somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুধনীর চপ

২৬ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আলু সিদ্ধ করার কাজটা তারা ঘরেই সেরে থাকে। এরপর নুন-মরিচ,জিরা-পেঁয়াজ আর খানিকটা লেবুর রস মাখিয়ে একটা শুকনো কাপড়ে মুড়ে আলুর মন্ডটা রেখে দেয়া হয় কয়েকঘন্টা। নুন-মরিচ আর আলুর ত্রিভুজ প্রেমের স্বাদটা ধরে রাখে লেবুর রস। আস্ত মন্ডটার সঙ্গে বেগুন,রেসন,ডাল আর কাটা পেঁয়াজের ঝুড়ি সহযোগে,রোজ বিকেল নামার আগে এতিমখানা বাজারে চলে আসে মা আর ছেলে।

বেগুনি,গন্ধভাদাইল বড়া,ডাল বড়া ভাজলেও আলুর চপেই বুধনীর যত কারিকুরি। ঝাল-ঝাল, তাল তাল আলুর দলা বেচেই 'টং' থেকে তারা উন্নীত হয়েছে 'দোকানে'। নিশি রাতে বাজারে মাতালদের আসরে এমন কথাও শোনা গেছে,সন্ধ্যা নামতেই বুধনীদের বেগুনি-চপের ডালিতে যে মাছিগুলো ভনভন করে ঘুরে বেড়ায়,সেগুলো আসলে মাছি নয়। বুধনীর ভাজাপুড়ির টানে স্বয়ং ঈশ্বর নাকি ধরাধমে নেমে আসেন,মাছি হয়ে !

ঢাকার অনেক জায়গার ভাজাপুড়িই পেটে পড়েছে। নীলক্ষেত,শুক্রবাদ হয়ে ফার্মগেট দিয়ে মহাখালি থেকে গুলশানের বেশকিছু ভাজাভুজির দোকানেই পা পড়েছে,সেসব জায়গায় শুধু চপ নয়,সমুচা থেকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই অবধি বিকোয় দেদারসে। কিন্তু আমার জিভের নেশা জমে আলুর চপে। কেমন একটা রগরগে ঝাল। মুখে পুরলে বেসনের পর্দা ভেদ করে বিটনুন আর ঝালের মন্থনে আলুর বুকে খোন্দলের ব্যাপারটা যেন, মাধ্যমিক দেয়ার আগেই হাতে লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার চলে আসার মতো !কামনা ও রসনা, এই দুটি জগতে তো ঝালেরই রাজত্ব। বুধনীর দোকানটা তাই আমার খুব প্রিয়।

ফুটন্ত তেলে বেসন মাখা পুরগুলো ছেড়ে দেয়ার সময় বুধনীর চোখে আলো খেলা করতে দেখেছি। দেখার ভুলও হতে পারে। আবার এও হতে পারে,ওইসময় বাজারের সব আলো শুধু বুধনী চোখেই ঠাঁই খুঁজে পায়। পুরগুলো ভাজার কায়দা দেখার মতোন। প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে নাড়া-চাড়া করে বুধনী পুরগুলো খেলায়,তারপর রং পাল্টিয়ে তা চপে পরিণত হওয়ার মাঝে পিঠগুলোও বারকয়েক উল্টে যায়। বুধনী ঠিক মোক্ষম সময়ে বাদামী চপগুলোকে চামচের পিঠে করে তুলে নিয়ে আসে। কখনো পোড়া গন্ধ পাইনি।

অফিস থেকে একটু আগে বের হতে পারলে,একেক দিন ঢুঁ মারি বুধনীর দোকানে। ও আমায় চিনে রেখেছে। তাই হয়তো চপের সঙ্গে সালাদ ও বিটনুনের পরিমানটা বেশি থাকে। আমার চাহিদা সম্পর্কে বুধনী জানে।সন্ধ্যেবেলা থেকেই ওকে ঘিরে ধরে রাখে বাজারের মানুষ। কেউ শুধু চপ খায়। কেউ আবার নুন-মরিচ সহযোগে মুড়ির সঙ্গে মেখে নেয়।একটু একটু করে খায়,যেন ফুরিয়ে না যায়। জিভ দিয়ে একটু টুকরো বের করে তা আবার মুখের ভেতর খেলায়। কোন অভাগা হয়তো পকেটে ঝাঁপ দিয়ে অনেক হাতড়ে একটা ময়লা দশ টাকার নোটের সব খেয়ে ফেলেছে,তারপর কেলো মুখে আবিষ্কার করেছে আর টাকা নেই। গভীর সংকোচে সে কিছু একটা বলে ওঠার আগেই বুধনী বুঝে ফেলে ! এমন অনেকবার দেখেছি। তখনও বুধনীর চোখে সেই আলোটা দেখেছি। হতে পারে,বাজারের শেষ আলো ? কে জানে,তবে বড় ক্লান্ত সে আলো।

এই যে দোকান, আগুনে পুড়তে থাকা কড়াই,তার আঁচেই চলছে মা-ছেলের বেঁচে থাকার লড়াই। মুড়ির সঙ্গে চপের ভাঙ্গা টুকরোর প্রেমে বুঁদ হয়ে তা এড়িয়েও যাচ্ছে সবাই। কিন্তু এরা না থাকলে,পিজা হার্টজৎ-হেলভেশিয়া-কেএফসিদের নিয়েই কি শুধু বেঁচে থাকবে ঢাকা ? সে কেমন ঢাকা ?
চারশো বছরের কোকিল বসন্তে কাশবে,কেশে কেশে মুখে রক্ত তুলবে,সে কেমন বসন্ত ?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×