এক মরম্যান (খ্রীষ্টান্ ধর্মের এক বিশেষ প্রশাখা) বন্ধুর বাড়ির দাওয়াতে চার্চের এক সিস্টারের সাথে পরিচিত হলাম । ২০/২২ বছরের সুন্দর মেয়েটি মিশনারীর মিশনে মাস কয়েকের জন্য জাপানে এসেছে। জাপানী ভাষা শিখেই এসেছে। এখন ঘুরে ঘুরে ধর্ম প্রচার করে।
আমাকে খুব বলল “একটু শুনাই আমাদের বাইবেল থেকে?” – বাড়িতে স্যূট - প্যান্ট পরে মিষ্টভাষী মিশনারীর লোক প্রায়ই আসে- ভদ্রভাবে শুরুতেই বিদায় দিয়ে দি। কিন্তু, মেয়েটা ডিনারের সময় আমার পাশে এতো আগ্রহ নিয়ে বসেছে দেখে ভাবলাম –“দেখি তো বিশেষ কি শোনাতে চায়? ”।
মিনিট খানেক শুনেই বুঝলাম নতুন কিছু নেই।
বললাম “ দেখো তোমাদের যীশুর সম্বন্ধে আমাদের নতুন করে জানার কিছুই নেই- ঈসা (আঃ) আমাদেরও অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় একজন নবী। মা মরিয়ম –মানে তোমাদের Mother Marry আমাদের ধর্মে সবচেয়ে শ্রদ্ধেয়া পাঁচজন নারীর একজন। মা মরিয়ামের গর্ভে কিভাবে ঈসা (আঃ) এলেন-ওনাকে কি কি মাজেজা ( excellence) দেয়া হয়েছিল এবং পরিশেষে কিভাবে তাঁকে ইহুদীদের ক্রুশবিদ্ধ হয়ে নিহত হবার পূর্বেই আল্লাহ (SWT) তাঁকে তুলে নিলেন আমরা জানি। মা মরিয়ামের বাবার নামে আমাদের আল কোরানে ৩য় পারায় “সুরা আল ইমরান” নামে এক পূর্নাঙ্গ সুরা আছে। সেখানে ঈসা (আঃ) পূর্বপুরুষের ইতিহাস থেকে সব কিছুই আমরা জানি এবং মানি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় তোমরা আমাদের মোহাম্মদ (সাঃ) এর নামও বেশীর ভাগই জাননা। অথচ তোমাদের New Testament, Old testament (Hebrew Bible- Tawrah, Jabur) সবখানেই এর উল্লেখ আছে। Deuteronomy 18:15- 18:18 (বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের পঞ্চম গ্রন্থ) এ উল্লেখকে তোমার অনেক তর্ক দিয়ে উড়িয়ে দাও- কিন্তু king Solaiman (PBUH) (son of Kind David (PBUH)/ হজরত দাউদ (আঃ)) এর গানে Prophet Mohammad নাম হিব্রু ভাষায় পরিষ্কার লেখা আছে- তাঁর নাম আছে ডেড সি তে উদ্ধারকৃত গুম করে রাখা হিব্রু বাইবেলের স্ক্রলে। আমরা এও জানি কেন তোমরা তাঁকে জানতে বা মানতে চাওনা। কিন্তু তোমরা জাননা “ কি এই দ্বন্দের ইতিহাস” । একজনের মহীমা বা অস্তিত্ত্ব অস্বীকার করলেই আরেকজন বড় হয়ে যায়না। তাই মুসা (আঃ), ঈসা (আঃ), দাউদ (আঃ)- সবাই আমাদেরও নবী এবং আল্লাহ (SWT) বলেছে্ন নবী –রাসুলদের মধ্যে কাউকে অধিকতর মহিমান্বিত বলে অন্যকে অসন্মান করা যাবে না। তোমার যীশুও আমাদের কাছে তাই তেমনি সন্মানিত”।
মেয়েটির জন্য মনে হয় একসাথে অনেক বেশী জ্ঞানের ওভারডোস পড়ে গেছিল। তাই আর “এই দ্বন্দের ইতিহাস” শোনানোর অবকাশ পেলাম না। যা বললাম তাই আগে সে যাচাই বাছাই করুক- নচেৎ একসাথে এতো বেশী দিলে বদহজম হয়ে যাবে। অর্থাৎ জানার আগ্রহ নষ্ট হয়ে উল্টো যা দিয়েছি তাই বমি করে উগরে দেবে। আর ইতিহাস পরে জানতে চাইলে (?) জানানোর জন্য তোলা থাকলো!
ব্লগের পাঠকদেরই না হয় বলি।
আমরা সবাই হজরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশ- যাদের বলা হয় “ইব্রাহীমিক ফেইট” । ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁর স্ত্রী বিবি সারাহ’র যখন কোন সন্তানাদি হচ্ছিল না তখন বিবি সারাহ তার পিত্রালয় থেকে একজন দাসী এনে ইব্রাহীম ((আঃ) কে অনুরোধ করলেন তাদের বংশবিস্তারে অগ্রসর হতে উক্ত দাসী বিবি হাজেরার মাধ্যমে। বিবি হাজেরার গর্ভে ইসমাইল (আঃ) জন্মগ্রহন করবার প্রায় ১২ বছর পর বিবি সারাহ ৯০ বছর বয়সে আল্লাহর পাকের ইশারায় গর্ভবতী হলেন এবং ইব্রাহীম (আঃ) এর ৯৯ বছর বয়সে হজরত ইসহাক (আঃ) এর জন্ম হল।তাঁর জন্মের পর ইসমাইল (আঃ) এতো বৃদ্ধার গর্ভের সন্তান নিয়ে কিছু হাসি – তামাশা করেছিলেন। বিবি সারা এতে অত্যন্ত ক্ষ্রুদ্ধ হয়ে বিবি হাজেরা এবং তাঁর সন্তান ইসমাইল (আঃ) কে গৃহত্যাগ করতে এবং ইব্রাহীম (আঃ) এর তাবদ সম্পত্তি থেকে খারিজ করতে বললেন। ইব্রাহীম (আঃ) এতে অত্যন্ত রুষ্ঠ হলেন , কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ পাকের কাছ থেকে ওহী আসলো , যে, “ তুমি তোমার স্ত্রী’র উপর রুষ্ঠ হয়ও না। তুমি তার কথা নির্ভয়ে পালন কর- কারন, তোমার এই ছেলের ভিতরেই এই জাহানের সর্বশেষ রাসুল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের বীজ আছে”।
এখানে উল্লেখ্য, হজরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশেই সকল নবী –রাসুল আসবেন এই দোয়া তিনি আল্লাহ পাকের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন তাঁর পূন্যময় জীবনের বিনিময়ে।
আমাদের রাসুল (সাঃ) ইসমাইল (আঃ) এর বংশজাত , অপরদিকে ইসহাক (আঃ) এর বংশজাত ইসরাইল (আঃ) এর বংশে মুসা(আঃ), ঈসা (আঃ) এর জন্ম। কাজেই ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের এক প্রকার অহমবোধ যে ইসরাইল (আঃ) এর বংশ হল হজরত ইব্রাহীম (আঃ) এর আইনগত স্ত্রীর বংশ – অপর পক্ষে ইসমাইল (আঃ) হল “বাদী তরফের সন্তান” – কাজেই নব্যুওতে সেই বংশের কোন শরীক নাই।
তাদের আরেক খোঁড়া যুক্তি ছিল হজরত ইসমাইল (আঃ) এর জন্মের অনেক পরে হযরত ইসহাক (আঃ) এর জন্মের আগেই আদি পিতা ইব্রাহীম (আঃ) আদিষ্ট হন মুসলমানি করতে। এরপর ওনার ঔরসে ইসহাক (আঃ) কে বিবি সারাহ গর্ভে ধারণ করেন। মুসলমানি রক্তের ধারাকে পরিশোধিত করে, সুতরাং এর আগে পিতা ইব্রাহীমের রক্তের ধারা পুরোপুরি বিশুদ্ধ ছিলনা। কাজেই হযরত ইসমাইল (আঃ) পুরোপুরি পবিত্র রক্তের ধারক নন ( যদিও পিতার ইব্রাহীমের সাথে তাঁরও মুসলমানি করানো হয়েছিল); হযরত ইসহাক (আঃ) ই একমাত্র পবিত্র রক্তের ধারক। তাই হযরত ইসহাক (আঃ) এর বংশই একমাত্র নব্যুওতের ধারক।
সেই অহমবোধে তারা বরাবর অবিচল- কাজেই মুসা (আঃ) এর উপর নাজিলকৃত তাওরাত ( Hebrew Bible/ Old Testament) এর সেই বিশেষ স্ক্রল যেখানে রাসুল( সাঃ) এর নাম ও আগমনের কথা পরিষ্কার উল্লেখ আছে তা ডেড সী’তে গুম করে ফেলা হয়েছিল। আর একই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সকল কিছুকেই অস্বীকার তারা করেই চলেছে।
এবং আজকে ইসলামের নামে নাসকতা তৎপরতা চালানোর মূল চক্র ISIS – ইসরাইলের মদদেই সৃষ্টি!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩