একটা জিনিস বুঝতে হবে, গণমানুষের ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য জালিমদের উৎখাত করার যে আন্দোলন সেটা আর কমিউনিস্ট আন্দোলন এক না। কমিউনিজম আবার ভিন্ন জিনিস। কমিউনিজম ইসলামের শুরু থেকে ছিল। এটা কাল মার্কস আবিষ্কার করেননি। কমিউনিজমের সঙ্গে ইসলামের বড় কোনো অমিল নেই। ইসলাম রক্ত মানে না, বর্ণ মানে না, গোত্র মানে না, জাতীয়তাবাদ মানে না। সুতরাং ইসলামের চেয়ে বড় সাম্যবাদী দর্শন পৃথিবীতে আর নেই। ইসলাম কেন কমিউনিজমকে ভয় পাবে? বরং নাস্তিকতা মূলত কমিউনিজমের সর্বনাশ ঘটিয়েছে। নাস্তিকরা আধ্যাত্মিক শক্তিতে বিশ্বাস করে না। রুহানি শক্তিতে বিশ্বাস করে না। আর সে জন্য সারা পৃথিবীতে নাস্তিকদের পতন হয়েছে।
লিখনী : ১৯৭২ সালে গৃহীত সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা মূলনীতি হিসেবে স্থান পেয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আগে কোনো আন্দোলন, সংগ্রাম বা ইশতেহারে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গ আলোচিত হয়নি। এ ছাড়া সংবিধান প্রসঙ্গে জনগণের কোনো রায় নেয়া হয়নি। তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে কীভাবে এলো, কেন এলো?
ফরহাদ মজহার : মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে ১০ এপ্রিল। এ ঘোষণায় বলা হয়, আমরা একটি সংবিধান সভা গঠন করবো। যদিও জনগণ তাদের পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নে ভোট দিয়েছে, তবুও ধরে নেয়া হলো তারা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধি। সে সময় তারা স্থির করলো ৩টি নীতির ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে। তা হলোঃ এক. সাম্য, দুই. মানবিক মর্যাদা ও তিন. সামাজিক ন্যায় বিচার বা ইনসাফ। এর মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে গেলে মূলত এ তিনটিই। কিন্তু এটাকে নস্যাৎ করে দিয়ে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে একটা সংবিধান প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর এ সংবিধান প্রণয়নে স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণকে সুযোগ দেয়া হয়নি। পাকিস্তান সংসদের জন্য নির্বাচিতরাই বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য নির্বাচিত ছিলেন না। এ ছাড়াও সংবিধান ইস্যুতে তারা দেশের মানুষের কোনো রায় নেননি। এর মাধ্যমে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মানুষকে সংবিধান প্রণয়নের অধিকার থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। ৪২ বছর ধরে এ বঞ্চনার ইতিহাস চলছে, জনগণ এখনও এ বঞ্চনা বয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রকৃতভাবে এ সংবিধানকে জনগণের সংবিধান করতে হলে সরকারকে সংবিধান সভা আহ্বান করতে হবে। আর সেই সংবিধান সভাতেই ঠিক হবে জনগণ আসলে কী চায়। সেখানে উত্থাপন করা হবে যে ৩টি নীতিতে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সেগুলো এবং জনগণকে সুযোগ দিয়ে বলতে হবে এখন তারা কী চায়। এটাই জনগণের নতুন সংবিধান প্রণয়নের একমাত্র সমাধান।
আরেকটা সমাধান হতে পারে, তা হলো জনগণ গণজাগরণের মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতাগ্রহণ করবে এবং তারা নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করবে। আর সেটাই হবে দেশের প্রকৃত সংবিধান। এটা আগামী দিনে ঘটতে পারে।
লিখনী : বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধন করে মূলনীতি ও কাঠামো নির্ধারণ করেছে এবং বলেছে এই মূলনীতি ও কাঠামো পরিবর্তন করা যাবে না। যদি কেউ করে তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্ত হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- হতে পারে...
ফরহাদ মজহার : আমি এটা দেখেছি এবং আশ্চর্য হয়েছি। পৃথিবীতে এমন বহু মূলনীতি হয়েছে। পাকিস্তানও মূলনীতি করেছিলো। সেই মূলনীতিটি কি টিকেছে? টেকেনি। সুতরাং এই মূলনীতিও টিকবে না। এসব তো রাজনৈতিক ইস্যু। এসবের সমাধানও হতে হবে রাজনৈতিকভাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সংসদে বসে সংবিধান সংশোধন করে সব কিছুর সমাধান করা যাবে না। পুলিশকে দিয়ে গুলি করে সব কিছুর সমাধান করা যাবে না।
...
এখন ইসলাম নিয়ে কথা বললে, ইসলামি পোশাক-পরিচ্ছদ পড়লে রাজাকার বলা হয়। কেন? আমরা তো ঐতিহাসিককাল থেকে ধার্মিক। ধর্ম আমাদের রক্তে-মাংসে মিশে আছে। ধর্ম আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। আমাদের কথাবার্তায় আরবি, ফার্সি শব্দের প্রয়োগ হয়। এটা তো দোষণীয় কিছু নয়। আমরা জন্মের পর মুসলিম ঐতিহ্যে বেড়ে উঠেছি।
বিস্তারিত

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




