somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচার

১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তলপেটে মোচড় দিয়ে উঠতেই আড়মোড়া ভাঙ্গলো রুজি। লেপটা সরিয়ে দুই লাফে চৌকাঠ মাড়ালো,তারপর বারান্দা থেকে বদনাটা নিয়ে রওনা হলো উঠোনের টিউবওয়েলের দিকে। পানি ভরে নিয়ে দোচালা ঘরটা পেছনের মজা পুকুরের ওপর কলাপাতার শতচ্ছিন্ন ছাউনিতে ঘেরা বাঁশের পাটাতনের দিকে সে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেল। ছত্রাক-শৈবালে ছেয়ে যাওয়া পাটাতনে রুজির পা পড়তেই বাঁশগুলো আর্তনাদ করে উঠলো। কিছু ঝুর পড়ার শব্দও হলো। আওযাজ পেয়ে পাটাতনটির নিচে ভেসে উঠলো মিচমিচে কালো শুঁড়ওয়ালা কিছু মুখ। আসলে মাগুর । প্রতিদিনের মতো আজও তারা প্রাতঃরাশ সারতে ভিড় জমিয়েছে । পুকুরটির অপরপাড়ে নয়না গাছে চড়ে তীর-ধনুক হাতে এতক্ষন পর্যন্ত এই সময়টির জন্যই অপেক্ষা করছিল দীনু। প্রথম মাগুরটি লাফ দিতেই তাকে গেঁথে ফেললো সে। এভাবে আরও পাঁচটা। দীনু বেশ খুশি হয়ে ওঠে। আর মাত্র চারটে খতম করলেই যে আংটিটি উদ্ধার হবে ! তবে মাগুরের পেটে আংটিটি না পাওয়া গেলে পাটাতনটির চার পায়ে বাঁধা হুচি জাল তো আছেই। রুজির পেট থেকে বেরিয়ে অন্তত সেখানে আটকা পড়তেই হবে আংটিকে।

সেই ভোর হতে বসে আছে দীনু। নিজের সুন্নতে খতনায় পাওয়া আটখানা আংটির মধ্যে বেছে বেছে সবচেয়ে সুন্দরটি সে রুজিকে উপহার দিয়েছিল। না,প্রেমের গন্ধ নেই্। কারণ,আট-নয় বছরের মস্তিস্কে ওই বস্তু ধরেনা। তবে,একই ক্লাসে পড়ায় তাদের মধ্যে বোঝা-পড়াটা বেশ চমৎকার। বাড়িয়ে বললে বন্ধুত্ব । সেদিন পাঁচকাঠির বিলে দাউন দিয়ে মাছ মারার সময় এই প্রস্তাবটাই পেড়ে বসেছিল দীনু-'হ্যাঁরে,রুজি আমার বন্ধু হবি ?'
-বন্ধু হতে গেলে আগে উপহার দিতে হয়।
-তুই জানলি কিভাবে ?
-ওমা !,সিনেমায় দেখিসনি সালমান শাহ রুমাল দিয়ে মৌসুমিকে বন্ধু বানায় ?
-তোর কি রুমাল চাই ?
-না,রুমাল দিয়ে কি করবো ? আমার একটা আংটি চাই।
-আংটি দিয়ে কি করবি ?
-আমার একটা আংটির খুব সখ। সেদিন মাতবর বাড়ির বিয়েতে বউটা এতসুন্দর একটা আংটি পড়েছিল জানিস,মা তো দেখেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে খাকলো । আমারও খুব পছন্দ হয়েছিল।
-আচ্ছা,কাল সকালে স্কুলে গিয়ে পাবি।
দীনু এমনই। কাউকে মনে ধরলে তার জন্য সব করা চাই। সেদিন রাতেই মায়ের গয়নার বাক্স থেকে সাদা পাথরের আংটিটি সরিয়ে রাখে দীনু। কাজটা খুব সাবধানে করতে হয়েছে তাকে। ধরা পড়লেই রক্ষে নেই। এমনিতেই রুজির সঙ্গে খেলতে দেখলে দীনুকে কান ধরে তুলে নিয়ে আসে তার বাবা। কারণ,তেলে-জলে কখনোই মেলে না। দীনুর বাবার সম্পত্তি বর্গা চষে গ্রামের অর্ধেক মানুষের সংসার চলে, আর রুজির বাবাকে সংসার চালাতে হয় গাজনার বিলে জাল ফেলে। প্রতিবেশি হলেও জেলের মেযের সঙ্গে ছেলের সখ্যতা দীনুর বাবার চোখের বিষ।
পরদিন স্কুলে টিফিনের ফাঁকে খালি ক্লাসে রুজিকে আংটিটি উপহার দেয় দীনু। ঢিলে আংটিটি কচি আঙ্গুলে চেপে খিলখিল করে হেসে ওঠে রুজি। দীনু বলে-তাহলে, বন্ধু হচ্ছিস তো ?
-ঠিক আছে। এটা তুই আমায় একেবারে দিয়ে দিলি ?
-হুঁম।
সেদিন খুব ফুরফুরে মনে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে দীনু। কিন্তু বাসায় পৌঁছেই বুঝতে পারে কিছু একটা ঘটেছে। খাবার টেবিলে মায়ের মুখেই জানতে পারলো সবকিছু। দীনুকে তার মা জিজ্ঞেস করলো-খোকা,তোর বড় মামার দেয়া আংটিটা খুঁজে পাচ্ছি না ?
-আমি কিভাবে জানবো ?
-তুই আমার আঁচল থেকে সিন্দুকের খবর পর্যন্ত রাখিস ? সত্যি করে বল আংটিটি কি করেছিস ? নইলে,আগামিকাল তোর বাবা বাসায় এলে সব বলে দেব।
এইবার ভয় পেল দীনু। বাবা জানলে মেরে পিঠের ছাল তুলে নিবে। দুই হাতে খাওয়া শেষ করে দীনু বের হলো রুজির খোঁজে। পেয়ে গেল তাগাদাই। বাড়ির পাশের পালানে টাকি মাছ শুটকি করছিল রুজি। দীনুকে দেখেই তার মুখে মেঘ ভর করলো। কিন্তু দীনু ছাড়ার পাত্র নয়। সে সোজা বললো-রুজি,আংটিটা দে।
-কেন ? ওটা তো আমাকে দিয়েছ।
- না,বাবা মারবে।
রুজি কাঁচুমাচু হয়ে বললো- আমি যে আংটিটা খেয়ে ফেলেছি।
দীনু আকাশ থেকে পড়ে-মানে ! খেয়ে ফেলেছিস !
-আংটি পরা অবস্থায় আঙ্গুলটা মুখে দিয়েছি,আর ওমনি আংটিটা সুড়ুৎ করে গলা দিয়ে নেমে গেছে।
আর সহ্য করতে পারেনা দীনু। সোজা কয়েক ঘা বসিয়ে দেয় রুজির চোখ-মুখ বরাবর। মাটিতে পড়ে সে কাঁদতে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে রুজিকে টেনে তুলে পকেট থেকে তেঁতুল বের করে দেয় দীনু-এই নে খা।
-না,খাবো না।
দীনু ধমকে ওঠে-খা,নইলে কিন্তু আবারও মারবো।
রুজি ততক্ষনে তেঁতুলে কামড় বসিয়ে দিয়েছে। দীনু জিজ্ঞেস করে-আংটিটি তোর পেটে ?
-হুঁম।
-এখন পর্যন্ত পায়খানায় গিয়েছিস ?
-না।
হঠা্ৎ কি ভেবে দীনুর মুখ-চোখ উজ্জল হয়ে ওঠে। একটু ভেবে সে বলে-একটু দাঁড়া,আমি আসছি।
-কোথায় যাও ?
-এখানেই থাক,আমি যাবো আর আসবো।
কিছুক্ষন পর দীনু ফিরে আসে। তারপর রুজিকে বলে-শোন,কাল ভোরবেলা তুই পায়খানায় যাবি। আমি আগেই পাটাতনের চারপাশে জাল বেঁধে রাখবো। আর তোদের পুকুরে যে ১০টা মাগুর মাছ আছে সেগুলোর জন্য তীর-ধনুক তো আছেই। কোন সমস্যা নেই,ভাবিস না-দীনু আশস্ত করে।
-কিন্তু সক্কাল বেলাই যে আমার বেগ চাপবে তা তুমি কিভাবে জানলে ?
দীনু পকেট থেকে একটা ছোট্ট পলিথিনের ব্যাগ বের করে রুজির হাতে দিয়ে বলে-এই নে,পানির সঙ্গে এইটা একটু খেয়ে নিবি,দেখিস পায়খানা পাটাতনে যাওয়ার আগেই হয়ে যাবে।
-এটা কি ?
-জামালঘুটা। খুব কাজের জিনিষ। তবে বেশি খাসনা,শেষে ঢিলা হয়ে যাবে।
-আচ্ছা।
তা্রপর থেকে দীনুর বিশ্রাম বলে কিছু নেই। সন্ধ্যা লাগোয়া ওই পচা পুকুরে ডুবুরির মতো নেমে সে জাল ফেলার কাজ সেরেছে। গায়ে রয়নার তেল মাখায় পানিকামড়ের দল দাঁত বসাতে পারেনি। পরদিন সকালে দীনুর প্রত্যাশামতোই কাজ করেছে রুজি। দীনুও ছয়টা মাগুর গেঁথে আংটি খোঁজার শুভসূচনা করেছে। কিন্তু গোটা ব্যাপারটি ঈশ্বরের পছন্দ হলো না। তাই,কিছুক্ষন পরই ভেসে আসলো রুজির বাবার চিৎকার-হা,রে,রে,রে,মিয়ার ব্যাটা আমার সর্বনাশ করছে। মাছগুলা মাইরা ফালাইলো রেএএ্এ ! দীনু ততক্ষনে চম্পট দিয়েছে।
দাঁত মাজার জন্য হেঁসেলে কয়লা খুঁজতে গিয়ে পুকুর পাড়ে দীনুর কান্ড দেখে রুজির বাবা হাশেমের চক্ষু ছানাবড়া। সময় নষ্ট না করে হাশেম বের হলো দীনুর বাবার খোঁজে। পাড়ার চায়ের দোকানেই পেয়ে গেল তাকে। নালিশের বিষয়বস্তুতে বিন্দুমাত্র কৃপণতা না করে বরং রংচং যোগ করে হাশেম গড়গড় করে সব বলে দেয়। এর প্রতিক্রিয়া দীনুর গোটা জীবনকেই পাল্টে দেয় !
চায়ের দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাঁশ বাগান থেকে কঞ্চি কেটে নেন দীনুর বাবা জলিল শিকদার। ঘরে দীনুকে পেয়েই তার পিঠে সপাং সপাং কয়েক ঘা বসিয়ে দেন তিনি। দীনু ভেবে নেয় তার আংটি চুরির ঘটনা বাবা জেনে গেছে। তাই প্রচন্ড ভয়ে সে বলে ফেলে-আংটিটা রুজির কাছে আছে বাবা।
-আংটি !
পরিস্থিতি সামাল দিতে পাশেই দাঁড়ানো দীনুর মা বলে-তোমার ছেলে তার একটা আংটি রুজিকে দিয়ে দিয়েছে।
জলিল শিকদার তো রেগে কাঁই।-যাদের জন্মের ঠিক নাই,তাদের আংটি দিয়ে পুকুরের মা্ছ মারার অর্থ কি ? এই বলে দীনুকে ফের মারতে শুরু করেন তিনি। দীনুর মা ঠেকাতে গিয়ে উল্টো স্বামীর কয়েক ঘা লাথি হজম করেন। না,আসলে হজম করলেও বেঁচে থাকতে পারেননি। অন্তঃস্বত্তা থাকায় সেই দিন রাতেই চিত্রগুপ্তের খাতায় নাম লেখায় দীনুর মা,আর এতিমের খাতায় না্ম লেখায় দীনু।
দাফনের পরদিন কবরে খেঁজুরের ডাল পুঁতে রাখার জন্য দা হাতে বের হয় দীনু। পথে দেখা হয় রুজির সঙ্গে। দীনুর মাথায় খুন চেপে যা্য়। কিন্তু রুজি বলে-তোমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম।
-কি চাই ? চলে যা।
-একটা কথা বলতে চা্ই।
-কোন কথা নয়,চলে যা।
রুজি এবার ঝেংটি দিয়ে ওঠে-চলে তো যাবই। তোমার বাবাই তো আমাদের ভিটে-মাটি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। নইলে নাকি বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেবে।
রাগে দীনুর শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। ‌'তবে রে...আমার বাবার নামে নালিশ'....এই বলে হাতে থাকা দাওটি রুজির ডান উরুতে বসিয়ে দেয় দীনু। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে। ঘটনার আকষ্মিকতায় দীনু কিছু বুঝে উঠতে পারেনা। সে পালিয়ে যায়। রুজি পড়ে থাকে রাস্তাতেই।

জীবন থেকে দীনুর পালিয়ে বাঁচারও সেই শুরু। শৈশবে মাকে হারালে বেশিরভাগ ছেলেই যেমন রাস্তার পাশে অনাদরে বেঁচে থাকা বুনোগাছটির মতো বেড়ে ওঠে,দীনুর ক্ষেত্রেও তার কিছু ব্যতয় ঘটেনি। ওই ভয়ানক ঘটনার পর দীনুকে আর গ্রামে রাখেননি তার বাবা। পাঠিয়ে দেন শহরে মামার বাড়িতে। সেখানে ফের স্কুলে ভর্তি হয় দীনু। কিন্তু স্কুলের চেয়ে সিনেমা,-সিগারেটই তাকে বেশি করে টানে। সেই প্রেমে সারা দিয়ে দীনুর ঠোঁটে সিগারেট ওঠে। ক্ষেত্র বিশেষে গাঁজা। কিন্তু নেশার টাকা সবসময় জোটে না। তাই মামার পকেট কাটা এবং ফের ধরা পড়া ! এমন ঝামেলা আর কতদিনই বা সইতে পারে মামারা ? তাই দীনুকে সেখান থেকে সরিয়ে ঢাকায় চাচার বাসায় পাঠিয়ে দেন তার বাবা।

১৫ বছর পরের কথা।

দীনুর জীবনটা পাশার দানের মতো উল্টে গেছে। সভ্যতার এগিয়ে চলাকে টেক্কা দিয়ে সে পরিণত হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক জীবে। এখন তার আর গাঁজায় চলে না,মদিরা লাগে। মাঝে-মধ্যে মেয়ে-ছেলে। চাচার বাসায় থাকা হয়নি। পড়াশোনাও লাটে উঠেছে। এখন সে পেশাদার ছিনতাইকারি। বণানী রেলগেটে কাজটা অতি দক্ষতার সঙ্গে সেরে দারুন উল্লসিত দীনু সিদ্ধান্ত নেয় আজ তার মাল-মদিরা দুটোই লাগবে। একে তো আকাশ ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টির রাত, সঙ্গে খাবি খাওয়া যৌবনের তাড়না। হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল থেকে গলা পর্যন্ত গিলে দীনু তাই ঢুকে পড়ে মহাখালীর একটি আবাসিক হোটেল। প্রায়ই যাতায়ত থাকায় দালাল তাকে আগে থেকেই চেনে। দীনুকে দেখেই দালাল বলে ওঠে-মাম্মু,কড়া একখান মাল আছে,দিমু ? ডুব দিয়া দেহেন,উঠতে মন চাইবো না।
-নিয়ে আয়।
-আমার লগে আহেন।
হোটেলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে বসে আছে কিছু স্বল্পবসনা মেয়ে। মুখে চটুল মেকআপ এবং শরীর দিয়ে ভুরভুর করছে ফুটপাতের সুগন্ধী। কাঁচা-বাজারে তরিতরকারি কেনার মতো তাদের বেছে নিচ্ছে রসিক খরিদ্দাররা। সেই দঙ্গল থেকেই একটা মেয়েকে নিয়ে এসে দীনুকে দেখায় দালাল। নির্লজ্জের মতো মেয়েটার ব্লাউজের মধ্যে বাঁ হাত সেঁধিয়ে দালাল বলে-‌'দেখছেন মাম্মু,কেমন কচি মাল। ছেইন্যা মজা পাইবেন।'
মেয়েটার দিকে না তাকিয়েই দীনু জিজ্ঞেস করে-রেট কতো ?
-খুশি হইয়া যা দেন।
এক রাতের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার দরকষাকষিতে বাধ সেধে মেয়েটা শুধু বলে-'আমি কাম করুম না,আরেকজনরে নিয়্যা যান।'
সুরার আসক্তিতে দীনু এমনিতেই বেহেড ছিল। তারওপর মেয়েটার নিরাসক্তিতে সে আরও চটে যায়। চুলে মুঠি ধরে তাকে টেনে হিঁচড়ে রুমে নিয়ে যাওয়ার সময় দীনু বলে-চুপ মাগী,শোয়ার জন্যই আসছিস,আর এখন ন্যাকামো করিস,ভালয় ভালয় কাম কর,নইলে কিন্তু জায়গা মতো বিচি হান্দাইয়া দিমু।'
বাহিরে থেমে থেমে বাজ ডাকছে। দরজা আটকিয়ে দীনু মেয়েটার ওপর হামলে পড়তেই বজ্রের ফ্লাশে তার ছবি তুলে রাখেন ঈশ্বর। সেই আলোয় মেয়েটার মুখখানিতে একবার চোখ পড়েই দীনুর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এ যে রুজি ! যত বয়সই হোক না কেন,দুনিয়াতে ওই একটাই মুখ আছে,যাকে অন্ধ হয়েও চিনতে পারবে দীনু। কিন্তু তার বিশ্বাস হলো না। হঠাৎ কি মনে হতেই মেয়েটাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে তার শাড়ী উরু পর্যন্ত টেনে তুললো দীনু। ওই তো ! সেই জখমের দাগ। মদের ধাক্কার সঙ্গে রুজিকে নতুন করে চেনার ধকলটা দীনু সইতে পারলো না। সে জ্ঞান হারাল।
গভীর রাত। বাইরে কেঁদেই চলছে আকাশ। সফেদ সাদা বিছানায় রুজির কোলে দীনুর মাথা। চুলে বিলি কেটে দিতেই দীনুর জ্ঞান ফিরলো।
-শেষ পর্যন্ত জাগলে ?
-তুই,এখানে কিভাবে ?
-সে অনেক কথা। তার আগে বল কেমন আছ ?
-এখানে যারা আসে তারা কেমন থাকে সেটা কি বলে দিতে হবে ? তুই আংটি খেয়ে নেয়ার পর থেকে জীবনও আমাকে ঘুনপোকার মতো ক্রমশ খেয়ে চলছে।
রুজির চোখ ফেটে বান ডাকলো। তাই আকাশের অশ্রুও শুকিয়ে এলো। বৃষ্টি থেমে গেল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে রুজি বললো-দীনু ভাই,একটা কথা বলবো,দোহাই লাগে রাগ করো না কিংবা গায়ে হাত তুলো না ?
-দুটোর কোনকিছুতেই এখন আর যায় আসেনা। কি বলবি বল ?
-আংটিটি আমি খাইনি।
দীনু হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারেনা। জন্মের পর থেকে ঈশ্বর তার জীবন নিয়ে কম ছেলেখেলা করেনি। কিন্তু দীর্ঘ দুই যুগ ধরে মনের ভেতর লালন করা চরম সত্যটি আজ হঠাৎ করেই মিথ্যে হয়ে যাবে,তা মেনে নেয়ার মতো বুকের পাটা দীনুর নেই। ধৈর্য হারিয়ে সে বলে-তাহলে কি আমি খেয়েছি ?
রুজি কেঁদেই চলছে। ধরা গলায় সে জবাব দেয়-না দীনু ভাই। আংটিটি মা চুরি করেছিল। আগের দুই দিন বাসায় হাড়ি চড়েনি। ক্ষিদের জ্বালা সইতে না পেরে মা আংটিটি চুরি করে স্বর্ণকারের কাছে বন্ধক রাখে। আমাকে বলতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু তোমার মা মরার পর আর সইতে পারিনি। তাই পরদিন তোমাকে সত্য কথাটি বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো আমাকে দায়ের কোপে জবাব দিলে !
-মা্থা ঠিক ছিল না। তাই মেরেছি। কিন্তু তুই এখানে কেন ?
এইবার রুজির কান্না থেমে গেল। জানালার শিক গলে রুজির চোখদুটো যেন তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে গেল। পৃথীবির কোন ভাষারই সাধ্যি নেই সেই দৃষ্টির অব্যক্ত ব্যাথা ধারন করা। রুজি শুধু বললো-এখন এসব শুনে কি লাভ ? আমার কাজ তো এখন শোয়া।
জীবনের পিচ্ছিল পথে অনেক পুলসিরাতই পারি দিয়েছে দীনু। কখনো বুদ্ধির জোরে আবার কখনো পেশীর জোরে সে বেঁচে গেছে। কিন্তু সেই ফেলে আসা শৈশবের খেলার সাথী প্রহেলিকায় তার পৌরুষ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। তাই অনুরোধের স্বরে দীনু বললো-আমি না্ তোর বন্ধু। সে কথা ভুলে গেছিস নাকি ?
-'ভুলতে চাইনি বলেই তো আজ আমি এখানে। স্বর্নকারের কাছে মা আংটিটি বন্ধক রাখার তিনদিন পরই আমি বাবার ট্যাঁক থেকে টাকা চুরি করি। তারপর বাড়ি থেকে পালিয়ে আংটিটি ফেরত আনতে যাই। টাকার সঙ্গে নিজের কুমারীত্বও বিকিয়ে দিয়ে তবেই আংটিটি ফেরত পাই। আর বাড়ি ফিরতে পারিনি। স্বর্নকার আমাকে বেচে দিয়েছিল। তারপর নানা ঘাটের পানি খেয়ে আজ আমি এখানে'-একদমে কথাগুলো বলে ফেলে রুজি।
হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে দীনু। হোটেলের জানালার ফাঁক গলে পেঁজা মেঘের রাজ্য পারি দিয়ে,দীনুর হাসি পৌঁছে যায় উর্দ্ধলোকে। যেখানে বসে থাকা পবিত্র শিশুটি শুনতে পেল,মর্ত্যের কোন এক পোড়ামুখো তার ওপর ফের আস্থা হারালো !














সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×