somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়তেই হবে !!! ১ বার পড়ে দেখুন !!! ঠিক একবার !!! (চরম বাস্তব হাসির কাহিনী)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জগাস্যুপঃ (জগাখিচুড়ির চাইনিজ ভার্সন)



কাজের মহিলা আসে নি। আবার আজ শুক্রবার। ঢাকার জীবনে এই শুক্রবারের অপেক্ষা আমার শুরু থেকেই। প্রতিদিন সকালে উঠে ক্লাসে যেতে হয়। সৈকালিক ঘুমের মত বেহেশতী আরামের একমাত্র ভরসা শুক্রবার। দুপুরে জুম্মা পড়ে এসে তাই সপ্তাহে একবার অতি স্পেশাল খাবার। চিন্তায় ছিলাম সেটা বোধহয় এইবার আর হচ্ছে না। তাই হোটেলে খেতে হবে এমন মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিলাম। এমন সময় স্বপন ভাইয়ের বাধা।




-কিসের হোটেলে খাওয়া। আমি থাকতে আবার বাইরে কেন?
স্বপন ভাইয়ের পরিচিতিটা একটু দেয়া দরকার। উত্তর বাংলার লোক। বড় হয়েছেন রংপুরে। এরশাদের চরম ভক্ত। হিন্দুদের অন্নপাপের মত নাকি এরশাদ কবিতা লিখে কাব্যপাপ করেছে। তাই তার প্রেসিডেন্ট-পদ হারানো। উনি ইতিহাসের ছাত্র। হিন্দুস্তানের শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ নাকি একই পাপে পাপী ছিলেন। যার ফল ভারতবর্ষের স্বাধীনতার শেষ সূর্য অস্ত যাওয়া। যা হোক। আসল কথায় আসি। স্বপন ভাই। রংপুরে হোস্টেলে থাকা অবস্থায় নাকি তিনি তার পঞ্চগড়ি ডালের রেসিপি দিয়ে রংপুর কাত করে দিয়েছিলেন। আমাদের সাথে সেই গল্প করতেন। তো একদিন কাজের মহিলা আসে নাই। ইমতিয়াজ ভাই বললেন, তো হয়ে যাক! দেখি আপনার রংপুর কাত করা ডালের রেসিপি ঢাকাকে কতটুকু কাত করতে পারে।

গত বছরের কথা। আমরা পাঁচজন একসাথে থাকি। রান্না করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। তিনটার দিকে খেতে বসলাম। চরম ক্ষুধা। আমি ভাতের দায়িত্বে ছিলাম। স্বপন ভাই ডাল আর ভাজি। ক্ষুধার জ্বালায় পাঁচজন মিলে পাতিল খালি করে ফেললাম দশ মিনিটে। আগামী দশ ঘন্টা কীভাবে কাটবে তা ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি।
প্রথম ভিক্টিম প্রস্তাবদাতা ইমতিয়াজ ভাই। ফলাফল, খাওয়ার ঠিক আধা-ঘন্টার মধ্যে। টানা সাত-আট মিনিট বাথরুম থেকে বের হবার নাম নেই।



আমাদের এখানে পাঁচজনের জন্য দুইটা বাথরুম। দ্বিতীয়টা দখল করে নিল তারেক। ওয়েটিং লিস্টে পরবর্তী পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা বাকি তিনজন। আমি, শোয়েব আর আমাদের রংপুর কাত করা রাঁধুনি স্বপন ভাই। স্বভাবতই আসল কালপ্রিট হিসেবে স্বপন ভাই কোন চান্সই পাবে না। শোয়েব ঢাকার ছেলে। শখ করে আমাদের সাথে থাকে। বাসায় থাকলে নাকি লাইফ তার ভাষায় ‘মাইনক্যা’ হয়ে যায়। সে পারলে আমার পায়ে পড়ে, ‘তুই গেরামের পোলা। আটকাইতে পারবি। আমি পারুম না। এই বয়সে প্যান্টে বড় কাম সারলে সারা জীবনের জন্য কলঙ্ক হইয়া থাকব। যে-ই বের হইব, আমারে যাইতে দিবি দোস্ত।’ আমি বললাম, ঠিক আছে। ইতিমধ্যে তারেক বের হয়ে আসল। তার প্রাথমিক মন্তব্য, ‘ভাই, অবস্থা ভাল না’। শোয়েব গেল। ইমতি ভাই বের হতেই আমি ঢুকলাম। ভিতরে ঢুকে শুনি ইমতি-ভাই চিৎকার করতেছেন, ‘তোর ডাইলের গুষ্টি আমি উদ্ধার করব। শালা বান**। ফাইজলামি পাইছস!’ আমি চুপচাপ বসে আছি। দুই মিনিটও হয় নাই। দরজায় নক। ইমতিয়াজ ভাই বলতেছেন, ‘দরজাটা খোল তো শাফি। শালার সাথে জোরে চিল্লাইতে গিয়া অবস্থা আবার টাইট।’ আমি তাড়াতাড়ি কাজ সেরে দরজা খুলে বললাম, ‘অবস্থা টাইট না ইমতি ভাই, অবস্থা লুজ’। ইমতি ভাই মুখ কঠিন করে ভিতরে ঢুকে গেল।
স্বপন ভাই তার খাটে মুখ টাইট করে চুপচাপ বসে আছেন। তারেকও চুপচাপ। ভাবছে কথা বললেই পেটে চাপ পড়ব। চুপ থাকাই ভাল। সে খুব সরল-সোজা। আমাকে দেখেই বলল, ভাই, দেইখা তো আমার কইলজায় পানি নাই। যেই ডাইল খাইছি, সেই ডাইলই বের হইছে। রংটাও পালটায় নাই। নো ফিল্টারিং! :-/ :-/




শুনে স্বপন ভাই গোমড়া মুখে আমার দিকে তাকাল। আমি বললাম, ভাই, আপনার ডাইল রংপুর কতটুকু কাইত করছে জানি না, তবে আমরা চারজনই কাইত। এই জিনিস আপনার এরশাদরে খাওয়াইলে কাব্যচর্চার ভূত আগেই নামতো আর তার রাষ্ট্রপতিত্বও যাইত না।
ইমতিয়াজ ভাই আবার বের হয়ে আসল। ‘এই শালার জন্য আগামী একঘন্টা বাথরুম হারাম। তুই আইজ তোর লুঙ্গিতে কাম সারবি। তারপর ফ্লোর থেকে গু পরিষ্কার করবি। শোয়েব কই? ওর মোবাইল দিয়া ভিডিও করমু। তারপর সেইটা ফেসবুকে ছাড়মু।’ আমি বললাম, আচ্ছা, এমনও তো হইতে পারে ডাইলে প্রব্লেম ছিল? স্বপন ভাই যেন হাতে মুক্তা পেল।
-হুম! আমার রান্না করার সময়ই মনে হইছিল। স্মেল্টা অন্যরকম।
শোয়েব বের হয়ে বলল, স্বপন ভাই, আমি পারুম না, ঝামেলা হইয়া যাইতে পারে। যান, বাইরে থেকে মেট্রো ট্যাবলেট নিয়া আসেন।
স্বপন ভাই ছাড়া পেয়ে সাথে সাথে বের হয়ে গেল। রাস্তার ওপাশেই দোকান। ওনার খবর নাই। বাইরে তাকিয়ে দেখি উনি কয়েক পা হাঁটে আর থেমে থেমে আশেপাশে তাকায়। আমি শোয়েবকে দেখাতেই তার অট্টহাসি অর্ধেকপথে থেমে গেল। পিছনে তাকিয়ে দেখি সে বাথরুমের দিকে দৌড় দিছে। হাসি জোরে হয়ে গেছে। এমন চলল পরবর্তী সাত-আট ঘন্টা। স্বপন ভাই ছাড়া সবাই বিছানায়। শোয়েব পা উপরে মাথা নিচে এইভাবে দেয়ালে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করল, যাতে পুরিষ নিচে না নামে। কোন কাজ হয় নাই। নিয়মিত বিরতিতে আমরা যেতে থাকলাম।
স্বপন ভাইয়ের পরিচয় বেশি লম্বা হয়ে গেল। যাহোক, উনি ওই ঘটনার পরে কখনোই স্বীকার করেন নাই যে রান্নাতে সমস্যা ছিল। সমস্যা নাকি ডাল-এর মধ্যে ছিল। ওনার বার বার বলাতে আমাদের মনের মধ্যেও একই বিশ্বাস জন্মাতে দেরি হল না। তার উপর কে যাবে এই শীতে বাইরে খেতে।
এইবারের মেনু ভাত, গরু আর স্বপন ভাইয়ের স্পেশাল স্যুপ। আমরা ভয়ে ভয়ে খেতে বসলাম। ঠিক হল স্বপন ভাই আগে খাবে। তার পনের মিনিট পরে আমরা। কিছু হইলে পনের মিনিটের মধ্যেই হবে এই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিৎ। খাওয়া শেষে উনি স্যুপ ঢাললেন। এইটা নাকি ডেজার্ট হিসেবে ভাল। হজম শক্তি বাড়ায়। বিশ মিনিট পার হয়ে গেল। মোটামুটি নিশ্চিৎ হয়ে আমরা শুরু করলাম। আমরা চারজন। আমি, শোয়েব, ইমতিয়াজ ভাই আর তারেক। সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। আমরা তো অবাক। তাহলে কি শুধু শুধু গতবার স্বপন ভাই গাল খেল? খাওয়া শেষে ডেজার্ট কাম স্যুপ পর্ব। ঢলঢলে পানিতে কিছু ফুলকপি, মটরশুঁটি, সিম আর ধনে পাতা ভাসছে। আমার ওই বস্তু দেখেই জগাখিচুড়ির কথা মনে পড়ল। পরে আমরা ওটার নাম দিয়েছিলাম জগা-স্যুপ।





যাহোক, শোয়েব ঢাকার ছেলে। চায়নিজ খেয়ে অভ্যাস। সে লোভ সাম্লাতে পারল না। তার পিছন পিছন ইমতি-ভাইও যোগ দিল। আমি আর তারেক দর্শক। যেমনটা আমি আর তারেক ভেবেছিলাম, তাই হল। আগেরবারের মত এবারও প্রথম ভিক্টিম ইমতিয়াজ ভাই। যথারীতি দুইজন দুই বাথরুমে। আগের কিছু মেট্রো ট্যাবলেট বাসায় ছিল। দুইজনই একসাথে দুইটা করে গিলে ফেলল। ফলাফল সম্পূর্ণ উল্টা। ইমতি ভাইয়ের একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল যেটা পরবর্তী তিনদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু শোয়েবের অবস্থা গুরুতর।



রাত আটটার দিকে তার বাসায় খবর দেয়া হল। বাবা গাড়ি নিয়ে হাজির, সাথে মা। ডাক্তারের কাছে নেয়ার পথে উনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি খেয়েছিলে কি? শোয়েব চিঁচিঁ করে বলল, জগা-স্যুপ। তারেক এই দুঃখের মুহূর্তেও হাসি আটকাতে পারল না। উনি আবার বললেন, মানে? আমি উনাকে সংক্ষেপে বুঝিয়ে বললাম। উনি খুব একটা বুঝলেন বলে মনে হল না।

তারেক সরলমনে বলে উঠল, আসলে উনার রান্না খাইলে পেটের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। সেই জন্য ফিল্টারিং করতে ভুলে যায় মনে হয়। আমি তাকে মাথায় চাটি মেরে থামালাম। শুরু থেকেই সে ফিল্টারিং ফিল্টারিং করতেছে। :P :P
দুইদিন হাসপাতালে থেকে শোয়েব ছাড়া পেল।সেখান থেকে সোজা তার নিজের বাসায়। তার স্বাধীন থাকার শখ জগাস্যুপ মিটিয়ে দিয়েছে। আমরাও চারজন কান ধরে প্রতিজ্ঞা করলাম, আর না। রংপুর কাত করা রেসিপির পার্ট এখানেই মুলতবি।
আরেকটা কথা বলে রাখি। শরৎচন্দ্র বলে গিয়েছিল বাঙ্গালির ভূত নাকি নামানো সম্ভব না। আপনাদের আশেপাশে যদি এমন বাঙালি থেকে থাকে যার ভূত নামাতে হবে, শুধু আমাদের দাওয়াত তার কাছে পৌঁছে দিবেন। স্বপন ভাইয়ের এক রেসিপিই সেই ভূত নামানোর জন্য যথেষ্ট।

রান্না রম্য রেসিপি এরশাদ খিচুড়ি জগাখিচুড়ি জগাস্যুপ।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×