somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুক্তি মুন্না
আমি আমার জীবনের লক্ষ্য নিয়ে সন্দিহান ছিলাম এবং এখনো আছি। আমি পথিক হয়ে আসলে কোথায় যাচ্ছি, এর শেষ কি হবে তা আমাকে মাঝে মাঝে ভাবিয়ে তুলে। কিন্তু আমি হেঁটে চলছি অবিরত। আমি নিজেকে মেঘের সাথে তুলনা করতে পছন্দ করি, একদিন সেও বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। আমিও ---

সিরিজ-৩ কওমী ও জামাত বিতর্ক

০৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিথ্যাচারের উপর দাঁড়িয়ে আছে কারা? কওমী শিক্ষাব্যবস্থা না জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস?

বেশি বেশি শেয়ার করে সত্য প্রচারে এগিয়ে আসুন। জাযাকুমুল্লাহ।

ইদানিং মওদূদীপন্থী জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী ভাইগণ কওমী শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোসাল মিডিয়ায় আঙ্গুল তুলার দৃশ্য ভাইরাল। তারা বলছেন- "কওমী শিক্ষা ব্যবস্থা না কি মিথ্যাচারের উপর দাঁড়িয়ে আছে"। নাউজুবিল্লাহ।

অথচ বিষয়টা একবারে বিপরীত।
মিথ্যাচার ও ছল চাতুরীর ভিত্তির উপর দন্ডায়মান আলীয়া মাদরাসার ইতিহাস; যা আলীয়া মাদরাসার ইতিহাস নামক পুস্তকে মাওলানা আব্দুস সাত্তার সাহেব সহ অনেক আলেম স্ববিস্তারে তোলে ধরেছেন। ইনশাআল্লাহ এবিষয়ে আমাদের পরবর্তী সিরিজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আজকে আলোচনা হবে আমাদের প্রকাশিত সিরিজ ১ ও ২ এর মতো সিরিজ-৩. জামায়াতে ইসলামীর মিথ্যাচার সম্পর্কে। চলুন তাইলে শুরু করা যাক।

মওদূদী সাহেব ‘আল-জমিয়ত’
পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করা
সংক্রান্ত জামায়াতীদের মিথ্যাচার:

জামায়াত নেতা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ ‘মাওলানা মওদূদীর বিরোধিতার ইতিহাস’ শিরোনামে লিখেছেন-

“মাওলানা মওদূদী সাহেবের বিরোধিতা কখন, কিভাবে কোথা হইতে শুরু হয়, তাহা আলোচনা করা প্রয়োজন। ইহাতে প্রকৃত ব্যাপার নিরপেক্ষ সত্যসন্ধানী মুসলমানের কাছে উদঘাটিত হইয়া যাইবে। মাওলানা মওদূদী সাহেব ১৯২৫ সনে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপত্র আল-জমিয়তের সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে কংগ্রেসকে সমর্থন গ্রহণ করে এবং আল-জমিয়ত পত্রিকা মারফত মাওলানা মওদূদী সাহেবকে কংগ্রেসের অনুকূলে প্রোপাগান্ডা করিতে চাপ দেয়, তখন মাওলানা মওদূদী সাহেব উক্ত পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন। কংগ্রেস ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সেকুলার রাষ্ট্রে পরিণত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিবার পর এক কলম কালি কিংবা একটি কথা দ্বারাও কংগ্রেসের সহযোগিতা মুসলমানের পক্ষে অন্যায় এবং ইসলামবিরোধি কাজ বলিয়া তিনি ঘোষণা দিয়াছিলেন। ইহাতে কংগ্রেসপন্থী আলেমরা রীতিমত মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে উঠেন"। (জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে-পৃ. ৯)।

এ কে এম ইউসুফ সাহেবের অনুরূপ লিখেছেন, ‘সত্যের আলো’ লেখক সিলেটের মাওলানা বশীরুজ্জামান। তিনি উপরোক্ত কথাগুলো ঈষৎ পরিবর্তন ও সংক্ষেপন করে লিখেছেন-

“কিছু সংখ্যক উলামায়ে কিরামের বিরোধিতার পিছনে রয়েছে এক করুণ ইতিহাস। ১৯২৫ সনে মাওলানা যখন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপত্র আল-জমিয়ত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, তখন জমিয়ত রাজনৈতিক অঙ্গনে কংগ্রেসের অনুকূলে প্রচারনা চালানোর জন্য মাওলানার উপর চাপ সৃষ্টি করে। মাওলানা তা অস্বীকার করে পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন এবং ঘোষণা করেন যে, কংগ্রেস ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় , তার অনুকূলে কোন কথা বলা কিংবা কোন প্রকার সহযোগিতা করা মুসলমানদের জন্য অন্যায় ও ইসলামবিরোধী কাজ। এতে কংগ্রেসী উলামায়ে কিরাম মাওলানার বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেন।” (সত্যের আলো-পৃ. ১৭১)

সিলেটের আরেক তরুণ জামাআতী মিথ্যাবাদী লিডার আসলম হোসাইন তার পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করে লিখেছেন-

"আর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ কংগ্রেসকে সমর্থন জানায় এবং আলজমিয়ত পত্রিকায় মাওলানা মওদূদীকে কংগ্রেসের অনুকূলে প্রোপাগান্ডা করতে চাপ দেয়। কিন্তু মাওলানা মওদূদী এই সর্বনাশা আন্দোলন মেনে নিতে পারেননি।
(আলোচিত অভিযোগের কাঙ্ক্ষিত জবাব, প্রথম মুদ্রন, ২০১৯, পৃষ্ঠা, ১৭)

উত্তর ও খন্ডন:
উপরে যে কথাগুলো এ কে এম ইউসুফ সাহেব এবং তার পয়রবী করে বশিরুজজামান ও আসলাম হোসাইন লিখেছেন। তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এটা উলামায়ে কিরামের উপর জঘন্য মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছু নয়।

তাদের এ কথাগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তারা নিজ গুরু মওদূদী সাহেবের জীবনবৃত্তান্ত বা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ইতিহাস সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত নন। জমিয়ত কখন রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে? তাও সঠিকভাবে তারা জানেননা।

মওদূদী সাহেবের ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করার যে কারণ তারা বর্ণনা করেছেন, তা আগাগোড়া মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

স্বয়ং মওদূদী সাহেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহচরদের লিখিত বর্ণনার সথে মিলিয়ে দেখলে তাদের মিথ্যাচার ও অপপ্রচার দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে।

আসুন, দেখি ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পদকের পদ ত্যাগ করা সম্পর্কে স্বয়ং মওদূদী সাহেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহচররা কি বলছেন?

মওদূদী সাহেবের বক্তব্য:
জামায়াতের দলীয় রচনা মুহাম্মদ ইউসুফ ভুট্টা কর্তৃক সংকলিত এবং এদারায়ে মাআরিফে ইসলামী লাহোর কর্তৃক প্রকাশিত ‘مولانا مودوی اپنی اور دوسروں کی نظر میں নামক বইয়ে মওদুদী সাহেবের স্বহস্তে লিখিত একটি আত্মজীবনী সন্নিবেশিত হয়ে আছে। এ আত্মজীবনীটি তিনি ১৯৩২ সালে তার জনৈক বন্ধু সাইয়িদ মানযার আলী আশহার (‘মানযারুল কিরাম’ বইয়ের লেখক) সাহেবের অনুরোধে পত্রস্থ করেছিলেন। এতে মওদূদী সাহেব নিজের জীবনবৃত্তান্ত উল্লেখ করতে যেয়ে লিখেন-

“১৯২০ সালের শেষাংশে আমি দিল্লী ফিরে আসি। ১৯২১ সালের প্রথমাংশে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে- মাওলানা মুফতী কিফায়াতুল্লাহ ও মাওলানা আহমদ সাঈদ সাহেবদ্বয়ের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। এ বছর তারা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে ‘মুসলিম’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং আমাকে এর সম্পাদক নিযুক্ত করেন। পত্রিকাটি ১৯২৩ সাল পর্যন্ত জারি থাকে এবং শেষ অবধি আমিই এর সম্পাদক ছিলাম।
১৯২৩ সালে ‘মুসলিম’ পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায় আর আমি হায়দারাবাদের উদ্দেশ্যে দিল্লী ত্যাগ করি। কিন্তু পথিমধ্যে ভূপাল আমাকে আটকে ফেলে এবং আমি হায়াদারাবাদ যাবার ইচ্ছা পরিত্যাগ করি। ভূপালে দেড় বছর কায়মনে বইপুস্তক অধ্যয়নে প্রবৃত্ত থাকি এবং দু একটি নিবন্ধ ব্যতীত লেখালেখির কোন কাজই করিনি। ১৯২৪ সালের প্রথমাংশে দিল্লী ফিরে আসি। তথায় মাওলানা মুহাম্মদ আলী সাহেবের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি ‘হামদর্দ’ পত্রিকায় আমাকে নিজের সহযোগী করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু এ সময় মাওলানা আহমদ সাঈদ সাহেব জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকা পকাশ করার উদ্যোগ নেন এবং পূর্ব-সম্পর্কের কারণে আমি হামদর্দের উপর ‘আল-জমিয়ত’কে প্রাধান্য দেই।

তাছাড়া এ প্রাধান্য দানের আরেকটি কারণ ছিল এই যে, আমি স্বভাবগত ভাবে স্বকীয়তা পছন্দ করে থাকি। যাই হোক, ১৯২৫ সালের প্রথম থেকে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় এবং ১৯২৮ সালের শেষ নাগাদ আমি উক্ত পত্রিকাটি একাকী নিজ দায়িত্বে প্রকাশ করতে থাকি। এ সময় পত্রিকা লিখনের সাথে সাথে বিভিন্ন শাস্ত্রের অধ্যয়নও অব্যাহত রাখি। আরবী পাঠ্যসূচীর শীর্ষস্থানীয় যে কতিপয় কিতাব রয়ে গিয়েছিলো, সেগুলোর পাঠ গ্রহণ করি এবং দু’টো পুস্তকও রচনা করি- যেগুলো ‘আল-জিহাদ ফিল ইসলাম’ এবং ‘দৌলতে আসিফিয়া ও হুকুমাতে বরকতিয়া’ নামে প্রকাশিত হয়ে গেছে।

এখন এমন সময় আসল যে দশ বছরের লব্ধ অভিজ্ঞতাপ্রবাহ ভারতের এবং বিশেষত উর্দূ ভাষায় পত্রিকা লিখন থেকে আমাকে একেবারে বীতশ্রদ্ধ করে ফেলেছিল এবং এ জীবন আমার জন্য মর্মপীড়ার কারণে পরিণত হতে যাচ্ছিল। পরিশেষে ১৯২৮ সালের শেষাংশে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সাথে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলি এবং ভবিষ্যতে রচনা ও গ্রন্থনাবৃত্তি নিজের জন্য পছন্দ করে নেই।” (মাওলানা মওদূদী: আপনী আওর দূসরৌঁ কী নযর মেঁ, পৃ. ৩৫,৩৬)

মালিক গোলম আলী সাহেবের বক্তব্য:
উপরোক্ত বইয়ে মওদূদী সাহেবের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত সহচর মালিক গোলাম আলী সাহেবের রচিত একটি নিবন্ধও রয়েছে। এ নিবন্ধটি তিনি ‘এদারায়ে তাসনীম’ এর কর্মকর্তাদের অনুরোধে মওদূদী সাহেবের ব্যক্তিত্ব ও জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে লিখেছিলেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন-

“১৯২৫ সালের শুরুতে ‘মুসলিম’ পত্রিকার স্থলাভিষিক্ত ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার প্রকাশনা আরম্ভ হয় এবং এর সম্পাদনার দায়িত্ব পুনরায় মাওলানা (মওদূদী)র উপর অর্পিত হয়। এ দায়িত্ব তিনি ১৯২৮ সালের শেষ পর্যন্ত পালন করতে থাকেন। এখানে এ কথা উল্লেখ করা আবশ্যক যে, যে সময় মাওলানার সম্পাদনার সম্পর্ক ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সাথে ছিল, সে সময় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ কংগ্রেসের চিন্তাধারা ও কর্মকৌশলের সমর্থক ছিলো না, বরং জমিয়ত তখন সেই স্বাধীন পলিসির উপর চলছিল যা; মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ আলী তখনকার জাতীয় ও ধর্মীয় ব্যাপারে অবলম্বন করেছিলেন। ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব থেকে মাও. মওদূদী পৃথক হবার দু’বছর বা আরো অধিককাল পর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ তার স্থায়ী সম্পর্ক কংগ্রেসের সাথে স্থাপন করে।” (মাওলানা মওদূদী: আপনী আওর দূসরৌঁ কী নযর মেঁ, পৃ. ২৫১-২৫২)

সম্মানিত পাঠক-
স্বয়ং মওদূদী সাহেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহচরের লিখিত বিবরণ থেকে সংগৃহীত উদ্ধৃতাংশ দুটো থেকে যা প্রমাণিত হচ্ছে তা হলো এই-

(ক) ১৯২৮ সালের শেষাংশে ‘আল-জমিয়তে’র সম্পাদনার দায়িত্ব থেকে মওদূদী সাহেবের পৃথক হবার কারণ হচ্ছে এই যে, এ সময় দশ বছরের লব্ধ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের এবং বিশেষত উর্দূ ভাষায় পত্রিকালিখন থেকে তিনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন এবং বইপুস্তক রচনা ও প্রণয়নের পেশা তার কাছে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদকের পদ তিনি ত্যাগ করার এটাই হচ্ছে প্রকৃত কারণ। তিনি নিজে এ কারণটি উল্লেখ করেছেন। তাই এতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই।

(খ) ১৯২৫ সালের প্রথম থেকে ১৯২৮ সালের শেষ পর্যন্ত মওদূদী সাহেব ‘আল-জমিয়ত’এর সম্পাদক থাকাকালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি; বরং এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এর দু’বছর বা আরো অধিককাল পর। মওদূদী সাহেবের ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম আলী মালিক সাহেব এ কথাটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এটাই বাস্তব।

উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে যারা জ্ঞান রাখেন তারা অবশ্যই জানেন যে, ১৯২৯ সালে ‘লাহোর অধিবেশনে’ কংগ্রেস উপমহাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব পাশ করার পর ১৯৩০ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত ‘আমরূহা সম্মেলনে’ জমিয়তে উলামা স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের সাথে শরীক হবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ প্রসংগে দুটো ঐতিহাসিক প্রমাণ উল্লেখ করছি।

দু’টো ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি:

১. আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মরহুম জনাব তুফায়েল আহমদ লিখেন-

“জমিয়তে উলামার নবম অধিবেশন ১৯৩০ সালের মে মাসের ৩ তারিখ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত চারদিনব্যাপী শাহ মঈনুদ্দীন আজমীরী সাহেবের সভাপতিত্বে ‘আমরূহায়’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাশকৃত অন্যতম বিশেষ প্রস্তাব ছিল এরূপ-

"যেহেতু লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে এবং নেহরু রিপোর্টকে খারেজ করে দিয়েছে, সেহেতু জমিয়তুল উলামা কংগ্রেস থেকে পৃথক থাকবে না বরং এর সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবে”। (রওশন মুসতাক্ববিল। জমিয়তে উলামা কিয়া হায়? উর্দু ২য় খন্ড, পৃ. ২৬৪, মাও. সায়্যিদ মুহাম্মদ মিয়া।)

২. প্রখ্যাত আলিম, জামায়াতে ইসলামীর প্রথম নায়েবে আমীর এবং পরে জামায়াতত্যাগী, মাওলানা মনযূর নূমানী সাহেব লিখেন-

“১৯৩০ সালে বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস পুনরায় স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। পক্ষান্তরে, জমিয়তুল উলামাও এ সংগ্রামে কংগ্রেসের সাথে যৌথভাবে অংশ নেয়ার জন্য দলের আমরূহা অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অতঃপর কংগ্রেসের সাথে সংগ্রামের ময়দানে অবতীর্ণ হয়।” (মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচর্যের ইতিবৃত্ত , পৃ.১৬)

উপরে উল্লিখিত মওদূদী সাহেব ও গোলাম আলী সাহেবের বর্ণনা এবং ঐতিহাসিক তথ্যাবলী দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, মওদূদী সাহেব ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে জমিয়ত রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসকে সমর্থন করেনি।

সুতরাং কংগ্রেসের অনুকূলে প্রচারণা চালানোর জন্য জমিয়তের পক্ষ থেকে মওদূদী সাহেবের উপর চাপ দেয়া এবং তিনি তা অস্বীকার করে ‘আল-জমিয়তের’ সম্পাদক-পদ ত্যাগ করার কোন প্রশ্নই আসেনা।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ‘ইউসুফ-বশীর’ জুটিসহ জামায়াতে ইসলামীর লোকজন এ অবাস্তব অবান্তর প্রলাপই বকছেন দীর্ঘকাল ধরে।

নিরপেক্ষ সত্যসন্ধানী মুসলমানদের কাছে প্রকৃত ব্যাপার উদঘাটন বা করুণ ইতিহাসের নামে তারা যা প্রকাশ করছেন, তা আগাগোড়া মিথ্যা ও অলীক। এতে সত্যের লেশ মাত্র নেই। এটা ইতিহাস সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার পরিচায়ক অথবা তাদের নিজ গুরুর বক্তব্য মিথ্যা আখ্যা দেয়ার নামান্তর। মওদূদীপ্রেমে বিভোর হয়ে অথবা তথাকথিত ইসলামী বিপ্লবের গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে তারা এ ধরণের গাঁজাখুরী বক্তব্য রেখেছেন।

সর্বোপরি উলামায়ে কিরামকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিপন্ন ও বিরাগভাজন করার হীন উদ্দেশ্যে তারা মিথ্যাচারের এ ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন করেছেন।

চ্যালেঞ্জ:
সর্বশেষে ম ওদূদীপন্থী জামাতীদের চ্যালেঞ্জ করছি। আপনারা সত্যবাদী হলে নির্ভরযোগ্য দলীল দস্তাবেজের মাধ্যমে প্রমাণ করুন যে, মওদূদী সাহেব আল-জমিয়তের সম্পাদক থাকাকালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ রাজনৈতিক অংগনে কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল এবং কংগ্রেসের অনুকূলে প্রচারণা চালানোর জন্য তার উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। আর তা অস্বীকার করে তিনি পত্রিকার সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেছেন।

আমরা তো আপনাদের নিজ গুরু স্বয়ং মওদূদী সাহেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহচরের বক্তব্য এবং ঐতিহাসিক তথ্যাবলীর আলোকে প্রমাণ করেছি যে, আপনাদের এ প্রচারণা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও নির্জলা মিথ্যা। এখন আপনারা নিজেদের সত্যতা প্রমাণ করুন। কিন্তু কস্মিনকালেও আপনারা তা পারবেননা ইনশাআল্লাহ।

অতএব আল্লাহকে ভয় করুন এবং এ ধরণের মিথ্যাচার থেকে তাওবা করুন। ২৭-০২-২৪.
-------------------------------
(তাহকিক ও সম্পাদনা-
হাফিজ আল্লামা মাহমুদ হোসাইন সিলেটি, সাবেক শায়খুল হাদীস জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর, বর্তমান শায়খুল হাদীস জামেয়া ইসলামিয়া বার্মিংহাম, ইউকে।)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×