাশে মাঝে মাঝে কিছুটা সমভূমি করে বসার জায়গা তৈরী করে রাখা হয়েছে ,কিছু মানুষ ঝোপ ঝাড়ে ঘেরা এই স্থানগুলোতে বসে নিরবে বই পড়ছে ,গল্পগুজব করছে।অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে আমি পুগে পাহাড়ী বাগানটির সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে অভিভূত হলাম।মনে হলো সমস্ত বার্সেলোনা শহর যেন আমার চোখের সামনে।এক দিকে তাকালে মনে হচ্ছে সমতল ভূমির উপর দিয়ে গড়ে ওঠা ইট পাথরের অট্টালিকাগুলো মিশে গিয়েছে ভূমধ্যসাগরের নীলচে জলের সঙ্গে।।অন্য পাশে পাহাড়ী উচু নিচু ভূমিতে গড়ে উঠেছে বিশাল আবাসিক এলাকা ,কোথাও কোথাও গভীর কুঁজকাননে ঘেরা পাহাড়ের মধ্যদিয়ে উঁকি দিচ্ছে কিছু দৃষ্টি নন্দন স্থাপত্যশৈলীর বাড়ীঘর।আমাদের বার্সেলোনা ভ্রমনের অন্যতম আকর্ষন ছাগরেদা ফামিলা পরিদর্শন।কিন্তু পরিদর্শনের আগেই এই পাহাড়চূড়া থেকেই আবিষ্কার করলাম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন এবং বার্সেলোনার অন্যতম পর্যটন আকর্ষন ছাগরেদা ফামিলা,এর কিছুটা দুরত্বে এই শহরের সমস্ত স্থাপনার উচ্চতা ভেদ করে দাড়িয়ে আছে সাগরের নীলচে রঙে অনেকটা ক্ষেপনাস্ত্র সদৃশ তোর আকবার (Torre Agber) ভবনটি।পাহাড়ের উপর স্থাপিত যে গীর্জাটি ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা নিয়ে বার্সেলোনার অচেনা পথে পা বাড়িয়ে এলোমেলো পথ হেঁটে এই পাহাড়ী বাগানের চূড়ায় উঠেছি সেই তেমপল দো ছাগরা(Temple de Sagrat) গীর্জাটিরও দেখা মিললো এখান থেকে।এমন নির্জন নৈসর্গিক পরিবেশের সাক্ষী হবার জন্য নিজের ছবি তোলার ইচ্ছে হলো।বিশাল আকৃতির একটি কুকুর সঙ্গী করে চূড়ার এক পাশে বসে গল্প করছে স্থানীয় দুই কাতালান তরুনী,ওদের কাছে গিয়ে ইংরেজীতে অনুরোধ করলাম আমার কিছু ছবি তুলে দেওয়ার।খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে নয়নাভিরাম বার্সেলোনা শহরকে সাথে রেখে ওরা দুজন মিলে বেশ কিছু ছবি তুলে দিলো।






























বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-১)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-২)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

https://www.facebook.com/muhammad.g.morshed
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×