somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ-আফগান মাটিতে এক সপ্তাহ-৯

০১ লা এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের কিস্তির পর.................
হোটেলের একেবারে ওপরের ফ্লোরে সভা কক্ষ। আলোঝলমল। বিশাল বড়। নাম নিবন্ধিকরণের আনুষ্ঠানিকতা সেরে এগিয়ে যেতে চোখে পড়ে সভা কক্ষ ইতোমধ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। যেরকম ভেবে ছিলাম ঠিক সে রকম ছোটখাট কিছু নয়। এ এক বিশাল আয়োজন। উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই নারী। আফগান নারী। রাজধানী কাবুল সহ অন্যান্য শহর থেকে এসেছেন। বেশির ভাগই ব্যবসা ও শিল্প উদ্যোক্তা। কয়েকজন নারী সাংসদও এসেছেন। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীদের মধ্য রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা সংগঠন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক এবং ইলোকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মী।
আমি সভা কক্ষের এদিক ওদিক তাকাই। শত মানুষের ভীড়ে বসকে খুঁজি। কিন্তুু কোথাও দেখা যায় না। অথচ আমার আগে তাঁর পৌছে যাবার কথা। পর্যবেক্ষণ নির্ভর একটা অনুমিত ভবিষ্যত মনে আসে। আমার কেন জানি মনে হয় বস সভাস্থলে এসে আবার রুমে ফিরে গেছেন। মানুষকে চমকে দেয়ার, একটু ব্যতিক্রম থাকার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করেছি তার মধ্যে। আজকের এ মূহুর্তের চমক এবং ব্যতিক্রমটা হতে পারে তাঁর শাড়ি পরে আসা। সভাস্থলে সকল আফগান নারীই সালোয়ার-কামিজ পরে এসেছেন। সালোয়ার-কামিজ পরে এলে তাঁকেও আফগানীই মনে হবে। চেহারা, রঙ, উচ্চতা ইত্যাদি বিচারে তাঁকে কাবুলের পথেঘাটে আফগানী-ইরানী নারী বলে ভুল করার সম্ভাবনা যে উড়িয়ে দেয়া যায় না তার প্রমাণ মিলেছে পরবর্তী দিনগুলোতে। সাইপের পক্ষ থেকে পোলান্ডের যে মেয়েটি আমাদের সাথে সারাক্ষণ থেকেছে, বিভিন্ন সংস্থায় নিয়ে গেছে, শত নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেও নিরাপদ জোন খুঁজে খুঁজে বাজার, রেস্টুরেন্ট-ইত্যাদি ঘুরিয়ে দেখিয়েছে, ক্রিস্টিনা মারিয়া নামের সে মেয়েটি প্রায় প্রতিদিনই ক্ষণে ক্ষনে বসকে মনে করিয়ে দিয়েছে আফগানী ও ইরানী নারীদের সাথে তার প্রায় শতভাগ সাদৃশ্যের কথা।

আমার অনুমিত ধারণা তত্ত্বের মর্যাদা পেল। কিছুক্ষণের মধ্যে বস ঢুকলেন সভা কক্ষে। কলাপাতা রঙের একটি জামদানি পরে। কিন্তুু মাথায় ঘোমটা। এর আগে কখনও ঘোমটা মাথায় বসকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সম্ভবত তালেবানী ভূত নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে যে প্রচার-প্রচারণা রয়েছে, যেটি আফগান নারীদের পোষাক-পরিচ্ছদ এর একটা আরোপিত ঢং তৈরি করে দিয়েছে, আফগান নারী মাত্রই হিজাবাবৃত মানুষ এবং আফগান নারীর কাছে সামাজিক প্রত্যাশাও তাই বলে যে প্রচারণা রয়েছে, সারা বিশ্বে, এ ঘোমটা তারই বহি:প্রকাশ। কিন্তুু সভাকক্ষে আগত আফগান নারীদের সবাই বোরকা ও হিজাব ছাড়া। দু’একজন কামিজের ওপর বড় আকারের চাদর পরেছেন। কিন্তু তাকে কোন ভাবেই বহুল প্রচারিত এবং কথিত হিজাব বা বোরকার আদর্শ রূপ বলা যাবে না। হয়তো সভায় উপস্থিত নারীদের কেউ-ই প্রকৃত আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। এরা শহুরে, শ্রেণী ও গোষ্ঠীর দিক থেকে মোটামুটি এলিট। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা। সুতরাং এ রকম একটি দলের ওপর ভিত্তি করে আফগান সংস্কৃতিতে পর্দা প্রথার চলমান গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে আঁচ করার উপায় নেই। তবে একটি বিষয় বলা যায় যে কাবুল শহরে কেউ না চাইলে তাকে বোরকা পরতে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি বর্তমান নেই। যেমনটি ছিল তালেবানী আমলে। পরে লোকজনের কাছ থেকে জেনেছি যে, তালেবান গোষ্ঠী নারীদের শুধু বোরকা পরতে বাধ্য করেনি। পোষাকের একটি ধর্মীয় রঙও ঠিক করে দিয়েছিল। তালেবানদের সিদ্ধান্ত মতে মুসলিম নারীদের খাকী রঙ এর পোষাক পরতে হতো। আর হিন্দু ও অন্য ধর্মের নারীদের মাস্টারড হলুদ রঙের পোষাক পরতে হতো। কাবুল অক্সফাম এ কাজ করে এমন একটি মেয়ের সাথে দেখা হয়েছিল পাকিস্তানের ইসলামাবাদে। তার কাছ থেকে শুনেছি, তালেবানদের সময় মেয়েদের পায়ে সাদা মোজা পরাও বারণ ছিল। কারণ তালেবানরা মনে করতো সাদা রঙ পায়ের বাড়তি যৌন আবেদন তৈরি করে। অপরদিকে কালো রঙ ধার্মিক নারীর রঙ বলেই আফগানী জীবনাচারে স্বীকৃত। তবে সভাকক্ষে উপস্থিত পুরুষ অংশগ্রহণকারীদের পোষাক-পরিচ্ছদ এ আফগানী কোন ছোঁয়া খুঁজে পেলাম না। প্রায় সবাই স্যুট, কোর্ট, টাই পরিহিত। বিমানবন্দর, রাস্তায় জুব্বা পরা যেসব মানুষ দেখেছি ঐতিহ্যবাহী সে কাবুলি জুব্বা বিসর্জন দিয়েই সবাই এখানে এসেছেন। সম্ভবত শ্রেণী উত্তরণ মানুষকে তার ইতিহাস ঐতিহ্য বিসর্জনে উৎসাহিত করে। অথবা ঐতিহ্যের অতটুকুই চর্চা করে, যতটুকু বিশেষ শ্রেণীকেন্দ্রীক জীবনাচারের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠে না।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানী শাড়ি পরে বসের বাংলাদেশকে উপস্থাপনের আইডিয়াটা বেশ মনে ধরল। বস সভা কক্ষের দরজা দিয়ে উকি দিয়ে ফিরে গেছেন, সবাইকে সালোয়ার কামিজ পরা দেখে শাড়ির আইডিয়াটা তাৎক্ষণিকভাবে মাথায় এসেছে, এসব তথ্য বস নিজেই দিলেন। আমি বিনীত প্রশংসায় নিমজ্জিত হয়ে শুধু বললাম, খুব ভাল হয়েছে। ওরা বাংলাদেশ সম্পর্কে শুধু শুনবে না। দেখবেও। শাড়ি। কলাপাতা রঙের সবুজ শাড়ি। এক টুকরো সবুজ বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:০৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×