somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংলিশ মিডিয়াম আর প্রাইভেট ভার্সিটি কালচার - জাতিবাদের চাইতে কম কিছু নয়

১৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দৃশ্যপট ১:

কয়েক মাস আগের কথা। আমার এক কাজিনের সাথে বছর খানেক পরে দেখা। ঢাকার একটি স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ক্লাস সেভেনে পড়ে ও। এবার এইটে উঠবে। ঘরের মধ্যেই ক্রিকেট খেলছিলাম। তো অবাক হয়ে দেখলাম আমার ঐ কাজিন বাংলাং গুণতে পারে না। আমি যদি তাকে 49 এর বাংলা কি হবে জিজ্ঞেস করি সে অনেক ভেবেও ঊনপঞ্চাশ বলতে পারে না। আরো ভয়াবহ অবস্থা বাংলা থেকে ইংরেজী করতে দিলে। সে আমাকে জানালো শুধু সেই নয়, তার ক্লাসের আরো অনেকেরই এমন অবস্থা। আমি ঘটনা দেখে না পারছিলাম হাসতে না পারছিলাম কাঁদতে। তবে মুচকি মুচকি হেসেছিলাম। সালাম, রফিক, বরকতের জীবনদান তুচ্ছ মনে হতে লাগলো.......

দৃশ্যপট ২:

আমার এক বন্ধু, সে এই ব্লগেও লিখে সে। তার সাথে সেদিন দেখা। কথায় কথায় মজার এক ঘটনা সে শোনালো আমায়। তার সাথে নাকি এক মেয়ের সম্প্রতি পরিচয় হয়েছে। কথা বার্তা বলে ভালোই খাতির হয়েছে। তো আমার ঐ ফ্রেন্ড ঐ মেয়েকে ফেইসবুকে এ্যাড করতে চায়। কিন্তু মেয়েতো প্রায় আঁতকে ইঠে। বলে - "না, তোমাকে আমি ফেইসবুকে এ্যাড করতে পারবো না।" স্বভাবতই আমার বন্ধু কারন জানতে চায়। সে বলে - "আমার ফেইসবুকের সব ফ্রেন্ড ইংলিশ মিডিয়ামের। তোমাকে এ্যাড করলে ওদের কাছে আমার প্রেস্টিজ থাকবে না। আমাকে ওরা ক্ষ্যাত ভাববে।" আমার ফ্রেন্ড আমাকে হেসে হেসে এই ঘটনা বলছিলো। আমি কিন্তু হাসতে পারিনি, চোখ-মুখ কুঁচকে এই কাহিনী হজমের চেষ্টা করছিলাম।

দৃশ্যপট ৩:

এও আমার এক বন্ধু। মাসখানেক আগে ঢাকার একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে সে। ইদানিংকালে ওর মধ্যে মজার একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। আমার সাথে কথা বলছে ঠিকমতোই, কিন্তু যখনি ওর মোবাইলে কোন কল আসছে ওর কথা বলার ভঙ্গি পুরোদস্তুর পাল্টে যাচ্ছে। কথা বাংলায়ই বলছে কিন্তু তাকে বাংলা বলে ঠাওড়ায় কার বাপের সাধ্য। ইংরেজী "R" আর বাংলা "র" দুটোরই উচ্চারন শোনাচ্ছি বাংলা "ড়" এর মতো। আর অবাঞ্ছিতভাবে প্রায় প্রতি ১৫টা বাংলা শব্দের সাথে একটি করে ইংরেজী শব্দ জুড়ে দিচ্ছে। অবাঞ্ছিত বলছি কারন - ভাবপ্রকাশের স্বার্থে বাংলা বাক্যের মধ্যে ইংরেজী শব্দ আনা যেতেই পারে, আমিও নিজেও তা করি। আমি বলছি না যে মোবাইলকে "মুঠোফোন বলাহোক বা অক্সিজেনকে "অম্লজান"। কিন্তু যেখানে একদমই প্রয়োজন নেই কোন ইংরেজী শব্দের সেখানেও ঠেলেঠুলে একটা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে, যেন এ কোন নতুন ভাষারীতি। বোঝা গেল আমার এই বন্ধুটি এখনো এই আজব ভাষাটি পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেনি, আর তাই ঠেলেঠুলে ঢোকানো ইংরেজী শব্দগুলোর প্রয়োগ প্রায়ই ভুল হচ্ছে। আরো একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় ছিলো, পুরোপুরি শুদ্ধ বাংলা বাক্যগুলোতে ইচ্ছাকৃত ভাবে "করতেসি", যাইতেসি, "খাইতেসি" ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। হাসি পাচ্ছিলো অনেক.......

পরিশেষ:

আমি জানতাম শিক্ষা মানুষকে প্রগতিশীল করে, নৈতিকতাকে উৎকর্ষে পৌঁছাতে সহায়তা করে। তবে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রদেরকে একরকম অছুঁত ঘোষণা করে দেয়া - এটা কোন ধরনের প্রগতিশীলতা দয়া করে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না।
আমি জানতাম শিক্ষা মানুষকে তার সত্বাকে, তার ঐতিহ্যকে কে চেনায়। তবে বাংলায় গুণতে পারার অক্ষমতা কিভাবে ঐতিহ্য আর স্বত্বা ধারণের নিদর্শন হতে পারে তা আমার জানা নেই।
আমি জানতাম শিক্ষা বিকৃতি বর্জিত, মার্জিতকে কাছে টেনে নেয়। তবে ওভাবে "র" কে "ড়" উচ্চারণ, বাংলা-ইংরেজীর অবাঞ্ছিত জগাখিচুড়ি আর শুদ্ধ-অশুদ্ধ শব্দের মিশ্রনে কথা বলা কোন ধরনের মার্জিত ভাব, তা আমি বলতে পারবো না।

উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর কি আসলেই আমার জানা নেই? তা হয়তো নয়। আসলে হয়তো জানতে চাইনা, তাই জানিনা। ব্যাক্তিগতভাবে আমি সব দায় শিক্ষাব্যবস্থার ওপর চাপিয়ে দেবোনা। যদি তাই করা হয় তবে আমাদের বিবেক, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, সচেতনতা, মানবিকতা মূল্যহীন হয়ে যাবে, মূল্যহীন হয়ে যাবে দিন-রাত ঐ দেড় কেজি ওজনের যন্ত্রটাকে মাথায় করে বয়ে বেরানো। কেউ কেউ হয়তো এখনো ঐ যন্ত্রটার সদ্ব্যবহার এখনো করেন, না হলে ইংলিশ মিডিয়াম আর প্রাইভেট ভার্সিটির অধিকাংশ ছাত্রেরই হাল এরকম হতো। কিন্তু যদি এখনি কিছু না করা হয়, তবে অধিকাংশেরই এই দশা হতে আর খুব বেশি বাকি নেই। এই পৃথিবীর বুকেই তথাকথিত উন্নত কিছু দেশে এখনো গায়ের রঙের উপর ভিত্তি করে জাতিবাদের মতো জঘন্যতম প্রথা চালু আছে। বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রদের প্রতি ইংরেজী মিডিয়ামের ছাত্রদের এই মনোভাবকে আমি তার চাইতে ভালো কোন দৃষ্টিতে দেখি না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২৯
১১০টি মন্তব্য ১০৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×