somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব বসন্ত‌ ১: সূচনা

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রয়টার প্রতিনিধি জনি ওয়েস্ট খুব ভাল আরবী বলতে পারেন। আরব সংস্কৃতিটাও ভাল বোঝেন। এক দশকের বেশি সময় তিনি এলাকাকে কাটিয়েছেন। ২০১১ সালের আরব ঘটনাবলীর পর তিনি আবার সেই শহরেগুলোতে যান, সেখানকার তরুনদের সঙ্গে কথা বলেন, যোগাযোগ করেন তার পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে। নিজের মতো করে তিনি আরব বসন্তকে দেখতে চেয়েছন যা প্রকাশিত হয়েছে তার এই বইতে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফোরার সময় দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে কিনেছি। আহা কেন যে আমাদের এখানে কোন ভাল বই‌এর দোকান নাই!!
আমার পড়া মানে সেটি সবার সঙ্গে শেয়ার করা। দক্ষিণ আফ্রিকাতে থাকতে ক্রাচের কর্নেল পড়েছি। তার সিকুয়েল হিসাবে এই বই‌এর কোন বিকল্প হয় না বলে আমার মনে হচ্ছে। এতোটা টাচ্ড যে এয়ারপোর্টেই পড়তে শুরু করেছি।
আবর বসন্তের প্রতি আমার আকর্ষনের অনেক কারণের একটা হলো এর সঙ্গে ইন্টারনেট আর তথ্যপ্রযুক্তির সম্পর্ক। দক্ষিণ আফ্রিকাতে যে কর্মশালায় আমরা গিয়েছিলাম সেখানেও দেখা হল ৫ গ্রুপের মধ্যে তন গ্রপই প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুনদের রাজনীতিতে সম্পৃক্তার ব্যাপারটা বিশ্লেষন করা চেষ্টা করেছে। আমি অবশ্য নির্মোহ ভাবে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছি।
বইটির ভূমিকাটি অন্য রকম। কেন অন্য রকম এটা বোঝানোর জন্য শুরুটা আমার ভাষায় লিখে দিলাম।



অন্য দিনগুলোর সঙ্গে তেমন আলাদা ছিল না ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর। দক্ষিণ তিউনিশিয়কর সিডি বও জিড শহরের মুহামেদ বউয়াজিজি অন্য দিনের মতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে। পাইকারি বাজার থেকে ফল কিনে বউয়াজিজি প্রতিদিন দেড় মাইল দূরে একটি বাজারে বিক্রি করেন। তার নিজের ঠেলাগাড়ি নিয়ে তিনি প্রতিদিন সেখানে তিনি যান। কিন্তু ১৭ তারিখ তাকে রাস্তায় আটকালো মহিলা পুলিশ ফাতিহা হামদি।তার অভিযোগ ব্যবসা করার কোন লাইসেন্স জিজির নাই। ঠিক কী হয়েছে এর পরে তা সঠিকভাবে বলা মুশ্কিল। কিন্তু দেখাগেল হামদি একটু পর তার দুজন পুরুষ সহকর্মীকে ডেকে এনেছে। তারা জিজিকে মেরে মাটিতে ফেলে দেয়, তাঁর দাড়িপাল্লা এবং পন্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে। কেও কেও বলছে হামদি সে সময় প্রকাশ্যে জিজিকে গালে চড় দিয়েছে। অন্য কয়েকজন বলছে সে নিজে কিছু করে নাই খালি তামাশা দেখেছে। অপমানিত ও ক্ষুব্দ জিজি আধা মাইল দূরে পৌরসভাতে গিয়ে মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু তাকে জানানো হয় মেয়র মিটি করছেন, দেখা হবে না।
মুহামেদ বউয়াজিজি তখন একটি দোকানে গেলেন এবং রং করার স্পিরিট কিনলেন। সব স্পিরিট তিনি নিজের গায়ে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিলেন!!!
“আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না” ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী ডাফার আল‌ শালিহি বললেন, “রাস্তার মধ্যে একজন জ্বলন্ত মানুষ”।
সেদিন বিকেলে বউয়াজিজির মা, মেনোবিয়া পৌরসভাতে যান তার ছেলের প্রতি পুলিশের অত্যাচারের কথা বলে তার প্রতিকার চাইতে। কিন্তু কেহ তার কথা কানে দিল না। বেচারি, পৌরভবন থেকে বের হয়ে একাই দাড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। এক‌-মানুষ প্রতিবাদে তিনি দাড়িয়ে থাকেন রাস্তায়!
খবর পেয়ে তার ভাগনে, মুহামেদের খালাতো ভাই আলি বউয়াজিজি একটি হাতের ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে সেখানে হাজির হয় এবং কিছু ভিডিও ফুটেজ নেয়। পরে সেটি সে ইন্টারনেটে আপলোড করে। একই দিন, কাতারে আল‌জাজিরা টিভির সদর দপ্তরে সেটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে এবং পুন: প্রচার করে তাদের লাইভ অনুষ্ঠানে !

২৪ ঘন্টার মধ্যে মুহামেদ বউয়াজিজি একটি ছোট্ট শহরের একজন ফেরিওয়ালা থেকে পরিণত হোন লক্ষ‌কোটি আরব তরুনদের প্রতীকে।
এক সপ্তাহের মধ্যে বউয়াজিজি পরিণত হয় জনতার বিপ্লবের প্রতীকে যা এক দশক ধরে ক্ষমতা কুক্ষীগত করে রাখা স্বৈরাশাসককে উৎখাত করে!!!

২০১০ সালের জুন মাসের কোন একদিন মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ার উপকূলবর্তী একটি জেলা শহর ক্লিওপেট্ট্রায় ইন্টারনেট ক্যাফেতে আসেন ২৮ বছরের খালেদ সাইদ। খালেদ ইন্টারনেট সেন্টার থেকে বের হওয়ার পর শাদা পোষাকের পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে। শুরু হয়ে সবার সামনে অত্যাচার। মিশরের লোকেরা এধরণের পুলিশি অত্যাচারকে মেনে নিয়েছে কয়েক দশক ধরে। খালেদও হয়তো তাই করতো। তার আত্মীয় স্বজনরা চেষ্টা করতো সে যেন বিচারের আশায় সবাইকে বিপদে না ফেলে। কিন্তু খালেদ মারা গেলেন! তার ভাই, তার অত্যাচারিত মুখের ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে খালেদের বিষয়টি তার নিজের শহরে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এবং মিসরে বিরোধী দলের আন্দোলনে ঘি ঢেলে দেয়।
কিছুদিন পরে, ভেল ঘোনিম. একজন ইন্টারনেট এক্টিভিস্ট নাম প্রকাশ না করে ফেসবুকে একটি পেজ খুলেন, “We are all Khaled Said ” । যখন সে কায়রোর প্রানকেন্দ্র তাহরির স্কোয়ারে একটি সমাবেশের ডাক দেয় তখন প্রায় ৫৫ হাজার সেখানে যোগ দেয়। ২৫ জানুয়ারির সমাবেশে তাদের প্রায় সবাই যোগ দিয়ে সূচনা করে সে বিপ্লবের যার ফলশ্রুতিতে এর মাত্র ১৮ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে হয় ৩০ বছরের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে!
এদিকে লিবিয়ার বেনগাজি শহরের তরুন এডভোকেট ফাতিহ তেরবেল আপীল করেন যেন ১৭ ফেব্রয়ারিকে রাগের দিন (Day of Anger) হিসাবে ঘোষণঅ করেন, ১৫ বছর আগে আবু সালিম কারাগারে সংগঠিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে। জনশ্রুতি আছে সে ঘটনায় ১০০ জনের মতো বন্দি মারা গিয়েছিল। ফাতিহকে গ্রেফতার করা হয়। যখন তার স্বজনরা এর প্রতিবাদ করতে আসে তখন তাদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া হয়। দেশের পুরো পূর্বাঞ্চল ক্ষেপে উঠে ৪১ বছরের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে!!!
সিরিয়ার দক্ষিণের শহর ডেরাতে একদল স্কুল ছাত্র সরকার বিরোধী চিকা মারার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। বাহরাইনের রাজধানী মানামার পার্ল স্কোয়ারে প্রতিদন হাজার হাজার জনতা জড়ো হয়ে শ্লোগান দিচ্ছে জনতার স্বাধীনতার। ইয়েমেনের সব শহরে হাজার হাজার জনতা প্রতিদিন প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লঅহ সালেহ‌র অনুগত বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়!!!

এভাবেই শুরু হয়েছে আরব বসন্তের।


আমি খুব নিশ্চিত নয়, যতোটা দ্রুত আমি এই বইটা পড়তে পারবো, ততো দ্রুততার সঙ্গে সার অনুভূতি সবার সঙ্গে শেয়ার করতে পারবো কিনা।
কারণ অনেক কাজ জমে আছে!!!
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×