somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং আজ যে বইগুলো কেনা হলো

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ বইমেলায় গিয়েছি একবার নয়, দু’বার। প্রথমবার মেলা শুরু হওয়ারও আধঘন্টা আগে। সকাল ১১টায় মেলার গেট খুলে দেয়া হবে। এটা জানা কথা। তাই মনে হয়েছিল মেলার গেটে আমিই হয়তো প্রথম ব্যক্তি হবো আজ। গিয়ে দেখি আমার ধারণা ভুল। তখনও মেলার গেট বন্ধ। আরও আধ ঘন্টা পর সর্বসাধারণ মেলায় প্রবেশাধিকার পাবে। কিন্তু তার আগেই মেলার গেট লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। শিশুরা এসেছে। বড়রা এসেছে। নারী এসেছে। পুরুষ এসেছে। কিশোর এবং তরুনরাও এসেছে। এসেছে এবং আসছে আর আসছে। যেন বইপিপাসু মানুষের পদচারণায় চিরবর্ণীল হয়ে উঠা এক জনপদের বহমান ছবি।
আজ বইমেলায় যাবো। এটি গতরাতেই ফেইসবুকের স্টাটাস-এ বলেছিলাম। তা দেখে সহ ব্লগার তনুজা বলেছিলেন, যেন মাস্ক নিয়ে যাই। না হয় বিনে পয়সায় বিপুল ধুলোবালি খাওয়া শতভাগ নিশ্চিত। আমি বলেছিলাম, একটা বোরকা জোগাড় করতে পারলে সব চেয়ে ভাল হবে। কিন্তু বইমেলায় প্রবেশের পর দেখি মেলাকর্তৃপক্ষ পুরো মেলাজুড়ে পানি ছিটিয়ে ধুলোমুক্ত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। দর্শক-পাঠকদের প্রতি কর্তৃপক্ষের এ সাড়াশীলতকে অভিনন্দন জানাই। বাংলা একাডেমি আন্তরিক হলে, আরও একটু সক্রিয় হলে এ মেলা আরও প্রাণ পেতে পারে। আরও জীবন্ত হতে পারে।
মেলায় ঢুকে এ স্টল থেকে ও স্টলে যাই। বই দেখি। বইয়ের সূচি দেখি। সহ-ব্লগারদের বইও খুঁজি। সাথে মানুষও দেখি। দেখি বিচিত্র মানুষের নানা উচ্ছাস। সবই এ মেলাকে ঘিরে। এ ভাষাকে ঘিরে। আমাদের দিনযাপনে যেখানে দু:সংবাদ আর দু:সংবাদ, যেখানে ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়া একটি কষ্টসাধ্য বিষয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে প্রাত্যহিক আলাপচারিতায় আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই বলে আমরা মাথার চুল ছিঁড়ি, হতাশ হই, সেই দেশেই কেবল একটি ভাষা আর সাহিত্যকে ঘিরে এত বড় আয়োজন, এত বড় জমায়েত, প্রায় প্রতিদিন, টানা একমাস ধরে, সত্যিই বিশ্ময়কর। আবার এটা তার চেয়েও বিশ্ময়কর যে, যেদেশে ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে, লড়াই করেছে, যে ভাষা আন্দলনকে ঘিরে একটি অসা¤প্রদায়িক চেতনা প্রবল হয়েছে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সে দেশেই এখনও মৌলবাদ, সা¤প্রদায়িকতার চাষাবাস চলছে এখানে-ওখানে। এমনকি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। এই যে বাংলা একাডেমির এত বড় বইমেলা সে মেলাও কি সা¤প্রদায়িকতা ও মৌলবাদী চেতনার ধারক বই ও প্রকাশনা মুক্ত? সম্ভবত না। অবাক হলাম জাতীয় কবিতা পরিষদের স্টলে গিয়ে। প্রায় শিংহভাগই ধর্মীয় বই। এটি কীভাবে সম্ভব হলো সেটি আমার বোধগম্য হলো না। আমার মনে হলো আমি বোধহয় স্টলের নাম ভুল দেখছি। কিন্তু বারবার তাকিয়েও আমি সে একই নাম দেখলাম। জাতীয় কবিতা পরিষদ।
আজও কিছু বই কেনা হলো। সহ-ব্লগারদের সাথে শেয়ারের লোভটা সামলানো গেল না। সে একই ভাবনায়। যদি কারও পছন্দের সাথে মিলে যায়। অথবা কেউ যদি এ বইগুলো কেনায় উৎসাহী হন। আজ কেনা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের আত্মজীবনী প্রণীত জীবন, ইত্যাদি প্রকাশন, সুলতানা কামালের নারী, মানবাধিকার ও রাজনীতি, ইত্যাদি প্রকাশন, পূরবী বসুর নারীবাদী গল্প, ইত্যাদি প্রকাশন, বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের তত্ত্ববধায়ক সরকার ও ডেসপটিক রাষ্ট্র, সুবর্ণ প্রকাশন, জীবননন্দ দাশের রূপসী বাংলা, গ্রন্থ প্রকাশ এবং সামহয়্যার ইন ব্লগ ২০০৯ এর ব্লগ সংকলন অপরবাস্তব, ছাপাকল, পরিবেশক সংহতি প্রকাশন।
শত্র“পক্ষের জন্য যে বইগুলো কিনেছি
এ ছাড়া শত্র“পক্ষের জন্যও কিছু বই কেনা হয়েছে। পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানে ভালবাসাবাসি অথবা না বাসির ফর্মে জীবনসঙ্গীর সাথে যে সম্পর্ক, প্রেম-ভালবাসা যাই বলিনা কেন, আসলে এটি একটি ক্ষমতার সম্পর্ক। আর সম্পর্কটি যদি ক্ষমতার হয়ে থাকে তাহলে সেখানে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবেই। থাকবে শত্র“পক্ষও। তো আমার একমাত্র শত্র“পক্ষের ছোটভাই এর হুময়ূন আহমেদ খুব পছন্দ। কনফ্লিক ট্রান্সফরমেশন (দ্বন্ধ রূপান্তর) এর সম্ভাব্য কার্যকর প্রক্রিয়া হিসেবে নিজে তেমন একটা না পড়লেও চারটি হুমায়ূনের বইও কেনা হলো। বইগুলো হচ্ছে কাঠ পেন্সিল, সে আসে ধীরে, মাতাল হাওয়া এবং রূপা।
দুপুর দুইটায় আবার বইমেলায় যাই। তখন তিল ধারণের জায়গাও যেন নেই। আমি দ্রুত সংহতির স্টলের দিকে যাই। যথারীতি সামুর সংকলন অপরবাস্তব হাতে নিয়ে দ্রুত পা বাড়াই। বাসার দিকে। শত্র“পক্ষের সাথে ভালবাসার নতুন সম্ভাবনার হাতছানিতে ........................................................

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×