somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ডায়েরীর পাতা থেকে : পর্ব -৪

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুল লেখকঃ কমান্ডার হাসান জামান খান

আমার ডায়েরীর পাতা থেকে : পর্ব -৩
রাত ৮ টা । ৫৫০ কিলোমিটার পথ আতিক্রম করে করহগু শহরে পৌঁছলাম। করহগু বাংলাদেশের একটা উপজেলা শহরের মতই । পাহাড় ঘেঁষে লাল মাটির রাস্তা আর টিনের ছাউনি দেয়া ছোটো ছোটো বাড়ীঘড়। যুদ্ধ বিধস্থ বাড়ীগুলো যেন নীরব সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। ফেরকে আরও ৫০ কিলো মিটার দূরে। তবে অতদুর আর যেতে হবে না। কারণ ফেরকে টীম করহগুতেই অবস্থান করছিলো। দীর্ঘ ভ্রমন শেষে ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম। ভিনদেশী সঙ্গী অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম রাতে থাকার কি বাবস্থা? হোটেলে নিয়ে বলল আজ রাত এখানেই কাটান । হোটেল বটে, অবস্থা দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। খাবার নেই, পানি নেই, এ কি অবস্থা ! কোথায় এসে পড়লামরে বাবা। এটাই নাকি করহগু শহরের শ্রেষ্ঠ হোটেল। কি আর করার, না খেয়েই ঘুমাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমনি সময় দরজায় আওয়াজ। ঠক ঠক, ঠক ঠক। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম, খুলে দেখি উরুগুয়ের অফিসার কিছু খাবার আর এক বোতল মিনারেল পানি নিয়ে হাজির। আমাকে দিয়ে বলল, এটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। কাল দেখা হবে । শুভ রাত্রি বলে চলে গেলেন। তখন ক্ষুধায় আমার পেট চু চু করছিলো বলে আর দেরী না করে খাবারের পর্ব সেরে নিলাম। পেটে ক্ষুধা থাকলে যে সবই অমৃত তা আফ্রিকার খাবার খেয়ে বুঝতে পারলাম। আচেনা জায়গা আর অচেনা মানুষ। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর ঝি ঝি পোকার ডাক। আশেপাশে মানুষের কোন সাড়াশব্দ নেই। ঐদিন আকাশে মেঘ জমেছিল বলে কিছুক্ষন পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল । শুনেছি, ম্যালেরিয়ার জন্য এ দেশের একটা মশার কামড়ই নাকি যথেষ্ট। তাই অলসতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে মশা প্রতিরোধক ঔষধ খেয়ে সাড়া শরীরে Anti Mosquito Spray ছিটিয়ে নিলাম। রুমের ভিতরে একেবারে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ভাবছিলাম এভাবে যে কতদিন কাটাতে হবে? কিছুক্ষন পর আশেপাশের অবস্থার সাথে নিজেকে পরিচিত করার জন্য হোটেলের প্রধান ফটকের দিকে এক পা, দু পা করে আগাচ্ছিলাম। একটু এগুতেই কিছু লোকের খুশগল্পের আওয়াজ শুনতে পেলাম। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল বলে তাঁদের খুজে পেতে আর দেরী হয় নি। সংখ্যায় তিন জন, কয়লার আগুনে ছোট একটা পাত্র বসিয়ে চা বানাচ্ছে আর সামনে প্লেট ভর্তি উলি পোকা ভাজি। তিনজনই খুব মজা করে খাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছিল ঝালমুড়ি খাচ্ছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ভুজামে লা তে ? ( অর্থাৎ আপনি কি চা পছন্দ করেন ?) জবাব দিলাম, ন মেরছি, মনামি। ( না ধন্যবাদ, বন্ধু )। আমার কথা শুনে ওরা বুঝতে পারলো আমি বিদেশী। কথা আর না বাড়িয়ে কোনরকমে বিদায় নিলাম। রুমে ফিরে ঘুমের সাথে লড়াই করতে করতেই টেবিল ঘড়ির অ্যালার্ম বেজে উঠলো। নিজেকে প্রস্তুত করে অফিসে হাজির হলাম সকাল ৮ টায় তারপর অফিস থেকে বাসস্থানের খোঁজে বের হয়ে পড়লাম । টোগো সেনাবাহিনীর অফিসার ক্যাপ্টেন জেকপা খুব আগ্রহ নিয়ে আমার সঙ্গী হলো । পরিবার পরিজন ছেড়ে সেই এশিয়া থেকে আফ্রিকার মাটিতে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি তাই সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো। সে বলল “আমি আফ্রিকান, আফ্রিকার মাটিতে আপনি আমার অতিথি, আপনার দেখাশুনা করার দায়িত্ব আমার” । চমৎকার তাঁর কথা, তাঁর ব্যবহার। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। টোগোর ঐ অফিসার ফ্রাঙ্কফন (ফরাসী ভাষায় পারদর্শী) ছিল বলে অতি সহজেই চমৎকার একটা বাড়ী খুঁজে গেলাম। জনাব মোহাম্মাদ মুসা বাড়ীর মালিক । টিনের চাল দেয়া ছোট একটা বাড়ী। চারদিকে দেয়াল ঘেরা । মাটির রাস্তায় পথ পাড়ি দিয়ে বাসায় পৌছতে হয়। কাছেই মসজিদ। যা হোক, দায়িত্ব পালনের স্বার্থে আইভরি কোস্টে এক বছর থাকতে হবে তাই পরবর্তী দিনগুলোর জন্য নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে শুরু করলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×