somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

মাযহাব কি? মাযহাব কেন মানবো এবং কোনটি মানবো? -পর্ব-১

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রাককথন:

প্রায়শই প্রশ্ন আসে, আমাদের কাছে অবিকল অবিকৃত অবস্থায় কুরআন আছে, হাদিসের ভান্ডার রয়েছে, তাহলে এরপরেও কেন মাযহাব ফলো করতে হবে? কুরআন হাদিস বিদ্যমান থাকাবস্থায় মাযহাব মানার প্রয়োজনীয়তা কী? মাযহাব কি রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল? সাহাবীগন কি মাযহাব মানতেন? মাযহাব তো চালু হয়েছে তারা গত হয়ে যাওয়ার পরে, তাহলে আমাদের কেন মাযহাবের ধার ধরে চলতে হবে? আমরা কেন কুরআন হাদিসের উপর আমল করতে পারবো না? কুরআনুল কারিমে কিংবা সহীহ হাদিসে কি মাযহাব মানার কোনো কথা বলা আছে?

এই প্রশ্নগুলো এবং এই জাতীয় আরও যেসব প্রশ্নাবলী আমাদের চারপাশে আলোচিত হতে দেখা যায় তার উত্তরে কুরআন হাদিসের আলোকে দু'কলম লেখার উদ্দেশ্যেই আজকের আলোচনা। আল্লাহ পাকের নিকট তাওফিক প্রার্থনা করছি, যাতে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপনে সক্ষম হই।

মাযহাব কি ও কেন?

মাযহাব আরবি শব্দ। এর মানে 'পথ' বা 'রাস্তা'। সংক্ষেপে বলা যায় যে পথের গন্তব্য কুরআন ও সুন্নাহ তাই মাযহাব। আর কুরআন ও হাদীসের সবচে’ বিশুদ্ধ ব্যাখ্যাই হচ্ছে- মাযহাবের ইমামদের সংকলিত ফিক্বহে ইসলামী। তাই মাযহাব মানার অর্থ কুরআন ও হাদীসেরই বিধান মানা ব্যতিত আর কিছু নয়।

যারা মুজতাহিদ নন, তারা মাযহাব অনুসরণ ছাড়া কুরআন ও হাদীসের আলোকে পরিপূর্ণ শরীয়ত মানতেই সক্ষম নন। এটি তাদের জন্য অসম্ভব বিষয়।

যেমন, উদাহরন স্বরূপ বলা যায়, আপনি যদি প্রশ্ন করেন- অজুর ফরজ কতগুলো? কিংবা, অজু ভঙ্গের কারণ কতগুলো? অথবা, অজু কতগুলো কারণে মাকরূহ হয়? বা, অজুতে মুস্তাহাব কতগুলো? অথবা, অজুর সুন্নাত কতগুলো?

আবার যদি প্রশ্ন তোলা হয়- নামাযের শর্ত কতগুলো? নামাযের ফরজ কতগুলো? নামাযের ওয়াজিব কতটি? নামাযের মুস্তাহাব কতগুলো? নামাযের সুন্নত কতগুলো? কতটি কারণে নামায মাকরূহ হয়? কয়টি কারণে নামাযে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়? কতগুলো কারণে নামায ভেঙ্গে যায়? ইত্যাদি বিষয়ের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আলাদা করে শিরোনাম আকারে, সুনির্দিষ্ট নাম্বারসহ তথা অজুতে ফরজ চারটি, নামায ভঙ্গের কারণ ১৯ টি ইত্যাদি শিরোনাম দিয়ে ক্রমিক নাম্বারসহ কুরআনুল কারীম কিংবা হাদিসের কোনো কিতাবে বিদ্যমান নেই।

তাই একজন সাধারণ মুসলিমের পক্ষে শুধু কুরআন ও হাদীস গবেষনা করে এসব বিষয়ের নির্দিষ্ট সংখ্যা বের করে সঠিক পদ্ধদিতে তার উপর আমল করে ইবাদত করা আদৌ সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন আসে, এক্ষেত্রে কুরআন হাদিসে বিশেষজ্ঞ নন একজন সাধারণ মুসলিমের পক্ষে কিভাবে দ্বীন পালন করা সম্ভব?

তাদের জন্য সহজ পথ হল, কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ খাইরুল কুরুনের যেসব মুজতাহিদগণ কুরআন ও হাদীস ঘেটে, যাচাই বাছাই করে, ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর গবেষনা করে এই বিষয়গুলো বের করে দিয়েছেন, তাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুপাতে ইসলামী শরীয়ত অনুসরণ করা। এর নামই হল মাযহাব অনুসরণ।

আর দ্বীনের এমন বিশেষজ্ঞগনকে অনুসরণের নির্দেশ কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য স্থানে, অসংখ্যভাবে এসেছে। যেমন-

وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ [٣١:١٥]

যে আমার অভিমুখী হয়,তার পথ [মাযহাব] অনুসরণ করবে। [সূরা লুকমান-১৫]

মাযহাব মানে পথ। এ আয়াতে আল্লাহ অভিমুখী তথা কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মাযহাব অনুসরণ করার পরিস্কার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।

আরেক আয়াতে এসেছে-

فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [٢١:٧]

অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। [সুরা আম্বিয়া-৭]

এ আয়াতেও না জানলে, না বুঝলে, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করে মানতে বলা হয়েছে। আর বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নির্দেশনা অনুপাতে ইসলামী শরীয়ত মানার নামইতো মাযহাব।

এরকম আরো অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা জ্ঞানীদের পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুসরণ করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের। আর এভাবে কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণে ইসলামী শরীয়ত মান্য করার নামই হল মাযহাব অনুসরণ করা।

মাযহাব ছাড়া দুই রাকাআত নামায পড়াও অসম্ভব

মাযহাব ছাড়া পূর্ণ দ্বীন মানা সম্ভব নয়, তাই চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা আবশ্যক। যেমন: দুই রাকাআত নামাযও মাযহাবের অনুসরণ ছাড়া আদায় করা অসম্ভব।

উদাহরণতঃ



রুকু করা ফরজ কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।



রুকুর তাসবীহ পড়া সুন্নত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।



রুকুতে গমণের সময় ইমাম জোরে তাকবীর বলে আর মুসল্লি আস্তে তাকবীর বলে। এ মাসআলা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই। অথচ তা নামাযের মাসআলা। ইমাম যে জোরে তাকবীর বলে, আর মুসল্লি সর্বদা আস্তে আস্তেই তাকবীর বলে এভাবে আমল করার দ্বারা নামায শুদ্ধ হচ্ছে কি না? তা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই।

এর সমাধান মাযহাবের ইমামদের ইজমা তথা ঐক্যমত্য দ্বারা প্রমানিত হয়েছে।



রুকুতে গিয়ে যদি কেউ ভুল তাকবীর না বলে, রুকুর তাসবীহের বদলে কেউ সিজদার তাসবীহ বলে ফেলে, তাশাহুদের বদলে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলে, জোরে কিরাতের স্থলে আস্তে কিরাত পড়ে, আস্তের স্থলে জোরে পড়ে- এসব মাসআলার সমাধান ছাড়াতো সহীহ পদ্ধতিতে নামায পড়া সম্ভব নয়।

আর এসব মাসআলাসহ নামাযের অসংখ্য মাসায়েলের সমাধান না কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, না হাদীস দ্বারা প্রমানিত। বরং এসব সমাধান মাযহাবের ইমামগণ কুরআন ও হাদীসের গভীর বিশ্লেষন থেকে মূলনীতি বের করে এর আলোকে উদ্ভাবন করেছেন। আর তাদের উদ্ভাবিত সেসব মাসআলার নামই হল মাযহাব।

এতো গেল শুধু নামাযের একটি ছোট্ট অংশের উদাহরণ। এমনিভাবে মানুষের জীবনঘনিষ্ট এমন অসংখ্য মাসআলার উপমা পেশ করা যাবে, যার সরাসরি কোন সমাধান কুরআন ও হাদীসে নেই। কিংবা অনেক স্থানেই বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ।

তাই মাযহাব মানা ছাড়া সাধারণ মুসলমানদের কোন গত্যান্তর নেই। অন্তত দুই রাকাআত নামাযও পরিপূর্নভাবে পড়ার জন্য প্রতিটি মুসলমান মাযহাবের প্রতি মুখাপেক্ষী।

তাই যেহেতু মাযহাব ছাড়া দুই রাকাআত নামাযও পড়া যায় না, পূর্ণ দ্বীন মানাতো বহু দূরের কথা, তাই গায়রে মুজতাহিদ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য মাযহাব মানা ওয়াজিব।

মাযহাব কথাটি কি পবিত্র কুরআনে আছে?

আসুন, আল কুরআনে সরাসরি মাযহাব শব্দটি থাকা না থাকা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে থাকেন। তাদের প্রশ্নের উত্তরে যেতে আরেকটু বিশ্লেষনে যাওয়ার চেষ্টা করি, কোনো একটি শব্দ পবিত্র কুরআনে না থাকা মানে উক্ত বিষয়টি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত নয়, বলা রীতিমত বাচ্চাসূলভ। এধরনের যুক্তি কোন জ্ঞানী ব্যক্তির হতে পারে না। কারণ অনেক বিষয়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত শব্দ থাকলেও তার হুবহু শব্দটি কুরআন বা হাদীসে নেই। কিন্তু এর সমার্থবোধক বিষয় কুরআন ও হাদীসে আছে।

তো যে বিষয়টির শব্দ না থাকলেও তার অর্থ কুরআন ও হাদীসে থাকার মানেই হল, উক্ত বিষয়টি কুরআন ও হাদীসে আছে। যদিও হুবহু শব্দ না থাকুক।

উদাহরন হিসেবে বলা যায়, মুসলমানদের কাছে অতি প্রিয় ও স্বত:সিদ্ধ একটি শব্দ হল- “তাওহীদ”। “তাওহীদ” না থাকলে কোন ব্যক্তি মুসলমানই হতে পারে না। কিন্তু কুরআনের কোথাও এই “তাওহীদ” শব্দটি নেই। এর মানে কি আপনি বলবেন কুরআন দ্বারা তাওহীদ প্রমাণিত নয়? [নাউজুবিল্লাহ]

হুবহু শব্দ না থাকা মানেই উক্ত বিষয়ের অস্তিত্ব অস্বিকার করা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। কুরআনে কারীমে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কিত সকল আয়াতই তাওহীদ বিষয়ক। হুবহু শব্দ না থাকাতে তাওহীদ মানার ক্ষেত্রে যেমন কোনো সমস্যা নেই, আল কুরআনে মাযহাব শব্দটি সরাসরি না থাকলেও বর্নিত সমার্থবোধক অসংখ্য শব্দের দ্বারা মাযহাব মানার বিষয়টিও দালিলিকভাবে প্রমানিত।

মাযহাব কোনটি অনুসরণ করবো?

এর উত্তরও আমরা পবিত্র কুরআনে পরিস্কার ভাষায় দেখতে পাই-

ইরশাদ হচ্ছেঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ [٤:٥٩]

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর,নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং “তোমাদের মধ্যে” যারা জ্ঞানী ও প্রাজ্ঞ তাদের। [সূরা নিসা-৫৯]

উক্ত আয়াতের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন। আল্লাহ তাআ'লা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের নির্দেশের পরেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে 'উলিল আমর' তথা বিচারক বা জ্ঞানী প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণ করতে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধান বিশেষজ্ঞ জ্ঞানীদের বলা হয় মুজতাহিদ।

এখন প্রশ্ন হল, সারা বিশ্বে অসংখ্য মুজতাহিদ থাকতে পারে। ব্যক্তি কোন মুজতাহিদের অনুসরণ করবে?

আল্লাহ তাআলা এ প্রশ্নের সমাধান জানিয়ে দিয়েছেন আয়াতের 'মিনকুম' শব্দ দ্বারা। এর অর্থ হল, 'তোমাদের মাঝের' তথা তোমাদের মাঝে, তোমাদের সমাজের, তোমাদের এলাকার যিনি মুজতাহিদ হবেন, তোমরা তার অনুসরণ করো। দূরের মুজতাহিদের অনুসরণের কথা তিনি বলেননি। অর্থাৎ, যার থেকে ফায়দা হাসিল করা সম্ভব নয়, তাদের পিছনে ছুটতে বলা হয়নি। বরং যে মুজতাহিদের ইজতিহাদ সহজে পাওয়া যায়, সহজলভ্য, যে মুজতাহিদ নিজেদের এলাকায় থাকেন, সেই মুজতাহিদের অনুসরণ করার কথা পবিত্র কুরআনে পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়ে আমাদের জন্য বিষয়টি সহজ করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআ'লা।

এবার আমরা দেখি এ উপমহাদেশে কোন মুজতাহিদের ইজতিহাদ অনুপাতে ইসলাম আসার পর থেকে ইসলামের যাবতীয় মাসআলা- মাসায়েল চলে এসেছে?

এ প্রশ্নের উত্তরে যে কেউ স্বীকার করবেন, নিশ্চয় হানাফী মাযহাবের।

যেদিন থেকে এ উপমহাদেশে ইসলাম নামক জান্নাতী ধর্ম প্রবেশ করেছে, সেদিন ইসলামের সাথে সাথে ইসলামের যেসব বিধানাবলী প্রবেশ করেছে, তা সবই হানাফী মাযহাবের ইমামের ইজতিহাদ অনুপাতে সুবিন্যস্ত কুরআন ও হাদীসের বিধানাবলী হিসেবেই এসেছে।

এ কারণে এ উপমহাদেশের মানুষ মাসায়েলে নামায, রোযা, অজু, গোসল ইত্যাদি যাবতীয় মাসায়েলের সুনির্দিষ্ট মাসায়েলগুলো, ওয়াজিব, সুন্নাত, ভঙ্গের কারণ, মাকরূহাত ইত্যাদি সবই হানাফী মাযহাব অনুপাতেই জেনে আমল করে আসছেন। ক্রমান্বয়ে এ উপমহাদেশে এ বিষয়ক অসংখ্য গবেষণাগার মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কুরআন ও হাদীসের সহীহ ব্যাখ্যা নির্ভর এ মাযহাব অনুসারী অসংখ্য শাইখুল হাদীস, মুহাদ্দিস, মুফতী, মুফাককিরে ইসলাম জন্ম নিয়েছেন। তারা আরো সুবিন্যস্তভাবে এ মাসায়েলগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। এখন একজন মানুষ ইচ্ছে করলেই দ্বীনের যেকোন মাসআলা সুনির্দিষ্ট হুকুমসহকারে আলেম উলামাদের কাছ থেকে জেনে আমল করতে পারেন।

কিন্তু এ উপমহাদেশের কোথাও শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী মাযহাবের মাদরাসা দেখা যায় না। দেখা যায় না, এসব মাযহাব বিশেষজ্ঞ শাইখুল হাদীস, মুফতীয়ানে কেরামদেরকেও। দেখা যায় না ব্যাপক আকারে তাদের কোন কিতাবাদিও।

ফলে এ উপমহাদেশে কোনো ব্যক্তি অন্য মাযহাব মানতে চাইলে, তার পক্ষে সেই মাযহাব অনুপাতে সকল মাসায়েল জানতে পারা সম্ভব নয়। কারণ, না বিশেষজ্ঞ খুঁজে পাবে। না, পর্যাপ্ত কিতাবাদি।

এ কারণে সহজ সমাধান হল, যে এলাকায় যে মুজতাহিদের ইজতিহাদ অনুপাতে কুরআন ও হাদীসের মাসায়েল ইসলাম আসার পর থেকে আমলী সূত্রে এসেছে, উক্ত এলাকায় উক্ত মাযহাব অনুপাতেই ইসলামী শরীয়তের যাবতীয় হুকুম আহকাম পালন করবে। তাহলে আর কোন ফিতনা ও বিভ্রান্তি থাকবে না।

এদিকেই আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়ে সুরা নিসার ৫৯ নাম্বার আয়াতে বলেছেন 'মিনকুম' তথা তোমাদের মাঝের বিশেষজ্ঞকে অনুসরণ কর।

তাই আমরা চোখ খুলে তাকালেই দেখতে পাই, উপমহাদেশে হানাফী মাযহাব, শ্রীলংকাতে শাফেয়ী মাযহাব, মক্কা শরীফে হাম্বলী ও মদীনা শরীফের লোকেরা মালেকী মাযহাব অনুসরণ করে থাকেন। এভাবে, যে এলাকায় যে মাযহাবের অনুসারীরা দ্বীন এনেছেন ও কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক মাযহাবের আমল জারী করেছেন, উক্ত এলাকায় সেই মাযহাবই মানতে হবে। তাহলে আর কোন বিভ্রান্তি থাকবে না।

আর আমরা যেহেতু বাংলাদেশের অধিবাসী। তাই আমাদের উচিত হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করা। এটাই পবিত্র কুরআনের আয়াতের দাবী।

মাযহাবের ইমামদের লিখিত গ্রন্থাবলী

মাযহাবের ইমামগণ কুরআন ও হাদীসের মাসায়েলগুলো গবেষণা করে যা বের করেছেন, তা পরবর্তীতে তাদের ছাত্ররা কিতাব আকারে সংকলিত করেছেন। যেগুলোকে বলা হয় ইসলামী ফিক্বহ।

আর হাদীস নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হবার পরও সংকলক ইমাম বুখারী মুসলিম হবার কারণে যেমন সংকলনকারীর দিকে নিসবত করে বুখারীর হাদীস, মুসলিমের হাদীস বলা হয়, তেমনি ফিক্বহে ইসলামী সংকলকদের নামেও উক্ত ফিক্বহগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। যেমন হানাফী ফিক্বহ, শাফেয়ী ফিক্বহ, হাম্বলী ফিক্বহ, মালেকী ফিক্বহ। যা ইসলামী লাইব্রেরীগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলেই আপনার দৃষ্টিগোচর হবে। সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই অনুমিত হয়, এইক্ষেত্রেও এই প্রশ্ন অবান্তর যে, মাযহাব এতগুলো কেন?

মক্কাতুল মুকাররমাহ কিংবা মদীনাতুল মুনাওওয়ারাহর বড় বড় লাইব্রেরীগুলোর দিকে তাকালেই আপনার চোখে মাযহাবের ইমামদের সংকলিত ফিক্বহে ইসলামীর অসংখ্য কিতাব নজরে আসবে।

এরপরে আসা যাক, অন্ধ অনুসরণ প্রসঙ্গে!

আসুন, প্রথমে জেনে নিই অন্ধ অনুসরণ কাকে বলে!

অন্ধ ব্যক্তি আরেক অন্ধের পেছন পেছন চলার নাম হল অন্ধ অনুসরণ। কিন্তু কোনো অন্ধ ব্যক্তি যদি কোন চক্ষুষ্মানের পিছু পিছু, তার হাত ধরে চলেন, তার নাম কিন্তু অন্ধ অনুসরণ নয়। একে বলতে হবে চক্ষুষ্মানের অনুসরণ।

আপনি যদি বলেন, মুজতাহিদ তথা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির অনুসরণ করে দ্বীন মানাও অন্ধ অনুসরণ। তাহলে বলবোঃ

আপনি মুজতাহিদ না হলে, মুখে যতই বলেন, কারো অনুসরণ করবেন না, কিন্তু আপনি কারো না কারো অন্ধ অনুসরণ না করে দ্বীন মানতেই পারবেন না।

সহীহ, জঈফ, মুনকার, মুদাল্লাস, হাসান ইত্যাদি পরিভাষা আপনি মুহাদ্দিসদের অন্ধ অনুসরণ ছাড়া ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ এসব পরিভাষা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই। এই পরিভাষাগুলো আপনি মুহাদ্দিসদের নিকট থেকে লাভ করেছেন। কুরআন হাদিসে না থাকা সত্বেও এসব শব্দাবলীর উপরে ভিত্তি করে আপনি হাদিসের মান যাচাই করলে সেটা কি অনুকরন হয়ে গেল না?

আরও প্রনিধানযোগ্য যে, হাদিসের কোনো রাবীকে সহীহ বলা, বা জঈফ বলা, হাদীসকে সহীহ বা জঈফ বলা, ইত্যাদি আপনি মুহাদ্দিসদের মন্তব্যের অন্ধ অনুসরণ ছাড়া বলতেই পারবেন না।

দেখা যাবে এক মুহাদ্দিস তার জন্ম নেবার চারশত বছর আগের রাবীর ক্ষেত্রে মন্তব্য করছেন। যা বুঝা যায়, তিনি উক্ত রাবীকে দেখার প্রশ্নই আসে না। তবু আপনার উক্ত মুহাদ্দিসের কথাই মানতে হয় অন্ধভাবে।

যেমন, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী অষ্টম শতাব্দীর লোক। কিন্তু তিনি দ্বিতীয়, তৃতীয় শতকের রাবীদের ব্যাপারেও জরাহ করেছেন। তার এসব জরাহ আপনি কিসের ভিত্তিতে মানবেন? নিশ্চয় আপনাকে এ বিষয়ে ইবনে হাজার আসকালানীর অন্ধ তাকলীদই করতে হবে।

সুতরাং কারো অন্ধ অনুসরণ করবেন না- এটি খুবই চটকদার কথা হলেও বাস্তবে অন্ত:সারশূণ্য একটি কথা। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা অষ্টপ্রহর এই বুলি আওড়ে মানুষদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন, তারা নিজেরাও স্বয়ং অপরের অনুসরন করে চলেন। চলতে বাধ্য হন প্রতিনিয়ত। জীবনের প্রতি পদক্ষেপে।

তাই এসব পন্ডিতী করে শুধু আপনি সময় অপচয় করবেন। নিজের মনে পেরেশানী তৈরী করবেন। দ্বীনী মাসায়েল বিষয়ে সন্দেহ হতে হতে [আল্লাহ না করুন] এক সময় পুরো দ্বীনের উপরই আপনার সন্দেহ তৈরীর মত ভয়াবহ অবস্থাও তৈরী হয়ে যেতে পারে। তাই নিজের অজ্ঞতা সত্বেও কুরআন ও হাদীসের বিধানাবলীতে বিশেষজ্ঞ সেজে বসার এ ভয়াবহ রোগ দয়া করে সারিয়ে তুলুন।

শুধু আমাদের পাক ভারত উপমহাদেশে নয়, সারা বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম যে হানাফি মাযহাবের উপর আমল করে চলেছেন, আসুন আমরাও কুরআন ও সহিহ হাদিসের ভিত্তিতে সংকলিত হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে মনের প্রশান্তির সাথে ইবাদত করে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের পথে ধাবিত হই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা দ্বীন ইসলাম নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি বর্জন করে আমাদের সহীহ দ্বীনের উপর চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।

মাযহাব বিষয়ে যারা আরও বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য মাযহাব বিষয়ক নির্ভরযোগ্য একটি বইয়ের ওয়েব লিঙ্ক-

Mazhab-Ki-O-Keno- Justice Allamah Taqi Usmani

অথবা,

Mazhab Ki o Keno? Justice Allamah Taqi Usmani

কৃতজ্ঞতা: নিবন্ধটি সংকলনে আহলে হক মিডিয়ার সহায়তা নেয়ায় তাদের প্রতি সবিশেষ কৃতজ্ঞতা।

সংক্ষিপ্ত সময়ের সামান্য উপস্থাপনা। এ বিষয়ে সহৃদয় ব্লগারদের নিকট থেকে আরও গভীর আলোচনা পেতে আগ্রহী।

এই পোস্টটি লেখা হত না, যদি না ব্লগার কাওসার চৌধুরী ভাইয়ের সাথে গতকাল তার 'ওয়াজ মাহফিল' বিষয়ক ফিচার পোস্টে কথা না হত। সঙ্গত কারনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাকে শ্রদ্ধাসহ নিবেদন করছি এই সামান্য পোস্ট। আশা করছি, তিনি এই পোস্টে তার মূল্যবান ভাবনা শেআর করে আমাদের জ্ঞানের ক্ষুদ্রতাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:২৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×