সকাল সোয়া ৮টার সময় অফিস থেকে কল। ডে-অফ এর দিনও অফিসের কল দেখেতো বুঝে গিয়েছি, কিছু একটা গণ্ডগোল নিশ্চয়ই হয়েছে। আসলেও তাই। কলিগের মামা মারা গিয়েছে। ডেস্কে আর কেউ আসে নাই। অফিস জিজ্ঞেস করল, আসা যায় কি-না। এমন অবস্থার কথা বললে মানা করাটা আমার অধিকার জানলেও বলা যায় না। অগত্যা রাজি হলাম। শর্ত হল আমি ২টার পর আর অফিস করবো না। এরপর আমার কাজ আছে। শুধু ৫ ঘণ্টার জন্য যাচ্ছি।
বাসা থেকে বের হতে গিয়ে দেখি মানিব্যাগে কোন টাকা নেই। শুধু ১৪ টাকা আছে। ক্যাশ তোলা নেই। মা-ও নেই বাসায়, বোনকে নিয়ে কোচিংয়ে গেছে। না হলে টাকা চেয়ে রাখতাম। শেষমেষ নিচে দারোয়ান এর কাছ থেকে ১০০ টাকা নিলাম ও বেরিয়ে পড়লাম।
১৪ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছালাম। ভাড়া দিলাম কাঁটায়-কাঁটায় ১৪ টাকা। হাতে রইলো ১০০। বাসের টিকেট কাটতে কাউন্টারে গেলাম। ১০০ টাকার নোট দেখে ফিরিয়ে দিল। ভাবলাম সকাল সকাল, তাই ভাংতি নাই। একটা হোটেলে ঢুকলাম একটা মিনারেল ওয়াটার কিনে টাকা ভাঙাতে। নোটটা বাড়াতেই কাউন্টারে বলল নোটটা নাকি জাল। আমিতো অবাক! আলোতে ধরে দেখি আসলেই তাই!
মেজাজ ততক্ষণে সপ্তমে নয়, অষ্টমে। কাঁচা ঘুম আর তপ্ত বেরসিক সূর্যকে সঙ্গী করে কয়েকটি রাস্তা পেরিয়ে সোনালি ব্যাংকের একটা এটিএম বুথ পেলাম। আমার কার্ড আইএফআইসি’র হলেও প্রায় সব ব্যাংকেই কাজ করে। যেহেতু শুক্রবার তাই ব্যাংকের দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম বুথটা আবার ব্যাংকের ভেতরে কি-না। সেক্ষেত্রে তো বন্ধ থাকবে। দারোয়ান জানালো বুথ খোলাই আছে। ঢুকলাম। দু’টো মেশিনই নষ্ট।
বুঝে গেলাম দিনটা কেমন যাবে। আমিও ততক্ষণে নিয়তিরে কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছি। যা ব্যাটা! ফাঁকা মাঠে কত গোল দিবি দে! আরো কিছুদূর হেঁটে ঢুকলাম আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের একটা বুথে। এবার বুথ ঠিক আছে, কিন্তু মেশিনের বাটন ঠিক নাই! একেকটা বাটন চাপলে ২০ সেকেন্ড পর আওয়াজ হয়ে প্রেস হওয়ার সংকেত দেখায়। এ কারণে ২ বার পিনকোড ভুল করলাম। দু’বারই Cancel দিয়ে কার্ড বের করে আবারও ঢুকাতে হল। তৃতীয় প্রচেষ্টায় টাকা বেরোলো। ততক্ষণে এটিএম এর দারোয়ান আমাকে নিশ্চয়ই গাড়ল ভাবছিলো।
টাকা তুললাম। সকাল সকাল হাতে ১০০০ টাকা, কিন্তু ৫০০ টাকার অতিশয় কচি দু’টি নোটের সহয়তায়। সেই নোট নিয়ে বাস কাউন্টারে যাওয়া যাবে না, ১০০ টাকাই ভাংতি পাওয়া যায়নি, ৫০০’র তো প্রশ্নই আসে না। আর এত সকালে কোন মহানুভবের দেখাও পাব না যে আমাকে ভাংতিটা দিয়ে উপকার করবে। অতঃপর কি আর করা, যে অফিসই আমার করারই কথা না তা করতে বাধ্য হয়ে আমাকে ১২০ টাকা ভাড়ায় সিএনজিতে উঠতে হল - এই আশায় যে সিএনজি চালকদের কাছে বড় নোটের সন্ধান পাওয়া যায়।
ওঠার পর চালককে জিজ্ঞেস করলাম ৫শ’র ভাংতি আছে কি-না। সে বলল, তার কাছে ৪০০ টাকা আছে, আমার কাছে ২০ টাকা হবে কি-না। জানালাম নেই। অতঃপর অফিসে কল করে আরেক কলিগকে দিয়ে অফিসের সামনের চায়ের দোকানে (দোকানদারের নাম লাদেন) ২০ টাকা বরাদ্দ করালাম। চায়ের দোকানে নেমে লুঙ্গি ঝুলিয়ে মোচওয়ালা পান চিবুতে থাকা ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনিই কি লাদেন?” মাথা নেড়ে জানালেন, হ্যাঁ তিনিই লাদেন। টাকাটা বের করে দিলেন। পৃথিবীতে আর কেউ লাদেনের দেখা পেয়ে এত আনন্দিত হয়েছে কি-না জানিনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪০