somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুক্তি মুন্না
আমি আমার জীবনের লক্ষ্য নিয়ে সন্দিহান ছিলাম এবং এখনো আছি। আমি পথিক হয়ে আসলে কোথায় যাচ্ছি, এর শেষ কি হবে তা আমাকে মাঝে মাঝে ভাবিয়ে তুলে। কিন্তু আমি হেঁটে চলছি অবিরত। আমি নিজেকে মেঘের সাথে তুলনা করতে পছন্দ করি, একদিন সেও বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। আমিও ---

কওমী মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকের প্রশ্নমালায় “মওদুদীবাদ”, সোসাল মিডিয়ায় এই নিয়ে হৈচৈ কেন?

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান সময়ে সোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত একটা বিষয় মওদূদী মতবাদ সম্পর্কে কওমী মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকের প্রশ্নমালা নিয়ে তুমুল হৈচৈ দেখা যাচ্ছে। ইতিবাচক ও নেতিবাচক পক্ষে বিপক্ষে অনেক লেখালেখি চলছে।

তাই কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষন দরকার, আমাদের অনেক অজানা কিছু রয়েছে তা জানা দরকার। কয়েকটি সিরিজ আকারে সেই বিষয়গুলি নিয়ে আসতে চাই।

সিরিজ - ০১.
মওদূদী সাহেব ও জামায়াতে ইসলামীর সাথে আলেম সমাজের বিরোধিতার প্রকৃত কারণ:

সম্প্রতি মওদূদীবাদ ও মওদূদী সাহেবের ভূল ভ্রান্তি সংক্রান্ত বিষয়ে
'বেফাকের প্রশ্নমালা' নিয়ে মওদূদী চিন্তা ধারার অনুসারী জামায়াতে ইসলামীর ভাইয়েরা তুমুল হৈচৈ আরম্ভ করেছেন। সোসাল মিডিয়ায় নানা রকম চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মারছেন। সাথে সাথে কিছু কিছু উদারপন্থী "কওমীয়ানরাও তাদের নানা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দ্বারা সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেছেন। তারা বলছেন- "মওদূদীবাদ বলতে আলাদা কিছু নেই। মওদূদী সাহেবের আকিদা বিশ্বাস আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদার অনুরূপ।
তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী"।

এতে তারা জামায়াতের ভাইয়েরা অতীতের মতো নানা মিথ্যাচার ও ছল চাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন।

তারা জামায়াতে ইসলামী ও মওদূদী সাহেবের বিরোধিতার কারণ, মওদূদী বিরোধিতার ইতিহাস, জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে ইত্যাদি নামে যেসব কারণ বা ইতিহাস বর্ণনা করে থাকেন, তা সবই মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও ভিত্তিহীন। এগুলোর কোনোটাই মওদূদী বিরোধিতার প্রকৃত কারণ নয়। বরং মওদূদী সাহেবের বিরোধিতার প্রকৃত কারণ হলো- তার চিন্তাধারার ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা; যেগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষায় অনেক বই-পুস্তক রচনা করা হয়েছে। এগুলোর কোনো কোনোটার জবাব যদিও মওদূদীপন্থীরা দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং খন্ডনে কিছু বই পুস্তক লিখেছেন। কিন্তু এগুলো মোটেও সন্তুষজনক ও গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য আলেম সমাজের কাছে এগুলো গৃহীত হয়নি। যদিও এগুলো দ্বারা নিজের দলের সরলমনা কর্মীদেরকে শান্তনা দেয়া যায়, কিন্তু এগুলো প্রকৃত জবাব নয়।

মওদুদী সাহেবের সাথে উলামায়ে কেরামের বিরোধিতার মূল ও প্রকৃত কারণটা কী ? এবং যেসব কারণে একসময় মওদুদী সাহেবের সঙ্গে থাকা ভারত উপমহাদেশের গণ্যমান্য আলেমগণ তার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। পরবর্তীতে মওদুদী সাহেবের বিভ্রান্তি নিরসনে বই- পুস্তক লিখেছেন- যথাক্রমে- মাওলানা আবুল হাসান আলী নদবী রাহ. লিখেছেন-
عصر حاضر میں دین کی تشریح و توضیح۔
মাওলানা মঞ্জুর নোমানী রাহ. লিখেছেন-
مولانا مودودی کے ساتھ میری رفاقت کی سرگزشت آور اب میرا موقف,

মাওলানা ওয়াহিদ উদ্দিন খান রাহ. লিখেছেন-
تعبیر کی غلطی.

এমনকি যারা একসময় মওদুদী সাহেবের দলীয় চিন্তাধারাকে সমর্থন করেছেন- কিংবা নীরব থেকেছেন- তারাও পরবর্তীতে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রতিবাদ করেছেন, বই-পুস্তক লিখেছেন। যথাক্রমে- কারী তায়্যিব রাহ. লিখেছেন -
مودودی دستور مقدمہ.
পাকিস্তানের মুফতিয়ে আজম মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শফী ওসমানী রাহ. লিখেছেন-
فتویٰ متعلقہ جماعت اسلامی,

পাকিস্তান আন্দোলনের অগ্রদূত মাওলানা যাফর আহমদ থানবী রাহ. লিখেছেন- براءت عثمان,

বাংলাদেশশের মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রাহ. লিখেছেন-
"ভুল সংশোধন"।

কেন এবং কি কি কারণে এইসব ওলামায়ে কেরাম মওদুদী সাহেবের বিরোধিতা করলেন? বই- পুস্তক লিখলেন? এবং আজ অবধি পাক-ভারত উপমহাদেশসহ পৃথিবীর হক্কানী ওলামায়ে কেরাম বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। আজকের আলোচনায় এই উত্তরটা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

উত্তর-
মওদুদী সাহেবের সাথে ওলামায়ে হক্কানীর বিরোধিতার প্রকৃত কারণ হলো- তিনি ইসলাম ধর্মের কতিপয় মৌলিক বিষয় সম্পর্কে মনগড়া এমন কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন; যা ইসলাম নামক গাছের শিকড়ের (মূল) মাটি খুঁড়ে পানির বদলে পেট্রোল ঢালার মত। যখন থেকে তার প্রবন্ধাবলী ও লিখনিতে তার মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রকাশ পেতে থাকে। তার সঙ্গে থাকা উলামায়ে কেরামগণ তখনই তাকে এইসব থেকে ফিরে আসার আহ্বান করা সত্ত্বেও তিনি ফিরে আসেননি এবং তাদের বিরোধিতার কোন মূল্যায়ন করেননি।

নিচে জামায়াতে ইসলামী ও মওদূদী সাহেবের সাথে আলেম সমাজের বিরোধিতার মূল ও প্রকৃত কতিপয় কারণ উল্লেখ করছি।

০১. اله. رب. دين. عبادت (ইলাহ, রব, দ্বীন, ইবাদত,) শব্দ চতুষ্টয়ের মর্ম বিকৃতি:

পবিত্র কুরআন, হাদীস, ফেকাহ ও ফতোয়ার কিতাবাদীতে বহুল আলোচিত এই চারটি শব্দের আলোচনা করতে গিয়ে মওদূদী সাহেব বলেন-
لیکن بعد کے صدیوں میں رفتہ رفتہ ان سب الفاظ کے وہ اصلی معنی جو نزول قران کے وقت سمجھے جاتے تھے، بدلتے چلے گئے، یہاں تک کہ ھر ایک اپنی پوری وسعتوں سے ہٹ کر نہایت محدود بلکہ مبہم مفہومات کے لیے خاص ہو گیا۔(قرآن کی چار بنیادی اصطلاحیں۔ صفحہ۷)
অর্থাৎ- কিন্তু কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় এই শব্দগুলোর যে মূল অর্থ প্রচলিত ছিল, পরবর্তী শতকে তা পরিবর্তিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত একেকটি শব্দ তার ব্যাপকতা হারিয়ে একান্ত সীমিত বরং অস্পষ্ট অর্থের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে পড়ে।
(সূত্র - কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা, পৃষ্ঠা, ১৪ মাওলানা মওদূদী)


তিনি আরো বলেন-
بس یہ حقیقت ہے کہ محض ان چار بنیادی اصطلاحوں کے مفہوم پر پردہ پڑ جانے کی بدولت قرآن کی تین چوتھائی سے زیادہ تعلیم بلکہ اس کی حقیقی روح نگاہوں سے مستور ہو گئی۔-------- نتیجہ یہ ہوا کہ قران کے اصل مدعا ہی سمجھنا لوگوں کے لیے مشکل ہو گیا۔ (قرآن کی چار بنیادی اصطلاحیں۔ صفحہ۔۱۲.۱۳)
অর্থাৎ- এটা সত্য যে কেবল এ চারটি মৌলিক পরিভাষার তাৎপর্যে আবরণ পড়ে যাওয়ার কারণে কুরআনের তিন চতুর্থাংশের চেয়েও বেশি শিক্ষা এবং তার সত্যিকারের স্পিরিটই দৃষ্টি থেকে প্রচ্ছন্ন হয়ে যায়। (সূত্র -কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা, পৃষ্ঠা, ১৫.)

সম্মানিত পাঠক মওদুদী সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য উনার নিজস্ব থিওরি থেকে আবিস্কৃত। চৌদ্দশত বছরের মধ্যে আর কোন ইসলামী চিন্তাবিদ এরকম ভয়ংকর, অবাস্তব, উদ্ভট দাবি করেননি। যদি তার এই ভয়ঙ্কর দাবি মেনে নেয়া যায়, তাহলে কি ফল দাঁড়াবে শুনুন।

ক.
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর বাণী ও ঘোষণা-
إنا نحن نزلنا الذكر وإنا له لحافظون.
অর্থাৎ 'কুরআন আমি অবতীর্ণ করেছি এবং এর সংরক্ষণ আমিই করতে থাকবো'। এই ঘোষণার কোনো যথার্থতা থাকবেনা। কারণ কুরআন অবতীর্ণ হওয়াকালীন এই শব্দগুলোর মূল অর্থ যদি পরবর্তী শতকে হারিয়ে যায় এবং কুরআনের অধিক শিক্ষাই যদি অদৃশ্য হয়ে যায় তাইলে পবিত্র কুরআনের এই শব্দাবলি এবং কুরআনের তালিমের প্রকৃত সংরক্ষণ হলো কীভাবে?
অথচ কুরআনের সংরক্ষণ খোদ আল্লাহ তাআলা জিম্মা নিয়েছেন।

খ.
পবিত্র কুরআনের অন্যান্য আসমানি কিতাবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব হলো- অন্যান্য আসমানী কিতাব বিকৃত হলেও কুরআনে করিম কেয়ামত তক চিরস্থায়ী, অবিকৃত থাকবে। কিন্তু মওদুদী সাহেবের উপরোক্ত মতামত ও দর্শন অনুযায়ী পরবর্তী শতকে কুরআনের এই চারটি শব্দের অর্থ হারিয়ে অন্যান্য আসমানী কিতাবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়েছে। ফলে কুরআনুল কারিম অবিকৃত অবস্থায় আছে- এই দাবি
হাস্যকর হয়ে যাবে। নাউজুবিল্লাহ।

০২. ইক্বামাতে দ্বীনের মর্মবিকৃতি:
মওদুদী সাহেব ও তদীয় অনুসারীরা পবিত্র কুরআনের আয়াত أقيمو الدين এর অর্থ উদঘাটনে মনগড়া ব্যাখ্যা করেছেন।
মওদূদী সাহেব বলেন- دین سے مراد حکومت ہے۔ অর্থাৎ- দ্বীন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্র পরিচালনা। (খুতবাত, মাওলানা মওদূদী)

তিনি আরো বলেন-
دنیا کی کسی زبان میں کوئی ایسا جامع لفظ نہیں، جو اس پورے مفہوم پر حاوی ہو۔ موجودہ زمانے کا لفظ اسٹیٹ کسی حد تک اس کے قریب پہنچ گیا ہے۔ لیکن ابھی اسے"دین" کے پورے معنوی حدود پر حاوی ہونے کے لۓ مزید وسعت درکار ہے ۔ (قران کی چار بنیادی اصطلاحیں۔ صفحہ۔۱۰۱)
অর্থাৎ- দুনিয়ার কোনো ভাষায় এত ব্যাপক শব্দ নেই; যা (دین) এর সম্পূর্ণ অর্থ জ্ঞাপন করতে পারে। আধুনিক কালে “স্টেট” শব্দটি অনেকটা এর কাছাকাছি পৌঁছেছে। কিন্তু দ্বীন শব্দের সম্পূর্ণ অর্থ জ্ঞাপন করার জন্য এখনো এর অনেক স¤প্রসারণ প্রয়োজন। (কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা পৃষ্ঠা, ১১৫)
সম্মানিত পাঠক- এই পুস্তকে “একামতে দ্বীনের তাৎপর্য” শিরোনামে أقيمو الدين এর শাব্দিক অর্থ এবং নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরীনে কেরামের তাফসীর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো মুফাসসিরই এর এই ব্যাখ্যা করেন নি; যা মওদূদী সাহেব চৌদ্দ শত বছর পর করলেন।

০৩. ইক্বামাতে সালাতের মর্ম বিকৃতি:
ইক্বাামাতে সালাতের মর্ম উদঘাটন করতে গিয়ে মওদূদী সাহেব বলেন-
اقامت صلاۃ ایک جامع اصطلاح ہے، اس کے معنی صرف یہی نہیں ہے کہ آدمی پابندی کے ساتھ نماز ادا کرے، بلکہ اس کا مطلب یہ ہے کہ اجتماعی طور پر نماز کا نظام باقاعدہ قائم کیا جائے۔ اگر کسی بستی میں ایک شخص انفرادی طور پر نماز کا پابند ہو، لیکن جماعت کے ساتھ اس فرض کے ادا کرنے کا نظم نہ ہو، تو یہ نہیں کہا جا سکتا کہ وہاں نماز قائم کی جا رہی ہے۔ (تفہیم القرآن، جلد۔۱. سورہ بقرہ، آیت۔۳. حاشیہ، ۵, صفحہ،۵۰)
অর্থাৎ- ইক্বামাতে সালাত এক ব্যাপক পরিভাষা। এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করবে, বরং এর মর্ম হলো- সমষ্টিগতভাবে নামাজের নিজাম (রীতি-নীতি) নিয়মিতভাবে প্রতিষ্ঠ করা। কোনো মহল্লায় যদি জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা না থাকে এমতাবস্থায় কোনো ব্যক্তি একলা নামাজ পড়ার অভ্যস্ত হয়, তাইলে এটা বলা যাবেনা যে, সেখানে নামাজ কায়েম করা হচ্ছে। (তাফহিমুল কুরআন, উর্দূ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা, ৫০)

এই হলো মওদূদী সাহেবের ইক্বামতে সালাতের মর্ম বিকৃতির নমুনা। কোনো মহল্লায় সম্মলিতভাবে জামায়াতের সাথে আদায়ের নিজাম (রীতি-রীতি) না থাকলে ইক্বামতে সালাত হয় না, একথা সম্পূর্ণ তার মস্তিষ্কপ্রসূত। পূর্ববর্তী মুফাসসিরিনে কেরামের কেউ এমন আজগবি কথা বলেননি, বরং সবার মতে ইক্বামতে সালাতের মানে হলো নামাজ সময় মতো এবং নিয়মিত আদায় করা। যেমন তাফসীরে জালালাইনে আছে-

یقیمون الصلٰوۃ ای یأتون بھا بحقوقھا অর্থ: قائم رکھتے ہیں نمازکو
এবং তাফসীরে বয়ানুল কুরআনে থানভী রাহ. বলেন- قائم رکھنا یہ ہیں کہ اس کو پابندی کے ساتھ اس کے وقت میں پورے شرائط و ارکان کے ساتھ اداکریں۔
এবং শায়খু হিন্দ রাহ. বলেন-
اقامت صلوٰۃ یہ ہے کہ ہمیشہ رعایت حقوق کے ساتھ وقت پر ادا کرتے ہیں۔

০৪. عصمت (ইসমত) নিষ্পাপতাকে নবী-রাসূলদের অবিচ্ছেদ্য গুণ বলে অস্বীকার করা:

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উলামা মাশায়েখ ও গবেষকদের মতামত ‘ইসমত’ হলো নবী- রাসূলদের এক এক অবিচ্ছেদ্য গুণ; যা তাঁদের থেকে ক্ষণিকের জন্য কখনো বিচ্যুত হয়নি।
অথচ মওদূদী সাহেব বলেন-
یہ لطیف نکتہ ہے کہ اللہ تعالی نے بالارادہ ہر نبی سے کسی نہ کسی وقت اپنی حفاظت اٹھا کر ایک دو لغزشیں سرزد ہو جانے دی ہے، تاکہ لوگ انبیاء کو خدا نہ سمجھ لیں، اور جان لے کہ یہ بشر ہیں، خدا نہیں۔(تفہیمات۔ جلد ۲. صفحہ۔۷۵)
অর্থাৎ- এটা একটা সূক্ষ বিষয় যে, আল্লাহ তায়ালা স্বেচ্ছায় প্রত্যেক নবী থেকে কোনো না কোনো সময় তাঁর হেফাজত উঠিয়ে নির্য়ে এক- দুই লগজিস (ভুল) হতে দিয়েছেন; যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা মনে না করে এবং বিশ্বাস করে যে, তারাও মানুষ খোদা নন। (তাফহিমাত, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৫.)

সম্মানিত পাঠক- অথচ নবী- রাসূলগণ খোদা নন, বরং মানুষ এটা বুঝার জন্য তাদের মধ্যে মানবিক গুণাবলী যেমন- খাওয়া-দাওয়া, মলমূত্র ত্যাগ করা, নিদ্রা যাওয়া, মানুষের ঘরে জন্ম নেয়া, ছেলে মেয়ের পিতা হওয়া ইত্যাদিই যথেষ্ট। তারা মানুষ; খোদা নন এ কথা বুঝানোর উদ্দেশ্যে কিছু সময়ের জন্য ইসমত উঠিয়ে নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

খ্রিষ্টানরা হযরত ঈসা মসীহ ও তাঁর মাতা হযরত মারইয়াম আ. কে খোদা মনে করে, এর খন্ডনে আল্লাহ পাক সূরা মায়েদায় বলেছেন-
ما المسيح إبن مريم إلا رسول. قد خلت من قبله الرسل. وأمه صديقة كانا يأكلان الطعام. أنظر كيف نبين لهم الآيات ثم أنظر أنى يؤفكون. (مائده. ٧٥)
অর্থাৎ- মরিয়ম তনয় মসীহ রাসূল ছাড়া আর কিছু নন, তাঁর পূর্বে অনেক রাসূল অতিক্রান্ত হয়েছেন,আর তাঁর জননী একজন পরম সত্যবাদিনী, তাঁরা উভয়ই খাদ্য আহার করতেন। দেখুন- আমি তাদের জন্য কিরূপ যুক্তি প্রমাণ বর্ণনা করি, আবার দেখুন- তারা উল্টো কোন্ দিকে যাচ্ছে। (সূরা মায়েদা, ৭৫)

এ আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা খ্রিস্টানদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের খন্ডনে এ কথা বলেন নি যে, তাঁদের থেকে লগজিস (ভুল) সংঘটিত হয়েছে, বরং বলেছেন, كانا يأكلان الطعام (তাঁরাও মানুষের মতো খাওয়া দাওয়া করে।) তাই এই আয়াতের আলোকে পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, নবী- রাসূলদেরকে খোদা মনে না করে মানুষ মনে করার জন্য তাঁদের মধ্যে খাওয়া দাওয়াসহ মানবিক গুণাবলী বিদ্যমান থাকাই যথেষ্ট।

০৫. হযরত ইউনুস আ. নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন বলে মওদূদী সাহেবের ভয়ংকর উক্তি:

তিনি তাফহিমুল কুরআনে লিখেছেন-
قران کے اشارات اور صحیفہ یونس کی تفصیلات پر غور کرنے سے اتنی بات صاف معلوم ہو جاتی ہے کہ "حضرت یونس علیہ السلام سے فریضہ رسالت ادا کرنے میں کچھ کتاہیاں ہو گئی تھی"اور غالبا انہوں نے بے صبر ہو کر قبل از وقت اپنا مستقر چھوڑ دیا تھا اس لیے جب آثار عذاب دیکھ کر آشوریوں نے توبہ و استغفار کی تو اللہ تعالی نے انہیں معاف کر دیا ۔ قرآن میں خدائی دستورکےجو اصول وکلیات بیان کیےگئےہیں ان میں ایک مستقل دفعہ یہ بھی ہے کہ اللہ تعالیٰ کسی قوم کو اس وقت تک تو عذاب نہیں دیتا جب تک اس پر اپنی احجت پوری نہیں کردیتا۔ پس جب نبی اداے رسالت میں کوتاہی کرگیا اور اللہ کے مقرر کردہ وقت سے پہلے خود ہی اپنی جگہ سے ہٹ گیا تو اللہ تعالیٰ کے انصاف نے اس قوم کو عذاب دینا گوارانہ کیا۔(تفہیم القران جلد ۲, صفحات ۳۱۲. طبع۔ ۱۹۶۴عیسوی)
অর্থাৎ- কুরআনের ইঙ্গিত এবং হযরত ইউনূসের গ্রন্থের বিস্তারিত বিশ্লেষণের প্রতি লক্ষ্য করলে বিষয়টি পরিষ্কার জানা যায় যে, ইউনুস আ.’র দ্বারা রিসালাতের দায়িত্ব পালনে যৎসামান্য ত্রুটি হয়ে গিয়েছিল এবং হয়তো তিনি অধৈর্য হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই নিজের অবস্থান ছেড়ে দিয়েছিলেন। এজন্য আযাবের লক্ষণাদি দেখেই তার সঙ্গী সাথীগণ তওবা ইস্তেগফার করে দেয়, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালার যে সব রীতি-মূলনীতির কথা বলা হয়েছে, তাতে একটি নির্দিষ্ট ধারা এও রয়েছে যে, আল্লাহ কোনো জাতি সম্প্রদায়কে ততক্ষণ পর্যন্ত আজাবে লিপ্ত করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের উপর স্বীয় প্রমাণাদি পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেন। সুতরাং নবীর দ্বারা যখন রেসালাতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি হয়ে যায় এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের পূর্বে তিনি নিজেই যখন স্থান ত্যাগ করেন, তখন আল্লাহর ন্যায়নীতি তার সম্প্রদায়কে সেজন্য আজাব দান করতে সম্মতি হয়নি। (তাফহিমুল কুরআন, খন্ড ২, পৃষ্ঠা, ৩১২, মুদ্রন, ১৯৬৪ ঈ.)

সম্মানিত পাঠক- মওদূদী সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্যের বিরুদ্ধে ওলামায়ে কেরাম প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলে তাফহিমুল কুরআনের পরবর্তী মুদ্রণে এ বক্তব্যটি কোনোরকম ভুল স্বীকার না করেই কিছুটা পরিবর্তন করা হয়।
কিন্তু পুনরায় এর সমর্থনেই সূরা সাফফাতের (১৩৯) নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় পূর্বের কথাগুলো বহাল রাখা হয়; যাতে পাঠকরা মনে করে যে, তার পরিবর্তিত এই বক্তব্যের উপরও আলেমরা অযথা আপত্তি উত্থাপন করেন।

এসম্পর্কে মুফতী মুহাম্মদ শফী রাহ.’র মা’আরিফুল কুরআনে লেখা হয়েছে-
تفہیم القرآن کے بعد کے ایڈیشنوں میں اس عبارت سے کسی رجوع کے اعلان کے بغیریہاں عبارت میں معمولی تبدیلی کی گئی ہے یعنی" فريضہ رسالت کی ادائیگیٍ میں کوتاہی "کے الفاظ نئی عبارت میں موجود نہیں ہے، لیکن یہ بات اب بھی عبارت میں باقی ہے کہ جب نبی نے اس قوم کی مہلت کے آخری لمحے تک نصیحت کا سلسلہ جاری نہ رکھا اور اللہ کے مقرر کردہ وقت سے پہلے بطور خودہی وہ ہجرت کرگیا تو اللہ تعالیٰ کے انصاف نے اس کی قوم کو عذاب دینا گوارانہ کیا کیونکہ اس پراتمام حجت کی قانونی شرائط پوری نہیں ہوئی تھی، "لھذا تفہیم القرآن" کی عبارت میں تبدیلی کے باوجود "معارف القرآن"کا تبصرہ علی حالہ برقرار ہے۔ (معارف القرآن۔ اردو، حاشیہ نمر۱، جلد ۴، صفحہ ۵۷۰)
অর্থাৎ: (মওদূদী সাহেবের তাফহীমুল কুরআনের প্রথম এডিশনের আপত্তিকর) উপরোক্ত বাক্যসমূহের বিষয়ে তাফহীমুল কুরআনের পরবর্তী মুদ্রনসমূহে কোনো রকম (ভুল স্বীকার করা) প্রত্যাহারের ঘোষণা ব্যতীত সামান্য কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। অর্থাৎ “ইউনূস আ. রেসালতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন” এই বাক্যটি পরবর্তী মুদ্রনের নতুন বাক্যে নেই। কিন্তু একথাটি এখনো বিদ্যমান আছে যে, “যখন ইউনূস আ. তার স্বজাতিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া নির্ধারিত সময়ের শেষ পর্যন্ত নসিহত অব্যাহত রাখলেন না, বরং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তিনি নিজের সিদ্ধান্তেই হিজরত করে ফেললেন, (তার মানে ইউনূস আ. রেসালতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন) তখন আল্লাহর ন্যায়ে নীতি তার কওমকে আযাব দিতে সম্মত হলোনা। কেননা এতে স্বীয় প্রমাণাদির নীতিগত শর্তাবলী পরিপূর্ণ হয়নি” (তার মানে ইউনূস আ. রেসালতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন, আর তাঁর এই ত্রুটির কারণেই তার কাফের কাওম আল্লাহর আযাব থেকে রেহাই পেলো।) তাই এই কারণে ‘তাফহিমুল কুরআনে’র বাক্যে পরিবর্তন আসার পরও ‘মা’আরিফুল কুরআনে’র বিশ্লেষণ যথাস্থানে বহাল রইলো। (মা’আরিফুল কুরআন, উর্দূ, টিকা নম্বর ০১, খন্ড ০৪, পৃ. ৫৭০)

উল্লেখ্য যে, মুফতি মুহাম্মদ শফী রাহ. তাঁর বিখ্যাত মা’আরেফুল কুরআন (উর্দূ) গ্রন্থের ৪র্থ খন্ডের ৫৭০-৫৭৭ পৃষ্ঠা জুড়ে সূরা ইউনুসের এই আয়াতের তাফসীরে মওদূদী সাহেবের আপত্তিকর বক্তব্যের বিস্তারিত খন্ডন করেছেন। কিন্তু তার অন্ধ ভক্ত অনুসারীরা আজও এটাকে সঠিক বলে মনে করেন। হযরত ইউনুস আ. নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন বলে তারা বিশ্বাস করেন এবং প্রচার করে থাকেন।

সম্মানিত পাঠক- প্রকৃতপক্ষে মওদূদী সাহেবের উলূমে আরাবিয়ার শাস্ত্রবিজ্ঞানে গভীরতার অনুপস্থিতির কারণে তার মেধা ও মননে এইসব ভ্রান্ত চিন্তা- দর্শন জায়গা করে নিয়েছে। আমরা আমাদের এই ক্ষুদ্র পরিসরে মওদূদী সাহেবের ভয়ংকর এই পাঁচটা ভ্রান্ত চিন্তা দর্শনের কথা তুলে ধরলাম।
মূলত এইসবই মওদূদী সাহেবের সাথে আলেম সমাজের বিরোধিতার আসল ও প্রকৃত কারণ; যেকারণে ১৯৪১ সালে মওদূদী সাহেব কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী গঠিত হোয়ার পর থেকে আজ অবধি আপামর উলামায়ে কেরাম মওদূদী সাহেব ও জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা করে যাচ্ছেন এবং তার এইসব ভ্রান্ত চিন্তাধারার খন্ডন করে অগণিত বই পুস্তক লিখেছেন।

জামায়াতীরা মূলত তাদের গুরু মওদূদী সাহেবের জঘন্যতম ভুল ভ্রান্তি, বিভ্রান্তিকর আকিদা বিশ্বাস ও ভয়ংকর চিন্তা- দর্শনের অনুকরণ ও আহবানের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে এক ভয়াবহ ফিতনার দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন।

তাই আমরা এখানে তাদের ভয়াবহ বিভ্রান্তি ও উলামায়ে ইসলামের বিরোধিতার মূল ও প্রকৃত কারণ গুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সহিহ বুঝার তাওফিক দান করুন আমিন।

উপস্থাপনায়ঃ মাও মুখলিসুর রাহমান রাজাগঞ্জী । সিলেট। ২৩-০২-২৪.
তাহকিক ও সম্পাদনা -
হাফিজ আল্লামা মাহমুদ হোসাইন সিলেটি,
সাবেক শায়খুল হাদীস জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর ও বর্তমান শায়খুল হাদীস জামেয়া ইসলামিয়া বার্মিংহাম ইউকে।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×