বিজ্ঞান অথবা যেকোনো শাস্ত্রের রয়েছে সার্বজনীন রুপ ভাষার দিক দিয়ে রয়েছে স্বতন্ত্রতা;আইনস্টাইনের কাল দীর্ঘায়নের সমিকরনটি আমেরিকায় পড়ানো হয় ইংরেজিতে আর বাংলাদেশে পড়ানো হয় বাংলায় উভয় ক্ষেত্রে হিসেব কিন্তু একই আর এটাই হচ্ছে সার্বজনীনতা;
আইন ও একটা বিজ্ঞান,এর ও রয়েছে সার্বিজনিন রুপ বিভিন্ন ধরনের মতবাদের উপরই প্রতিষ্টিত হয়েছে এ বিজ্ঞান।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়তো বিভিন্ন ধরনের দন্ডবিধি অথবা বিভিন্ন ধরনের আইন রয়েছে তবে এটা কখনোই জুরিস্প্রুডেন্স এর সাথে অসামন্জস্যপূর্ণ নয়।
যদি হয় তবে সেটা আইন নয় আইনের নামে বর্বরতা।
রেহানি জাবেরি vs স্টেট;
মারাত্মক সমালোচিত একটা আদালতের রায়,সাত বছর কারাগারে থাকার পর গতো শনিবার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে তেহরানের একটি কারাগার।
ইরানের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক একজন কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত রেহানি;আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বলেছে ধর্ষণের চেষ্টারত ঐ ব্যাক্তির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে যেয়ে সে ঐ ব্যাক্তির উপর ছুরিকাঘাত করেছে,সে এটাও বলেছে ঐ ঘরে আরও কেউ একজন ছিলো যে হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। কিন্তু এর কোনো তদন্ত করা হয়নি।
মৃত্যু দন্ড দিতে হলে অপরাধীর প্রকৃতি,বয়স,চরিত্র,পরিস্থিতি,বিদ্বেষ মূলক মনোভাব,শত্রুতামূলক মনোভাব এই সব কিছুই বিবেচনায় আনতে হয়।
এই সব গুলোই সুপ্রতিষ্ঠিত নিতী।
এর ব্যাতিক্রম হলে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় বিচারক উনার বিচারিক দৃষ্টি দিয়ে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না।
যুগান্তকারী একটা মামলা R vs Dudeley[(1984)14 QBGD 273]
তিনজন মানুষ সমুদ্রে একটা নৌকায় ৭ দিন ভেসে ছিলো ক্ষুদার তাড়নায় তারা প্রায় মারা যাচ্ছিলো শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই দুইজন মিলে একজনকে মেরে ফেলে মাংস খেতে আরম্ভ করেছিলো;আদালত মামলার রায়ে এদের দুই জনকে অভিযুক্ত করেছিলো ঠিকই তবে বিচারক নিজে রাজাকে অনুরোধ করেছিলেন ওদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্য এবং রাজাও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
রোমান আইনে একটা জনপ্রিয় মতবাদ আছে jus necessity অর্থাৎ প্রয়োজন আইন মানেনা; আমাদের দেশেও এরকম বিধান আছে কেউ নিজেকে রক্ষা করার নিমিত্তে যদি আরেকজনকে হত্যা করে ফেলে তবে সেটা খুন নয় অপরাধমূলক নরহত্যা হতে পারে।
ব্যাক্তিগত আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ কালে কৃত কোনো কিছুই অপরাধ নয়। দন্ডবিধি ৯৬
জাবেরী এই কাজটাই করেছিলো কিন্তু রেহাই পায়নি।
সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংঘটন গুলো অনেক অনুরোধ অনুনয় করেছিলো ওদের,মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করার জন্য;তবুও ওরা করেছে।!
আসলে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে নৈতিকতা;এটা বলা হয়ে থাকে"আইন ও নৈতিকতা এক না হলেও পাশাপাশি এবং সমান্তরালে চলে"
ন্যায় বিচার কখনোই প্রতিষ্টা পেতে পারেনা নৈতিকতা ছাড়া।
প্রসিকিউশন চাইলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে;একজন নির্দোষ কে দোষী সাব্যস্ত করা প্রসিকিউশনের জন্য কঠিন কিছু না যদি সে ধরেই নেয় বিচার যাই হউক তাল গাছ আমার।
ট্রায়ালে বিচারকের একটা শব্দের ব্যাবহার দেখে আঁতকে উঠলাম!
যখন বলা হয়েছিলো জাবেরী ছোটবেলা থেকেই ভিন্নরকম,সে একটা মশাও মারতো না, আরসোলা দের চটিপেঠা না করে শোর ধরে বাইরে ফেলে দিতো।
বিচারক তখন বলেছিলেন সে নাকি ছোটবেলা থেকেই পুরুষালি স্বভাবের!কী হাস্যকর!!!
বিচারিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটাও ভাবা যেতো#জীবের প্রতি মেয়েটার মায়া মমতা অপরিসীম আর তাই সে এগুলোকে হত্যা না কিরে শোর ধরে বাইরে ফেলে দিতো।
জাবেরী ন্যায় বিচার পায়নি তবে মানবতার নজীর স্থাপন করে গিয়েছে।
দান করে গিয়েছে তার দেহ,বলে গিয়েছে আমি মাটির সাথে মিশে যেতে চাইনা আমার দেহটা যেন অন্য আরেকজনের উপকারে আসে এবং যার উপকারে আসবে সে যেন আমার নামও না জানতে পারে।
মৃত্যুকে সে বলেছে নিয়তির বিধান একটু অনুতপ্ত হয়নি তাই।
আক্ষেপ করেই বলেছে বিচারের সাথে অর্থ ও সামর্থ্যর ব্যাপারটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সৃষ্টি কর্তার এজলাসে সে অভিযোগ জানাবে একদিন, সেদিন সে অভিযুক্ত করবে সেই বিচারক,পুলিশ ও আইনজীবীদের যাদের কারনে সে সুবিচার পায়নি।
পুনশ্চঃ এটা নিতান্তই সাধারণ লেখা মাত্র;এগুলো অর্থহীন তবে যদি একটু বোধ শক্তি সৃষ্টি হয় কারও ভেতরে তাহলে এরকম রেহানি জাবেরিদের মতো অসহায় মানুষ গুলো একটু হলেও উপকৃত হতে পারে কোনো একদিন।