somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপারেশন কাস্টমস

১৭ ই আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিস্তর বাৎচিতের পর পল ডলিনস্কি নামের আমেরিকান ভদ্রলোক ইমেইলে জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম এবং এই শেষ। আর কখনো কোনো জিনিস পাঠাবে না তারা। বিশ্বের কোথাও নাকি এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের কম্পানিকে।

ইত্যবসরে ডিএইচএল ওরফে হোমবাউন্ড প্যাকার্স থেকে আমাকে ফোন করে জানাল, আমেরিকা থেকে আমার নামে আসা এইচপি নোটবুকটি কাস্টমস থেকে ছাড়ানোর জন্য সবমিলিয়ে ৩৫ হাজার টাকা লাগবে। ওই লোক বারবার ‌'স্যার' ডাকছিল আমাকে। মাল্টিন্যাশনাল চাকরগুলো যাকে-তাকে স্যার ডাকে। পারলে পায়ে ধরে। সুতরাং এই সম্বোধনে গর্বিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং অংক শুনে আমি ঘেমে উঠি। ৫৫ হাজার টাকার মূল্যের (ঘোষিত মূল্য) নোটবুক আরো ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে খালাস করার মানেটা কী?

এক কলিগের পরিচিতজন- এই সূত্র ধরে আমি বিমানবন্দরে এক সহকারী কাস্টমস কমিশনারের অফিসে যাই। গিয়ে শুনি, উনি রাতে ডিউটি করেছেন, তাই আসতে উনার দেরি হবে। নিচতলার বারান্দায় নেমে অপেক্ষা করতে থাকি। মলিন মুখ দেখেই বোধহয় সিএন্ডএফ এজেন্সির এক লোক নিজে যেচে আমার সঙ্গে আলাপ শুরু করেন। কাহিনী শুনে উনি বললেন, কমিশনার ধরে আপনি কাজ করতে পারবেন না। আমাদের ফার্মের মাধ্যমে আসলে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কাজটি তিন দিনের মধ্যে করে দেব। কোনো সমস্যা নেই। আমি বলি, কিন্তু আমার সমস্যা আছে। ৫৫ হাজার টাকার জন্য আরো ২৫ হাজার টাকা আমি কেন দেব? ওই লোক হাসে। আমাকে ভাবতে বলে অন্য দিকে যায়। আমি অপেক্ষা করতে থাকি কমিশনারের আশায়।

শেষমেশ কমিশনার আসেন দুপুর দুইটার দিকে। আমি তড়িঘড়ি ওপরতলায় উঠে পিয়ন মারফত নেমকার্ড পাঠাই। কিন্তু কতো লোক আসে যায়, আমারই শুধু ডাক আসে না। বহু পরে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মিলল। সব শুনে সহকারী কমিশনার বললেন, আপনি সিএন্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ওদের মাধ্যমেই আপনাকে আসতে হবে। এর বাইরে আমার পক্ষ থেকে আর কিছু করার সুযোগ নেই।

আমি তাকে অফিসের ব্যস্ততার কথা বোঝানোর চেষ্টা করি। বলি যে, কাস্টমসে প্রতিদিন আসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আজকের মধ্যে কাজটি করার ব্যবস্থা নিলে কৃতজ্ঞ থাকবো। শুনে উনি একটু হাসলেন। বললেন, প্রধান উপদেষ্টা এলেও তো এ ধরনের কাজ মিনিমাম দুই-তিনদিন লাগার কথা। আপনি মনে হয়, কাস্টমসের রুলস জানেন না।

আমাকে পাত্তা যে দিচ্ছেন না- বোঝা যায় পরিস্কার। তাছাড়া এ ধরনের কথার পর ওই অফিসে বসে থাকাও কষ্টকর। বেরিয়ে আসি রাজ্যের হতাশা নিয়ে। আবার সেই বারান্দা, আবার সিগারেট। সিএন্ডএফ এজেন্সির সেই লোক এগিয়ে এসে জানতে চায়, তার প্রস্তাব ভেবেছি কিনা। আমি বললাম, দেখি! ক্ষোভ জমা হচ্ছিল আগে থেকেই। মোবাইল বের করে একজনকে জানালাম সবকিছু। সে বলল, আমি আসছি কিছুক্ষণ পর। আপনি অপেক্ষা করেন।

সে আসল। এসেই সোজা উঠে গেল সেই সহকারী কমিশনারের কক্ষে। পিছন পিছন আমি। এবার কমিশনারের আরেক চেহারা- যেন বিনয়ের সাক্ষাৎ অবতার। কেউ একজন খবর দিয়েছে বোধহয়, কয়েকজন লোক নিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছুটে এলেন সেই কক্ষে। আমার সেই লোককে বললেন, কী করতে হবে স্যার, বলেন। কোনো চিন্তা করবেন না।

দশ মিনিট পর লোহার বিশাল গরাদ (জেলখানার মতো) পেরিয়ে আমরা গেলাম কাস্টমসের গুদামের (?) দিকে। লোকজন দেখে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একটু হকচকিয়ে গেলেন মনে হল। আমার লোকটি তাকে বলল, স্পষ্ট নির্দেশের সুরে, এই কাজটি যতো দ্রুত সম্ভব করে দেন। কতোক্ষণ লাগবে? দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, আগামীকাল বিকেলের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। কোনো চিন্তা করবেন না। আমার লোক বলল, এক ঘন্টার মধ্যে কাজ করে দেন। কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন কাস্টমস ভদ্রলোক। শুধু বললেন, আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো। আপনি ভাববেন না।

আমাকে বসিয়ে আমার লোক চলে গেল। বলল, কোনো সমস্যা হলেই যেন ফোন করি। তা করতে হল না। কাস্টমস ভদ্রলোক সবার চিৎকার-চেঁচামেচি থামিয়ে নির্দেশ দিলেন, অন্য সব কাজ বন্ধ। আমাকে দেখিয়ে বললেন, উনার কাজটি আগে করো। বিস্ময়করভাবে চা-বিস্কুটও এল। ফাঁকে ফাঁকে আলাপ চললো নানা বিষয়ে। আমি যে কলেজে পড়তাম, সেই কলেজে ভদ্রলোকের বোন অধ্যাপনা করতো- এই তথ্য আবিস্কৃত হল। আবার "কাস্টমসে চাকরি করে সৎভাবে জীবনযাপন করা খুবই কঠিন"- এই ধরনের আধ্যাত্মিক আলাপও বাদ গেল না। মাঝখানে উনি ভ্যাট কি ট্যাক্সের একটি রশিদ দেখিয়ে বললেন, শুধু এই টাকাটা রাখছি। একদম মিনিমাম। আরো কমানো যায় কিনা দেখছি। কাকতালীয়ভাবে সেখানেই ডিএইচএল প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা। আমি তার পরিচয় পেয়ে একটু মুচকি হাসি।

দুই হাজার টাকা পরিশোধ করে, দুই ঘন্টা পর এইচপি নোটবুক নিয়ে যখন গাড়িতে উঠি, মনে তখন রাজ্যজয়ের আনন্দ। প্রগাঢ় স্বস্তিবোধ এসে ভর করে মনে। যদিও কাস্টমসকে এরপর আরো দুবার অস্বস্তিতে ফেলেছি আগের মতোই। সর্বশেষ কদিন আগে আমার ভাইয়ের জন্য একটি লেনোভো থিংকপ্যাড আনিয়েছি। ডিএইচএল-ফেডএক্সের মুখে জুতো মেরে দুহাজারের ওপরে উঠিনি কোনোবারই।

কুকুরের জন্য মুগুর লাগে। ভালোমানুষির দাম সেখানে নেই!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১১:৩০
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×