somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ চলে যাওয়া

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন শুক্রবার।চেম্বারে পেশেন্ট দেখছিলাম। ম্যানেজার আর ওয়ার্ডবয় দৌঁড়ে এলো, স্যার তাড়াতাড়ি আসেন, একটা খারাপ পেশেন্ট। চেম্বারের পাশেই একটা কেবিনে ওই পেশেন্টকে রাখা হলো। আমি আউটডোর পেশান্টকে অর্ধেক দেখে, বসতে বলেই ছুট দিলাম।

বয়স্ক ভদ্রলোক। অস্থির ভীষন। ঘামে ভিজে গেছেন। পায়ের মধ্যে কাদা লেগে আছে এখনো, কিছুটা শুকিয়েছে। বুক চাপড়াচ্ছেন, পানি চাচ্ছেন। প্রেসার দেখলাম, বুকে ব্যথা কিনা জানতে চাইলে ঠিক মতো বোঝাতে পারলেন না। প্রেসার বেশী পাওয়ার পর আগের হিস্ট্রি জানতে চাইলাম কেউই কিছু বলতে পারলো না। গামাছা দিয়ে গা মুছে দেওয়ার পর দেখলাম একটু যেন নিস্তেজ হয়ে আছেন মানে ড্রাউজি। ভাবলাম স্ট্রোক এক্সক্লুড করি। হাতের গ্রিপ, পায়ের মুভেমেন্ট, প্ল্যান্টার দেখলাম সব নরমাল। বাই দিস টাইম ইসিজি মেশিন চলে এসেছে। আমি সিউর ছিলাম এটা হার্ট এটাক হতে পারে, কিন্তু পেশান্ট ড্রাউজি কেন হলো, আবার টিপিক্যাল চেস্ট পেইন এর হিস্ট্রিও নেই।

তবুও, এক মূহুর্তও দেরী করলাম না। ই সি জি করতে বললাম। বলা বাহুল্য ই সি জি তে যত ক্রিটিক্যাল রোগই আসুক এই উপজেলা থেকে সেই রোগীকে রেফার করা ছাড়া উপায় নেই। বড় জোর ক্লপিডগ্রেল এস্পিরিন ইত্যাদি ফার্স্ট লাইন ড্রাগ এর প্রথম ডোজটা আর অক্সিজেন দেয়া যেতে পারে।

রোগী আমার হাত ধরলো, কথাও বলে ছিলো পানি খাবেন। ইসিজি করে সিস্টার আমার হাতে দিতেই আমি আঁতকে উঠলাম। রোগী আর আমার মধ্যে ডিসট্যান্স কয়েক হাত হবে। ই সি জি তে আসলে ভি এফ মানে ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশান। আমার জীবনে আমি খুব বেশী ভি এফ এর পেশেন্ট দেখিনি যাদের লাইভ ইসিজিতে ভি এফ এসেছে।

আমি পেশেন্ট এর উল্টো দিকে দরজার কাছে। ইসিজি দেখেই দ্রুত বেগে পেশেন্ট এর দিকে ছুটলাম। আমরা সবাই জানি ভি এফ এর আল্টিমেইট ফেইট মৃত্যু। হাইলি ডেডিকেটেট কার্ডিয়াক সেন্টারেও এটা ফেটাল কেইস হিসেবেই ট্রিট করা হয়।

আসে পাশে মানুষ অনেক। সবাই মুখিয়ে আছে। এমনকি জানালার পাশেও উৎসুক জনতা। নীচের ফ্লোর আর রাস্তার পাশের কেবিন বলেই সব দিক থেকেই লোকের চাপ।

এতসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, সময় খুব বেশী হলে ৫-৮ মিনিট হবে। আমি রোগীর কাছে যেতেই দেখলাম নীলচে মুখ, অসাড় দেহ, চোখের মনি ফ্যাকাশে আর ডাইলেটেড। কে বলবে ৫ মিনিট আগে উনি হাত তুলেছেন, আমার হাত ধরেছেন।

কি করবো? কি এক্সপ্লানেশান দেবো? আমি তো ঔষধও দেই নি। অক্সিজেন সিলিন্ডার পাশেই রাখা। ঔষধ দিলে না হয় বলা যেত ঔষধ দিয়ে ভালো পেশান্টকে খারাপ বানানো হইসে।

উৎসুক জনতাও উত্তর খুঁজছে। আমি ওদের ফিসফিসানি শুনতে। নিজের বুকটা ধ্বক করে ওঠে। পেশান্ট টার দিকে তাকাতেই চোখ জ্বলতে শুরু করে।

না পেশেন্ট এর কোন লোকজনই খারাপ ব্যবহার করেননি। হার্টের সমস্যা বুঝিয়ে দেবার পর চুপ করেই ছিলেন। নীরবে চোখের জল ফেলেছেন। পেশান্ট আসার পরপরই আমি উনাদের বলেছিলাম এই পেশান্ট খারাপ, হার্টের সমস্যা। কিন্তু এত দ্রুত এই পেশান্ট চলে যাবে, কিম্বা এই পেশান্ট ভি এফ নিয়ে প্রেজেন্ট করবেন সেটা আমার কল্পনায়ও আসে নি। মনটা কেমন যেন চুপসে গেলো।

এই পরিস্থিত গুলো যখন আসে, তখন আমার শিরদাঁড়া বেয়ে হীম শীতল একটা স্রোত বয়ে যায়। শরীর ঘেমে যায়, চোখ জ্বালা করে, ইমোশান আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে।

এত দ্রুত মানুষ কিভাবে হারিয়ে যায়? আমি, আপনি, আমরা সবাইতো চলে যাবো তাই না? জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত উপভোগ না করে কেন তবে অপচয়? কি লাভ মন খারাপ করে, কি লাভ নিজেদের মাঝে দূরত্ব বাড়িয়ে????????????

#মৃনাল সাহা
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×