আন্দোলন করে লাভ নাই। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে বিএনপি। সব যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মুক্তি পাবে। কেউ কেউ এমপি মন্ত্রী হয়ে যেতে পারে। এমনকি আবারও রাষ্ট্রপতি হতে পারে কোন রাজাকার নেতা।
আমাদের মাথায় সহজ কথাটা কখনও ঢুকবে না। তাই বার বার আমাদের ঠকে যেতেই হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অনেক মিল আছে। ঘুষ-দুর্নীতি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিশনবাজি, দলীয়করণ ইত্যাদিতে এই দুটি দল একই । এ সব ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে কেবল এই দুই দলের লোকই জড়িত না, জড়িত আছে দেশের তাবৎ আমলা, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। জড়িত সুযোগের অপেক্ষায় থাকা দলীয় চামচ বা কর্মীবৃন্দ।
যেই দল যখন ক্ষমতায় আসে, তাদের পদলেহনকারী কিছু লোকের ভাগ্য বদলায়। কিছু দুর্নীতিবাজ ফুলে ফেপে টাকার কুমির হয়ে যায়। আমরা তাদের অত্যাচারে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে যাই। ৫ বছর ধরে অত্যাচার সহ্য করার পর ভোটের দিন বিপরীত দিকে ভোট মারি। যখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকে, তখন আওয়ামী লীগে ভোট দেই। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, তখন বিএনপিকে ভোট দেই ।
সে সূত্র অনুসারে আগামী নির্বাচনে আমরা বিএনপির ধানের শীষে ভোট দেব। কারণ আমরা আওয়ামী লীগের ঘুষ দুর্নীতি অত্যাচারে অতিষ্ঠ।
বিএনপি ক্ষমতায় এসে প্রথমে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য তৈরি করা ট্রাইবুন্যাল বাদ দেবে।তারপর যারা বন্দী আছে তাদের ছেড়ে দেবে। তারপর তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে বড় বড় সংবর্ধনা দেবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই যুদ্ধাপরাধীরা বড় বড় গলায় আমাদের চ্যালেঞ্জ জানাবে। এমনকি সুযোগ পেলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো একটা অধ্যাদেশ বা আইনও করে ফেলতে পারে। এই আইনে পরিষ্কার করে বলা থাকবে, ভবিষ্যতে কখনও ১৯৭১ সালের কোন ঘটনার জন্য ট্রাইবুন্যাল গঠন করা যাবে না, বিচার করা যাবে না।
সুতরাং আমরা যদি আগামী নির্বাচনে বিএপিকে ভোট দেই । তবে এই আন্দোলন করে লাভ নাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে লাভ নাই।
আমাদের মাথায় সহজ কথাটা সহজে ঢোকে না।
জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বটে কিন্তু তিনি বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন সিআইএ এবং আইএসআইএর কাছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের বাচিয়ে দিয়েছেন। বাচিয়ে দেয়ার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করেছিলেন।বঙ্গবন্ধুর খুনীরা লিবিয়ায় কর্নেল গাদ্দাফীর সহযোগিতায় পেয়েছিলেন। কারণ কর্নেল গাদ্দাফী ছিলেন পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর বন্ধু। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর খুনের সঙ্গে পাকিস্তান এবং ভুট্টোর যোগাযোগ বোঝা যায়।
জিয়াউর রহমান কেবল বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার বন্ধ করেন নি, তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসন করেছেন। তিনি জামাত শিবিরকে রাজনীতি করতে সুযোগ দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের রাজনীতি করার রাস্তা দেখিয়েছেন। কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে তিনি তার মন্ত্রীসভার প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৩ সালের দালাল আইন বাতিল করেন। এই আইনের আওতায় বিচারাধীন ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দেন তিনি। এতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে খালেদা জিয়া বিএনপি জামাত জোট করেছেন। জোট করে ২০০১ সালে নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। রাজাকার আবদুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন।
১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলেন। তিনি গণআদালত করে জামাতের যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী ফাসি দেন। তখন খালেদা জিয়া সরকার শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২৪ জন নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়।সেই সরকারই জামাতের আমীর গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দেন। গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এখন সারা দেশের সাধারণ মানুষ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, তখনও বিএনপি জামাত শিবিরকে ছেড়ে যায় নি। কারণ জামাত শিবিরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুবই গভীর। মূলত বিএনপিকে আইএসআই তৈরি করেছে জামাত শিবিরকে এই দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার জন্য। সে লক্ষ্যে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। যাই ঘটুক না কেন বিএনপি কখনও জামাত শিবিরকে ছেড়ে যাবে না। কক্ষনো না। কারণ বিএনপিকে চালায় যেই বিদেশী পাকি প্রভুরা তারা জামাত শিবিরের লোক।
জামাত শিবির এত ক্ষমতাশালী এবং অর্থশালী হয়ে উঠেছে বিএনপির প্রত্যক্ষ মদদে।তারা ইসলামী ব্যাংক, দিগন্ত টিভি, ইবনে সিনা, নয়াদিগন্ত পত্রিকা, রেনেসা কোচিং - ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করেছে। এই সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জামাত শিবির প্রবল ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে। জেএমবির গ্রেনেড তৈরির জন্য শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন নিজামী কাফকোর সালফার তাদের দিয়েছিলেন। জেএমবির পেছনে জামায়াতের পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
মোর্দা কথা হল জামাত এবং বিএনপি একই। কিন্তু কেন যেন আমরা জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলি কিন্তু ভোটটা দেই বিএনপির ধানের শীষে।যদি জামাত শিবিরের পুনঃস্রষ্টা এবং প্রতিপালনকারী শক্তিকেই ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনি, তাহলে আর এই আন্দোলন কেন ? এই আন্দোলন বন্ধ করে ঘরে গিয়ে চুড়ি পরে বসে থাকি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




