somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

আপনি কি জানেন, আখেরি চাহার শোম্বা মানে কী? আজ আখেরি চাহার শোম্বা। আসুন, জেনে নিই, কেন পালন করা হয়ে থাকে এই দিবসটি?

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আখেরি চাহার শোম্বা মানে কী? আখেরী চাহার শোম্বা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি স্মারক দিবস। আখেরী চাহার শোম্বা আরবী ও ফার্সি ভাষার শব্দসমষ্টি। আখেরী আরবি শব্দ, যার অর্থ শেষ এবং চাহার শব্দটি ফার্সি, যার অর্থ চতুর্থ এবং ফার্সি শোম্বা শব্দটির অর্থ বুধবার। তার মানে, এক কথায় তিনটি শব্দের অর্থ দাড়ায়, শেষ চতুর্থ বুধবার

আখেরি চাহার শোম্বা পালিত হয় শুকরিয়া দিবস হিসেবে হিজরি সনের সফর মাসের শেষ বুধবার মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্মারক দিবস হিসেবে পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা পালিত হয়।

কেন পালিত হয় এ দিবস? মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবনে আখেরি চাহার শোম্বা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পূর্ববর্তী সময়ে এই দিনটিতে কিছুটা সুস্থতা বোধ করেছিলেন। ফারসিতে এ দিনটিকে আখেরি চাহার শোম্বা নামে অভিহিত করা হয়। আগেই বলেছি, ফারসি শব্দমালা আখেরি চাহার শোম্বা অর্থ শেষ চতুর্থ বুধবার। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে তাঁর পার্থিব জীবনে শেষবারের মতো রোগমুক্তি লাভ করে কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেন বলে দিনটিকে মুসলমানরা প্রতিবছর ‘শুকরিয়া দিবস’ হিসেবে পালন করেন। তারা নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিবসটি অতিবাহিত করেন। উম্মতে মুহাম্মদির আধ্যাত্মিক জীবনে আখেরি চাহার শোম্বার গুরুত্ব ও মহিমা অপরিসীম।

আখেরী চাহার শোম্বার তাৎপর্য আল্লাহ তা'আলার প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পৃথিবীতে তেষট্টি বছর হায়াত পেয়েছিলেন। এর মধ্যে কখনোই তিনি বড় ধরনের কোনো রোগ-ব্যাধির কবলে পড়েননি। অবিশ্বাসী অংশিবাদীদের শত অত্যাচার ও নির্যাতনের মাঝেও বিশ্বময় প্রতিটি মানুষের কানে তাওহিদের অমীয় বানী ছড়িয়ে দিতে তিনি ছিলেন হিমাদ্রির ন্যায় অটল অবিচল। পার্থিব নিয়ম মেনে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পাড়ি জমাবেন পরকালের পথে। মিলিত হবেন মহান মালিকের সান্নিধ্যে। এটাই আল্লাহ পাকের ফয়সালা। তিনি তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তুলে নিবেন পৃথিবী থেকে। তার আগে রোগাক্রান্ত হলেন আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুস্থতা ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকলে উম্মুহাতুল মু'মিনীনগনসহ, সাহাবা আজমাইনগণ খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েন। অসুস্থাবস্থা বৃদ্ধির একপর্যায়ে সফর মাসের বুধবার আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেন।

উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহাকে ডেকে বললেন, 'আয়িশা, আমার কাছে এসো ও আমার কথা শোনো।'

হযরত আয়িশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা দৌড়ে চলে এলেন এবং বললেন, 'হে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার বাবা-মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক! বলুন, আমাকে কি জন্য ডেকেছেন।'

মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'আয়িশা, আমার মাথাব্যথা চলে যাচ্ছে এবং আমি সুস্থতা অনুভব করছি। হাসান, হোসাইন ও মা ফাতিমাকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো।'

হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা তাই করলেন। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাথায় পানি ঢাললেন। তাঁকে সুন্দরভাবে গোসল করালেন। এই খবর মদীনার সকল স্থানে ছাড়িয়ে পড়লো। অনেক সাহাবী এই খবর পেয়ে আনন্দে আত্মাহারা হয়ে গেলেন। কেউবা দাস মুক্ত করে দিলেন। কেউবা উট দান করলেন। কেউবা বহু দান-সাদকা করলেন। সাহাবীরাও অনেকে রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়ার নামাজ ও দুআ করলেন।

এটা ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। এজন্য এই দিনটিকে আখেরী চাহার শোম্বা বলা হয়। আখেরী অর্থ শেষ আর চাহার সোম্বা হলো বুধবার। এটাই ছিল রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবনের শেষ বুধবার। এরপর বৃহস্পতিবার হতে আবার অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিপূর্বেই তাঁর পরম বন্ধু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার সান্নিধ্যে পৌঁছানোর জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। একজন মুসাফির যেমন দূরবর্তী সফরে বের হওয়ার আগে সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়, সব কিছু গুছিয়ে নেয়- যা দেখে অনুভব করা যায় যে, উনি কোনো সফরে বের হবেন। ঠিক তদ্রূপ মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের আগেই তাঁর বিদায় যাত্রার প্রস্তুতি দেখে নিকটতম সাহাবীরা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোধ হয় আমাদের মাঝে আর বেশি দিন থাকবেন না। উদাহরণস্বরূপ, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমজানের শেষ দশ দিন ই'তিকাফ পালন করতেন। প্রত্যেকবার রমজানে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জিব্রাইল আলাইহিসসালাম আসতেন এবং একবার সমস্ত কুরআন মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুনাতেন। আর মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সমস্ত কুরআন শরীফ জিব্রাইল আলাইহিসসালামকে একবার শুনাতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর জিব্রাইল আলাইহিসসালাম রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ন কুরআন দু'বার শোনালেন। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জিব্রাইল আলাইহিসসালামকে পুরো কুরআন দু'বার শোনালেন। এর পর বিদায় হজ্বের ভাষণের মাঝে তিনি বললেন, 'আজকের দিন যেসময় তোমাদের মাঝে আমি একত্রিত হয়েছি। আর হয়তো তোমাদের মাঝে আমি এখানে একত্রিত হতে পারবো না।'

এই দিনটি সম্মন্ধে অনেকেই না জানার ফলে দ্বিধা দ্বন্ধের ভেতরে থাকেন। তাই ক্ষুদ্র এ আলোচনা। সকলে ভালো থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৫৪
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×