somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রীলংকায় অবস্থিত রহস্যময় আদম পাহাড়।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শ্রীলংকার রহস্যময় এক পাহাড়। নাম তার আদম পাহাড়।নানা কারণে এই পাহাড়টি রহস্যে ঘেরা। এই পাহারটিতে রয়েছে বিরাট আকারের এক পায়ের ছাপ। আর সে পায়ের ছাপ নিয়েই যত রহস্য । এই পায়ের ছাপটিকে সব ধর্মের মানুষই পবিত্র হিসেবে মনে করেন।

যুগেরর পর যুগ ধরেই বিশ্বে নানা রকম পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। এসব পায়ের ছাপ একেকটা একেক রকম। আকৃতি নানা রকম। কিন্তু এসব পায়ের ছাপ সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ দীর্ঘদিন ধরে। এমনই এক পায়ের ছাপ আদম পাহাড়ে। শ্রীলংকার মুসলমানরা বিশ্বাস করেন পৃথিবীর আদি মানব হজরত আদম (আঃ) প্রথম এই শ্রীলংকায় পদার্পণ করেছিলেন।আর ওই পাহাড়ে যে পায়ে ছাপ রয়েছে ওটা তারই পায়ের ছাপ। তার জন্য সে পাহাড় ও পাহাড়ের ওই পায়ের ছাপ মুসলমানদের কাছে পবিত্র হিসেবে পরিণতি হয়ে আসছে।

শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্রীপাডা নামক প্রদেশে এই চূড়াটি অবস্থিত । তবে শুধু মুসলিম নন, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ,এই তিন ধর্মের অনুসারীদের কাছেও অতি পবিত্র সেই চূড়াটি বা পাহাড়টি। সকলেরিই ধারনা সেই চূড়াতেই বা পাহাড়েই আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) বেহেশত থেকে সরাসরি আগমণ বা পতিত হয়েছিলেন। চূড়াটির চারদিকে সবুজের বিপুল সমারোহ মাঝেমধ্যে পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলা। পাহাড়ি চূড়ার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ছো্ট নদী এবং পাহাড়ি ঝরনা। সব মিলে এক মায়াবী নয়নাভিরাম দৃশ্য।


চূড়াটিতে আদম (আঃ) এর পায়ের যে চিহ্ন রয়েছে তার পরিমাপ হচ্ছে প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ হচ্ছে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্ম মতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্ন আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত হওয়ার পরে পদচিহ্নের চতুর্দিকে ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে শত শত পর্যটক পরিভ্রমণ করেছে চূড়াটিতে। বিশ্বের চূড়াটিতে যারা পরিভ্রমণ করেছেন তারা এর চতুর্দিকে পরিদর্শন করা ছাড়াও স্পর্শ করে দেখেছেন আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন।শুধু শ্রীলংকার বাসী নয় এর বাইরের অনেক দেশের মুসলমান বিশ্বাস করেন হজরত আদম (আঃ) কে যখন পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল তখন তিনি প্রথম পা রাখেন শ্রীলংকার ওই পাহাড়ে। আর আদম পাহাড়ের ওপর ওই পায়ের ছাপ দেখে তারা মনে করেন তা হজরত আদম (আঃ) এর। এজন্যই মুসলমানরা সেই পাহাড়কে অসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আর এজন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছে আদমস পিক বা আদমের পাহাড়। এ পাহাড়ের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। এ পাহাড়ের চূড়ায় যে পদচিহ্ন রয়েছে সেখানে পৌঁছা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এডভেঞ্চার। তবে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। তারা নিজের চোখে ওই পায়ের ছাপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন। এই পায়ের ছাপ শুধু মুসলমানদের কাছেই ন একই সঙ্গে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং হিন্দুদের কাছেও পবিত্র। তারাও মনে করেন তাদের ধর্মের সঙ্গে এর রয়েছে ওতপ্রোত সম্পর্ক। এতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে আদমের পাহাড় সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই পবিত্র। তারা শ্রদ্ধার চোখে দেখেন সে পাহাড়কে। তারা সবাই স্বীকার করেন সে পাহাড়ের চূড়ায় আছে ওই পবিত্র পদচিহ্ন। তার আকৃতি বিশাল। শুধু এজন্যই না সে পাহাড় নিজেই একটি রহস্য।


এ্যাডামস পিক পাহাড় আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চূড়ায় পৌঁছতে হলে যে পথ তা চলে গেছে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। আছে বিষধর কীটপতঙ্গ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪০০০ ধাপ। এর প্রতিটি ধাপ নিরাপদ নয়। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষে যেতে হলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। জটিল এক আবহাওয়ার এক অঞ্চলের মধ্যে এর অবস্থান। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ, কাব্যিক অর্থে বলা যায় এ পাহাড় তখন মেঘের ভিতর লুকিয়ে যায়। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে।


সে পাহাড় এবং পাহাড়ের পদচিহ্ন নিয়ে একটি বই লিখেছেন মারকুস অকসল্যান্ড। বইটির নাম দ্য স্যাক্রেট ফুটপ্রিন্ট এ কালচারাল হিস্ট্রি অব আদমস পিক। তাতে বলা হয়েছে সে পাহাড়টি ২২৪৩ মিটার উঁচু। আকৃতি কোণের মতো। ভারত মহাসাগর থেকে সে পাহাড় পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। আগেকার দিকে আরবের সৌখিন ব্যক্তিরা সমুদ্র যাত্রায় এসে পিরামিডের আকৃতির সে পাহাড় দেখে পুলকিত হতেন। তাদের কেউ কেউ এটাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড় বলেও অভিহিত করেছেন। প্রাচীনকালে সিংহলিরাও সে পাহাড়কে বিশাল উচ্চতার বলে মনে করতেন। কেউ কেউ মনে করতেন সেটিই বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড়। ৮৫১ সালে সে পাহাড়ে পদচিহ্ন প্রথম দেখতে পান আরবের সোলাইমান। রত্নপুরা হয়ে পবিত্র সে পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন বিখ্যাত আরব দার্শনিক ইবনে বতুতা। তিনি সেখানে উঠার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন বারবেরিন থেকে। তার আগে ব্যাপক পরিচিত বণিক এবং ভ্রমণ পিপাসু মার্কো পোলো আদমের পদচিহ্নে তার সম্মান জানানোর জন্য আরোহণ করেন সে পাহাড়ে। তিনি ১২৯২ সালে চীন থেকে ভেনিস যাওয়ার পথে সে সফর করেন।


সে পাহাড়ের চূড়া সামান্য একটি সমতল ক্ষেত্র। ১৮১৬ সালে লেফটেন্যান্ট ম্যালকম এর পরিমাপ করেন। তাতে দেখা যায় এর দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট এবং প্রস্থ মাত্র ২৪ ফুট। মোট আয়তন ১৭৭৬ বর্গফুট। এর চূড়ায় রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা ৮ ফুট। এর ওপরেই রয়েছে ওই পদচিহ্ন। এর দৈর্ঘ্য ৬৮ ইঞ্চি। ৩১ ইঞ্চি চওড়া। তবে বৌদ্ধরা মনে করেন ওই পদচিহ্ন হলো বুদ্ধের বাম পায়ের। বুদ্ধ তার অন্য পা রেখেছিলেন বর্তমানের থাইল্যান্ডে আগে যা সিয়াম নামে পরিচিত ছিল। থাইল্যান্ডে রয়েছে তার ডান পায়ের ছাপ। থাই ভাসায় তাকে বলা হয় ফ্রা স্যাত। সেখানে পায়ের ছাপের যে মাপ তা আদম পাহাড়ের পায়ের ছাপের মতোই। আকারও এক রকম। একই রকম পদচিহ্ন আরও পাওয়া গেছে লাওসে, ক্যাবোজে ও চীনে। বৌদ্ধরা ধারণা করেন বুদ্ধ ছিলেন ৩৫ ফুট লম্বা। তাই তিনি এত দূরে দূরে পা ফেলতেন। তবে এই পদচিহ্নকে খ্রিস্টানরাও সম্মানের চোখে দেখে। ১৫০৫ সালে শ্রীলংকা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি সে পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। তারা মনে করেন সেইন্ট থমাস দ্য ডাউবটার ভারত এবং শ্রীলংকা এসেছিলেন। তারপর তিনি এই পাহাড়ে পা রেখে স্বর্গে চলে গিয়েছেন। তবে হিন্দুরা মনে করেন সেই পদচিহ্ন হলো শিবের পায়ের।

তবে লাখ লাখ বছর ধরে চলে আসা যে রহস্য ভেদ তা আজও মানুষ জানতে পারেনি আর সেটা হলো চূড়ার যে স্থানে আদম (আঃ) এর পায়ের চিহ্ন সেই স্থানে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সূর্যের আলো, আর মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টি পড়ে না। এমন আরও অনেক রহস্য আছে এই চূড়াটিকে কেন্দ্র করে। অতি চমৎকার এই চূড়াটি বছরের পর বছর অবিকল রয়ে গেছে। এর সৌন্দর্য এতটুকু হ্রাস পায়নি। সে কারণে চূড়াটি বিশ্বের মানুষের কাছে পবিত্র বলে পরিচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৪
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×