...তবে কেন আরেকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি??
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
খবরটি প্রথমে দেখি অপরিচিত কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালে। মূলধারা পত্রিকাগুলোতে খবরটা তখনো আসেনি। তাই অনেকটা অবিশ্বাস নিয়ে একটা প্রশ্নবোধক সতর্কতা রেখে পোষ্টটা দিয়েছিলাম। এরপর খোঁজ লাগালাম। ফেইসবুকের কিছু বন্ধু এবং অন্যান্য সোর্সের মাধ্যমে বিষয়টা পরিস্কার হই।
হ্যাঁ ঘটেছে। কিন্তু মূলধারার সংবাদপত্রে সেটা আসেনি। কেন আসেনি? এতে সাম্প্রদায়িক হামলা বাঁধার ঝুঁকি আছে। খবরটা চাপা রাখা গেছে? যাই নি। এখন যেটা হবে তাহলো, নানা মাধ্যম হয়ে মূল খবরটা বিকৃতভাবে প্রকাশ পাবে এবং এতে আরো বেশী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এখন কিছু না ঘটলেও পরিস্থিতি বুঝে ঠিকই এর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। অন্যদিকে, মূলধারার পত্রিকাগুলো বেশীক্ষণ চুপ থাকতে পারবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা উঠলেই পিঠ বাঁচাতে এক সময় তারা ঠিকই প্রকাশ করবে।
হেফাজতের মৃত্যুকে চাপিয়ে রেখে এই মূলধারার পত্রিকাগুলো কার স্বার্থ রক্ষা করেছিল?
এবার এরা ঢাকার মসজিদে আক্রমণের খবর চাপা রেখে কার স্বার্থ রক্ষা করছে?
মন্দিরে হামলা কিম্বা বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়ে তো তারা হৈচৈ বাঁধিয়েছিল। তখন কেন ভাবেনি এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে?
নাকি বিশেষ একটা ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বীদের উগ্র হিসেবে পরিচিত করাতে পারলে তাদের আত্নমর্যাদা বাড়ে এবং নিজেকে প্রগতিশীল, আধুনিক মানসিকতার মানুষ হিসেবে প্রমাণিত করা যায়?
আমি জানি, আজকের লেখার জন্য আমি অনেকের কাছে সাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচিত হবো। কিন্তু যখন মন্দিরে হামলার বিরুদ্ধে কিম্বা বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম তখন হয়তো ঠিকই ছিলাম।
মন্দিরে হামলা এবং বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চাপা রাখলে যে অপরাধ হোত আজকে মসজিদে আক্রমণ এবং তারাবীর নামাজ নিয়ে শর্ত আরোপের খবর চেপে রেখে মূলধারার পত্রিকাগুলো চরম সাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিল।
**** সাম্প্রদায়িক হামলা আমরা কাকে বলব?
*** কেবলমাত্র সংখ্যাগুরু দ্বারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আক্রান্ত হলে?
**নাকি সংখ্যালঘু কোন শক্তি দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে উত্যক্ত করাও সাম্প্রদায়িক?
পুরান ঢাকাতে যেটা হয়েছে সেটা খুব সহজেই উভয়পক্ষের নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে মিমাংসা করা যেত। ঘটনা সম্পর্কে যেটা জানা যায় তাহল, রথ যাত্রার কারণে নামাজে সমস্যা হলেও মুসল্লিরা অনেকটা মেনে নিয়েছিল কিন্তু মন্দিরের পক্ষ থেকে তারাবীর নামাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়। নামাজ মন্দিরের নির্দেশমতো সময়ে শেষ না হওয়াতে মন্দিরের লোকজন মসজিদে ঢিল ছোঁড়া শুরু করে। এরপর পরই অজ্ঞাত স্থান থেকে অতি দ্রুততার সাথে গেন্ডারিয়া থানার এসআই অমল কৃঞ্স ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ঢিল ছোঁড়া দাঙ্গাবাজদের গ্রেফতারে তৎপর না করে মসজিদের ইমামকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালান। তখন মুসল্লিদের হস্তক্ষেপে দয়াপরবশ হয়ে এসআই অমল বাবু ইমাম সাহেবকে ছেড়ে দেন তবে একটা শর্ত দিয়ে যান। আগামীকাল থেকে (মঙ্গলবার) তারাবীর নামাজ ১০টার মধ্যে শেষ করতে হবে। আদেশ না মানলে অমল বাবু মসজিদে তালা লাগিয়ে দেবার হুমকী দেন।
জানা যায় এসআই অমল বাবুর মদদে মন্দির থেকে একদল উগ্রলোক দা এবং লাঠি নিয়ে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, ওখানে হিন্দুরা সপ্তাহব্যাপী রথ যাত্রার আয়োজন করে যা ওরা আগে কখনো ঐ এলাকায় করেনি। আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হোল, রথযাত্রা তারা দিনের বেলাতেও করতে পারতো। এখানে ধর্মীয় কোন বিধি নিষেধ নেই। গরমের অজুহাতে সেটা করেনি। মুসলমানদের তারাবীর নামাজতো গরম ঝড় বৃষ্টির জন্য রাতেরটা দিনে হতে পারে না।
*** এবার কিছু ক্লু দেই, আপনারা ভাবতে থাকুন।
ক্লু নং ১: ভারতে আওয়ামিলীগের বন্ধু কংগ্রেসের ভরাডুবিতে আওয়ামিলীগ কোনঠাসা।
ক্লু নং ২ : ভারতে ক্ষমতায় উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক দল বিজেপি। আওয়ামিলীগের সাথে এখনো তাদের বিশ্বাসযোগ্য শর্তহীন দাসত্ব-প্রভুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।
ক্লু নং ৩ : সম্প্রতি সুষমার সফরে আওয়ামিলীগ আশানুরূপ ভালবাসা পায়নি।
ক্লু নং ৪ : জানতে পেরেছি, ওখানে আগে কখনো রথযাত্রা হয়নি।
ক্লু নং ৫: রথযাত্রা দিনের বেলাতে হতে পারলেও তারাবীর নামাজের সাথে সাংঘর্ষিক সময়ে রাখা হয়েছে
ক্লু নং ৬ : মসজিদে ঢিল ছোঁড়া এবং দৃশ্যপটে এসআই অমল বাবুর আগমন
ক্লু নং ৭ : মসজিদে তালা লাগানোর ঘোষনার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটা জেনে বুঝেও অমলবাবু সেটা বললেন।
*** এবার দেখুন, হিসেবটা পরিস্কার কিনা!
(এক)
এখন হিন্দু মুসলিম একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে পারলে আওয়ামিলীগ হিন্দু সাম্প্রদায়িক নেতা মোদিকে বুঝাতে পারবে, দাদা বলছিলুম না। বাঙলাদেশে আওয়ামিলীগ ছাড়া হিন্দুরা নিরাপদ নয়। এবার হোল তো! সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে আওয়ামিলীগের পতি পল্টানোর (কংগ্রেস থেকে বিজেপি) ধান্দা।
(দুই)
আরো আছে। ঈদের পরে বিরোধীজোট চূড়ান্ত আন্দোলন চালানোর ঘোষনা দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা কোনমতে বাঁধাতে পারলে এই অছিলায় তারা আগের মতো ঢাকায় সব ধরনের মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে। সরকার তো ভাল করেই জানে যে, বিএনপি ’সুবোধ বালক’। এরা পুলিশের অনুমতি না পেলে কোন মিটিং মিছিল করে না। মুচলেকা দিয়ে সমাবেশ করারও নজির আছে।
*** এবার একটু ভিন্ন বিষয় তবে বিচ্ছিন্ন আলাপ নয়। কংগ্রেসের সময়ে ভারত আমেরিকাকে বলেছিল, ভারতের চোখে বাঙলাদেশকে দেখার জন্য। বাঙলাদেশ সরকার এর কোন প্রতিবাদ করেনি। ওরা বলেনি, বাঙলাদেশ কি সিকিম নাকি পঃবাঙলা নাকি বিহার যে ভারতের চোখে অন্য রাষ্ট্রগুলোকে বাঙলাদেশকে দেখতে হবে? মূলতঃ ঐ একটামাত্র উক্তি দ্বারা ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে বাঙলাদেশের অবস্থান ওদের কাছে সিকিমের চেয়ে বেশী কিছু নয়। তাহলে আমরা পাকিস্তানের অংশ থাকলে কি ক্ষতি হোত? কি জন্য ত্রিশ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হোল? যাকগে, আমেরিকা ভারতের চোখে বাঙলাদেশকে দেখছে কিনা জানি না। তবে আমরা ইতিমধ্যে আমাদের নিজের দেশকে ভারতের চোখে দেখা দিয়েছি। কি করলে ভারত অখুশী হবে, কি করলে বিজেপি আবার কংগ্রেসের মতো আওয়ামিলীগকে বন্ধু হিসেবে নিয়ে ক্ষমতায় থাকার পাকা ব্যবস্থা করে দেবে সেই চিন্তায় আমরা অনেকেই উদগ্রিব। আমরা অনেকেই ইতিমধ্যেই দেশটাকে সিকিম বানিয়ে দিয়েছি। বাঙলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে আমাদের স্বার্থে। মোদি কি ভাবল, কি ভাবল না তাতে কি যায় আসে? মোদি নিজেই তো একটা খুনী, সন্ত্রাসী। হাজার হাজার মুসলিম মেরে হাত থেকে রক্তের দাগ যায়নি।
*** আরেকটা কথা। আগে নির্বাচনের আগে আলোচনা হোত, আমেরিকা কাকে এবার ক্ষমতায় চাইছে সেই আলাপ। এখন শুনি ভারত কাকে চাইছে সেই আলাপ। চাকরেরওতো জাত পাত আছে, তাই না? ফকিন্নির চাকর হওয়া আর রাজার চাকর, দুইটাতে একটু ফারাক আছে তো! মানুষের চাহনী থাকে উপরের দিকে। আমাদের দৃষ্টি নিচের দিকে, যেখানে বনে বাঁদাড়ে হাগুমুতু পড়ে থাকে।
কৃতজ্ঞতাঃ মিঠু ভাই, অষ্ট্রেলিয়া
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?
যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।
নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন