somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অবনি মণি
অনেক বছর হলো ; তবুও নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো নির্জন নিস্তব্ধ মৌন পাহাড়ের মতোই একা পড়ে আছি আজও। একাই আছি এই দীর্ঘশ্বাসের মতো! তোমারও কি শুধু দীর্ঘশ্বাস,গ্রীলে বিষন্ন গোধূলী?

হিস্টিরিয়া?? "ভয় নয় ; সচেতন হোন সুস্থ থাকুন "

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেশ কয়েক বছর আগে শুনেছিলাম জোলেখা (ছদ্মনাম) নামের ১৪/১৫ বছরের মেয়েটি ৪০ বছর বয়সী স্বামীর ঘরে আসার পর তার একটা রোগ হয়েছে। স্বামীর পরিবারের ধারণা জোলেখা মৃগী রোগী অথবা ভান ধরেছে। আমি যতদূর শুনেছিলাম যে ; যখন মেয়েটা কোনো অপরাধ করে কিংবা ভুল কোনোকিছু করে ফেলে ঠিক তখনই সে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায় । এ অবস্থায় তাকে কখনো হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল কীনা ঠিক মনে নেই। কিন্তু এই মেয়েটির সাথে একই ঘটনা বার বার ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু তার শারিরীক কোনো ক্ষতি হয়নি। তার ভুল এবং অপরাধ কর্মের জন্য সংসার ভাঙ্গার উপক্রম ।যতদূর মনে হয় মেয়েটির স্বামী বিদেশে থাকতেন। স্বামী যখন একেবারে দেশে চলে আসেন তখন তার এই সমস্যা আর কখনো হয়নি। সে এখন পুরোপুরি ভালো। হাফ প্যান্ট পরা মেয়েটি বাবার ঘরে থাকতে যেখানে টইটই ঘুরে বেড়িয়েছে,যা খুশি তাই করে গেছে সেখানে স্বামীর ঘরে এসে এক ঘরে বন্দি জীবন যাপন ; যার তার সাথে কথা বলতে না পারা ,যেখানে সেখানে যেতে না পারা, কাছে থেকে স্বামীর ভালোবাসা না পাওয়ায় মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়ে তার এই সমস্যা দেখা দিয়েছে । এটা কোনো শারিরীক রোগ ছিলনা । কিংবা সে যে মৃগী রোগী না সেটা ঐ পরিবারকে বিশ্বাস করানো যে কারো পক্ষে অনেক কঠিন ছিল। সবচেয়ে বেশী জোলেখাকে যা ফেস করতে হয়েছে কেউই তার ভুল গুলোকে ভুল হিসেবে দেখছেনা । তার পাশে এমন একজন মানুষও ছিলনা যে কিনা তাকে সাপোর্ট করছে। প্রতিটা পদে পদে তাকে অপদস্ত হতে হচ্ছে। এই পরিবারের কেউই তাকে ভালোবাসছেনা ।এদিকে তার স্বামী বিদেশে থাকাতে সে তাকে তার সমস্যাগুলো সঠিক ভাবে বলতেও পারছেনা। মনের কথাগুলো খুলে বলার মতো একজন মানুষও তার পাশে ছিলনা তখন।

যাইহোক সবার আগে মৃগী রোগের লক্ষণগুলো দেখে নেই । এই রোগ সাধারণত কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে ৷ এসময় রোগীর আচরণে পরিবর্তন আসে। ফিট বা খিঁচুনি হবার পূর্বে রোগী বুঝতে পারে। রোগী জ্ঞান হারায় ও মাটিতে পড়ে যায় ৷ সবগুলো মাংশ পেশী টান টান হয়ে যায় তখন কান্নার মত চিত্কার করে এবং রোগী নীল বর্ণ হতে পারে ৷ সাধারণত ২০-৩০ সেকেন্ড রোগীর এ অবস্থা স্থায়ী হয় ৷ ঝাঁকুনির মত খিঁচুনি শুরু হয় ৷ মুখ দিয়ে ফেনা বের হয় ৷ রোগী জিহ্বা কামড় দিয়ে রাখতে পারে ৷ রোগীর অজান্তেই প্রস্রাব, পায়খানা বেরিয়ে আসতে পারে ৷ রোগীর এ অবস্থা প্রায় ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় ৷ রোগীর শরীর আস্তে আস্তে শীথিল হয়ে আসে ৷ রোগী মুর্ছিত অবস্থায় থাকে ও আস্তে আস্তে গভীরঘুমে ঘুমিযে যায় ৷ রোগী জেগে উঠার পর কিছু সময়ের জন্য সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না এবং কি ঘটেছে সে ব্যাপারে কিছুই মনে করতে পারে না ৷ মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করে ৷

অতএব যেকোনো অজ্ঞান জনীত রোগকে মৃগী রোগ মনে করাটা ভুল। এই রোগের চিকিৎসা আছে। কাউন্সেলিং এ এই রোগ ভালো হয়না। যাইহোক ; উপরে উল্লোখিত জোলেখার মতো এমন শত শত মেয়ে আছে যারা কারণে অকারণে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়।আবার নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। যখনই তাদের মনের বিরুদ্ধে কোনো কিছু চলে তখন হয় অথবা সে যখন তার মনের গভীরের কিছু কথা না পারছে কাউকে শেয়ার করতে না পারছে সহ্য করতে এমন সময় সে ইচ্ছাকৃত ভাবে অজ্ঞান হয়ে যাবার ভান করে। অনেক সময় এমন হয় যে সে ভুলে এমন কোনো অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়ে গেছে যে ; যা তার পরিবার কিংবা সমাজ কোনো জায়গাতেই গ্রহনযোগ্য হবেনা । এই অপরাধের জন্য তার পরিবার থেকে হয়তো সারাজীবনের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে , কিংবা সারাজীবন তাকে নীচু হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। এসব চিন্তা ভাবনা থেকেই এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে । এটাকে একেবারেই অবহেলা করা যাবেনা আবার এমন ভাবে পাত্তা দেয়া যাবেনা যে রোগী বুঝতে পারে এই ভাবে সে সবার কাছ থেকে সহানুভূতি নিতে পারবে ।

এটা একটা মনস্তাত্তিক রোগ । অনেক মেয়েরা এক সাথে মানে গণহারেও এ রোগের সম্মুখীন হতে পারে । যেমন একটা জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয় গত ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ফরিদপুরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রী স্কুল চলাকালীন হঠাৎ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয় । অসুস্থ শিক্ষার্থীদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । চিকিৎসকরা বলছেন, খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকে তারা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন । যদিও অসুস্থদের দাবি ,একই খাবার বা বিশেষ কোনও খাবার আক্রান্ত সব শিক্ষার্থী একসঙ্গে গ্রহণ করেননি। আক্রান্তরা জানান, তারা মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, অস্থিরতাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

গত ১৮ জুলাই ২০১৬ ইং তারিখে একটি পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ ছাত্রী গত ৭ মে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, সকাল ৮টায় অ্যাসেম্বলি শেষে ছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষে চলে যায়। কয়েকটি ক্লাস হওয়ার পর একে একে এসব শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে ওরা সুস্থ হয়ে ওঠে। আবার ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজপানুয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ১০ জন ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অজ্ঞান অবস্থায় ছাত্রীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের মতে এটি একটি গণমনস্তাত্তিক রোগ (ম্যাস সাইকোলজিক্যাল ডিজিজ) । সাধারণত মেয়েরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে একজন থেকে আরেক জনে এ রোগ ছড়ায় । তবে হাসপাতালে আসার পর স্যালাইন ও অক্সিজেন দিলে তারা সুস্থ হয়ে ওঠে ।এ রোগে মৃত্যুর কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, শিল্প প্রতিষ্ঠানেও নারী শ্রমিকদের হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায় । গত ১৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় গণহিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০ নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় মেয়েদের হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার খবর মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। প্রাথমিকভাবে এটাকে ‘অজ্ঞাত’ রোগ বলা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটি ‘হিস্টিরিয়া রোগ’। এটাকে সাধারণভাবে নারীমনের রোগ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। দেহের অসুখ হলে নানা উপসর্গ দেখা দেয় এবং দেহ কষ্ট পায়। মনের অসুখ হলেও শরীরের ওপর প্রভাব পড়ে। হিস্টিরিয়া তেমনি একটি মানসিক রোগ। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বয়ঃসন্ধিকালে সমস্যা বেশি হয়। হিস্টিরিয়ার সঙ্গে বিষন্নতা, উৎকণ্ঠা, ব্যক্তিত্বের বিকার প্রভৃতি মানসিক রোগ থাকতে পারে।

হিস্টিরিয়া বলতে সাধারণ অর্থে বোঝায় নিয়ন্ত্রণহীন আবেগের আধিক্য। অবচেতন মনের অবদমিত মানসিক দ্বন্দ থেকে হিস্টিরিয়ার সৃষ্টি। একে বলা হয় ‘কনভারসন ডিজঅর্ডার’ বা ‘কনভারসন ডিসোসিয়েটিভ ডিজঅর্ডার’। হিস্টিরিয়ার সঙ্গে কোনো না কোনো ধরনের চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপার সম্পর্কিত। এই চাওয়া-পাওয়াগুলোর সঙ্গে যে বাস্তবের সম্পর্ক থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই, কাল্পনিকও হতে পারে। এই চাওয়া-পাওয়াগুলো বাস্তবিক বা কাল্পনিক যাই হোক না কেন ভুক্তভোগী কিন্তু সত্যিকার অর্থে নিজেই বুঝতে পারে না তার সমস্যাটি কী। এই হিস্টিরিয়ায় ভুক্তভোগীদের সম্বন্ধে এখনো আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত ধারণা বিদ্যমান। যেমন অনেকেই বলেন, অভিনয় করছে, জিন-ভূতে ধরেছে অথবা বাতাস লেগেছে। এটি একটি মানসিক সমস্যা, ইংরেজিতে বলা হয় Mass psychogenic illness। এটাকে আমরা গণ মনোদৈহিক রোগ বলতে পারি। এটা একটি হিউম্যান নেচার। আমরা এটাকে একধরনের অসুস্থতা হিসেবে দেখলেও একে অসুস্থতা বলা যাবে না। কারণ, এরা কেউ অসুস্থ নন,তারা সবাই সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এবং এটাও না যে এদের মানসিক অবস্থা খুব ভঙ্গুর প্রকৃতির কিংবা দুর্বল মনের অধিকারী।তবে এই সমস্যা হওয়ার কারণ আমাদের ব্রেইন এভাবেই তৈরি হয়ে থাকে। যখন আরেকজন মানুষের কোনও সমস্যা তৈরি হয় তখন সেটা আরেকজন ফলো করে। যার মূলে রয়েছে আমাদের মিরর ইমপ্যাথি নেটওয়ার্ক। যার জন্যে দুঃখের সিনেমা দেখে আমরা কষ্ট পাই। যে কোনও মানসিক চাপের কারণে প্রথম একজনের হয়েছে এবং তার কিছু শারিরীক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর ওই উপসর্গ গুলো যারা দেখেছেন তারাও তার প্রতি সহানুভুতিশীল হয়েছেন আর এভাবেই এটা ছড়িয়েছে। আর এটা হয়, যাদের ভিতরে মানবিক গুণাবলি বেশি, অন্যের জন্য দরদ বেশি তাদেরই। এসব ঘটনায় ভয়ের কিছু নাই, এটা খুবই সাধারণ ঘটনা। পৃথিবীর নানা দেশে এরকম হয়ে থাকে। অতীতে আরও বেশি ঘটেছে, বর্তমান সময়ে মানুষের ভেতরে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়াতে এগুলো এখন কম হচ্ছে।

হিস্টিরিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে জর্জ টেলর নামের একজন চিকিৎসক ১৮৫৯ সালে দাবি করেন, প্রতি চারজনে একজন নারী হিস্টিরিয়ার রোগী। সাধারণত ভয়, দুশ্চিন্তা, হতাশা, মানসিক চাপ, মানসিক আঘাত, দীর্ঘদিন যাবৎ অসুখে ভোগা, মৃত্যুশোক বা প্রেমে প্রত্যাখ্যান থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। জন বেয়ার্ড নামের আরেকজন চিকিৎসক হিস্টিরিয়ার লক্ষণ হিসেবে ৭৫টি সম্ভাব্য লক্ষণের তালিকা করেন এবং শেষে লেখেন যে তার তালিকা এখনো অসম্পূর্ণ। তারপরও প্রচলিত যেসব লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় তা হলো- ঘুম ঘুম ভাব, হতাশা, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট (যদিও কিছুক্ষণ পর তা ভালো হয়ে যায়) মাথাব্যথা, হাত-পা ব্যথা, দাঁত খিচ দিয়ে রাখা, গলায় কিছু আটকে গেছে এমন বলা, কোনো কারণ ছাড়াই অট্টহাসি দেয়া বা কান্না করা। সর্বোপরি হিস্টিরিয়ার ভুক্তভোগীরা আদর ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়ে যায় এবং অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে।

আগে হিস্টিরিয়ার সঙ্গে খিঁচুনি রোগকে কে গুলিয়ে ফেলত মানুষ। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে এ দু’টির মাঝে পার্থক্য করা সম্ভব। খিঁচুনির রোগীরা সত্যিকারে অজ্ঞান হলেও এরা হয় না। এরা দাঁত দিয়ে জিহ্বা কাটে না, ব্যথা দিলে তা অনুভব করে, শ্বাসকষ্ট নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়। এর কোনোটিই খিঁচুনি রোগের ক্ষেত্রে ঘটে না। হিস্টিরিয়া আক্রান্তের আরো কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন- কখনো শরীরের কোনো অংশ বা পুরো শরীরই অবশ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। কথা বলতে না পারা, ঢোক গিলতে না পারা বা প্রস্রাব আটকে যাওয়ার মতো মনে হওয়া। কখনো চোখে না দেখা বা কানে শুনতে না পারার লক্ষণ থাকে। হাত-পায়ের অস্বাভাবিক নড়াচড়া, বারবার চোখের পলক পড়া, জোর করে চোখ বন্ধ করে রাখা, ঘাড় বাঁকা করে থাকা এবং বমি করা বা বারবার বমির চেষ্টা করা এসব লক্ষণ থাকতে পারে। অনেক সময় রোগী হাত নাড়াতে নাড়াতে দেহকে ঝাঁকুনি দিয়ে হাঁটে। এর প্রতিকারে বড় বিষয় হলো গভীর পর্যবেক্ষণ।

রোগের লক্ষণকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও অহেতুক বাড়াবাড়ি করা যাবে না। তার চারপাশে ভিড় করা, হাত-পায়ে তেল মালিশ করা, মাথায় বালতি বালতি পানি ঢালা চলবে না। রোগের লক্ষণগুলো কোনো প্রকৃত শারীরিক কারণে হচ্ছে কিনা, জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পরীক্ষা করাতে হবে। রোগীর অবচেতন মনের দ্বন্দ দূর করতে কাউন্সেলিং, পারিবারিক সাইকোথেরাপি ও গ্রুপ সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। হিস্টিরিয়ার সঙ্গে উৎকণ্ঠা বা বিষন্নতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ দেয়া যেতে পারে। ফকির, কবিরাজ, ওঝা দিয়ে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে হাজার হাজার নারী। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘গণহিস্টিরিয়া’ বা ‘ম্যাস সাইকোলজিক্যাল হিস্টিরিয়া’ একটি মামুলি সমস্যা। যেকোনো ধরনের টেনশন, ভয় ইত্যাদির মতো মানসিক সমস্যা থেকে এটা শারীরিক সমস্যায় পরিণত হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে, এ ধরনের সমস্যায় আতঙ্ক যেন ছড়িয়ে না পড়ে। কোনো ধরনের ওষুধে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন কাউন্সিলিং । আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে বা শহরে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন কুসংস্কার, অপবিশ্বাস, অন্ধকারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তারা এ অসুখের সঠিক চিকিৎসা করায় না। তারা ঝাড়ফুঁক করায়। এ ধরনের অপচিকিৎসা করার ফলে সময়ের বিলম্ব হয় এবং রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। অপর দিকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞানসম্মত সুচিকিৎসার মাধ্যমে রোগী আবার সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশা পাশাপাশি পরিবারের সদস্য কিংবা খুব কাছের বন্ধু-বান্ধবও ভালো কাউন্সেলিং করতে পারেন রোগীকে। রোগীর সাথে খোলামেলা আলাপ করে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে ,মানসিক কারণ থেকে দৃষ্ট এ রোগ শারীরিক কারণ থেকে নয়। এবং রোগীর সব কথা অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।সবচেয়ে আগে রোগী ভালো হয়ে যেতে পারে রোগীর পরিবারের সদস্য দ্বারা কাউন্সেলিং । তার প্রতিটা নেগেটিভ কাজকে পজিটিভলে নিয়ে তাকে বোঝাতে হবে। কোনোভাবেই তাকে অপদস্ত করা যাবেনা । ঘাবড়ে না গিয়ে আস্তে আস্তে সামলানোর চেষ্টা করতে হবে ।


অতএব, হিস্টিরিয়া একটি মানসিক রোগ এবং এর অত্যাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে যা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা প্রয়োগ করে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। তাই হিস্টিরিয়া রোগকে পরীর আছর বা জিনের আছর প্রভৃতি ভ্রান্ত ধারণা এবং কুসংস্কার ত্যাগ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক চিকিৎসা নিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলা জরুরি। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগীর সাথে কথা বলে তার মনের সঙ্ঘাত জেনে এবং তা দূর করার জন্য চেষ্টা করেন। পরে রোগী যাতে ওইজাতীয় সমস্যার মোকাবেলা সহজেই করতে পারে তার ব্যবস্থা করেন। এব্রিয়েকশন বা ড্রাগ ইন্ডউজড হিপনোসিস (সম্মোহন)। এটি একটি মেডিক্যাল টার্ম। এই বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর মনের নির্জ্ঞান বা অচেতন স্তরে যেসব এ অবস্থায় মনের যে মানসবৃত্তি বিরাজ করে তাতে করে তার মনের অচেতন স্তরে দ্বন্দ্বগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এব্রিয়েকশন চলাকালীন মনোচিকিৎসক রোগীকে যেসব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন রোগী সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এগুলো রোগীর সচেতন মনে বিরাজ করে না। তাই সচেতনভাবে রোগী এগুলো ডাক্তারের কাছে প্রকাশ করতে পারে না। এই পদ্ধতির মাধ্যমে রোগী তার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা দ্বন্দ্ব, সঙ্ঘাত বা আবেগগুলো প্রকাশ করে মনের ভার লাঘব করতে পারে।

মনোচিকিৎসক রোগীর রোগের উপসর্গ ও লক্ষণগুলো কী জন্য হচ্ছে তার ওপর ফোকাস করে চিকিৎসা চালিয়ে যান এবং স্বাভাবিক আচরণ করার জন্য রোগীকে বারবার সাহস জোগানো হয়। রোগিণী যদি বিবাহিতা হয়ে থাকে তবে অবশ্যই স্বামীকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দরকার হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ফ্যামিলি কাউন্সিলিং এবং পরে স্বামী-স্ত্রীর জন্য কাপল থেরাপির (দাম্পত্যজনিত একধরনের মনোচিকিৎসা) দরকার হতে পারে।

সচেতন হোন সুস্থ থাকুন ।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×