somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যত দোষ, ধর্মঘোষ!

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিচার্ড ডকিনসের "নব্য নাস্তিক্যবাদের" আড়ালে ইসলাম-বিদ্বেষী মৌলবাদি নাস্তিক্যবাদের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটেছে গত ১০-১২ বছরে। নব্য-নাস্তিক্যবাদের প্রাথমিক প্রবক্তা ডকিনস, হিচেনস, স্যাম হ্যারিস প্রমুখকে নাস্তিক নারীবাদীরা আবার চরম নারীবিদ্বেষীও মনে করে। অথচ ডকিনস প্রমুখ ধর্মগুলোকেই নারীবিদ্বেষী বলে!! সাম্প্রতিককালে নাস্তিকদের সম্মেলনে নারীদেরকে যৌন হয়রানি একটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে, কিন্তু ডকিনস সেসব হয়রানিকে অগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখে (trivialize করে) নারীবাদীদের পেরেশানির কারন হয়েছে। নারীদের যৌন হয়রানি তো আছেই, সাম্প্রতিক নাস্তিক সম্মেলনগুলোতে পুরুষদেরও সমকামী নাস্তিকরা যৌনতার জন্য তাড়া করা শুরু করেছে। কথাবার্তা শুনে মনে হয় নাস্তিক সম্মেলনে যৌনকাতর নাস্তিক পুরুষরা ক্রমাণ্বয়ে পুরুষ এবং নারী দু-লিঙ্গেরই নাস্তিকদেরকে তাদের মারণাস্ত্র পুরুষাঙ্গ হাতে নিয়ে অমানসিকভাবে তাড়া করছে, পশুর মত নিরীহ নাস্তিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। অনেক নারী এবং পুরুষ নাস্তিক তাই নিজেদের সতীত্ব রক্ষার্থে নাস্তিক সম্মেলন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিছে।

তবে আমার এ পোস্টের প্রসংগ ভিন্ন। সাধারণত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত যারা পশ্চিমা ধ্যানধারণায় প্রভাবিত এবং সেক্যুলার বলে নিজেদেরকে পরিচয় দেন, তারা বিশ্বের সব সমস্যার জন্য ধর্মকে দায়ী করেন। উপরোল্লেখিত নাস্তিকগন এবং তাদের চেলারা এই ধর্মবিদ্বেষী আন্দোলনের অগ্রপথিক। তাদের মুখ থেকে প্রায়ই শোনা যায় "ধর্ম সকল যুদ্ধ-সন্ত্রাসের" জন্য দায়ী। উল্লেখ্য এই কথাটার কোন ভিত্তি নেই, পুরাটাই অন্ধবিশ্বাস/মিথ। প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকার আদায়, অবিচারের বিরুদ্ধে এবং লোভের জন্য সব যুদ্ধ হয়। ধর্ম অনেক সময় পার্শ-অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, ধর্ম যেখানে অনুপস্থিত সেখানে সংস্কৃতি, জাতীয়তা, জাতি ইত্যাকার নানা শ্রেণীবিভেদ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

তবে এসব হল আপেক্ষিক পর্যবেক্ষণ। ধর্ম সব (বা অধিকাংশ) যুদ্ধের জন্য দায়ী কিনা সেটা বুঝার জন্য আমাদের বাস্তবিক প্রমাণ (empirical evidence) লাগবে। এরকম বাস্তবিক প্রমাণ কিন্তু অধর্মই যত নষ্ঠের মূল বলে প্রমাণ করে। যুদ্ধের বিশ্বকোষ (Encyclopedia of wars)-এ স্মরণকালের ইতিহাসে যত যুদ্ধ হয়েছে তার হিসেব করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে মানব ইতিহাসে যত যুদ্ধের হিসেব পাওয়া যায় তার মাত্র শতকরা সাত ভাগ ধর্মের সাথে কোন না কোন সংস্পর্শ আছে, বাকি তিরানব্বই ভাগই ধর্মের সাথে সমপর্কহীন কারনে হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা এসব যুদ্ধে যত মানুষ মারা গেছে তার মাত্র দু-ভাগ ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত যুদ্ধের কারনে হয়েছে। তার মানে যুদ্ধের ইতিহাসে যত হত্যাযজ্ঞ হয়েছে তার আটানব্বই শতাংশই ধর্মের সাথে সম্পর্কহীন। তবুও কেউ যদি বলে ধর্মের কারনে সব যুদ্ধ হয় তাহলে সে বেকুব বা অন্ধবিশ্বাসী, মৌলবাদী ছাড়া কিছুই নয়।

মানুষের ইতিহাসে সবচেয়ে ধর্মহীন শতক ছিল বিংশ শতক। এই শতকে ইউরোপীয় নানারকম আন্দোলনের প্রভাবে ধর্ম অন্য যেকোন শতকের তুলনায় সবচেয়ে কম প্রভাব বিস্তার করেছে। বিপরীতে অধর্ম, নাস্তিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, সাম্যবাদ নানারকম আন্দোলন শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু মানুষের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী শতক হচ্ছে বিংশ শতক, এ শতকে দুটা বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে, অনেক বড় বড় গণহত্যা হয়েছে, স্টালিন-মাও-পলপট গংরা লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, শতকের শুরুতে ইয়াং টার্ক নামে ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা ধ্যান-ধারণায় উদ্ধুদ্ধ লোকের জন্য আর্মেনিয় গণহত্যা হয়েছে। জাতীয়তাবাদের জন্য বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে, কম্যুনিজমের জন্য মারা গেছে আরো বেশি লোক। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশসমূহে ধর্মনিরপেক্ষ সৈরশাসকরা নিজেদের দেশের মানুষদেরকে অত্যাচার-অবিচারে জর্জরিত করেছে। এসব কিছুই হয়েছে ধর্মহীনতার প্রেক্ষাপটে, ধর্মকে ব্যাকগ্রাউন্ডে ফেলে দেওয়ার পরে।


ধর্মহীনতার সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে পরিবেশ। ধর্মহীন মানুষ তার সবর্বশক্তি দিয়ে প্রকৃতিকে বশে আনতে চেয়েছে, শিল্পের অগ্রগতির জন্য সারাবিশ্বের সমস্ত প্রার্কৃতিক সম্পদকে কুক্ষিগত করে বস্তুগত উন্নতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে, এতে লক্ষ লক্ষ প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে, পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিপদজনক পর্যায়ে চলে গেছে। ধর্মহীন মানুষ যদি প্রকৃতিকে এভাবে ধর্ষণ করতে থাকে তাহলে মানব প্রজাতি এ বিশ্বে আর এক শতকও টিকতে পারবেনা। ধর্মহীনতা মূলত মানবজাতিকে তার বিলোপের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পক্ষান্তরে সকল ধর্মই প্রকৃতিকে সম্মান করতে শেখায়, প্রকৃতিকে দাস বানিয়ে মানবসেবার লোহবর্ম না পড়িয়ে বরং তার সাথে সহাবস্থান শেখায়।

ধর্মের কারনে নানাসময়ে অনেক সন্ত্রাস হয়েছে, হচ্ছে,অস্বীকার করার উপায় নেই। বৈশ্বিক উগ্রবাদ একটা বড় সমস্যা। কিন্তু অধর্মের কারনে যত সমস্যা-সংঘর্ষ-যুদ্ধবিগ্রহ হয়েছে, হচ্ছে সেসবের তুলনায় ধর্মের কারনে সমস্যা মূলত গণনারও বাইরে। এটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কিছু না, ফ্যাক্ট-এভিডেন্স এটাই বলে। কেউ এর বিপরিতে বললে তাকে প্রমাণ-ফ্যাক্টস দিয়ে সেটা সমর্থন করতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩০
২২টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×