somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতালির শ্রম বাজারে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ

১৪ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইতালির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ৪০ বছর বয়সের প্রধানমন্ত্রী মাত্তেয় রেনসি’র সময়োপযোগী নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। শ্রমিক নিয়োগ এবং ট্রাক্স প্রদানের আইন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গত চার মাসে প্রায় আড়াই লাখ বেকার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এদিকে অন্যান্য বছরের মতো এবারও দেশটি ১৩ হাজার মৌসুমি শ্রমিক আমদানির ঘোষণা দিয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল ‘দেকরেতো ফ্লুসি ২০১৫’ নামে মৌসুমি শ্রমিক আমদানির গেজেট প্রকাশ করা হয়। গেজেটে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার নাম থাকলেও বাংলাদেশের নাম নেই। গত দুই বছরের মতো এবার বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়েছে। অথচ এক শ্রেণির আদম দালাল মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতেছে।
এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ইতালির শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, এবছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের মোট ২৪টি দেশ থেকে ১৩ হাজার মৌসুমি শ্রমিক আমদানি করা হবে। ঘোষিত ২৪ দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান শ্রীলংকার নাম থাকলেও বাংলাদেশের নাম নেই। অন্য দেশগুলো হলো, আলজেরিয়া, আলবেনিয়া, বসনিয়া হার্জেগভিনা, মিসর, উত্তর কোরিয়া, ফিলিপাইন, গাম্বিয়া, ঘানা, জাপান, কসোভো, মেসিদোনিয়া, মরক্কো, মরিশাস, মালদোভিয়া, মোন্টিনেগ্রো, নাইজার, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, সারবিয়া, ইউক্রেন ও তিউনিসিয়া।
ইতালির কৃষি শিল্প এবং পর্যটন শিল্পের জন্য প্রতিবছর গরমের মৌসুমে অতিরিক্ত শ্রমিক দরকার হয়। এই অতিরিক্ত শ্রমিক আমদানির জন্য ইতালিতে ‘দেকরেতো ফ্লুসি এসতাজোনালে’ নামে এক ধরনের ভিসা পদ্ধতি চালু আছে, যা আমাদের দেশে কৃষি ভিসা বা সিজন্যাল ভিসা বলে পরিচিত। আইনানুযায়ী এ ভিসায় যারা ইতালিতে আসবে তারা সর্বোচ্চ ৯ মাসের জন্য ভিসা এবং ওয়ার্কপারমিট পাবেন। ৯ মাস পরে তাকে বাধ্যতামূলক নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। যদি কেউ ফেরত না যান, তিনি অবৈধ অভিবাসী বলে বিবেচিত হবেন। যারা সিজন্যল কাজ শেষ করে বা ভিসার মেয়াদ শেষে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাবেন পরবর্তী বছরে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। অর্থাৎ পরের বছর যখন মৌসুমি শ্রমিকের দরকার হবে, তখন যদি তারা আবেদন করেন, তাদের আবেদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করা হবে। এবছর ১১ হাজার ৫শ নতুন এবং ১ হাজার ৫শ গত বছরের শ্রমিক মিলিয়ে মোট ১৩ হাজার মৌসুমি শ্রমিক আমদানি করা হবে। শ্রমিক আমদানির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ৮ মে সকাল ৮টা থেকে ৩১ মে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। উল্লেখ্য, কোনো শ্রমিক নিজে আবেদন করতে পারবেন না। ইতালীয় বা বৈধ অভিবাসী মালিক নির্দিষ্ট শর্ত মেনে শ্রমিকের জন্য আবেদন করবেন।
২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই ভিসা বা শ্রমিক আমদানি পদ্ধতির গোড়া থেকে বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট কোটা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু গত তিন বছর যাবৎ বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত কোটা বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বাদে অন্য সব দেশ থেকে প্রতিবছর যেসব মৌসুমি শ্রমিক ইতালিতে আসেন তাদের অধিকাংশ ভিসার মেয়াদ বা কাজের কন্ট্রাক শেষ হওয়ার পর নিজ দেশে ফিরে যান। তারা ইতালিতে এসে নিয়ম মাফিক বৈধভাবে কাজ করেন এবং সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করেন। ব্যতিক্রম ঘটে বাংলাদেশিদের বেলায়। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইতালি সরকার প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে এসতাজোনালে বা মৌসুমি ভিসা প্রদান করেছে। এর মধ্যে মাত্র ৫১ জন শ্রমিক নিজ দেশে ফিরে গিয়েছেন। বাকি সবাই পালিয়ে থেকেছে ইতালিতে। কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপের অন্যান্য দেশে। যারা পালিয়ে থেকেছেন, তাদের বড় অংশ বৈধভাবে কোনো কাজ করেননি। এদের দ্বারা সরকারের খাতায় কোনো ট্যাক্স জমা হয়নি।
কেনো বাংলাদেশি শ্রমিক নিজ দেশে ফেরত যান না?
দেশে এবং প্রবাসে এক শ্রেণির দালাল চক্র আছে, যারা মানুষকে সঠিক তথ্য প্রদান করে না। অধিকাংশ সময় তারা সিজন্যল ভিসার কথাও বলে না। ইতালিতে মোটা অঙ্কের বেতন, ভালো চাকরি, থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থার কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করে। এরপর মাথাপিছু ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে ইতালিতে নিয়ে আসে। যে কাজের কথা বলে তাদের ভিসার জন্য আবেদন করা হয় ইতালিতে এনে সেই কাজ দেয়া হয় না। এমনকি আইনানুযায়ী ইতালিতে প্রবেশের ৮ দিনের মধ্যে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করতে হয়, কাজের জন্য নিবন্ধন করতে হয়, তা-ও করে না। অল্প সংখ্যক যারা কাজ করেন তারা এক মৌসুমে দালালকে দেয়া মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার করতে পারেন না। যে টাকা খরচ করে তারা ইতালিতে আসে সেই টাকাই উশুল হয় না। বাধ্য হয়ে তাদের আর দেশে ফেরা হয় না। শুরু করতে হয় পলাতক বা অবৈধ অভিবাসীর দুর্বিষহ জীবন।রোমের বাংলাদেশ মিশন থেকে কখনোই এসব বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। সরকারি পর্যায়ে মানুষকে সঠিক তথ্য জানানোর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। যার ফলে হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক প্রতারণার শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন। ইতালীয় প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশি শ্রমিকের সুনাম নষ্ট হয়েছে, হচ্ছে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা ইতালির সিজন্যাল ভিসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
ইতালিতে ২০১৫ সালের মৌসুমি শ্রমিক আমদানির তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। সুতরাং দালালদের কথায় প্রতারিত হবেন না। তারা প্রচার করছে ইতালিতে বাংলাদেশ থেকে ১৩ হাজার নতুন শ্রমিক নেয়া হবে। শতভাগ মিথ্যা কথা বলে তারা মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। সঠিক তথ্য হলো, মৌসুমি কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিকও ইতালিতে আসার জন্য ভিসা পাবে, না। ইতালীয় শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে গত তিন বছর যাবৎ বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নিয়মেও ইতালিতে শ্রমিক আমদানি বা অবৈধ শ্রমিকদের জন্য বৈধতা দেয়া বন্ধ রয়েছে। যদি কখনো সরকার শ্রমিক আমদানির প্রয়োজন মনে করে তবে তা অফিশিয়াল গেজেটের মাধ্যমে জানানো হয় এবং কোন দেশ থেকে কতজন শ্রমিক আমদানি করা হবে, তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। যারা কাজের জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী তাদের উচিত সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা এবং দালালচক্র থেকে সাবধান থাকা
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×