somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“প্রতিশ্রুতি” - পর্বঃ ০১

২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“প্রতিশ্রুতি” - পর্বঃ ০১
লিখা- Raju Das Rudro
-
তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন ছিল বুধবার । তিন রাস্তার মোড়ে যখন তুমি রাস্তা পার হতে পারছিলে না, আমি তখন তোমার দিকে লক্ষ্য করছিলাম । তুমি শত চেষ্টা করেও রাস্তা পার হতে পারছিলে না; তোমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে আমার চিন্তা-ভাবনা আমাকে বাধা দিল । তুমি অপরিচিত এক মেয়ে, আগে কখনো তোমাকে দেখিনি, আমার কি ঠিক হবে তোমাকে বলা যে “আমার সাহায্য লাগবে তোমার ?”
আমি এসব ভেবে আমি আর তোমার কাছে যেতে পারিনি । আমি অনেকক্ষণ থেকে তোমাকে লক্ষ্য করেই যাচ্ছিলাম । এতই জ্যাম ছিল যে তিল ফেলবার ঠাঁই নেই । তোমার উদাস মুখ দেখে আমার খুব হাসিও পাচ্ছিল এবং দূঃখও হচ্ছিল ।
-
অনেক কষ্ট করে যখন ট্রাফিক পুলিশ তোমার এই অবস্থা দেখলেন; তখন তিনি নিজে তোমাকে রাস্তা পার করে দিলেন । তুমি আমার সামনে দিয়েই বাড়ি চলে গেলে । তুমি হয়তো সেদিন ঠের পাওনি যে তোমার পিছনে থেকে আমি লক্ষ্য করছি তোমার গন্তব্য । কিন্তু সেদিন আমি তোমার সাথে সাথে পিছু যাইনি । কারণ আমি মেয়েদের পিছু যাওয়ার ছেলে নই ।
সেদিন বুধবার ছিল আমার কাছে অনেক আনন্দের । কারণ তোমার হাটা-চলা আমার খুব ভালো লেগেছে, তোমাকেও আমার ভালো লেগেছিল কিন্তু আমি সেদিন বুঝিনি । আমি সেদিন বুঝিনি এটাকে কি ভালোবাসা বলে ।
-
তুমি স্কুল থেকে যখন বাড়ি ফিরতে তখন আমাদের মধ্যে আবার দ্বিতীয়বার দেখা হয় । আমি ভাবব কি; কল্পনাও করতে পারিনি যে তুমি অচেনা মেয়ে যার সাথে আমার আবার দেখা হবে । তুমি যখন স্কুল থেকে ফিরবে তখন তোমার সাথে তোমার বান্ধবী প্রিয়াংকা ও ছিল । প্রিয়াংকা’কে আমি চিনতাম, ও আমার প্রাইমারী স্কুলের বান্ধবী; ওর সাথে আমার ভালোই বন্ধু্ত্ব ।
তুমি বাড়ির পথে হাঁটছো, আমি সেই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি সেই প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম ।
-
আজ ও সেই বুধবার । খুব কৌতূহল হলেও সত্যি যে একই বারে; একই সময়; একই জায়গায় আমাদের দেখা । তোমার পিছনে আমি সেদিন ও যাই নি । তোমার চলে যাওয়া আমি দেখছি । তুমি যাচ্ছ, যাচ্ছ! খুব খুশি তুমি কারণ তুমি ক্লাসে আজ ফাস্ট হয়েছো । তুমি যখন প্রিয়াংকার সাথে কথা বলছিলে তখন এই কথাও বলছিলে তখন আমি শুনেছি । তোমার হাসি মুখ দেখে আমিও মুগ্ধ । তোমার হাসিটা খুব মায়বি, চোখ দুটি মন কেড়ে নেয়, চুল গুলো খোলা । সবকিছু মিলিয়ে ভালোই লাগছে তোমাকে । তোমাকে যতদূর দেখা যাচ্ছে ততটুকুই আমি তোমায় দেখে যাচ্ছি সেই একই জায়গা থেকে । আশেপাশে কি হচ্ছে তার কোনো খেয়াল নেই আমার । এক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলাম তোমার যাওয়া ।
-
বৃহস্পতিবার যখন তুমি স্কুলে আসনি তখন আমার খুব খারাপ লেগেছিল । আমি খুব চিন্তায় পরে গেছিলাম । জানিনা তোমায় নিয়ে কেন চিন্তিত ছিলাম । তখন হঠাৎ দেখতে পেলান যে প্রিয়াঙ্কা স্কুল থেকে একা একা হেঁটে আসছে । একা আসতে দেখে আমি জিজ্ঞাসা করলাম তাকে যে তুমি আজ স্কুলে কেন আসোনি তখন সে উত্তরে বলেছিল তুমি নাকি অসুস্থ্য । শুনে আমার কতটা খারাপ লেগেছিল তখন সেটা বুঝানোর মত না । আমি প্রিয়াঙ্কা কে অনুরোধ করে তোমার বাসার ঠিকানা নিলাম, ও কিছু একটা ভেবে আমাকে তোমার ঠিকানা দিল । আমি তাড়াতাড়ি করে তোমার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । আমার পড়নে তখনো স্কুল ড্রেস ।
তোমার বাসার নাম্বার দেখে দেখে আমি অনেক বাসা দেখে নিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না । পাগলের মত খোঁজতে লাগলাম । শেষে গলির শেষ মাথায় গিয়ে পেলাম তোমার ঠিকানা, অনন্ত আ/এ ৫৫ । আমি তখন দেখতে পেলাম যে তুমি জানালার দিকে চেয়ার নিয়ে বসে আছো । আমি তোমাকে দেখছি কিন্তু তুমি আমাকে দেখনি । যখন আমার স্কুল টাইম ওভার হল তখনো আমি ঐ জায়গাতেই দাঁড়ানো আছি যেখান থেকে আমি তোমাকে দুচোখ ভরে দেখতে পাচ্ছি । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বিকাল ৫:৫০ বেজে গেছে । তখন তুমি হঠাৎ আমার দিকে তাকালে, কিছুটা বিব্রতভাব দেখলাম তোমার মাঝে । হয়তো তুমি তখন সেটা ভেবেছিলে যে আমি একটা বাজে ছেলে; রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি । কিন্তু না, ওটা তোমার ভুল ধারণা, রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের দিকে তাকানো এটা আমার অভ্যাস না । তুমি অসুস্থ্য শুনে আমি আর ঠিক থাকতে পারিনি । তাই একপলক দেখার জন্য ছুটে এলাম তোমার বাসার কাছে ।
তুমি অস্বস্তি হয়ে চলে গেলে । আমার খুব খারাপ লাগলো । তবুও নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম যে তোমাকে আমি দেখতে পেরেছি ।
-
পরদিন যখন শুক্রবার; সেদিন স্কুল বন্ধ ছিল আমাদের দুজনের । তুমি অসুস্থ্য তা দেখার জন্য বৃহস্পতিবার এর মত আবারো ছুটে গেলাম তোমার বাসার কাছে, গিয়ে তোমাকে দেখতে পেলাম না । বিকাল ৫ টা বেজে গেল তুমি আসোনি; ৫:৩০, না তখনো আসোনি । ০৬ টা বেজে গেল, দেখলাম তুমি হাতে নিয়ে কিসের যেন একটি বই পড়ছো । আমি দূর থেকে ঠাহর করতে পেরেছিলাম যে সেটা আর কিছু নয় “হুমায়ুন আহমেদ” স্যারের "হিমু সমগ্র" পড়ছো । আমি তোমাকে দেখে যাচ্ছি, কোনো দিকে আমার খেয়াল নেই । কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে পাওনি । তখনি হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটলো । তোমাদের পাড়ার কিছু ছেলে আমাকে দেখে ফেললো তোমাকে দেখতে । তখন তারা আমাকে অনেক কিছু বললো, আমি ঠের পাচ্ছিলাম যে তুমি সেটা লক্ষ্য করছো । ঐ ছেলেদের সাথে আমি কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি । এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়ালো যে ঐ ছেলেগুলো আমাকে বাজে ভাষায় গালাগাল এবং মারধর করলো । আমি চশমা পড়তাম, আমার চশমাটা ওরা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল । আমি চোখে ঝাপসা দেখতে পেলাম । আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল চশমাটা খোঁজতে । ছেলেগুলো আমার সাথে এরকম অমানবিক আচরণ করার পর চলে গেল । চশমাটা অনেক কষ্টে খোঁজে পেলাম তোমাদের বাড়ির বাগানের পাশে । চশমাটা ভেঙে গেছিল তাই কোনো কিছুই আমি পরিষ্কারভাবে দেখতে পাইনি । লজ্জিত হয়ে আমি চলে গেলাম তোমাদের বাসার সামনে থেকে ।

তুমি সেদিন ইতস্ততভাবে আমার দিকে চেয়ে আছো আমি সেটা বুঝতে পারছিলাম এবং তুমি আমায় আজ দ্বিতীয়বার তোমার বাড়ির সামনে দেখে অবাক হয়েছিলে সেটাও বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমার চলে যাওয়া দেখছিলে ।
-
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৩০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×