আমাদের মামাকে বিশ্বপ্রেমিক বলা যায় না। মোবাইল কোম্পানির কল্যাণে দেশের আনাচে কানাচে তার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। তাই বলে সে ইয়ে মানে প্রেম করে না। মামার ভাষায় জাস্ট ফ্রেন্ডশিপ।মামার এই ফ্রেন্ডশিপ আমাদের জন্য কল্যাণকরই বলতে হবে। মামার এই ফ্রেন্ডশীপের কল্যানেই ঘুরে আসা হলো পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিভাবে? সেই প্রসঙ্গেই আসছি....
আমার বন্ধু কামরু পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পিএসটিউ) থেকে বহুবার বলেছে দোস্ত আমাদের এখানে আয় একবার। দেখে যা কোন সুরত হালে আছি আমরা। যাব যাব করেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি কখনো। আসলে সময় ম্যানেজ করতে পারিনি। আমার সময় হলেও মামা বা ইউনুছ কারও কারও ব্যস্ততা থেকেই যায়। তাই সবাই মিলে একসাথে পিএসটিউ ভ্রমণ শুধু পরিকল্পনায় হয়ে ছিল এতদিন। বাস্তবায়নের মুখ আর দেখেনি হয়তো দেখতেও না কখনও, যদি না পিএসটিউতে মামার বান্ধবীরা না থাকত। আর যাই হোক বান্ধবীদের অনুরোধ তো আর ফেলা যায় না। তাই মামা চুড়ান্ত রকম উদ্যোগী হয়ে উঠল এবং মামার তোড়জোড়ের কারণেই কিনা আমরা একদিন ব্যাগ-বস্তা লইয়া রওনা হলাম পিএসটিউ এর পথে।আমাদের মামা, মামার বান্ধবীর আর পিএসটিউ ভ্রমণ নিয়েই আজকের কচড়া।
রুম নম্বর ২১২। জিয়াউর রহমান হল। আমরা যখন জিয়াউর রহমান হলের ২১২ নম্বর রুমে পা রাখি তখন মধ্য দুপুর। রুমে পৌছাতেই মামা তার পটুয়াখালীর বান্ধবী পুতুলকে ফোন দিয়ে বসল, 'হ্যালো পুতুল। আমি আইসা গেছি। ......তোমাদের হলে আসব? ঠিক আছে আসছি।' কামরু মামাকে নিরস্ত করল, 'না মামা। চল আগে খাওয়া-দাওয়া করে আসি। তারপর আমি তোমার সাথে পুতুলের দেখা করিয়ে দিবোনি।' মামা কামরুর প্রস্তাবে না করল না। আমি দুপুরের খাবারের সন্ধানে বের হলাম।
হলে ফিরতেই আবার পুতুলরে মামার ফোন;'......... তুমি আসছো? নিচে দাড়াচছ.? ঠিক আছে। আমিও নিচে নামছি।' মামা আমারে জিগেয় আমি যাব কিনা। আমি বলি,' না মামা। তুমিই যাও। ওপেনিং করে এসো। তুমিতো একাই দুইশো।' মামাও বিশেষ জোড়াজুড়ি করল না। আমার নতুন কেনা পারফিউমের বোতলের অর্ধেকটা সাবাড় করে ঘরময় গন্ধে মউমউ করে দিয়ে কামরুর গাইডে পুতুলের সন্ধানে বের হয়ে গেল।
দুপুরে ছোটখাটো একটা ঘুম দিয়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো কামরুর চেঁচামেচিতে,'মামা এইদিকে এইদিকে। ....আসলে হয়েছি কি মামা আমাদের এই হলটা স্কয়ার আকৃতির। তাই সিড়ি দিয়ে উঠবার সময় সব দিকে একই রকম লাগে। তুমিতো ভুল কইরা উল্টা দিকে চইলা গেছিলা.....।' মামাকে পথ দেখিয়ে ফিরিয়ে আনা হল। নতুন বান্ধবীদের সাক্ষাতে মামা এখন অন্য জগতের বাসিন্দা। এই সময়ে একটু আধটু পথ ভুল হতেই পারে। টেলি বান্ধবীদের সাথে সাক্ষাতে ফুরেফুরে মেজাজে মামা। তাকে যতবারই জিজ্ঞেস করি মামা কেমন দেখলে? কেমন তোমার বান্ধবীরা? কেমন বিকাল কাটালে? মামা রহস্য করে। কেন যেন এড়িয়ে যেতে চায়। ' না মানে এই আরকি?' কি? সেটা আর জানা হয় না। তবে মামার মুখ থেকে শুধু এইটুকুই জানা গেল আগামীকাল সকালের নাস্তা পাঠাবে পুতুল এবং তাদের বান্ধবীরা। কিন্তু এখানেও রহস্য। শুধু কি মামার জন্যই নাস্তা পাঠাবে? না সঙ্গে আমার আর কামরুর ভাগ থাকবে? নাকি ২১২ নম্বর রুমের সবাই মামার সুবাদে পুতুলদের তৈরি সকালের নাস্তা নিমন্ত্রণ তাও মামা ক্লিয়ার করল না।
ইতিমধ্যে সকালের নাস্তা নিয়ে রুমের মধ্যে শুরু হয়েছে যল্পনা-কল্পনা। কি হবে নাস্তার মেনু? পরেটা আর ডিম? খিচুরি? নুডুলস? নাকি চমকপ্রদ কোন আইটেম? সকালের আগ পর্যন্ত রহস্য উদঘাটনের কোন কুল কিনারা পাওয়া গেল না।
রাতের খাবার শেষে সারাদিনের পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত মামা বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ল। আগামীকাল আন্ত ডিসিপ্লিন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কামরুর দলের প্রথম ম্যাচ। এই প্রথম সে দ্বাদশ খেলোয়ার থেকে পদোন্নতি পেয়ে একাদশে জাযগা করতে পেরেছে। তাই তার জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ টিম মিটিংয়ে যোগ দিতে সে চলে গেল। আমারও চোখ ঘুমে ঢুলুঢুল। আজ এই পর্যন্তই। শুভ রাত্রি। (চলবে)
পুনশ্চ: অনুমতি না পাওয়ায় ছদ্ম নামে মামার বান্ধবীদের উপস্থাপন করা হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


