আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। অচ্ছলাতু অসসালামু আলা সাইয়্যিদিল আমবিয়ায়ি ওয়াল মুরসালীন। অআ'লা আ-লিহী আজমায়ী'ন। আল্লাহ সুবহানাহু অতাআ'লা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি জীবনদাতা। মৃত্যুদাতা। জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরনও করতে হবে তাঁর আদেশ-নিষেধ। তাঁর হুকুম ফরজ আমলগুলোর পাশাপাশি নফল আমলেও মনযোগী হতে হবে আমাদের। যেহেতু, তাঁর হুকুম প্রতিটি ফরজ আমলতো অপরিহার্য, আবশ্যকীয়ভাবে তা আদায় করতেই হবে এবং এর বিনিময়ে সাওয়াবও লাভ হবে আশাতীত। আর যেহেতু ফরজ আমল নিয়মের চেয়ে বেশী করারও কোন সুযোগ নেই। সুতরাং ফরজের ঘাটতি পূরনের লক্ষ্যে অবশ্যই নফল ও মুস্তাহাব আমলের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। আলহামদুলিল্লাহ, কিছু মুস্তাহাব ও নফল আমল এমন রয়েছে, যে আমলগুলো পালনের অভ্যাস গড়ে তুললে অল্প মেহনতে অনেক সাওয়াব অর্জন করা যায় এবং এগুলোর কোন কোনটি অনেক বেশী বেশী আদায় করে অজস্র সাওয়াব অর্জন করাও সম্ভব।
এ ধরনের কিছু ফজীলতপূর্ণ আমলের বর্ণনা সম্বলিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র হাদিসভান্ডার থেকে কিছু সংখ্যক হাদিস নিম্নে পেশ করা হলো, যাতে অবসরে সাওয়াব অর্জনের প্রত্যাশীগণ সময়কে ভালো কাজে অতিবাহিত করে অতীব লাভবান হতে পারেন :
হাদীস নং ১, উজুতে বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্রাহ বলা :
হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “উজু করার সময় ‘ بِسْمِ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ (বিসমিল্লাহি ওয়াল-হামদুলিল্লাহ)’ বলে শুরু করো। এর বরকতে যতক্ষণ উজু থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত নেক আমল লেখার কাজে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ তোমার আমলনামায় সাওয়াব লিখতে থাকবেন।” (মা‘আরিফুল হাদীস, ৩য় খণ্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)
হাদীস নং ২, মিসওয়াকসহ উজু করার ফায়দা :
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “মিসওয়াকসহ উজু করে দুই রাক‘আত নামায আদায় করা মিসওয়াকবিহীন সত্তুর রাক‘আত নামাযের চেয়ে উত্তম।” (বাইহাকী শরীফ, হাদীস নং ২১৮)
উজুর সময় মিসওয়াক করা সুন্নাত। তবে সে সময় মিসওয়াক কাছে না থাকলে, উক্ত ফজীলত লাভের নিয়তে আঙ্গুল দিয়ে মিসওয়াক করবে। এতেও আশা করা যায়, সুন্নাত আদায় হবে। (ফাতাওয়া আলমগীরী)
হাদীস নং ৩, জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করার বিশেষ লাভ:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করার দ্বারা একা নামায আদায় করার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়।” (সহীহ বুখারী)
আবার ফরজ নামায ওয়াক্তী মসজিদে আদায় করা সাতাশ গুণ বেশী এবং জামে মসজিদে আদায় করা পাঁচশত গুণ বেশী ছাওয়াব বলে অন্য হাদীসে রয়েছে। অবশ্য পুরুষদের জন্য মসজিদে নামায জামা‘আতের সাথে ফরজ নামায আদায় করা ওয়াজিব এবং মহিলাদের জন্য মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামায আদায় করা কর্তব্য। আর এতে মহিলাগণ মসজিদে না গিয়েও বেশী ছাওয়াব লাভ করবেন এভাবে যে, তারা বাড়ীর ভিতরের যত গহিনের কুঠরীতে সংগোপনে নামায পড়বেন, তারা ততবেশী ফজীলত লাভ করবেন বলে অপর হাদীসে রয়েছে।
হাদীস নং ৪, জামা‘আতের সাথে ইশা এবং ফজরের নামায আদায় করার ফায়দা :
হযরত উসমান বিন আফফান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যারা ইশার নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করে, তারা যেন অর্ধেক রাত্রি দাঁড়িয়ে ইবাদত করল। অতঃপর যারা ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করল, তারা যেন (অবশিষ্ট অর্ধেক রাত্রি নামায আদায়ের ছাওয়াব লাভ করে) সমগ্র রাত্রিই ইবাদতে কাটিয়ে দিল।” (সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, কিতাবুস সালাহ)
হাদীস নং ৫, জুমু‘আর দিনে প্রতি কদমে ১ বছরের নফল রোযা ও ১ বছরের নামাজের সাওয়াব লাভ করা সম্ভব :
হযরত আউস ইবনে আউস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যদিনের তুলনায় জুমু‘আর দিন ফজরের সময় ঘুম থেকে আগে উঠবে, জুমু‘আর জন্য গোসল করবে, উত্তম ও পরিষ্কার পোশাক পরবে, খুশবু ব্যবহার করবে, আযানের পূর্বে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে, ইমাম সাহেবের কাছাকাছি বসবে, মনোযোগ সহকারে খুৎবাহ শ্রবণ করবে এবং খুৎবার সময় অহেতুক কথা ও বাজে কাজ করবে না, তার প্রতি কদমে একবছর নফল রোযা ও একবছর নফল নামাযের সাওয়াব আল্লাহ তা‘আলা দান করবেন।” (মিশকাতুল মাসাবীহ)
হাদীস নং ৬, কুরআনের একটি অক্ষর পাঠের বিনিময়ে একটি সাওয়াব লাভ হয় :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করলো, তার বিনিময়ে সে একটি নেকী লাভ করল এবং এই একটি নেকী দশটি নেকীর সমতুল্য।” অন্যত্র আরো বলেন, “আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম মিলে একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।” (তিরমিযী শরীফ)
অর্থাৎ শুধু আলিফ লাম মীম-এতটুকু তিলাওয়াত করলেই ত্রিশ নেকী হয়ে যায়। এভাবে কুরআন তিলাওয়াতে অনেক নেকী লাভ করবে।
হাদীস নং ৭, কুরআনের একটি আয়াত শেখা শত রাক‘আত নফল নামায পড়া থেকে উত্তম:
হযরত আবু যর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–“হে আবু যর! তুমি যদি সকাল বেলা কুরআন শরীফ থেকে একটি আয়াত শিক্ষা করো, তবে তা একশত রাক‘আত নফল নামায পড়া থেকে উত্তম হবে। আর যদি ইলমের একটি অধ্যায় শিক্ষা করো, চাই এ সময় এর উপর আমল করা হোক বা না হোক, তবে তা হাজার রাক‘আত নফল নামায পড়া থেকে উত্তম হবে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
হাদীস নং ৮, মাতা-পিতার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকালে মকবুল হজ্বের সাওয়াব লাভ হয় :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন কোন নেককার সন্তান তার মাতা-পিতার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি মকবুল হজ্ব লিপিবদ্ধ করেন।” সাহাবীগণ আরজ করলেন, যদি সে দৈনিক একশতবার দৃষ্টি করে (তাতে কি একশত হজ্বের ছাওয়াব পাবে)? নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তা‘আলা অতি মহান, অতি পবিত্র।” (সুনানে বাইহাকী)
হাদীস নং ৯, সকাল-সন্ধ্যায় সূরাহ হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠের ফজিলত :
হযরত মা‘কাল বিন ইয়াসার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ‘আ‘উযুবিল্লাহিস সামী‘ইল ‘আলীমি মিনাশ শাইত্বনির রজীম’ পাঠ করার পর সূরাহ হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা সত্তর হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা তার জন্য দু‘আয়ে মাগফিরাত করবে। সেদিন সে মারা গেলে শহীদের মৃত্যু হাসিল হবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করবে, সেও সকাল পর্যন্ত এই মর্তবা লাভ করবে। অর্থাৎ সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সকাল পর্যন্ত রহমতের দু‘আ করতে থাকবেন এবং ওই রাত্রে সে মারা গেলে শহীদের মৃত্যু হাসিল হবে।” (জামি‘ তিরমিযী)
এ ধরনের ফজীলত বর্নিত আমলের আরো বহু হাদীস রয়েছে। এ সকল হাদীসের ওপর আমল করলে তেমন কষ্ট হয় না, অথচ সাওয়াব অর্জিত হয় অনেক। তাই আমাদের অতি মূ্ল্যবান সময় এবং ছোট ছোট সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে এসকল হাদীসের উপর আমল করে বেশী বেশী সাওয়াব অর্জন করা প্রয়োজন। আল্লাহ পাক তাওফিক দিন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২০