somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের মূল ধারার চলচ্চিত্রের জেন্ডার সংবেদনশীলতা যাচাই- পর্ব-২

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(বাংলাদেশের মূল ধারার চলচ্চিত্রের জেন্ডার সংবেদনশীলতা যাচাই- পর্ব-১)
Click This Link

পুরুষের উপস্থাপন

রাজনীতিবিদ পুরুষ
এখানে পুরুষকে দেখানো হয়েছে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে। আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করবে পুরুষ।

পুলিশ পুরুষ
প্রশাসনিক চাকরি করতে পারবে একমাত্র পুরুষ-পুরুষতন্ত্রের এমন একটি ধারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই চলচ্চিত্রে। এখানে যত পুলিশ অফিসার বা কনস্টেবল দেখানো হয়েছে, তাদের সবাই পুরুষ। এখানে নারীর কোন স্থান নেই।

রক্ষাকারী পুরুষ
পূরুষ নারীকে রক্ষা করবে এমন একটি ধারণা পুরুষতন্ত্রের মূলমন্ত্র। এ মন্ত্রটিকে তন্ত্র করে প্রচার করা হয়েছে, বাংলা সিনেমার অন্যান্য সিনেমার মতো, এই সিনেমাতেও। যখনই নায়িকাকে গুণ্ডারা ধরে নিতে আসে তখনই নায়ক এসে হাজির হয় নায়িকাকে বাঁচাতে।

সার্বিক বিশ্লেষণ
সিনেমা দুটির প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সিনেমাতে নারী পুরুষের যে সামগ্রিক চরিত্রের একটি ধারণা পাওয়া যায় নিুে সেটি উপস্থাপন করা হলো

চলচ্চিত্রে নারীর উপস্থাপন

 সতীত্ব ও কৌমার্যই নারীর ধন : দুটি সিনেমাতেই দেখা গেছে নারী মাস্তান দ্বারা আক্রান্ত এবং তার শীলতা হানির চেষ্টা করা হচ্ছে।
 নারী শরীর সর্বস্ব : আঁটোসাটো পোষাকে নারীকে শরীর সর্বস্ব করে উপস্থাপন করা হয় এবং ক্যামেরার ক্লোজ শটের মাধ্যমে তা আরোও প্রকট করে তোলা হয়।
 নারী পেশাহীন : সেজেগুজে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া নারীর কোন কাজ নেই।
 সাজসজ্জাই নারীর প্রধান কাজ
 নারী সহিংসতার শিকার : দুটি সিনেমাতেই দেখা গেছে নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে
 নারী পন্যের মতো : টাকা পয়সা কিংবা গায়ের জোড়ে নারীকে পাওয়া যায়
 নারী নিস্ক্রিয় : আমি যে দুটো সিনেমা নমুনা হিসেবে গ্রহণ করেছি দুটোতেই দেখা গেছে নারী খুবই নিষ্ক্রিয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোন কিছু করার ক্ষেত্রেই নারীর কোন ভূমিকা নেই। পুরুষের চাওয়া অনুযায়ী নারী পরিচালিত হয়।

চলচ্চিত্রে পুরুষের উপস্থাপন

 পুরুষ পেশাজীবি এবং যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের একচ্ছত্র অধিকারী
 পুরুষ নারীর উদ্ধারকর্তা এবং আশ্যয়দাতা
 পুরুষ বহুমূখী, যেমন সে ভদ্র, শান্ত-শিষ্ট আবার প্রযোজনে সহিংস, হিংস্র
 পুরুষ পূর্নাঙ্গ এবং সয়ংসম্পূর্ন
সুপারিশমালা

ক্স অশ্লীল ছবি এবং জেন্ডার অসংবেদনশীল ছবির নির্মাতা, প্রযোজক, পরিচালক, কলাকুশলী সবাইকে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ক্স অশ্লীল ছবি নির্মান বন্ধের জন্য সরকারি যেসব নীতিমালা আছে সেগুলো সংস্কার করে আইনের কঠোরতা বাড়াতে হবে এবং তার প্রয়োগ করতে হবে।
ক্স নারীর সঠিকবাবে চিত্রায়নের জন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির একটি আচরণ বিধি ও নীতিমালা থাকা উচিৎ
ক্স সুস্থ ছবি নির্মান এবং জেন্ডার সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিতে চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত ব্যক্তি যেমন-প্রযোযক, পরিচালক,অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলীমের সাথে সমাজের গণ্য মান্য ব্যক্তিদের মাঝে কর্মশালার আয়োজন করতে হবে।
ক্স ভালো ছবি নির্মানের জন্য সরকারি অনুদানের পরিমান বাড়ানো যেতে পারে।
ক্স অশ্লীল এবং জেন্ডার সংবেদনশীল ছবিতে কাজ না করার জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মাঝে আত্শ সচেতনতা বাড়াতে হবে
ক্স সেন্সর বোর্ডকে আরো স্বক্রিয় হতে হবে।
ক্স চলচ্চিত্র শিল্পে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে হবে।
ক্স বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চলচ্চিত্র বিষয়ক কোর্স চালু করতে হবে। এতে করে শিক্ষিত এবং নবীন চলচ্চিত্র শিল্পে কাজ করতে আগ্রহী হবে।
ক্স বিদেশী ছবির নকল থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে বাস্তব সম্মত ও জীবনমূখী ছবি নির্মান করতে হবে।
ক্স অশ্লীলতা বন্ধ করার জন্য এবং জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।

উপসংহার:

পর্দায় রূপায়িত নারী-চরিত্রের সাথে বাস্তবতার অমিল যেন পাহাড় সমান। বাস্তবে মেয়েরা নিজেদের মেধায়, যোগ্যতায় স্বীয় পেশা নির্বাচন করছে, পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সমাজের দর্পণ হিসেবে নির্মিত এসব ছবিতে ‘পেশাজীবী নারী’র মোড়কে দেখানো হয় অ-পেশাজীবী (পেশাহীন) নারীকে। পেশাক্ষেত্রে যারা কখনোই নিজের নিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষম নয়-যার প্রযোজন পেশীবহুল সর্বশক্তিমান পুরষের অর্থাৎ নায়কের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী পেশাগত দায়িত্ব ফেলে নায়কের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। এ-পথে তারা পর্দায় নিজেদের যৌনতাকে ব্যবহার করছে অথবা করতে বাধ্য হচ্ছে।

উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনায় রেখে আমি পরিশেষে বলতে চাই যে, গবেষণার মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না থাকে গবেষণাপ্রসূত ফলাফল। বরং তা ছড়িয়ে দিতে জন মানুষের কাছে, মানুষকে জানাতে হবে নারী পুরুষের সমতার কথা, অধিকারের কথা আর জাগাতে হবে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মাত্রা। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবকে বিতাড়িত করে ধারণ করতে হবে বিজ্ঞানমনস্কতা। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে, শান্তির জন্যে, উন্নয়নের জন্যে আমাদেরকে যে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে, নারী - পুরুষ একসাথে। ততদিন পর্যন্ত আমাদেরকে যে চালিয়ে যেতে হবে এই ‘নারীবাদী লড়াই’ ‘সমতার লড়াই’। আর এই লড়াই শুরু হোক চলচ্চিত্র থেকেই।

তথ্যসূত্র:

১. সিরাজ, শাতিল; মাহমুদ, আল শামীম; (২০০১) “চলচ্চিত্র যখন নেহাতই ‘সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি’র উপাদান: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ”; রেটোরিক চলচ্চিত্র সংখ্যা; রাজশাহী।
২. আজাদ, হুমায়ুন (১৯৯৮); “দ্বিতীয় লিঙ্গ”; আগামী প্রকাশনী; ঢাকা।
৩. আজাদ, হুমায়ুন (১৯৯৫); “নারী”; আগামী প্রকাশনী; ঢাকা।
৪. খোন্দকার, সাহাদাৎ হোসেন (অক্টোবর, ১৯৯০); “উন্নতমানের শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র”; নিরীক্ষা; সংখ্যা-৪৩; প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, ঢাকা।
৫. রীয়াজ, আলী (সম্পা. ১৯৯৫); “বাংলাদেশের নারী”; চারদিক; ঢাকা।
৬. পারভিন, সিতারা; “গণমাধ্যমে যে নারীকে দেখি”; জেন্ডার মিডিয়া এন্ড জার্নালিজম; ডিসেম্বর ২০০২; বিসিডিজেসি; ঢাকা।
৭. নারী সংহতি; গণমাধ্যম ও নারী; নারী সংহতি প্রকাশনি; ১৯৯৯, ঢাকা।


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:১২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১১



একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×