somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালন ফকির ও কতিপয় গুরুতর প্রসঙ্গঃ পর্ব-২

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
লালনকে নিয়ে দ্বিতীয় একটি সমস্যা আছে, যা শুধু প্রবল কি প্রকট নয়, রীতিমত বিপজ্জনকও বটে। কেউ কেউ লালনকে বলেন, আউলিয়া। খুবই বিপদ যে, এই ধরণের গবেষকদের প্রলাপোক্তির কোন সীমা পরিসীমা নেই। যে ব্যক্তি জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়েন নি, একটি রোজা রাখেন নি, যিনি চৈত্র-মাসের দোল পূর্ণিমাকে গ্রহণ করেছেন তার বাৎসরিক পূণ্যযজ্ঞের মাহেন্দ্র রজনীরূপে, যিনি যাপন করেছেন ইসলামের সঙ্গে গুরুতরভাবে সম্পর্করিক্ত এক মুশরেকী জীবন, যার শিষ্য প্রশিষ্যদের আধ্যাত্নিক সাধনার শ্রেষ্ঠতম অনুপান গঞ্জিকা(গাঁজা)-তিনিও একজন আউলিয়া। আউলিয়াই বটে। কোন কোন গবেষকের প্রেম ও কল্পনা শক্তি যে সত্যই বড় প্রবল, এটা তারই প্রমাণ।

জন্মসূত্রে লালন কী ছিলেন এ নিয়ে কিছু সংশয় থাকতে পারে, কিন্তু তার জীবনাচারে যে ইসলাম ও মুসলমানিত্বের গন্ধমাত্র ছিল না, এটা তো দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তবু তাকে আউলিয়া দরবেশ অভিহিত করে কিছু কিছু গবেষক কী যে তৃপ্তি ও সুখ ও ফায়দা লাভ করেন, আল্লাহপাক জানেন। এবং পন্ডিতজনেরা কিন্তু যথেষ্ট সাফল্যও লাভ করেছেন; কারণ অবস্থা অতিদ্রুত এমন রূপ পরিগ্রহ করেছে যে, গঞ্জিকাপায়ী সংসার পলাতক কিছু লালনভক্ত শুধু নয়, বহু সাধারণ মুসলমানও বিশ্বাস করে, লালন একজন খুবই বড় মাপের আউলিয়া ছিলেন। বদনসীব, বাঙ্গালী মুসলমানদের সত্যই বড় বদনসীব।

বর্তমান লালনপ্রেমীদের খুব কষ্ট হবে, তবু দু একটি বিষয়ে আলোকপাত করা বিশেষ জরুরী। প্রকৃত পক্ষে লালনের যথার্থ পরিচয় অতভাবে বিধৃত হয়ে আছে তার সমসাময়িক ও তৎপরবর্তী প্রায় পৌনে এক শতাব্দীর ইতিহাস এবং তার গানের মধ্যে। লালনকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়েছে পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালের পর। সম্ভবতঃ রবীন্দ্রনাথের প্রতিপ হিসেবে দাঁড় করানোর একটি নিরর্থক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যলালিত লক্ষ্য নিয়েই এই বিকৃতি প্রক্রিয়ার শুরু। এবং আজকের আমরা যে লালনকে দেখতে পাচ্ছি, সেটা অংশত ওই প্রক্রিয়ারই পরিণতি। তবে বর্তমান প্রবন্ধে এ নিয়ে আলোচনার বেশী অবকাশ নেই কারণ বর্তমান লেখাটির প্রতিপাদ্য একটু ভিন্ন।

লালন কিভাবে ও কতখানি বিপজ্জনক ছিল এবং এখনো যে বিপদ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সমস্যাটি তুলে ধরাই বর্তমান আলোচনার মূল লক্ষ্য। সমস্যাটা হলো, লালন মুসলমান ছিলেন না মুমেনও ছিলেন না এবং আউলিয়া হওয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠে না; অথচ এই সকল অভিধায় আজ তাকে অভিহিত করা হচ্ছে। যার মধ্যে সামান্যতম ঈমান আছে, ইসলামের জন্যে নিভূ নিভূ হলেও কিছুটা অন্তত প্রীতি আছে, তার পক্ষে এসব অকথ্য মিথ্যাচার সহ্য করা কষ্টকর।

লালনকে এখন আদর করে বলা হয় বাউল সম্রাট। আমাদের কোন আপত্তি নেই; আমরা বরং এই ভেবে খুশীই যে, আমাদের এই দরিদ্র দেশে এমন একজন সম্রাটের জন্ম যার গানের ছত্রছায়া এখনো আমাদের উপর ছায়া বিস্তার করে আছে। কিন্তু কেউ অস্বীকার করেন না, করতেও পারেন না যে, অদ্যকার এই বাউল সম্রাট তার স্বসময়ে এবং পরবর্তীকালেও অনেকদিন পর্যন্ত বেশরা ন্যাড়ার ফকির বলেই আখ্যায়িত হয়ে এসেছেন। এবং আজ যাকে বলা হচ্ছে মাজার; কিছুদিন মাত্র আগেও তার নাম ছিল লালনের আখড়া; আর ঝোপজঙ্গল পরিকীর্ণ সেই আখড়াটি ছিল গঞ্জিকাসেবী-প্রেমী রসিকজনের নিরিবিলি আশ্রয়স্থল। এই আখড়াই পরিবর্তিত বর্তমান রূপ হলো লালন শাহের মাজার।

সরকারী পৃষ্টপোষকতা ও অন্য অনেক কারণে ইতোমধ্যে এই মাজার-এর একটি অপরিহার্য প্রভাব বলয়ও তৈরী হয়েছে, যে কারণে দুরদুরান্ত থেকে ডুগি-একতারা ও গাঁজার কল্কি নিয়ে ’সাধক পুরুষেরা’ তো আসছেনই, শীরনি-মানতসহ বহু সরল প্রাণ মুসলমানও আসছে এই মাজার জিয়ারত করতে। এটা একটা ফিতনা এবং এমন ফিতনা যার কারণে বহু ঈমান নষ্ট হচ্ছে। বলাই বাহুল্য’, লালনের আখড়া কেন্দ্রিক এই ফিতনাটি একেবারে নতুন নয়, তিন সাড়ে তিন দশক আগে এই বিপদের আরম্ভ এবং তারপর থেকে ক্রমাগতই এই ফিতনা প্রবল হয়ে উঠেছে। অথচ সকল সরকার ও সকল সচেতন মানুষের একথা বলা উচিত ছিল-যত বড় আউলিয়াই হোন তার মাজারে গিয়ে কোন কিছু প্রার্থনা করা সুস্পষ্ট র্শিক। অতএব, নিষিদ্ধ; আর এটা তো কোন মাজারই নয়, এটা একজন বাউল গীতিকারের সমাধিত্রে। বিশেষ করে আমাদের আলেম উলামাদের প থেকে এ কথা উচ্চারণ করা খুবই জরুরী ছিল, কারণ এটা তাদের ঈমানী দায়িত্ব। কিন্তু না, তাঁরাও কিছু বলেন না। সম্ভবতঃ বলেন না তার কারণ, তাদের অধিকাংশেরই এমন অবস্থা যে, দোয়ার মাহফিলে ওয়াজ করতে করতেই তারা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন। সামান্য যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট থাকে, তা তারা তসলিমা নাসরিন নামক এক বিপ্তিচিত্ত বালিকা ও কতিপয় মুরতাদ বুদ্ধিজীবিদের বিরুদ্ধে নাটুকে লড়াইয়ের মধ্যেই নিঃশেষ করে ফেলেন। অবশ্য এটি ভিন্ন আলোচনার বস্তু, লালন প্রসঙ্গে ফিরে আসি।

আমাদের কাছে এটা দুর্বোধ্য যে, লালন যা নয় তা প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করতে কিছু মানুষের এত উৎসাহ কেন? আবহমান বাংলা গানের ইতিহাসে লালন যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ, এ নিয়ে কোন মতবিরোধ নেই; এবং শ্রোতারা তার গানে যদি আনন্দে আন্দোলিত হয় সেখানেও কিছু বলার নেই। কারণ তার সুর ও বাণীর মধ্যে এমন এক ধরণের নান্দনিকতা আছে, যা চিরকালই সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষকে কম-বেশী আকর্ষণ করবেই। কিন্তু এটা তো মনে রাখা উচিত যে, তিনি না কোন দরবেশ এবং তার গান না এতটুকু ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। নামাজ রোজা রাসুল ইত্যাদি ধরণের কিছু ইসলামী শব্দ ও দু একটি ইসলামসম্মত পক্তি দেখে কেউ কেউ বিপুলভাবে উৎসাহিত হতে পারেন, কিন্তু বস্তুত তার গানের পুরো আবহই যে ইসলামী আকীদার পরিপন্থী, এ কথা না মানার কোন যুক্তি নেই, কোন উপায়ও নেই। দু একটি মাত্র উদারহণ পেশ করলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় যে, লালন আসলেই কি পরিমাণে ইসলামের সম্পূর্ণ বর্হিভূত এক বেশরা জিন্দিক।

‌‌আপনি খোদা আপনি নবী,
আপনি হন আদম সফি

অথবা,
আল্লাহ নবী দুটি অবতার,
গাছ বীজ দেখি যে প্রকার

কিংবা
যে মুরশিদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভূল, খোদাও সে হয়-

এই সকল গান কী প্রমাণ করে? প্রমাণিত হয়, ইসলামের মৌলিক ও অলঙ্ঘ্য দাবি যে তওহিদ, সেই তওহিদের সরাসরি মোকাবিলায় দন্ডায়মান লালন এক কুশলী কবি তীরন্দাজ। তার গান শুনতে যতই মধুরই হোক, তাৎণিক আবেদন হোক যতই মর্মস্পর্শী, আসলে এই গান মুসলমানদের ঈমান ও আকীদা বিধ্বংসী এক একটি দুর্বার মারণাস্ত্র। অথচ কী বদনসীব আমাদের, এমন ঈমানবিনাশী মারণাস্ত্র নির্মাতাকেই আমরা বলছি সুফী দরবেশ আউলিয়া এবং কখনো কখনো বলছি মারেফাতের নিগূঢ় রহস্যভেদী এক ইনসানে-ই-কামেল। কালেমই বটে, না হলে এই কথা কি আর যে কেউ গানে বাধতে পারে-

এক এক দেশের এক এক বাণী,
পাঠান কি সাঁই গুণমনি,
মানুষের রচিত বাণী লালন ফকির কয়।

এমন ইসলাম দরদী কামেল পুরুষ ছাড়া কে আর এমন করে বলতে পারে-

কে বোঝে তোমার অপার লীলে,
তুমি আপনি আল্লাহ ডাকে আল্লাহ বলে।
তুমি আগমেরই ফুল নিগমে রসূল,
এসে আদমের ধড়ে জান হইলে।

কী গর্হিত ও ভয়াবহ উক্তি! রাসূলকে আল্লাহ এবং আল্লাহকে রাসূল মনে করার এই জঘন্যতম আকীদা ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করারই অপচেষ্টা। লালন ফকিরের এই এক ধরণের গান, যেখানে তওহিদ-রেসালাত, কোরআন সুন্নাহ ইসলামের মূল আকীদা বিশ্বাস সবকিছুকে অস্বীকার করে, এক জাতীয় কুহকভরা মরমিয়া নান্দনিকতার মোড়কে এমন সব কথা বলা হয়েছে যা রীতিমত শিরক-কুফর নিফাক ও গোমরাহীর চুড়ান্ত। আফসোস, যা কিছু উৎখাত করবার জন্য এই ধরাপৃষ্ঠে ইসলামের আগমন, লালনের গানে সেই সকল নিষিদ্ধ বিষয়ই বার বার বাঙময় হয়ে উঠে; এবং আরো আফসোস যে, সেই সকল দুর্বাক্যপূর্ণ গান সসম্মান প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে।

চলবে..........
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×