somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্যাকা দেন, দুবাই যামু-১: স্বপ্নের দেশে যাওয়া

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন বিটিভিতে প্রতি ঈদে আমজাদ হোসেনের নাটক দেখাতো। তার একটিতে মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠানোর ব্যাপার ছিল। সেই নাটকে ফরিদ আলির ডায়লগ ছিল- ট্যাকা দেন, দুবাই যামু। ২০১১ সালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ১২.১৭ বিলিয়ন ডলার যা কীনা আমাদের জাতীয় আয়ের ১৩.১%, বৈদেশিক উন্নয়ন সাহায্যের ৬ গুন এবং ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের ১২ গুন। বৈদেশিক কর্মসংষ্থানের ব্যাপারটা বোঝার জন্য আমি কয়েকদিন ধরে কিছু পড়ালেখা করছি এবং বোঝার চেষ্টা করছি। জানার কোন শেষ নাই তাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার জানার চেষ্টাটা সবার সঙ্গে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। প্রত্যয় হচ্ছে আরো অনেক তথ্য, লিংক সবার কাজ থেকে পাবো। এই বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনার জন্য আমরা ফেসবুকে এই শিরোনামে একটি গ্রুপও খুলেছি] । ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখা যাক আরকি।

১৯৭৩ সালে ওপেকভুক্ত দেশগুলো তাদের তেলের দাম বাড়াতে শুরু করে এবং রাতারাতি ধনী থেকে ধনী হতে থাকে। নিজেদের দেশকে সাজানোর জন্য তারা ব্যপক উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়। বানানো হতে থাকে বড় বড় অট্টালিকা, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, এগুলোকে আলোকিত করার জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র, বড় বড় শপিংমল। নিজেরা বড় লোক, কাজে কাজের লোক কই? কাজেই শুরু হল অন্য দেশ থেকে লোক আনা। বাংলাদেশও তার একটা। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক কর্মসংষ্থানের জন্য যে ৬০৮৭ জন দেশ থেকে বের হোন তাদের বেশিরভাগরই গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য। এই ট্রেন্ড এখনো বজায় আছে যদিও নানান চড়াই উৎরাই রয়েছে ধাপে ধাপে।
সরকারি হিসাবে এখন সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশর ৮০ লক্ষ অভিবাসী রয়েছে। (সংখ্যাটা খেয়াল যোগ্য কারণ বিশ্বের অনেক দেশে এতো লোকই নাই!)। এদের সঙ্গে প্রতিবছরই নতুন নতুন লোক যোগ হচ্ছে। ২০১১ সালেই যোগ হয়েছেন ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার বাষট্টি জন। এই ৮০ লক্ষ অভিবাসী রয়েছেন বিশ্বের ১৪৩টি দেশে যদিও এদের ৯০%কে পাওয়া যাবে মধ্যপ্রাচ্য (সৌদি আরব, কাতার, ইউএই, ওমান ইত্যাদি) এবং মালয়েশিয়া, লিবিয়া এবং সিঙ্গাপুরে। সাম্প্রতিক কালে অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক কর্মসংষ্থানের একটি হিসাব প্রকাশ করেছে। সেটি হল-



তালিকার দিকে তাকালে আমরা কয়েকটি বিষয় লক্ষ করতে পারি। প্রথমত হল ২০০৭ আর ২০০৮ সালের আটলাখের বেশি অভিবাসী। এর কারণ কী? ১৯৯৫ সাল থেকে মালয়েশিয়া আমাদের দেশ থেকে লোক নেওয়া বন্ধ রাখার পর ২০০৬ সালে পুনরায় লোক নে। ২০০৭ আর ২০০৮ সালে ৪ লক্ষ ৪ হাজারের বেশি লোক মালয়েশিয়া যায়। তবে, সেগুলো এমন অগোছালো ছিল যে, পরে তারা আবার লোক নেওয়া বন্ধ করে দেয়।
একই ঘটনা কিন্তু অন্য অনেক দেশে ঘটেছে। অনেক দেশই আমাদের শ্রমিকদের ওপর বিরক্ত প্রকাশ করে। এবং করে এমন কারণে যেটার সঙ্গে সে দেশের সম্পর্ক নাই। এর মধ্যে একটা হলো মেয়াদ শেষেও থেকে যাওয়ার চেষ্টা করা। এর কারণ হলো যত টাকা খরচ করে একজন শ্রমিক সৌদিআবরে যান, ২-৩ বছরের জন্য ততো টাকা তার ওঠে না, উদয়াস্ত খেটেও। কারণ অভিবাসনের খরচ। এমনও দেখা গেছে যে, অনেকে ২-৩ বছরের ওয়ার্কপারমিটের পেছনে ২-৩ লাখ টাকা খরচ করেছে। ঐ টাকা কী আর ওঠে? ওঠে না বলে ফেরার সময় হলে পালিয়ে যাওয়া, অন্যভাবে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করাটাই স্বাভাবিক।
আমাদের জনশক্তি রপ্তানীকারকদের লাভের ব্যাপারটা বোঝার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ দেওয়া যায়। কমবেশি ৫-৬ লাখ টাকা দিয়েও বাংলাদেশ থেকে কোরিয়া গিয়েছেন অনেকে। অথচ, বোয়েসেলের মাধ্যমে এখন পাঁচ হাজার শ্রমিক যাচ্ছেন যাদের রচ হচ্ছে ৫৬ হাজার টাকা! ৫-৬ লাখ টাকার গল্পের জন্য কোরয়া সরকার আমাদের এজেন্সিগুলোর রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন কেবল সরকারি ভাবেই যাওয়া যায়।
আমাদের সবচেয়ে বেশি অভিবাসী আছেন সৌদি আরবে, ২০ লক্ষেরও বেশি। সম্প্রতি সৌদিরা একটি “সৌদিকরণের” একটা আইন করেছে। এই আইনের আওতায় প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ৩৫ রকমের ট্রেডে কেবল সৌদিদের নিয়োগ দিতে পারবে এব বাকী ট্রেডে কোন একটি দেশ থেকে ২০% এর বেশি নিয়োগ দিতে পারবে না। ফলে কোম্পানির যদি ২০%এর বেশি বাঙ্গালি থাকে তাহলে তারা আর নতুন বাংলাদেশী নেবে না!
তবে, সৌদি আরবে কিন্তু এখনো যাওয়ার অনেক সুযোগ আছে। ২০১১ সালের এপ্রিলে একটা ডেলিগেশন এসেছিল সৌদি থেকে। সৌদি চেম্বারের লোক। তারা জানিয়েছিল প্রতি মাসে ১০ হাজার হাউস কীপার, মালি, ড্রাইভার এবং সিকিউরিটি গার্ড তাদের প্রয়োজন। তাদের প্রম্তাব ছিল এদের যাবার সকল খরচ দেবে নিয়োগকর্তা এবং এজেন্সীগুলোকে খরচ বাবদ দেবে ৮০০ ডলার করে। (এই চুক্তির বর্তমান স্ট্যাটাস কী???)
তবে, আমাদের প্রচলিত মার্কেটগুলো কিন্তু স্যাচুরেটেড। এখন নতুন মার্কেটের খোজ করতে হবে। আমরা নতুন কিছু করতে চাই না বলে আশ্চর্যজনকভাবে এখনো আমরা শ্রমের বাজার খুজে বেড়াচ্ছি। কারণ, অনেকের ধারণা আমাদের শ্রমশক্তি সস্তা এবং সেটাই মনে হয় আমাদের একমাত্র পূজি। ফলে আমাদের শ্রমবাজার খোঁজার মিশন চলছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, নাইজেরিয়া, হংকং, গ্রীস, আজারবাইজান ইত্যাদি দেশে। কিন্তু জ্ঞানকর্মীর কোন বিষয় আমরা এখনো মাথায় নিচ্ছি না।

একটা উদাহরণ দিয়ে এই পর্বটি শেষ করবো। কাতার। ২০২২ সালে তারা ফিফা কাপের আয়োজন করবে। এজন্য স্টেডিয়াম বানাচ্ছে। ওরা ২০২০ সালের সামার অলিম্পিকের জন্যও চেষ্টা করছে। ফলে, আরো অনেক কিছু বানাবে- স্টেডিয়াম, হোটেল, হাসপাতাল, রাস্তা। প্রচুর শ্রমিক লাগবে সন্দেহ নাই। কিন্তু আরো কী লাগবে?
সবগুলো স্টেডিয়াম এবং নতুন স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ হবে স্বয়ংক্রিয়। ফলে, এগুলো ম্যানেজ করার জন্য হাই স্কিল লোক লাগবে অনেক। এদের হতে হবে রেফ্রিজারেটর বিশেষজ্ঞ, ইলেকট্রিসিটির পণ্ডিত, ইলেকট্রনিক্সের লোক, কম্পিউটার জানা। হোটেলগুলোর হাউস কীপিং এর জন্য লাগবে ভাল ইংরেজি জানা লোক।
এগুলো বানানোর জন্য সেখানে হাজির হবে শ’খানেক বা তারো বেশি বহুজাতিক কোম্পানি। সেই কোম্পানিগুলোর প্রত্যেক অফিসে ফ্রন্টডেস্কে লোক লাগবে, তাদের কম্পিউটারগুলো সচল রাখার জন্য মেইনটেইস্যান্সের লোক লাগবে, নেটওয়ার্কটাকে ৯৯.৯৯% সময় আপ থাকতে হবে। আমি আর লিস্ট বাড়াতে চায় না।

গত কয়েকদিনে আমি যে সকল জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা কেবল আমাকে কাতারে লাখ লাখ শ্রমিক পাঠানোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন। আর কিছু নয়!!!


সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৩
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×