somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমেরিকায় কেউ কপালে হাত ছুঁয়ে জ্বর দেখেনা।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটকালে জ্বর হলে স্কুল কামাই করা যেত, আবার শুধু জ্বর তেমন কঠিন রোগও না, তাই জ্বর খুবই কাম্য অসুখ ছিল। আমার প্রায়ই জ্বর হত। প্রতি বছরই কয়েকবার অন্তত। আমি এম্নিতেই তালপাতার সেপাই ছিলাম, জ্বর হলে আরো কাবু হয়ে যেতাম। তবে জ্বর থাকা অবস্থায় জ্বর বাড়াকমার সাথে সাথে মুডও পরিবর্তন হত। খুব বেশী জ্বর হলে লেপমুড়ি দিয়ে টকটক করে কাঁপাকাঁপি করাতেও একটু মনে হয় রোমান্ঞ আছে, নাকি?

জ্বর হলে আমার বাবা রাতে আমি আধো-ঘুম হলে হাত কপালে ছুয়ে জ্বর দেখত। বাবার গায়ের গন্ধ পেতাম, ভাল লাগত খুব। আমার বাবার গায়ের গন্ধটা দারুন, শুধু জ্বর হলেই বাবা গা ছুঁয়ে দেখত, এম্নিতে বাবা কখনও ছেলেমেয়েদেরকে আদর করা জানতনা। নিজে সাত বছর বয়সে মা হারিয়েছিলেন এবং মোটামোটি আদরযত্ন ছাড়াই, অবহেলায় বড় হয়েছেন, সেজন্যই হয়ত বা। তাই জ্বর হলে এদিক দিয়ে ভালই হত। তবে রাতে বাবা কয়েকবার ঘুম থেকে উঠে মশারি ঠিকঠাক আছে কিনা, বালিশ একপাশে হেলে গিয়েছে কিনা, আমি আর ভাইয়া খাটের একদম একপাশে চলে এসেছি কিনা এসব দেখতেন। দিনের বেলা পড়ালেখা করার জন্য রাগারাগি করতেন, রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে বালিশ ঠিক করে দিতেন। বাবার ভয়ে আমরা মার্বেল, ডাংগুলি এসব খেলতে পারতাম না গ্রামের অন্যসব ছেলেদের সাথে, গাছে উঠতে পারতাম না, বেশিক্ষণ পুকুরে সাতরাতে পারতাম না। গ্রামের অন্য কোন ছেলেকে তাদের বাবা-মা'রা এসব করতে বাঁধা দিতনা, শুধু আমার বাবা কেন বাঁধা দিত জানিনা। মার্বেল খেলা নাকি জুয়া শেখায়, ডাংগুলি চোখে লাগতে পারে, পুকুরে বেশিক্ষণ থাকলে অসুখ করবে, গাছে উঠলে পড়ে যাওয়ার চান্স আছে। অবশ্য বাবার অজান্তে সবকিছুই করেছি, শুধু ধরা না খাওয়াটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

জ্বর হলে মা তো সারাক্ষণ বসেই থাকত পাশে, সুরা ইয়াসীন আরো কত কি সূরা পড়ে ফু দিত কিছুক্ষণ পরপর। অর্থনৈতিকভাবে টানাটানির সংসারেও কিভাবে কিভাবে জানি বাবা-মা আমি যা খেতে চাই তাই জোগাড় করে ফেলত জ্বর হলে। জ্বর হলে আমার মায়ের নফল নামাজ পড়ার হার অনেক বেড়ে যেত, রাতজেগে এম্নিতেই মা তাহাজ্জুদ পড়তেন, তখন আরো অনেক বেশি পড়া শুরু করতেন। জ্বর হলে মা যখন মাথায় পানি ঢালত তখন ভাল লাগত, ঠান্ডা পানি চুলের ভিতর দিয়ে পড়ছে, মা হাত দিয়ে মাথায় পানি সমভাবে পড়ে যেন সেভাবে বিলি কাটছে। আমাদের খাটটা পুরানো হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু জ্বর হলে মা বেডশীট প্রতিকয়েকদিনেই বদলে দিত, যাতে ফ্রেস লাগে। প্রতি কয়েক মিনিট পরপর মা কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখত। জ্বরে কয়েকদিন ভুগার পর যখন একটু ভালর দিকে, তখন যে মায়ের মুখে সারাক্ষণ কি খুশি লেগে থাকত। একটা মানুষ এত অল্পতে কেন খুশি হবে?

এমেরিকায় মানুষ থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর দেখে, কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখেনা। এমেরিকান মায়েরা কি ছেলের জ্বর হলে মাথায় পানি ঢালে? জ্বলপট্টি দেয়? মায়েরা হয়ত আমার মায়ের মতই তাদের ছেলেকে ভালবাসে এখানে। তবুও আমি আমেরিকার মায়েদেরকে অনুরোধ করব তারা যেন তাদের সন্তানের জ্বর হলে তাদের পাশে বসে বাইবেল থেকে কিছু পড়ে ফু দেয়, তাদের মাথায় যেন পানি ঢালে, ঠান্ডা পানি, পারলে যেন জলপট্টিও দেয়। আর যেন কিছুক্ষণ পর পর কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখে। আমার মা হাতের তালু দিয়ে একবার জ্বর দেখতেন আবার হাতের উল্টা তালু দিয়েও একবার দেখতেন। এমেরিকার মায়েদের কাছেও অনুরোধ ঠিক যেন সেভাবেই জ্বর দেখে। থার্মোমিটার ব্যবহার করতে চাইলে করুক, আমার আপত্তি নেই, তবে যেন একবার হলেও হাত দিয়ে জ্বর দেখে। এমেরিকান বাবাদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন রাতের বেলা মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে তাদের সন্তানেরা খাট থেকে পড়ে যাচ্ছে কিনা সেটা দেখে। ছেলের জ্বর হলে আমার বাবা রাতের বেলা হলে কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখতেন, দিনের বেলা অত ভালবাসা দেখাতেন না, শুধু আমার হাত একটু করে দেখতেন। এমেরিকান বাবাদেরও উচিৎ হবে সেরকম করা। বাবা জ্বর বেশি দেখলে মুখে দুঃখের একটা শব্দ করতেন, এমেরিকান বাবারাও সেরকম করতে পারে, সেটাই বরং ভাল হবে।

তবে এমেরিকান মায়েদের অবশ্যই উচিৎ আমার মায়ের মত করে হাত দিয়ে জ্বর দেখা। এর অন্যথা করা ঠিক হবে না। সত্যি এমেরিকান মায়েরা যেন এরকমই করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:২৭
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×