somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমজান মাসে অনুষ্ঠিত যত সব বিখ্যাত ইসলামী যুদ্ধ সমূহ।

২৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পবিত্র রমজান মাস,কুরআন নাজিলের মাস। সেই সাথে এই মাসটিকে কুরআন বিজয়ের মাসও বলা যায়। কারণ ইসলামের প্রাথমিক যুগে এই মাসে অনেকগুলো যুদ্ধ সংগঠিত হয়। আর সেই সব যুদ্ধে মুসলিমরাই বিজয়ী হয়। আর এই বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামের বিস্তৃতী ঘটে। দেশ থেকে দেশান্তরে ইসলামের সুমহান আদর্শ ছড়িয়ে পড়ে। পবিত্র রমজান মাসে যেসব যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে তার একটি তালিকা আপনাদের সামনে তুলে ধরবার চেষ্ঠা করছি। পবিত্র রমজান মাসে যতোগুলো যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে তার মধ্যে বদর যুদ্ধটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! কারণ এই যুদ্ধের উপর ইসলামের ভাগ্য দাড়িয়েছিল! এই যুদ্ধে মুসলিমরা পরাজিত হলে আজ হয়তো বিশ্বের বুকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাম নেবার মত দ্বিতীয় কোন মুসলিম অবশিষ্ঠ থাকতো না। বদর ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি যুদ্ধ রমজান মাসে সংঘঠিত হয়েছে।


হিজরী ১ম সালের প্রথম রমজানে সর্বপ্রথম হামযাহ বিন আব্দুল মোত্তালিব (রাঃ) এর নেতৃত্বে ছোট একটি মোজাহিদ বাহিনী মদীনায় পাঠানো হয়। এরপর ওবায়দাহ বিন হারেস বিন আব্দুল মোত্তালিব (রাঃ) এর নেতৃত্বে আরও একটি মোজাহিদ বাহিনীকে মদীনায় অভিযানে পাঠানো হয়। আর এ অভিযান ছিল মদীনার ইহুদীদের বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমজানে বদর যুদ্ধ সংগঠিত হয়।
তৃতীয় হিজরীতে উহুদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যদিও ৭ শাওয়াল মাসে উহুদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। কিন্তু পুরো রমজান রমজান মাস জুড়েই মুসলিমরা উহুদের জন্য প্রস্তূতি গ্রহণ করে।
৫ম হিজরীর রমজান মাসে মুসলিমরা আহযাব তথা খন্দক যুদ্ধের প্রস্তূতি গ্রহণ করে। যদিও খন্দক সংগঠিত হয় শাওয়াল মাসে।
৬ষ্ঠ হিজরীর রমজান মাসে মুসলিমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুজাহিদ বাহিনীকে বিভিন্ন অভিযানে পাঠায়। তাদের মধ্যে ওক্কাসা বিন মামফী,আবু ওবায়দা বিন জাররাহর নেতৃত্বে দু’টো দল ‍দু’টো অভিযানে যায়।
৭ম হিজরীতে গালিব (রাঃ) এর নেতৃত্বে ১৩০ জন মুজাহিদ, বনি আবিদ বিন ছাকিলার বিরুদ্ধে লড়াই করতে বের হন।
৮ম হিজরীর ২০ রমজান মক্কা বিজয় সংগঠিত হয়।
৯ম হিজরীর রমজান মাসে তাবুক যুদ্ধের কিছু কিছু ঘটনা সংগঠিত হয়।
১৫ হিজরীর ১৩ রমজান হযরত আবু ওবায়দা বিন জাররাহ (রাঃ) এর নেতৃত্বে হযরত উমর (রাঃ) এর খেলাফত কালীন সময়ে জেরুজালেম জয় করেন। মক্কার মত মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রস্থান বায়তুল মুকাদ্দাস এই রমজান মাসেই জয় করা হয়।

হযরত উমর (রাঃ) এর শাসনামলে পারস্য বিজয়ের প্রয়োজন দেখা দেয়। কারণ রোমান সাম্রাজ্যের পাশাপাশি তৎকালীন পারস্য সম্রাজ্যও মুসলিমদের নিরাপত্তায় হুমকির কারণ হয়ে দাড়ায়। তারা সীমান্তবর্তী আরব মুসলমানদের মাঝে ইসলামী শাসনের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এছাড়াও রাসূল (সঃ) বেঁচে থাকতেই তাঁর পাঠানো দূতকে তৎকালীন পারস্য সম্রাট খসরু অপমান করে। তাই আমিরুল মোমেনীন হযরত উমর ফারুক (রাঃ) হযরত সা’দ বিন ওয়াক্কাসকে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি বানিয়ে পারস্য অভিযানে পাঠান। কাদেসিয়ার ময়দানে পারস্য সম্রাট ইয়াযদাগারদের প্রধান সেনাপতি রুস্তম এবং তার সৈন্যদের সাথে ১৫ রমজান মুসলিমদের মোকাবেলা হয়। এতে রুস্তম নিহত হয় এবং মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।

তৎকালীন অপর পরাশক্তি রোমান সাম্রাজ্য ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করে। তারা বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে মুসলিম ভূখন্ডে বিশৃঙ্খলা তৈরীর চেষ্ঠা করে। হযরত আমর বিন আ’স (রাঃ) ২০ হিজরীর ২ রমজান, ব্যবলিন দুর্গ অবরোধ করার পথে রোমান বাহিনীকে পরাজিত করেনন।

উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদের শাসনামলে তাঁর সেনাবাহিনী প্রধান মুসা বিন নোসায়ের ৯১ হিজরীর ১ রমজান তোয়াইফ বিন মালিককে স্পেনের রাস্তা আবিষ্কারের জন্য সমুদ্র যাত্রায় পাঠান। এরপর ৯২ হিজরীর রমজান মাসে তারেক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে স্পেন বিজয় হয়। তারেক নৌকার মাধ্যমে পানি সীমা পেরিয়ে স্পেন পৌছে মুসলিম সেনাবাহিনীর নৌকাগুলোকে জালিয়ে দেন। সেই সাথে তিনি মুসলিম বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘হে সৈন্যরা তোমাদের পেছনে সাগর, সামনে শত্রু বাহিনী। আল্লাহর কসম, তোমাদের জন্য ঈমানের দাবীতে সত্য বাদিতার বাস্তবায়ন ও ধৈর্য ধারণ ব্যতিত বাঁচার আর কোন পথ নেই’। এরপর মুসলিমরা শত্রুদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন এবং সেই কাঙ্খিত বিজয় ছিনিয়ে আনেন।

৯৩ হিজরীর ৯ রমজান মুসা বিন নোসায়ের স্পেনে পরিপূর্ণ জয়লাভের জন্য আক্রমন চালান। হিজরী ৯৬ সালের রমজান মাসে মোহাম্মাদ বিন কাসিম অত্যাচারী শাসক দাহির কে পরাজিত করেন। সেই সাথে তিনি ভারত বর্ষে মুসলিম শাসন কায়েম করেন।


বাইজেন্টাইন সম্রাট থিওফিল রোম সাম্রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত যপেট্রা ( Azopetra)আক্রমন করে শহরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেন। শিশু ও পুরুষদের দাস এবং মহিলাদের দাসী বানিয়ে নেন। তাদের অনেকর চোখ উপড়ে ফেলে এবং নাক কান কেটে দেয়া হয়। এটা মোতাসিমের মায়ের জন্মস্থান। এই সংবাদ পেয়ে মুসলিম বীর মোতাসিম খুব দুঃখিত হন। তাছাড়া হাশেমী বংশীয় এক মহিলা করুন সুরে বিলাপ করে ‘হে মোতাসিম’ বলে সাহায্য কামনা করেন। এটা তাঁর কানে আসলে মোতসিম সম্রাট থিওফিলের বাপের জন্মস্থান আমুরিয়া ধ্বংসের প্রতিজ্ঞা করেন। মোতাসিম ৫ লাখ মুসলিম সৈন্যের নেতৃত্ব প্রদান করেন। এশিয়া মাইনরে দুই বাহিনীর যুদ্ধে থিওফলের বাহিনী পরাজয় বরন করে। ২২৩ হিজরীর রমজান মাসে আব্বাসী খলিফা মোতাসিম বিল্লাহ বাইজেন্টাইন সম্রাটকে পরাজিত করে আমুরিয়া জয় করেন।


২১২ হিজরীর রমজান মাসে যিয়াদ বিন আগলাবের হাতে ইটালীর সিসিলি দ্বীপ জয় হয়। ৪৬৩ হিজরীর ২৫ রমজান সেলযুক রাষ্ট্রের ‍সুলতান ও মুসলিম রাষ্ট্রের অধিনায়ক আল আরসালান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের উপর জয়লাভ করেন। বাইজানটাইন সম্রাট ৪র্থ রোমানোস মালাজগারদ নামক ঐ যুদ্ধে বন্দি হন। তাদের মিত্র রুশ,বৃটিশ,আর্মেনিয়ান,আকরাজ,খাজার ও গোয ক্রুসেডাররা সম্বেলিতভাবে পরাজিত হন। মালাজগারদ এশিয়া মাইনরের পশ্চিমে আখলাত নামক স্থানের কাছে অবস্থিত। ঐ যুদ্ধে বাইজেন্টাইন বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ এবং এর বিপরীতে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ হাজার। মুসলিমরা ঐ দিন কাফনের কাপড় পরে যুদ্ধে নামে।

৫৩২ হিজরীর রমজান মাসে ইমামুদ্দিন জঙ্গির নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী উত্তর সিরিয়ার হালব শহর জয় করেন এবং খৃষ্টান ক্রুসেডারদের পরাজিত করেন। ৫৮৩ হিজরীর রমজান মাসে সালাউদ্নি আউয়ুবী বায়তুল মোকাদ্দাস উদ্ধারের লক্ষ্যে হিত্তিন ময়দানে পৌছেন। সেখানে ১ লাখ ৬৩ হাজার অশ্বারোহী খৃষ্ঠান যোদ্ধাকে পরাজিত করেনভ মুসলিম বাহিনী জেরুজালেমের খুষ্ঠান রাজাকে বন্দি করে।

এরকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ এই রমজান মাসে সংগঠিত হয়েছে। আর আল্লাহপাক তাঁর অসীম রহমত এর মাধ্যমে মুসলিমদের সহযোগিতা করেন এবং বিজয়ী করেন। তাই রমজান মাসের অজুহাত দিয়ে কাজ কর্ম থেকে নিজেকে বিরত লাখা শুধুই একটি অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। আর সেই মুসলিম জাতি যারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন খাবার খা্ই না। আর আমাদের শক্তির প্রধান উৎস খাবার নয়, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×