somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ২"

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওহহো, বলাই তো হয়নি দুই বান্ধবী দেখতে কে কেমন। তনু, লম্বা, ছিপছিপে গায়ের গড়ন। ফর্সা একটা গোলগাল মুখ, চোখ দুটো হরিণীর মত, কাজল কালো, একটা শান্ত দৃষ্টির মাঝে হঠাৎ হঠাৎ দুষ্টুমির ঝিলিক। মাথার ঘন কালো সোজা চুলগুলো পিঠে পড়েছে। দেখলেই মনে হবে একদম খাঁটি বাঙালী কিশোরী। কথা বলে আস্তে আস্তে। ঠিক যেন রবি ঠাকুরের নায়িকা।
আর মিতু শ্যাম বর্ণের , চেহারায় একটা কাটা কাটা ভাব, কপালের সামনে চুলগুলো কাটা থাকে সবসময়। মাথার চুলগুলো হালকা কোঁকড়া, কাঁধের একটু নিচে চুলগুলো অবাধ্য সাপের মত থাকে সারাদিন। চোখ দিয়েই হাজারো কথা বলতে পারে মিতু। কথা বলার সময় ওর চোখের দিকে তাকালে মনে হবে যেন আপনিও ও যা বলছে তাই দেখছেন ওর চোখের মাঝে। একটু মোটু টাইপের গায়ের গড়ন ওর। কিন্তু ওর গতি আর সবার থেকে বেশি। কেউ ধরতেই পারে না যেন।
নাইনের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে। একটুও অন্যকিছু ভাবার সময় নেই। তনু নিয়ম করে ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে বাসায় বসে পড়ে। আর মিতু ক্লাশ, কোচিং সব দাপিয়ে রাতে বাসায় এসে ঘুম দেয়। আর যেই দুয়েকদিন তনুর সাথে দেখা হয় না, সেইসব দিনে তনুকে ফোন ল্যাণ্ডলাইনে ফোন দিয়ে ইচ্ছামত বকে। আর সারাদিনের বর্ণনা দেয়। কি কি করল, আজ রাস্তায় কোন ছেলে ওকে দেখে কি বলেছে, স্কুলের সামনে কোন মেয়ে কার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলেছে এমন হাজারো কথা।
মিতুর স্বভাব ছিলো বান্ধবীদের প্রেমের সমস্যার সমাধান দেওয়া। ঐ মেয়ে এক ছেলের প্রেমে পড়েছে, কিন্তু বলতে পারছে না, কি হবে?? মিতুর কাছে সবাই হাজির। মিতুও জ্ঞানী ভংগিতে সমাধান দিয়ে দিবে কিছু একটা। বান্ধবীরা মিলে ওর একটা নাম ও দিয়েছে। মিস রোমান্টিক। ওর রোমান্টিসিজমের পাল্লায় পড়েনি এমন একটাও মেয়ে নেই ক্লাশে। সারাদিন উপন্যাস, গান, মুভির বুলি আউড়ে যায় কল্পলোকের এই নন্দিনী।
তনু হাসে শুধু। প্রেমের ধারে কাছেও সে নেই। তবে মিতুও কম যায় না।সারাটাদিন নিজের স্বপ্নের জগতে তনুকে টানতে থাকে। একটা রাজপু্ত্র আসবে, ঘোড়ায় চড়ে, চারপাশে তখন শুধুই গান বাজবে । সেই রাজপুত্রের হাত ধরে স্বপ্নের রাজ্যে চলে যাবে মিতু। মিতুর হাজারো এমন স্বপ্নের কথা সারাটাদিন শুনতে থাকে তনু। এমনি করে কখন জানি মিতুর জগৎ টা তনুরও আপন লাগতে শুরু করে। শুরু হয় দুই বান্ধবীর একই স্বপ্নে বিভোর হওয়া দিনরাত্রি। দেখাই যাক না কতদূর এগোয় তারা এই রঙিন চশমা পরে!!
ক্লাশ টেনে উঠে দুইজনই খুব খুশি। মনে হচ্ছে ওরা কত্ত বড় হয়ে গেছে। আর কিছুদিন পড়েই স্কুল শেষ হয়ে যাবে। মিতু রোজ কোচিং এ চোখে কাজল টেনে , কানে নিজের জামার সাথে ম্যাচিং টপ পড়ে সেজে আসে বড় হওয়ার চেষ্টায়। ও একদিন না সেজে আসলেই সবাই জিজ্ঞেস করে,"কি রে আজ তোর শরীর খারাপ?" কোচিং এর অন্য মেয়েদের মায়েরাও এখন এই কথাই জিজ্ঞেস করে। ব্যাপারটা এমন , মিতু মানেই যেন কাজলে কালো করা দুটি চোখ।
আফতাব স্যারের সামনে পড়তে বসলেই তনুর কেমন জানি অস্বস্তি হয়। মাথা নিচু করলেই মনে হয় স্যার তনুর দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে। আফতাব স্যার তনুকে বাসায় পড়াতে আসে। খুব ভালো ছাত্র , থাকে ওদের পাড়াতেই। ভদ্র ছেলে, মাথা নিচু করে পড়ায় যতক্ষণ তনু বুঝে। যখনই তনু মাথা নিচু করে তখনই ওর মনে হয় আফতাব স্যার ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। তনু বরাবরই মাথায় কাপড় দিয়ে পড়তে যায় উনার সামনে। তাও ওর মনে হয় কেন জানি স্যার ওকে একদৃষ্টিতে দেখে। ব্যাপারটা ভালো না খারাপ, তনু বুঝেনা। এমনিতে ওর স্যারকে ভালোই লাগে। ছোটোখাটো মানুষ, ফর্সা গায়ের রং, হাসিটা নিষ্পাপ, বাচ্চাদের মত। মিতুকে বলতে গিয়েও কেনো জানি স্যারের কথাটা বলতে পারেনা।
আজও তনু আফতাব স্যারের সামনে পড়তে বসেছে। আজ স্যারকে কেমন জানি অন্যমনস্ক লাগলো। কেমন জানি অস্হির একটা ভাব। বেশি পড়ালেন না আজকে উনি। ম্যাথ বইয়ে পড়া দাগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। পড়া শেষ করে তনু ম্যাথ বই খুলল। খুলেই তনুর মাথায় বাজ পড়ল। বইয়ের ভাঁজে একটা চিঠি। স্যার ওকে চিঠি দিয়েছে। ওর বুকের ভিতর হার্ট টা যেন ভয়ানক গতিতে লাফিয়ে বের হয়ে যেতে চাইছে। মাথা ঘুরাচ্ছে। ভয় লাগছে ওর, বিছানায় বসে পড়ল ও তাল সামলাতে না পেরে। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ওর। অনেক সাহস করে চিঠিটা খুললো ও।

**পাঠক, রাতে লিখতে বসি তো তাই বেশি লিখতে চাইলেও লেখা হয় না। ঘুম আস। তারউপর সকালবেলার ক্লাশের ধকল। তবে নিয়মিত লিখব কথা দিলাম। না লিখলে বুঝবেন নেটওয়ার্কের বাইরে। **
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×