somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মনপুরা এবং বাংলা চলচ্চিত্রে পুরুষতান্ত্রিক ভুতের আছর (জেন্ডার প্রেক্ষিত থেকে মনপুরা ছবির একটি পোস্টমর্টেম )

১৭ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাগরিক মধ্যবিত্ত, আরও স্পষ্টভাবে বললে ঢাকার শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত, যারা ছবি ঘরে গিয়ে ঢাকাই ছবি দেখার কথা শুনলে সজোরে নাক সিটকান, জাত্যাভিমানের অবস্থান থেকে ঢাকাই ছবিকে রিক্সাচালক-গার্মেন্স কর্মী, বস্তিবাসীদের ছবি বলে ঘরে বসে ক্যাবললাইনে হিন্দী/ইংরেজি ছবি বা সিরিয়াল দেখে আত্মতৃপ্তি খুঁজেন, সময় কাটান, তাঁদের প্রায় সবাইকে 'মনপুরা'র জ্বর আক্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। খুব সফল এবং স্বার্থকভাবে। সিনেমা হলবিমুখ নাগরিক মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তদের গোটা পরিবার নিয়ে দলে দলে উৎসব মুখর হয়ে ছবিঘরের দিকে ছুটে যাওয়া থেকে এটি প্রমাণিত। এ রকম একটি কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে পারার জন্য তরুন চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম প্রশ্নাতীতভাবে অভিনন্দিত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তাঁকে বিনম্র অভিনন্দন।

ছবি হিসেবে মুক্তি পাবারও অনেক আগে বলা যায় ’মনপুরা’ নাগরিক মধ্য ও উচ্চবিত্তের ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করেছে। এর অসম্ভব সুরেলা এবং মনমুগ্ধকর একগুচ্ছ গানের অডিও সিডি প্রকাশের মাধ্যমে। ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে ছবির গানের সিডি প্রকাশ বিজ্ঞাপন এবং লগ্নিপুঁজি ঘরে তোলার হাতিয়ার হিসেবে যে, বেশ কার্যকর তা এর আগে কয়েকটি ছবির ক্ষেত্রে প্রমাণিত। গিয়াস উদ্দিন সেলিম সে ক্ষেত্রে শুধু পূর্বসূরীদের অনুসরণ করেছেন এবং সে অনুসরনে সফলও হয়েছেন। ছবিটির নির্মাণ শৈলী, বিশেষ করে ক্যামেরার কাজ একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে অন্য অনেকের মতো আমাকেও দারুন আলোড়িত করেছে। মূগ্ধ করেছে। তবে তার শিল্পমানের বিশ্লেষণ এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের এ কঠিন কাজটি এখানে সম্ভবও নয়। পোস্টেও শিরোনাম থেকে এটি স্পষ্ট যে, লেখাটি আলোচিত এ সফল সিনেমার একটি জেন্ডার বিশ্লেষণ দাঁড় করাবার চেষ্টায় এগুবে। পাশাপাশি ছবির গল্পে বিকশিত চরিত্র এবং ছবির দর্শক হিসেবে অভিষ্ঠ গোষ্ঠীর দিক থেকে একটি শ্রেণী বিশ্লেষণ দেয়ার সীমিত চেষ্টাও থাকবে। তাও প্রত্যাশিত জেন্ডার বিশ্লেষণটাকে আরেকটু পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে।

খুন, লাশের ভেজা শরীর এবং বিভৎসতার উৎপাদন: দর্শক মনোযোগ তৈরির পুরুষতান্ত্রিক বটিকা
মূলধারার ঢাকাই ছবির অন্যতম একটি উপাদান পুরুতান্ত্রিক বিভৎসতা। পুরুষের শিশ্নবাদী ক্ষমতার অবশ্যম্ভাবী প্রকাশ হিসেবে প্রায় প্রতিটি ছবিতে নারীর ওপর সংঘটিত বিভৎসতার (যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, খুন,) দৃশ্যায়ন চলে। দর্শক মনোযোগ আকর্ষণ, টানটান উত্তেজনা ও সুড়সুড়ি সৃষ্টির লক্ষ্যে। সেদিক থেকে মনপুরাও ব্যতিক্রম নয়, বরং গিয়াস উদ্দিন সেলিম সে অব্যর্থ অস্ত্রটি খুব সফলভাবে ব্যবহার করেছেন। ছবির একবারে শুরুতেই। ঝড় ও বৃষ্টির রাতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিমূলকে দিয়ে একটি মেয়েকে খৃুন করিয়ে। তবে পরিবেশনের ঢংয়ে পার্থক্য আছে। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে হয়তো খুনের দৃশ্যটাও দেখানো হতো, থাকতো খুনীর সাথে দস্তদাস্তির দীর্ঘ দৃশ্য। যার প্রধান উদ্দেশ্য হতো নারীর শরীরকে রূপালী পর্দায় ভোগ্য করে তোলা। না, খুনের দৃশ্য সেলিম দেখান নি। দস্তাদস্তিও না। খুনের শিকার মেয়েটির শাড়িপরিহিত লাশ বৃষ্টির জলে ভিজিয়েছেন। আচ্ছামতো। খুনের পর লাশটি ঘরের ভেতরে, বারান্দায় অথবা ঘরের অন্যকোন স্থানে থাকতে পারতো। কিন্তু থাকেনি। পরিচালক রাখেন নি। এ না রাখার অন্যতম কারণ বিভৎসতার মাত্রা বাড়ানো। ঝড় আর ভয়াবহ শব্দে বিজলী চমকানো রাতে মেয়েটি খুন হয়। আর সে বিজলী চমকানোর মতোই আরেকটি চমক দিয়ে দর্শকের মনে আবেগ-উত্তেজনা তৈরি করা। একই সাথে দর্শকের সামনে পরিবেশন করা নারীর ভেজা শরীর। যা মূলধারার সব বাণিজ্যিক ছবিতেই থাকে। সেলিম এক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে গেছেন। ভিজিয়েছেন জীবিত নয়, মৃত শরীর। একটি খুন দিয়ে ছবিটি শুরু হলেও এ খুনের কার্যকারণ সম্পর্কে পুরো ছবির কোথাও ইংগীত নেই।
খুন, বিভৎসতা ইত্যাদির সাথে বলপ্রয়োগের একটি গভীর সম্পর্ক রযেছে। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামোয় বল প্রয়োগের একক মালিকানা পুরুষের। ফলে শিমুল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হলেও বল প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন। পুরুষ হিসেবে। আর নারী হচ্ছে সে বলপ্রয়োগের নিরব শিকার। পুরুষতান্ত্রিক এ চিন্তা ও আচরণ কাঠামোটি ’মনপুরা’র একেবারেরই শুরুতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিচালকের সচেতন অথবা অবচেতন মনের সুনিপুন কর্মে।


শ্রেণী পক্ষপাত এবং নারী-শরীর বনাম বিষয়
না, শ্রেণী পক্ষপাত নয়, বরং বলা যায় শ্রেণী টার্গেট। নাগরিক মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত। ছবির ভোক্তা হিসেবে। দর্শক হিসেবে। ছবিটি প্রথম বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স-এ মুক্তিদেয়ার মাধ্যমেও এ টার্গেটের বিষয়টি আঁচকরা যায়। কারণ এ ছবি ঘরটির সচারচন দর্শক দরিদ্র নয়, ধনী, সর্বনিম্ন মধ্যবিত্ত। ফলে পুরো ছবির সংলাপ রচনা, কসটিউম নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তকে খুব বেশি তাঁর ভাবনায় রেখেছেন। ব্যবসায়িক এ ভাবনার কারণে তাঁকে বেশ কিছু জায়গায় বিচ্যুতি ঘটাতে হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে। মনপুরার পুরো গল্পটি বিকশিত হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক কাঠামোয়। কিন্তু ছবির সংলাপ বাংলাদেশের কোন উপকূলীয় অঞ্চলের কথ্য ভাষার প্রতিনিধিত্ব করে না। ছবির পাত্র-পাত্রীদের মুখে কথ্য ভাষার যে ফর্মটি ধরিয়ে দিয়েছেন সেটি উপকূলীয় অঞ্চলের নয়। এটি প্রধানত শহুরে কথ্য ভাষা অথবা তার কাছাকাছি কিছু। এ বিচ্যুতিটি ঘটিয়েছেন একটি বিশেষ শ্রেণী ছবির লক্ষ্যভোক্তা (টার্গেট কনজিউমার) বলে।

ছবির নায়িকা পরী নৌকা বাইতে পারে। নদী তীরবর্তী এলাকায় বেড়ে উঠা মেয়ে। তার জন্য এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তার জন্য ব্যবহৃত কস্টিউমগুলো কতটা বাস্তবতার কাছাকাছি? কতটা উপকূলীয় কিশোরী মেয়ের প্রাত্যহিক জীবনের কাছাকাছি আর কতটা স্রেফ বাণিজ্যিক এবং অবশ্যই পুরুষতান্ত্রিক? রঙিন কাগজ ভিজিয়ে কিশোরী মেয়েটির ঠোট লাল করার দৃশ্য গ্রামের কিশোরী দরিদ্র মেয়েদের চিরচারিত বেড়ে উঠাকে মনে করিয়ে দেয়। যদিও ঠোটের ক্লোজ শর্ট ব্যবাহর নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মেয়েটি যখন বাবার সাথে সেজেগুজে মাছ ধরতে যায়, নৌকা বায় তখন সেটিকে অতিরিক্ত, কৃত্রিম এবং নিশ্চিতভাবে বাণিজ্যিক মনে হয়। সেটি আরও নিশ্চিত করে পরীর ব্লাউজের ডিজাইন। যেটি কোনভাবেই মনপূরার নয়, উপকূলের নয়। পুরোপুরিই শহুরে। যেন বা কোন শহুরে মেয়ে নদীর জলে নৌকায় বেড়াতে বেরিয়েছে। ছবিতে যে বসতি ও জীবনধারা দেখানো হয়েছে তার সাথে পরীর সাজসজ্ঝ ও কস্টিউমের সাথে মিলের থেকে অমিলই বেশি পরীলক্ষিত হয়েছে।



ছবির বেশিরভাগ পুরুষ চরিত্রগুলোও গ্রামীণ পোষাক যেমন লুঙ্গি, গেঞ্জি, শার্ট ইত্যাদি পরে। কিন্তু ছবির নায়িকা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের যাদু বিদ্যায় শুধু শহুরে ঢংয়ে শাড়ি নয়, অন্তর্বাসও পরেন। এরপর শুরু হয় ক্যামেরার মূল কাজ। নায়িকার কোমর থেকে পিঠ পর্যন্ত বার কয়েক ক্লোজ শট এবং লং শর্ট। এ শর্টগুলোতে নায়িকা আর বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয় না, রূপান্তরিত হয় বস্তুতে (অবজেক্টিফিকেশন অব উইম্যান বডি)। পুরুষতন্ত্র নারীকে বিষয় হিসেবে নয়, প্রধানত বস্তু হিসেবে দেখে। আর সে বস্তু ভোগ্য করে মুনাফা তৈরি করতে চায়। এ পুরুষতান্ত্রিক মনোজগত দ্বারা আমরা আকন্ঠ নিয়ন্ত্রিত হতে দেখি ছবির পরিচালককে। এখানে এসে সেলিমের ক্যামেরা গল্প ও অভিনয়ের চেয়ে নায়িকার শরীরের ভাঁজের ওপর বেশি মনোযোগী হয়ে উঠে। এ মনোযোগ আগাগোড়া পুরুষতন্ত্রের। সেলিমও তার উর্ধ্বে উঠতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন অথবা সফল হওয়ার কোন ইচ্ছাই তার ছিল না। অন্তত আমরা প্রত্যক্ষ করিনি।

পুরুষতন্ত্র উৎপাদন, পুনরোৎপাদন এর বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া



পুরো মনপুরা জুড়ে পুরুষতন্ত্রের ভুত দাপটের সাথে বেড়িয়েছে। কী সংলাপ, কী কাহিনী আর কী চরিত্র, প্রায় সবখানে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিমুল। কিন্তু সামাজিক শ্রেণী কাঠামোর দিক থেকে সে ধনী জোতদার পরিবারের একমাত্র দুলাল। বংশের বাতি। ছবির কাহিনীর একটি বড় অংশ এগিয়েছে এ বংশের বাতি রক্ষার তাগিদে। খুনের ঘটনাটি ঘটার পর জোতদার মামুনুর রশীদ তার বাড়িতে আশ্রিত সোনাইকে সাময়িকভাবে খুনের দায় শিকার করে নিতে বলেন। সোনাই তাতে ভয় পায়। থানা-পুলিশের ভয়ে মুনীবের কথা মানতে সে অস্বীকার করে। তখন মুনিব মামুনূর রশীদ বলেন, ‘তুই ভয় পাস না, আমি তোকে কয়েকদিনের মধ্যে ছাড়িয়ে আনবো, তাছাড়া থানা জেল এগুলো পুরুষ মানুষের জন্যই’। পরবর্তীতে নির্বাসনে থাকাকালীন সোনাই নিজেও একই কথা তার ভালবাসার পাত্রী পরীকে বলে। একবার নয়, কয়েকবার। আর এভাবেই দর্শকের কাছে পরিবেশিত হয় পুরুষালী (মাসক্যুলিনিটি) ইমেজ (প্রতিরূপ)। থানা-জেল এগুলোর জন্য সাহসের দরকার হয়। পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সাহসী হওয়া কোন মেয়েলী গুণ নয়, ১০০% পুরুষালী। পুরুষের বীরত্ব নির্মাণ এখানে শেষ নয়। সোনাই রাতের অন্ধকারে দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিয়ে পরীর সাথে দেখা করে। প্রমাণ করে তার ভালবাসা। এ ভালবাসা বিরত্বের। অন্যদিকে ভয়, কান্না, ত্যাগ, অন্দরমহলে অপেক্ষা, এমনকি ভালবাসার জন্য জীবন উৎসর্গ প্রধানত মেয়েলী গুন। মনপুরার নায়িকারও এ গুনগুলো আছে। সেই একই পুরুষতান্ত্রিক নিয়মে। মনপুরার নায়িকা দক্ষ হাতে নৌকা বেয়ে বেড়ালেও (এটি ছিল একেবারের বাণিজ্যিক উপাদান, যা ওপরে আলোচিত হয়েছে) সাঁতরে নায়কের কাছে চলে যাবার কথা কখনও বলে না। সে সাহস সে দেখাতে পারে না। বরং তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় উৎকন্ঠা আর ভয় নিয়ে। তাঁর বীর নায়ক সোনাই এর জন্য। সোনাই পুলিশের হাতে ধরা পড়লে পরীর বিয়ে হয়ে যায় জোততার উচ্চবিত্তের একমাত্র মানসিক প্রতিবন্দী ছেলে শিমুলের সাথে।


ধনীর ঘরের মানসিক প্রতিবন্ধী কোন মেয়ের সাথে সুস্থ্য ছেলের বিয়ে হতে সাধারণত দেখা যায় না। ছেলেটি দরিদ্র পরিবারের হলেও। কিন্তু উল্টোটি ঘটে। অর্থাৎ মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে সুস্থ্য মেয়ের বিয়ে। পরীর সাথে শিমুলের বিয়েটি পরিচালক শ্রেণী কাঠামোর ভেতরে ফেলে বিয়েটিকে দারিদ্র্যেও অভিঘাত বলে জায়েজ করতে চেয়েছেন। কিন্তু এখানে শ্রেণী সম্পর্ক একমাত্র নিয়ামক ছিল না। পরীর বাবা যদি মেয়ের পিতা না হয়ে ছেলের পিতা হতেন তাহলে কী হতো। দারিদ্রের কারণে সেকি কোন ধনীর মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলে আনতেন? বোধহয় না। পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাকাঠামোতে সেটি গ্রহণযেগ্যও হতো না। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের কাছেও হয়নি।

বিয়ের পর পরী শশুর বাড়ি চলে যায়। তার চোখের জলে বুক ভাসে। প্রতিনিয়ত। দর্শক দেখা পায় কান্না ভেজা অপেক্ষারত সতী নারীর। যে যেকোন উপায়ে রক্ষা করে চলে তার ‘ভার্জিনিটি’। তার সতীত্ব। ভালবাসার মানুষটির জন্য। পরীকে পুরোপুরি সমর্থন যোগায় তার শাশুড়ি। বাঙালী পুরুষতন্ত্রে শাশুড়ি-বউ এর সম্পর্ক চির দা-কুমড়া হলেও এবং মূলধারার ছবিতে সাধারণত সেভাবে চিত্রিত হলেও এখানে পরিচালক ব্যতিক্রম। এখানে তিনি আমাদের উপহার দেন একজন আপাত: স্নেহশীল শাশুড়ি। কিন্তু স্নেহশীল কারপ্রতি? পরীর প্রতি? মোটেই না। তিনি আসলে যত্নবান তার ছেলের প্রতি। কারণ পীর বলেছেন, বিয়ে দিলে ছেলে ভাল হয়ে যাবে। তাই বিয়েটা টেকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা। সুতরাং ছেলের বউয়ের প্রতি আপত: দৃশ্যমান স্নেহগুলো ঝরে পড়ে কেবল বংশের বাতি রক্ষার প্রণোদনা থেকে। এ ভাবেই পুরুষতন্ত্র পুনরোৎপাদিত হতে থাকে। তার হাত ধরে ছবিটিও এগোয়। শাশুড়ি যখন বুঝতে পারে যে, কিছুতেই সোনাই এর ওপর থেকে পরীর মনকে আলাদা করা যাচ্ছে না, তখন পরিচালক পুরুষতন্ত্রের কথিত ‘নারীর কুটনামী বুদ্ধি’র প্রয়োগ করে। পরীর শাশুড়ি বানিয়ে বলে, আজ রাত সোনাইয়ের ফাঁসী হবে। তার ধারণা ছিল সোনাই বেঁচে নেই জানলে নির্ভরশীল নারীর শেষ অবলম্বন হিসেবে পরী শিমুলের কাছেই ফিরে আসবে। তার প্রতি মনোযোগী হবে আদর্শ স্ত্রীর মতো। পরীর ভালবাসা আর যত্নে শিমুল সুস্থ্য হয়ে উঠবে। পরী সোনাইয়ের ফাঁসি হবে এ বানানো সংবাদ বিশ্বাস করে। পুরুষতন্ত্রে ‘সতী নারীর পতি (এখানে আসল ভালবাসার মানুষ) না থাকলে নারীর জীবন বৃথা। সে বৃথা জীবন রেখে লাভ কি! সুতরাং পরী বিষ খেয়ে আত্মহত্য করে। এ চলচ্চিত্রে পরীকে ভালবাসার পরীক্ষা দিতে হয় তার জীবন দিয়ে। জীবন দিয়ে নারীকে ভালবাসার পরীক্ষা দেয়ার উদাহরণ এ প্রথম নয়। বাংলা গল্প, উপন্যাস, উপাখ্যানে এ রকম উদাহরণ অনেক। সেলিম শুধু তার পুনরোৎপাদন করেছেন। যার মাধ্যমে পুরুষতন্ত্র আরেকটু বল পেয়েছে। ছবিটার শুরু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু দিয়ে, শেষও একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু দিয়ে। খুন, মৃত্যু না থাকলে টানটান উত্তেজনা তৈরি করা যায় না। সেলিম খুব সফল। টানাটান উত্তেজনা দিয়ে শুরু করে টানাটান উত্তেজনা নিয়েই দর্শকদের বাড়ি পাঠিয়েছেন। নায়কের বেঁচে যাওয়ার মধ্যে বাঁচিয়ে দিয়েছেন পুরুষতন্ত্রকেও। গোটা ছবিতে পুরুষতন্ত্রেও জয়গানই উচ্চারিত হয়েছে। পুনপৌনিকভাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১০
৭২টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×