somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাজনের গহীনে একখন্ড ফুটবল দ্বীপ

২২ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জলযানটা দেখতে ছোটখাট স্টিমারের মতো। ব্রাজিলিয়ানরা বলে-'পিপি মউয়েস' (PP Maués)। ডেকগুলো সরু কিন্তু বেশ লম্বা। তার ওপর আড়াআড়ি করে অনেকগুলো হ্যামক ঝুলছে। ব্রাজিলিয়ান উপকথা অনুযায়ী, আমাজনে রাতের সৌন্দর্য, স্বর্গীয় ! হ্যামকে শরীর এলিয়ে তা রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপভোগের করতে পারবো ! অনেকটা, রাতের শেষ প্রহরে পেয়ালায় শেষ চুমুকগুলোর মতো । ভাবতেই, বাতাসে রোমাঞ্চের গন্ধটা বেশ চাগিয়ে উঠলো।
লঞ্চটার নামের জায়গাটাই আমাদের গন্তব্য। মউস। মানাউসের স্থানীয় বন্দর। সবচেয়ে কাছের বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামটা ওখান থেকে ১৫ ঘন্টার লঞ্চভ্রমনের পথ। মউস থেকে আরও ভেতরে আদিবাসিদের একটা গ্রাম আছে। বিদ্যুৎ এবং সেলফোনের সিগন্যাল সে পর্যন্ত না পৌঁছালেও,বিশ্বকাপ ওদের দুয়ারে ঠিকই পৌঁছে গেছে। একটা ডিজেল চালিত জেনারেটর আছে। যন্ত্রটাকে পুঁজি করেই ওরা, মিটিয়ে চলছে ফুটবলের প্রতি 'প্যাশন' শব্দটার খোরাক।
গ্রামটায় যেতে হলে এরকম আরও একটা নৌকা চাই। ব্রাজিলে বিশ্ব্কাপ বলেই সবার চোখ পড়ে থাকে রিও ডি জেনিরোর কামিনীকাঞ্চন সুমদ্র সৈকতে। কিন্তু আমি ঠিক যে জায়গাটার উদ্দেশ্যে 'পিপি মউস'-এ চড়ে বসেছি, সেটা আমাজনের গহীনে, খুব নীরব একটা জায়গা। ওখানে সভ্য মানুষের দেখা পাওয়া আর ব্রাজিলকে এবারের বিশ্বকাপে ফেভারিট না ভাবাটা, একই কথা !
আন্দ্রে পেরেইরার দ্য সিলভার বয়স ৩২ বছর। আমাজনের বুকে সবচেয়ে বড় শহর মানাউসের আওতায় প্রায় ১১ হাজার 'স্যাতেরে মউয়ি'(Sateré-Mawé) আদিবাসির বসবাস। গোত্রের সংখ্যা আনুমানিক ১৫০টি। তারই একটি গোত্রের মোড়ল সিলভা। আমাদের গাইড হিসেবে কাজ করছে। যেখানে যাচ্ছি, জায়গাটার নাম মন্তে সালেম। সিলভার গোত্রের বসবাস ওখানেই। খুব উৎসাহ নিয়ে সে বললো,‌' ফুটবল আমাদের রক্তে মিশে আছে। সবুর করুন, সব নিজের চোখেই দেখবেন। মনে হবে, চারপাশে হাজারো তারা জ্বলছে। আপনি তার মাঝখানে বসে আছেন !'
ছোটবেলায় মন্তে সালেমে খাকাকালিন সিলভা ফুটবল তৈরির কাজ করতো। রাবার গাছের রস সংগ্রহ করে তা থেকে প্রথমে মন্ড বানানো হয়। তারপর আরও কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর মন্ডটি ফুটবলের আকার পায়। 'একটা বল পিছু দশটা করে গাছ লাগে'-লঞ্চের রসুই ঘরে বসে বলে সিলভা। ছেলেকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। ওর পেছনের বেনিটা দেখে আমার রবার্তো ব্যাজ্জিওর কথা মনে পড়ে গেল। সেই 'ডিভাইন পনিটে্ইল' ! সেই টাইব্রেকার মিস ! বেরসিকের মতো ফোঁড়ন কেটে আমার কল্পসুখের তাল কেটে দিল সিলভা 'ফুটবলগুলোর সমস্যা একটাই, বড্ড লাফায়।'


একটা যাত্রীবাহি নৌকা যোগাড় হয়েছে । ওপরের ডেকে দুটো বিশাল লাউডস্পিকার বসানো। ধুমসে গলা ফাটাচ্ছে। একটা ফুটবল মাঠের তিনভাগের একভাগ আয়তনের এ নৌকাটি প্রায় ৩০০ যাত্রী ধারণে সক্ষম। হ্যামকের দঙ্গল কঁচি-কাঁচাদের লুকোচুরি খেলতে বেশ সুবিধে করে দিয়েছে । কতগুলো কেবিনে টিভিও দেখা যায়। নৌকাটির পেছনের অংশে একটি ওয়াশিং মেশিন এবং রেফ্রিজারেটরও রাখা হয়েছে, বেশ আড়াল করে।
বেশিরভাগ যাত্রীরাই হ্যামকে ঘুমোয়। বাকিরা পড়ে অথবা গান শোনে। টিভিতে আর্জেন্টিনা-বসনিয়া ম্যাচ চলছে। সেখানেও সেঁটে আছে কিছু চোখ।
লঞ্চের তলায় ছোট্ট একটা কামরা। ওটাই রান্নাঘর। এখানেও একটা টিভি আছে। মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছে সবাই। ' মেসি আজ ঢিলেমি করছে। ও ভাল খেলছে না '-বলে ওঠে দর্শকসারির এক তরুন রদ্রিগো হ্যাভিয়ের। প্রত্যাশামতোই তার চোখেমুখে তৃপ্তির রেশ। পেশায় বাবুর্চি। ব্রাজিলের পাঁড় ভক্ত। মিনিটখানেক পরই, ডি বক্সের সামনে দুই ডিফেন্ডারকে ঘোল খাইয়ে নিজের ট্রেডমার্ক শটে মেসি গোল করলো। হ্যাভিয়ের হেসেই চলছে ! আচ্ছা, ওর ওই হাসিটার জন্যই কি সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয় মেসিকে ? যখন, একজন ব্রাজিলিয়ান পর্যন্ত তার খেলায় মুগ্ধ !
হঠাৎই, রসুই ঘর ফাঁকা হয়ে গেল।
লঞ্চের টিভি অ্যান্টেনা মানাউসের সিগন্যাল ধরতে পারছে না। কোন স্যাটেলাইট ডিশ নেই। পল হোসে খুব খুশি। লঞ্চটির মালিক বল কথা ! গুটি গুটি পায়ে খেতে যাওয়ার আগে শুধু বললেন,'অামার ফুটবল খেলা ভাল লাগেনা। আমি সবার মতো নই।'
মানব চরিত্রের এতসব গলি-উপগলি, তস্যগলিতে থেকে মুখ তুলে আকাশে তাকাতেই নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হলো। আজ পুর্ণিমা ! ভরন্ত যৌবনা চাঁদকে চারপাশ থেকে সিটি বাজিয়ে চলছে পেঁজা মেঘের দল। ওদের ভিড়ে চাঁদের রুপোলি আলো পৃথীবির এই অংশে চুঁইয়ে পড়ছে অসংখ্য থামের আকার নিয়ে। দেখে বিহবল হয়ে পড়লুম। পাশ থেকে কে একজন সতর্ক দৃষ্টিতে টর্চ মেরে চলছে নদীতে। রাতের বেলা আমাজনের নদীতে কুমির বিশেষ প্রাণী 'কেইম্যানস'দের(caimans ) রাজত্ব চলে। পানির ভেতর ওদের চোখগুলো দেখতে জলন্ত সিগারেটের মতো। কিন্তু ওসব দেখার থেকে আমার কাছে এখন চাঁদের সম্ভ্রম রক্ষাই মুখ্য। ফুঁ দিয়ে একদলা সিগারেটের ধোঁয়া পাঠালাম। পাজি মেঘের দল তবুও বেহায়ার মতো ঘুরঘুর করছে। আকাশটাকে খুব কাছের বলে মনে হলো। যেন, ইচ্ছে করলেই আলোর রোশনাই বিলিয়ে চলা তারাগুলোকে আঁকশি দিয়ে নামিয়ে আনা যায় !


পরেরদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি। দিকচক্রবালে বজ্রপাতের আলো খেলা করছে।ইস্পাতের ছাউনি থাকায় লঞ্চের কাছে বৃষ্টি হেরে যাচ্ছে। সিলভা বুঝলো কিনা কে জানে, শুধু হেসে বললো-'বৃষ্টি তো হবেই। কারণ ইংরেজরা এখানে।'
মউসে পৌঁছাতে সকাল আটটা বেজে গেল। তখনও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি থামেনি। এই এলাকাটা 'গুয়ারানা' চাষের জন্য বিখ্যাত। মেপল জাতের এক ধরনের উদ্ভিদ যা প্রচুর ক্যাফেইন সমৃদ্ধ। হারবাল চা,সোডা,এনার্জি ড্রিংকস প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। ভাল কথা, আমাদের বরন করে নেয়া হয়েছে আতশবাজির ফুটিয়ে !
ডক ছেড়ে রাস্তায় পা রাখতেই ব্রাজিলের পতাকা সমবেত মোটরসাইকেলের বহর চোখে পড়লো। ষ্ট্যান্টবাজির চুড়ান্ত সীমানাটা দেখিয়ে দেয়াই ওদের কাজ। আর ব্রাজিলকে সমর্থন করে যাওয়া। দোকানে দোকানে ফুটবলের পসরা সাজানো। নেইমারের জার্সি থেকে বিশ্বকাপের বাঁশি ; কি নেই ! গলায় নেকলেস পরিহিত একটা ক্ষুদেকে চোখে পড়লো। নেকলেসটার রং হলুদ এবং সবুজ।
ফ্লামেঙ্গো এবং ভাস্কো দ্য গামার জার্সিও পড়েছে অনেকে। পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে এ দুটি ক্লাবের বেশ দাপট ছিল। তখন রিও ডি জেনিরোর রেডিও সিগন্যাল এই ১৬০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত মউসের অ্যান্টেনাতেও ধরা পড়তো। কয়েক কিশোরকে দেখলাম, নেইমারের মতো 'মোহাক' ষ্টাইলে চুলের ছাঁট দিয়েছে। সিলভা কিন্তু নেইমারের ওপর এখনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি,‌'তার আরো অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আরও লড়াই করতে হবে। সব খেয়াল তো ওই সোনালী চুল নিয়ে। এটাই এখনকার ফুটবলারদের আসল গল্প। যে কোন মুল্যে নিজেকে সুদর্শন করে তুলতেই হবে।'
সিলভার সঙ্গে কথা ছিল, মউসে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর আমরা মন্তে সালেমের দিকে রওনা দেব। যেখানে তার পুর্বপূরুষদের বসবাস ছিল। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল মন্তে সালেমের জেনারেটর। ওটা নাকি ভেঙ্গে পড়েছে !এক্ষেত্রে সিলভার বলির পাঁঠা আর্জেন্টিনা। রাগে কাঁই হয়ে বললো-'আর্জেন্টিনাই। ওরা সবকিছু ভেঙ্গে ফেলে।'
সকালের নাস্তা শেষেই সুখবরটা পেলাম। পাশের আরেকটি গ্রামে জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে। গ্রামটার নাম নোভা বেলো হরাইজেন্তে। মউস থেকে লঞ্চে ৭৫ মিনিটের পথ। অতএব, ছুট লাগালাম।
গ্রামটিতে মাত্র ২২টি পরিবারের বসবাস। কাঠ দিয়ে তৈরি ঘরগুলোতে খরের ছাদ। আবশ্যিক, হিসেবে একটা ফুটবল মাঠ আছে। কিন্তু সেটার বেহাল দশা। দুই প্রান্তে দুই তে-কাঠি বানানো হয়েছ কাঠের দন্ড দিয়ে। জালের বালাই নেই। এবড়ো-থেবড়ো মাঠে খোঁয়ার প্রাচুর্য। যদিও চারপাশের পরিবেশটা মনোরম। গুয়ারানা, আনারস, কমলা, কলার বাগান ঘিরে আছে মাঠটিকে। আর আছে কেশুর শেকড়ের অাবাদ, যার নাম 'ম্যানিওক'। ইংরেজরা বলে-'কাসাভা।'
ব্রাজিলে আঞ্চলিক পর্যায়ে আদিবাসিদের মধ্যে ফুটবল টুর্ণামেন্টের প্রচলন আছে। এবারই প্রথমবারের মতো এখান থেকে পুরুষ এবং নারীদের দল অংশ নিয়েছেে সে টুর্নামেন্ট। সামনে ছেলেদের ম্যাচটি জিতলে পুরষ্কার ১৫০০ মার্কিন ডলার। সবাই ম্যাচটা জিততে চায়। তাহলে ডলারগুলো দিয়ে কিছু জমি কব্জা করা যাবে। ডেভলপার অার সরকারি অধিগ্রহনের থাবা থেকে এ গ্রামটারও মুক্তি মেলেনি।
এখানে স্বাস্থ্যসেবাও সীমিত।বুড়োমতো একজন জানালেন, মউস বন্দরের রেডিও সিগন্যাল পর্যন্ত পাওয়া যায়না। যে কোন প্রয়োজনে সম্বল ওই চার-পাঁচঘন্টার নদীপথ। সেলফোন কাজ করেনা।
একটাই স্কুল। সামনের দরজাটা ভাঙ্গা। ছাদে বেশুমার ফুটো। বিশ্বকাপ চলাকালিন রাতে বড়দের ক্লাস চলেনা। জেনারেটরটার জন্য সামান্য তেলটুকু পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে তারা নিয়মিত পায়না। ‌'তারা শুধু আমাদের ভোটটাই চায়। এটাই একমাত্র যোগসুত্র'-বলেন সিলভার বাবা লুই স্যাতেরে।
নোভা বেলো হরাইজেন্তে'য় ফুটবলের ব্যবহার বহুমুখী। বিনোদন, ফিটনেস , সংঘাত এড়ানো, সামাজিক সম্পর্ক কিংবা ড্রাগ থেকে মুক্তির ওষধ একটাই-ফুটবল।
কিন্তু, সবচেয়ে বড় ক্ষিধেটা লুকিয়ে থাকে সবার অগোচরে। ব্রাজিলে আদিবাসিদের বেশ ছোট চোখে দেখা হয়। এই অপুর্ণতাটুকুই ওদের তাতিয়ে তোলে। সেজন্য বেছে নিয়েছে ফুটবলকে। ‌' গ্রামটির মোড়ল সিলভা আন্দ্রেদে বললেন,'বাইরের পৃথীবি মনে করে, আমরা পারিনা। কিন্তু নিজেদের স্বপ্নটাকে আমরা বুঝি। তাই ওদের কাছে প্রমান করতে চায় সবাই।'
ব্রাজিল-মেক্সিকো ম্যাচ চলাকালিন স্কুলটা বরাবরের মতোই বন্ধ ছিল। ব্রাজিলের ম্যাচ থাকলে্, সে যখনই থাক, এর অন্যথা ঘটবে না। খুব সকালে গ্রামের মহিলারা মিলে কূপ থেকে পানি আনতে যান। দুই হাতে বালতিভর্তি পানি নিয়ে যখন তারা উঠোনে পা রাখেন, ততক্ষনে তাদের ছেলেরা মাঠে দল সাজিয়ে ফেলে।
প্লাষ্টিক ব্যাগ, কাগজ আর ছেঁড়া গেঞ্জি দিয়ে তৈরি ফুটবলে পাস দেয়া-নেয়া করছে দুই ক্ষুদে। একজন পাস দিতেই আরেকজন বলছে,‌'গোওওওওল।' মোড়লের বাসায় জেনারেটরটা খ্যাঁকখ্যাঁক করে কেশে উঠলো। টিভিটা অনবরত জাগছে আর নিভছে।
এটা সবাই মনে করে যে, ১৮৯০-এর দিকে চার্লস মিলার নামে এক ইংরেজ ইংল্যান্ডে স্কুলশিক্ষার পর্ব চুকিয়ে ব্রাজিলে ফেরার সময় স্যূটকেসে করে দুটো ফুটবল এনেছিলেন। তারপর বলটা ওই যে দৌড়াতে শুরু করলো ব্রাজিলের মাটিতে। আর কখনোই থামেনি।
কিন্তু কেউ জানেনা, মিলারেরও বহু আগে লাতিন আমেরিকায় রাবার গাছে রস দিয়ে ফুটবল বানানোর চল শুরু করেছিল পারসেই আদিবাসি গ্রোত্রের লোকেরা। তারা খেলাটির নাম দিয়েছিল-'জিকুনাতি'। যেখানে শুধু হেড করার নিয়ম ছিল। ব্রিটিশ লেখক অ্যালেক্স বেলোস তার '“Futebol: The Brazilian Way of Life,” বইয়ে এ খবরটা ফাঁস করে দিয়েছেন। তার মতে, ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে খেলানোর পেছনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন 'ইন্ডিয়ো' নামে একজন রেড ইন্ডিয়ান। নব্বুই দশকের গোড়ার দিকে হোসে স্যাতেরে দো নাসিমেন্তো ব্রাজিলের প্রথম আদিবাসি ফুটবলার হিসেবে করিন্থিয়ান্সে যোগ দিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন।
মেয়েদের ফুটবল দলের প্রচলনটাও এখানে বেশ পুরোনো। তাদেরই বর্তমান প্রতিনিধি জ্যানিলদেজ মিচেলিস। ডেভিড লুইজের খেলার ভক্ত। তার মতে,'ফুটবলের মাধ্যমে প্রমান করা যায়,মেয়েরা পুরুষের সমান পরিশ্রম করতে সক্ষম।'
পাশের গ্রাম ব্রাসিলেয়ার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হলো। ওদের কাছে নোভা বেলো হরাইজেন্তের নারী-পুরুষ দুই দলই হার মানে। মেয়েদের ম্যাচটা আগে অনুষ্ঠিত হয়। শেষ বাঁশি বাজতেই মিচেলিস দৌড়ে আসে পরের ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে থাকা তার স্বামীর কাছে। মিচেলিসের ডান পা খালি। বাঁ পায়ে বুট আছে। সে বুটটা খুলে তার স্বামীর বাঁ পায়ে পরিয়ে দেয়।'ওর পায়ে আঘাত আছে'-মিচেলিস ব্যাখ্যা দেয়।
প্রীতি ম্যাচে হার মানলেও ব্রাজিল-মেক্সিকো লড়াই দেখার উৎসাহে কারো এতটুকু ভাটা পড়েনি। মোড়লের উঠোনে মাদুর আর টুল পেতে দেয়া হলো। দর্শক কড়ে গুনে ৩০ জন। অনেকে খাবার রেঁধে এনেছেন। যে খায়নি তাকে বেড়ে দিচ্ছেন। ম্যাচটা শুরু হওয়ার ঠিক ১১ মিনিট পর টিভিটা চালু করা গেল। ' এখন আমরা ম্যাচটা দেখে নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেব'-ফোঁড়ন কাটলো মিচেলিস।
কিন্তু দেখা গেল, প্রথমার্ধ গোলশুন্য ব্যবধানে শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত উত্তেজনায় কেউ নিজের নখ কামড়াচ্ছে, কেউবা সৌভাগ্যসূচক কিছু একটা আঁকড়ে ধরছে। গোলশূন্য ব্যবধানে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে টিভি বন্ধ ! কিছুক্ষন পর আবারও চালু হলো। ততক্ষনে অতিরিক্ত তিন মিনিটের খেলা শেষ। 'টিভি পর্যন্ত ব্রাজিলের খেলায় সন্তুষ্ট নয়'-ব্যঙ্গ করে ওঠে সিলভা। ' আরে ধুর, টিভিটা ভয় পেয়েছে'-এ গ্রামেরই বাসিন্দা মিগুয়েলের সরস উক্তি।
টিভিটা ফের চালু হতেই পেলের মুখ। সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। ওমনি কেউ একজন উঠে টিভিটা বন্ধ করে দিল। 'আমরা কোন অজুহাত শুনতে চাইনা। পেলে এ দলে থাকলে কেমন খেলতেন, সেটাও না। এখানকার কেউই পেলেকে পছন্দ করেনা'- বেশ ঝাঁঝের সঙ্গেই ব্যাখা করেন আমার গাইড সিলভা।
আচ্ছা, এর থেকে খারাপ ফলাফলও তো হতে পারতো ? ব্রাজিল যদি ম্যাচটা হেরে বসতো ! তখন, কি পৃথীবির এই অংশের মানুষগুলোর হৃদয়ে রক্তপাতের টপটপ শব্দ বিশ্বকাপ শুনতে পেত ? নাকি, ওরা শুধুই খেলাটার শোভা বর্ধনকারি টিস্যূ-পেপার ? নিজের প্রয়োজনের যাদের ব্যবহার করা যায়, ইচ্ছেমতো !




তথ্যসুত্র ঃ নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক জেরে লংম্যানের প্রতিবেদন থেকে ভাষান্তরিত ।
ছবিঃ নিউ ইয়র্ক টাইমস (সবগুলো ছবিই নোভা বেলো হরাইজেন্তের)





সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৪:৪৫
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×