..
...
আস্থার বিয়ে...
লেখকঃ নিলয় আহসান নিশো
..
...
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছেলেটি। মেয়েটি ছেলেটির পরের পদটিতেই চাকরি করে ছেলেটির আন্ডারে।চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে।বোরকা, হিজাব নিকাব পড়ে চলাফেরা করে।অফিসে এসে কাজ করার জন্যই হোক বা সবার সাথে সৌহার্দ বজায় রাখার জন্যই হোক নিকাব টা খুলে রাখে।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, যথেষ্ট নম্র ভদ্র সুশীল একটি মেয়ে।আগুন ঝরা সুন্দরী বলতে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে মেয়েটিকে সেটা বলা যায়। অসম্ভব সুন্দর মায়া ভরা দুটো চোঁখ আর সুতীক্ষ্ণ চাহনী। কাজের বেলাতেও মেয়েটি অন্য সব কলিগদের থেকে অনেক বেশি স্মার্ট।
..
...
অপরদিকে অফিসের বস মানে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। প্রচণ্ড রাগী টাইপের একটা ছেলে।সব সময় হয়তো রেগেই থাকেন।অফিসের ২৪জন কলিগের মধ্যে কেউ ই হয়তো তার মুখে এক দিনের জন্য ও হাসি দেখেন নি।অনেক শক্ত মনের মানুষ।কাজের বেলায় ফাকি একটু ও সহ্য করেন না তিনি।খুব কম কথা বলেন এবং বেশি কথা বলা পছন্দ করেন না।কিন্তু তবুও অফিসের সবাই ওনাকে খুব পছন্দ করেন।কারন বাইরে রাগী রাগী হলেও ওনার মন টা খুব ভাল আর উনি সবাইকে কাজে সাহায্য করেন ওনার সাধ্যমত।
..
...
কোন কারনেই হোক আর বিনা কারনেই হোক উনি মেয়ে কলিগদের সাথে তেমন ফ্রি না।তাই মেয়েটির সাথেও ওনার তেমন কথা হয়নি যদিও একই অফিসে মেয়েটি তার অধিনে প্রায় ২বছর চাকরি করছে।সাপ্তাহিক একটি বোর্ড মিটিং থাকে আর ওখানে পুরো সপ্তাহের সবার কাজ সবাইকে বুঝিয়ে দেন তিনি আর সপ্তাহের আগেই নিজের নিজের কাজ তার কাছে জমা দিতে হয়।আর সপ্তাহে এই একটা দিন ই তাদের কথা হয় শুধু মাত্র ৩-৪মিনিট এর জন্য....
:আসবো স্যার? ( মেয়েটি)
:জ্বি আসুন... (ছেলেটি)
:স্যার এইই ফাইল টা একটু দেখে দিতেন....
:রেখে যান আমি দেখে সাইন করে দিবো....
:জ্বি স্যার....
.
১ঘন্টা পর....
.
:আপনার ফাইল টায় কিছু কারেকশন আছে ওগুলো ঠিক করে কালকে আর একবার আমাকে দেখিয়ে নিবেন..
:জ্বি স্যার....
.
এই কথা হয়েছে প্রতিবারই.....
..
...
হঠাৎ একদিন মেয়েটা সন্ধ্যে বেলা অফিস ছুটির পড়েও অফিসে বসে আছে মন খারাপ করে। ছেলেটি তার কেবিন থেকে বের হতে গিয়ে দেখে মেয়েটি বসে আছে।তাই কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
:অফিস ২০মিনিট আগে ছুটি হয়েছে। বাসায় যান নি কেন?
:আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
:আমার কেবিনে যেতে পারতেন।
:আপনার সাথে কিছু কথা আছে। আপনার সময় হবে? বাইরে কফি শপে বসতে পারবেন?
:চলুন.....
বলেই মেয়েটির পিছে পিছে ছেলেটি একটি কফি শপে গিয়ে বসলো
:বলুন কি বলবেন? (ছেলেটি)
:মেয়েটি চুপচাপ...
:বলুন কি বলবেন... অফিসে কোন কলিগ ডিস্টার্ব করেছে?
কেউ খারাপ কিছু বলছে?
:না কেউ কিছু বলে নি।
:তাহলে আপসেট কেন? বলেন কি হয়েছে।
:আপনি আমাকে বিয়ে করবেন? (মেয়েটি)
:ব্যাপারটা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার মত হয়ে গেল ননা?(ছেলেটি অবাক হয়ে)
:বিয়ে করতে পারবেন কিনা সেটা বলেন?
:ভালবাসেন আমাকে?
:না..
:পছন্দ করেন আমাকে?
:অপছন্দ করি না...
:আমি যে বদরাগী সেটা তো জানেন...
:যে সংসারে ছেলেরা একটু রাগী হয় আর মেয়েটি একটু নরম হয় সেই সংসার টা অনেক অনেক বেশি সুখি সংসার হয়।
:ভালবাসেন না পছন্দ ও করেন না ঠিক মত, আমি অনেক রাগী সেটাও জানেন তাহলে বিয়ে করতে চাইছেন কেন?
..
...
:আমার আব্বু আম্মু নেই।আমি মামার পরিবারে বড় হয়েছি। আর আমার মামী তার দুঃসম্পর্কের এক ভাইয়ের ছেলের সাথে আমার কালকে বিয়ে দিয়ে দিবে।যাকে আমি জানি না চিনি না এমনকি দেখিও নি কোন দিন। অনেক চেষ্টা করেছি বিয়ে টা আটকানোর, পারিনি। তাই এমন অপরিচিত কাউকে বিয়ে করার চেয়ে আপনাকে বিয়ে করাটাই ভাল। অন্তত ২বছর ধরে আপনাকে চিনি তো। আর যত টা চিনি তাতে আপনি অন্য দশটা ছেলের মত লুইচ্চা স্বভাবের না আর মেয়েদের কে রেস্পেক্ট দিতে জানেন।
:আপনাকে বিয়ে করার আমার কাছে অনেক লজিক আছে, যেকোন ছেলেই আপনার মত মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে।কিন্তু আমাকে বিয়ে করার কোন লজিক পাচ্ছি না।
:আস্থা বুঝেন? আস্থা পাচ্ছি আপনার উপর যেটা অন্য কারো উপর এই মুহুর্তে পাচ্ছি না তাই.. আর একটা ছেলের উপর একটা মেয়ে খুব সহজেই আস্থা পায়না আর আস্থা করেও না।
.
:আপনি জানেন আপনাকে যে ছেলে পাবে সে অনেক ভাগ্যবান হবে, আপনার মত এত সুন্দরী, রুপবতী, গুনবতী মেয়ে কে জীবন সঙিনি করে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
.
:আপনাকে আমি ফ্লার্ট করতে বলছি আমার সাথে? আমি বলছি আমাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে পটানোর চেষ্টা করেন?
:এসব কি বলছেন।আমি কি তাই বলছি নাকি শুধুমাত্র আপনার প্রশংসা করলাম একটু।
:লাগবে না আমার এসব শুনতে।যদি পারেন তাহলে আজকের মধ্যেই বিয়ে টা করতে পারলে করেন।
:আমাকে তো ভালবাসেন না তাহলে বিয়ে করে সংসার করবেন কিভাবে?
:আপনাকে যত টা জানি সেটা দিয়েই চলবে, আর ইসলামে বিয়ের আগে প্রেমের অনুমতি নাই তাই বিয়েটা হলে ভালবাসা টাও হয়ে যাবে।
..
...
:আজকেই বিয়ে টা করতে হবে?
:হ্যা, আজকে আপনি শুধুমাত্র রেজিস্ট্রি টা করে রাখেন তারপর আপনার ইচ্ছে মত করে আপনার আর আমার বাসায় জানিয়ে আমাকে নিয়ে যাবেন আপনার কাছে বিয়ের বাকি নিয়ম কানুন মেনে এবং অবশ্যই আপনার আব্বু আম্মু কে নিয়ে আসবেন।
..
...
ছেলেটি তার কয়েকটি বন্ধুকে ফোন দিয়ে নিদিষ্ট একটা জায়গায় আসতে বলে মেয়েটিকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করলো।তখন মেয়েটি মাথায় ঘোমটা দিয়ে ছেলেটিকে সালাম করলো।
মেয়েটিকে নিয়ে বাইকে বসিয়ে মেয়েটির বাসার সামনে নামিয়ে দিল।
মেয়েটি ছেলেটিকে ডেকে বললো,
একটা কথা বলি,
ছেলেটি বললো, বলো
আজ থেকে তো আপনি আমার স্বামী তাই আপনার ভাল মন্দ দেখা টা আমার কর্তব্য। তাই বলছি যে বাসায় গিয়ে আজ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করবেন।
আর যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের বাকি কাজ সমুহ শেষ করে নিবেন। আর হ্যা আরেক টা কথা,
আমাদের মহানবী (সাঃ) বলেছেন,
"যে বিয়েতে খরচ যত কম, যে বিয়ে যত কম জাঁকজমকপূর্ণ সেই বিয়ে তত বেশি বরকত ময়"
তাই বিয়েতে বেশি জাঁকজমক করবেন না।
ছেলেটি চুপচাপ সব কথা শুনছিল মেয়েটির আর আজকেই প্রথম মেয়েটির সরলতা দেখে মেয়েটির প্রেমে পড়ে যাচ্ছিল।
..
...
ছেলেটি বাসায় এসে গ্রামে তার আব্বু আম্মু কে ফোন করে সব খুলে বলে আর ঢাকায় আসতে বলে। ছেলেটি ছিল পরিবারের ছোট ছেলে।আর অনেক আদরের তাই তার আব্বু আম্মু সব ভাল ভাবে মেনে নিয়ে মেয়েটির মামা মামীর সাথে কথা বলে তাদের বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে অনেক টা পরিবারবর্গ কে নিয়েই সম্পন্ন করে।
তারপর ছেলেটি সিঙেল ফ্লাট ছেড়ে দিয়ে নতুন একটা ডাবল ফ্লাট ভাড়া নেয়। সেখানে ছেলেটির সংসার গুছিয়ে দিয়ে সপ্তাহ খানেক থেকে ছেলেটির আম্মু আব্বু আবার গ্রামে ফিরে যায়।
..
...
মেয়েটি আর চাকরি করবে না।কারন সে সংসারী হবে। সন্তানের মা হবে, পাকা বাংলার বধু হয়ে গৃহিণী হবে। ছেলেটিও তাতে অনেক খুশি।কারন সে একাই যে স্যালারী পায় সেটা দুজনে দুহাতে উড়ালেও শেষ হবে না।
..
...
ওহ হ্যা বলা হয়নি...
ছেলেটি হল গল্পের নিলয়। আর চুপ চাপ সেই মেয়েটিই হল নিলয়ের লক্ষী রাগী জল্লাদ বউ নিরুপমা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৩