somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় হিমালয় পর্বতশৃঙ্গ

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গের উত্তর ঢাল, তিব্বত (চীন)-এর একটি বেস-ক্যাম্পে যাওয়ার পথে দৃষ্ট
হিমালয় পর্বতমালা হচ্ছে এশিয়ার একটি পর্বতমালা যা তিব্বতীয় মালভুমি থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে পৃথক করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল এবং ভূটান এশিয়ার এই পাঁচ দেশে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালায় মাউন্ট এভারেস্ট, কে ২, কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রভৃতি বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গগুলি অবস্থান করছে। এই পর্বতমালা থেকে বিশ্বের তিনটি প্রধান নদী সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র তাঁদের বিভিন্ন প্রধান ও অপ্রধান উপনদীসহ উৎপন্ন হয়েছে।


দিল্লি লে বিমান যাত্রা থেকে নেওয়া হিমালয় পর্বতমালার ছবি
মাউন্ট এভারেস্ট
মাউন্ট এভারেষ্ট যা নেপালে সগরমাথা এবং তিব্বতে চোমোলাংমা নামে পরিচিত ।এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এই শৃঙ্গটি হিমালয়ের মহালঙ্গুর হিমাল পর্বতমালায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার বা প্রায় ২৯,০২৯ ফু হলেও পৃথিবীর কেন্দ্র হতে এই শৃঙ্গের দুরত্ব সর্বাধিক নয়। চীন এবং নেপালের আন্তর্জাতিক সীমান্ত মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষবিন্দু দিয়ে গেছে।১৮৫৬ সালে ভারতের মহান ত্রিকোণমিতিক সর্বেক্ষণের ফলে মাউন্ট এভারেস্টের যা তৎকালীন যুগে ১৫ নং পর্বতশৃঙ্গ নামে পরিচিত ছিল এর উচ্চতা নির্ণয় করা হয় ৮,৮৪০ মি বা ২৯,০০২ ফুট। ১৮৬৫ সালে ভারতের সার্ভেয়র জেনারেল অ্যান্ড্রিউ স্কট ওয়াহর সুপারিশে রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি তার পূর্বসূরী জর্জ এভারেস্টের ১৫ নং পর্বতশৃঙ্গর নাম পরিবর্তন করে মাউন্ট এভারেস্ট রাখেন। ১৯৫৫ সালে একটি ভারতীয় জরিপে এই শৃঙ্গের উচ্চতা নির্ণয় করা হয় ৮,৮৪৮ মি বা ২৯,০২৯ ফুট, যা ১৯৭৫ সালে একটি চীনা জরিপ দ্বারা নিশ্চিত করা হয়।

ব্রিটিশ পর্বতারোহীরা সর্বপ্রথম এই পর্বতশৃঙ্গ আরোহণের চেষ্টা শুরু করেন। নেপালে এই সময় বিদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় ব্রিটিশরা তিব্বতের দিক থেকে এই পর্বতের উত্তর শৈলশিরা ধরে বেশ কয়েক বার আরহণের চেষ্টা করেন। ১৯২১ সালের মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে ব্রিটিশরা তিব্বতের দিক থেকে ৭,০০০ মি বা ২২,৯৭০ ফুট উচ্চতা পর্য্যন্ত ওঠেন। তারপর ১৯২২ সালের অভিযানে তাঁরা এই পথে ৮,৩২০ মি বা ২৭,৩০০ ফুট উচ্চতা পর্য্যন্ত ওঠে মানবেতিহাসের নতূন কীর্তি স্থাপন করেন। সে অভিযানে অবতরনের সময় তুষারধ্বসে সাতজন মালবাহকের মৃত্যু ঘটে। ১৯২৩ সালের অভিযান এভারেস্ট আরোহণের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় অভিযানঃ জর্জ ম্যালোরি এবং অ্যান্ড্রিউ আরউইন শৃঙ্গের দিকে আরোহণের একটি অন্তিম প্রচেষ্টা করেন কিন্তু আর ফিরে আসতে ব্যর্থ হন যার ফলে তাদের আরোহণই প্রথম সফল আরোহণ কি না সেই নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়। ১৯৫৩ সালে এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে নেপালের দিক থেকে দক্ষিণ পূর্ব শৈলশিরা ধরে প্রথম এই শৃঙ্গজয় করেন। ১৯৬০ সালের ২৫ শে মে, চীনা পর্বতারোহী ওয়াং ফুঝোউ, গোনপো এবং চু ইয়িনহুয়া উত্তর শৈলশিরা ধরে প্রথম শৃঙ্গজয় করেন।


তিব্বত থেকে দৃশ্যমান মাউন্ট এভারেস্টের উত্তর মুখ


আকাশ হতে দৃশ্যমান মাউন্ট এভারেস্টের দক্ষিণ মুখ

কে২ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বত শৃঙ্গ
কে২ হচ্ছে মাউন্ট এভারেস্টের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ও বৃহত্তম একটি পর্বত শৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮,৬১১ মিটার বা ২৮,২৫১ ফুট। হিমালয় পর্বতমালার কারাকোরাম পর্বত রেঞ্জের অন্তর্গত এই পর্বতশৃঙ্গটি পাকিস্তানের গিলগিত-বালতিস্তান এবং চীনের জিংজিয়ানের তাক্সকোরগান সীমান্তে অবস্থিত।এই পর্বতশৃঙ্গে আরোহন করা অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় এটি জংলী পর্বত নামেও পরিচিত। অন্নপূর্ণা পর্বতশৃঙ্গের পর আট হাজারী পর্বতশৃঙ্গগুলোতে আরোহন প্রচেষ্টায় মৃত্যুর হারের দিক থেকে কে২-এর অবস্থান দ্বিতীয়। এর চূড়ায় আরোহনকারী প্রতি চার জনের মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেছে।


কে২, ২০০৬ সালের গ্রীষ্মকাল

অন্নপূর্ণা পর্বতশৃঙ্গ
অন্নপূর্ণা হিমালয়ের কিছু পর্বতশৃঙ্গ যা ৫৫ কিলোমিটার লম্বা স্তুপ পর্বত এবং যার সর্বোচ্চ চূড়া অন্নপূর্ণা ১ এর উচ্চতা ৮,০৯১ মি বা ২৬,৫৪৫ ফুট।উচ্চতার দিক দিয়ে এর অবস্থান পৃথিবীতে ১০ম। এর ৬ টি চূড়ার উচ্চতা ৭২০০ মিটারের বেশি। এটি মধ্য নেপালে অবস্থিত। সর্বপ্রথম মরিস হার্জগ এবং লুইস লাচেনাল ১৯৫০ সালে এর সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহন করেন।


অন্নপূর্ণা পর্বতশৃঙ্গ


অন্নপূর্ণা ১ এবং দক্ষিণ হতে পুন পর্বত
লোৎসে চতুর্থ উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ
লোৎসে হচ্ছে পৃথিবীর চতুর্থ উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ যা দক্ষিণে মাউন্ট এভারেস্টের সাথে সংযুক্ত। এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৮৫১৬ মিটার বা ২৭,৯৩৯ ফুট। ১৯৫৬ সালের ১৮ই মে সর্বপ্রথম একদল সুইস অভিযাত্রী এর শীর্ষে আরোহন করেন।


লোৎসে পর্বতশৃঙ্গ

মাকালু পর্বতশৃঙ্গ
মাকালু হচ্ছে পৃথিবীতে পঞ্চম উচ্চতম পর্বত এবং চীন এবং নেপালের মধ্যে সীমারেখাতে মাউন্ট এভারেস্ট এর ২২ কিমি ১৪ মাইল পূর্বে অবস্থান।এটি তিব্বত নামক অঞ্চলে অবস্থিত।মাকালু একটি বিচ্ছিন্ন চূড়া যার আকৃতি একটি চৌকোণা পিরামিড।এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৮৪৬২ মিটার বা ২৭,৭৬৫ ফুট। ১৯৫৫ সালের ১৫ই মে সর্বপ্রথম একদল ফরারি অভিযাত্রী এর শীর্ষে আরোহন করেন। আরোহনের জন্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন পর্বত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মাকালু দক্ষিন-পশ্চিম দিক

চো ওইয়ু
চো ওইয়ু পৃথিবীতে ষষ্ঠ উচ্চতম পর্বত। চো ওইয়ু চীন এবং নেপালের মধ্যে সীমারেখাতে মাউন্ট এভারেস্ট এর ২০ কিমি পশ্চিমে হিমালয়ে অবস্থিত। চো ওইয়ু অর্থ বৈদূর্য দেবতা । এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৮২০১ মিটার বা২৬,৯০৬ ফুট। ১৯৫৪ সালের ১৯শে অক্টোবর সর্বপ্রথম একদল অস্ট্রেলীয় অভিযাত্রী এর শীর্ষে আরোহন করেন।

চো ওইয়ু উত্তর দিক Gokyo.
মানাসলু
মানাসলু হচ্ছে নেপালী হিমালয়ে পৃথিবীতে অবস্থিত অষ্টম উচ্চতম পর্বত। মানাসলু সংস্কৃত শব্দ মানাসা থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং অর্থ হল আত্মার পর্বত। এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৮১৬৫ মিটার বা ২৬,৭৫৮ ফুট।১৯৫৬ সালে ৯ই মে সর্বপ্রথম একদল অস্ট্রেলীয় অভিযাত্রী এর শীর্ষে আরোহন করেন।

সূর্যোদয়ের মানাসলু
নাঙ্গা পর্বত
নাঙ্গা পর্বতশৃঙ্গ হচ্ছে পৃথিবীর নবম এবং পাকিস্তানে ২য় উচ্চতম পর্বত। নাঙ্গা পর্বত মানে উলঙ্গ পর্বত । আট হাজারী পর্বতসমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত।এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৮১২৬ মিটার বা ২৬,৬৫৮ ফুট। ১৯৫৩ সালের ৩ই জুলাই সর্বপ্রথম একদল আস্ট্রিয়ান এবং জার্মান অভিযাত্রী এর শীর্ষে আরোহন করেন। পর্বতারোহীদের নিকট নাঙ্গা পর্বতে আরোহণ অত্যন্ত কঠিন। বিং শতকের প্রথম ও মধ্যবর্তী সময়ে এই পর্বত আরোহণ করতে গিয়ে অসংখ্য পর্বতারোহীর মৃত্যু ঘটে। ফলে নাঙ্গা পর্বত 'কিলার মাউন্টেইন নামে পরিচিতি লাভ করে।

নাঙ্গা পর্বতশৃঙ্গ পাকিস্তান অবস্থানরত



তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৪৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×