somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জুলিয়েটের বুকে হাত রাখলে প্রেম বাসনা পূর্ণ হয়

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেক বছর আগের কথা, জুলিয়েট নামে এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম আমি। কাঁচা বয়সের প্রেম। রাত জেগে কবিতা লিখতাম। দিস্তা দিস্তা কবিতা। ছন্দ মিলিয়ে চিঠি লিখতাম। তখনো মোবাইল ফোনের যুগ আসেনি। বহু কষ্টে জুলিয়েটদের বাসার ফোন নাম্বার যোগাড় করলাম। দুরুদুরু বুকে একদিন সাহস সঞ্চয় করে ফোন করলাম। ফোন ধরলেন জুলিয়েটের মা। বললাম, আমি জুলিয়েটের বন্ধু। তিনি একটু কড়া গলায় বললেন, জুলিয়েটের কোনো ছেলে বন্ধু নেই। আমার মুখের উপর ফোনের রিসিভারটা রেখে দিলেন খট্টাস করে।
একপাতা বয়সের প্রেম, এতটুকুতেই কী দমে যাওয়া যায়? যায় না। আমিও দম খাইনি। দিস্তা দিস্তা কবিতা চর্চা অব্যাহত রেখেছি। নিজেকে মহাকবি এসএম সুলতান (!) ভাবতে শুরু করেছি (অকাল প্রেমে যা হয়)। প্রেমের গান কবিতায় বুঁদ হয়ে থেকেছি। পত্রিকার ঠিকানায় বান্ডিল বান্ডিল কবিতা পোস্ট করেছি। একে তাকে ডেকে কবিতা নামের ‘জুলিয়েট নামা’ পড়তে দিয়েছি। কে বিরক্ত হলো কি হলো না সে দিকে ফিরেও তাকাইনি।
একদিন আবিষ্কার করলাম, এই সব কবিতা টবিতা আমাকে আর টানছেন না। রণভঙ্গ দিতেও ইচ্ছে করছে না। মনোযোগ দিলাম গদ্য প্রেমে। ওই একপাতা বয়সেই জগৎ বিখ্যাত সব প্রেমের গল্প পড়ে ফেললাম। ট্রয় কাঁপানো রাজকন্যা হেলেন এবং যুবরাজ পারিসের প্রেম কাহিনি (হোমার) পড়ে ফের যেনো বাল্য প্রেমের নব যৌবন ফিরে পেলাম। লাইলি মজনু (কবি নেযামি), ইউসুফ জুলেখা (আবুল মনসুর), শিরিন ফরহাদ (কবি ফেরদৌসি), রোমিও জুলিয়েট (উইলিয়াম শেকসপিয়র), দেবদাস পার্বতী (শরৎচন্দ্র), শাহজাহান মমতাজ (মুঘল সম্রাট), প্রায় সব পড়ে ফেললাম।
বাল্য প্রেম বলে কথা, বীজগণিতের সূত্রের মতোই ইংরেজি সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপিয়রের রোমিও এন্ড জুলিয়েটে আটকে গেলাম। নিজেকে রোমিও ভাবতে শুরু করলাম। বন্ধু মহলে ওই নাম প্রচার করে দিলাম কৌশলে। চারদিকে হাঁক-ডাক পড়ে গেল। আমার সাহস বেড়ে গেলো শতগুণ। বুকের আস্তিন বড় হয়ে গেল। বাধার দেয়াল যতো বড়ই হোক তা চুরমার করার জন্য শরীরের রক্ত কণায় বলক উঠতে শুরু করলো। আবার ফোন করলাম জুলিয়েটদের বাসার নাম্বারে। যাথারীতি জুলিয়েটের মা ফোন ধরলেন। এবার একটু কৌশল অবলম্বন করতেই তিনি জুলিয়েটকে ডেকে দিলেন।

২.
ইতালির ভেনেতো প্রভিন্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ভেরনা। প্রায় দুই হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই প্রাচীন শহর। উইলিয়াম শেকসপিয়র তার অমর রচনা রোমিও এন্ড জুলিয়েট লিখে এই শহরকে এনে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রের মর্যাদা। ইতালীয় ভাষায় ভেরনাকে বলা হয়, চিত্তা দেল্লামোরে, অর্থাৎ ভালোবাসার নগর ভেরনা। পৃথিবীর তাবত প্রেমিক প্রেমিকার পথ শেষ হয় এই ভেরনায়। প্রতিবছর লক্ষাধিক পর্যটক আসে ভেরনায় অবস্থিত রোমিও জুলিয়েটের বাড়ি দেখতে। হাজার হাজার জুটি আসে তাদের প্রেমকে অমর করে রাখতে। তারা জুলিয়েটের মূর্তি ছুঁয়ে প্রেমের শপথ করে। হাজার হাজার দম্পতি আসে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে। তারা জুলিয়েটের বাড়িতে বিয়ের উৎসব করে। জুলিয়েটের সেই বিখ্যাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে পরস্পরকে উষ্ণ আলিঙ্গন করে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয় পৌরসভা থেকে আলাদা জায়গা করে দেয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিত্তশালী প্রেমিক পুরুষরা উচ্চমূল্যে ভাড়া নিয়ে ওই জায়গায় তাদের বিয়ের উৎসব করে। অনেক বর-বউ শুধু বিয়ের ছবি তুলতে বড় বড় ক্যামেরা নিয়ে ছুটে আসে জুলিয়েটের বাড়িতে।
ঐতিহ্যের শহর ভেরনার প্রধান চত্বরসহ (পিয়াচ্ছা দেল্লে এরবে) এর প্রতিটি অলিতে গলিতে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অসংখ্য নিদর্শন থাকলেও পর্যটক প্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে জুলিয়েটের বাড়ি। উইলিয়াম শেকসপিয়রের রোমিও এন্ড জুলিয়েট গল্পের নাইকা জুলিয়েটের বাড়ি এত বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় হলেও এই শহরেই রয়েছে নায়ক রোমিও’র বাড়ি। কিন্তু ওই বাড়ি পর্যটক বা প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি। লাখ লাখ মানুষ জুলিয়েটের বাড়িতেই তাদের গন্তব্য শেষ করে। অনেকে রোমিও’র বাড়ির খবরও রাখে না।

৩.
মধ্যযুগের ঘটনা, ইতালির ভেরনায় রাজপরিবারের বাইরে অত্যন্ত প্রভাবশালী দুটি পরিবার ছিল। কাপোলেত এবং মন্তেগো নামের ওই দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। তাদের সম্পর্ক ছিল দা-কুমড়ো বা সাপে-নেউলে। কথায় কথায় তারা একে অপরের ওপর খোলা তলোয়ার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তো। বিত্তশালী ওই দুই পরিবারের মধ্যে মন্তেগো পরিবারের ছেলে রোমিও এবং কাপোলেত পরিবারের মেয়ে জুলিয়েট। তাদের দু’জনের মধ্যে কঠিন প্রেম হয়। একজন অপরজনকে না দেখে থাকতে পারে না। রোমিও বারবার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জুলিয়েটের সাথে দেখা করতে যায়। এক সময় পারিবারিকভাবে জুলিয়েটের বিয়ে ঠিক হয় অন্য ছেলের সাথে। অপরদিকে খুনের মামলায় রোমিওকে পাঠানো হয় নির্বাসনে। এরই মধ্যে এক সন্যাসীর সহযোগিতায় গোপনে রোমিও জুলিয়েটের বিয়ের আয়োজন প্রায় ঠিক হয়ে যায়, শেষ মুহূর্তের এক ভুল বোঝাবুঝিতে সব কিছু চুরমার হয়ে যায়। করুণ মৃত্যু হয় রোমিও এবং জুলিয়েটের। তাদের বেদনাদায়ক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মিটে যায় কাপোলেত এবং মন্তেগো পরিবারের ঐতিহাসিক বিবাদ। দুই পরিবার পরস্পরের বন্ধু হয়ে যায়।
রোমিও জুলিয়েটের এই গল্প লিখে জগৎ বিখ্যাত হয়েছেন ইংরেজি লেখক উইলিয়াম শেকসপিয়র। শুধু তিনি বিখ্যাত হননি, বিখ্যাত করেছেন ইতালির ভেরনা শহরকে। শেকসপিয়রের গল্প পড়ে মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে জুলিয়েটের ভেরনায়। তাদের পদচারণায় সারা বছর মৌ মৌ করে ভেরনার আকাশ বাতাস। ভেরনা এখন পৃথিবীর অন্যতম প্রেম কানন।
ইতালির যে কোনো প্রান্ত থেকে খুব সহজে ভেরনায় যাওয়া যায়। যাতায়াতের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ট্রেন। ছোট বড় যেকোনো শহর থেকে ট্রেনে চড়ে সোজা ভেরনার ‘পরতা নুওভা’ স্টেশন। সেখান থেকে বেরিয়ে মাত্র ৩ মিনিট হাঁটলেই পাওয়া যাবে বাসস্টপ। যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দেবে জুলিয়েটের বাড়িতে (কাজা দি জুলিয়েত্তা) যাওয়ার বাস। মাত্র দেড় ইউরোর টিকেট করে বাসে উঠে বসলেই ২০ মিনিটের মধ্যে এসে যাবে জুলিয়েটের বাড়ি। বাস পেতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না, গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে বাস ছেড়ে যায় ওই পথে। বাড়ি চিনতেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, জনশ্রোত দেখলেই বোঝা যাবে কোন পথে জুলিয়েটের বাড়ি। তার পরেও যদি অসুবিধা হয়, বাসের চালককে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে, তিনি আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করবেন। হাতে একটা শহর ম্যাপ বা স্মার্টফোনে গুগল ম্যাপ নামানো থাকলে অন্যকারো সহযোগিতার দরকার হবে না। একটু মাথা খাটালেই পৌঁছে যাওয়া যাবে কাক্সিক্ষত স্থানে।

৪.
দু’মাস আগে আমি আর আমার এক বন্ধু গিয়েছিলাম জুলিয়েটের বাড়ি। আমরা গিয়েছিলাম ইতালির জলকন্যা ভেনিস থেকে। সকাল সকাল রওনা করলাম ভেনিসের মেসত্রে ট্রেন স্টেশন থেকে। ইউরোস্টার বলে কথা, মাত্র ৫৮ মিনিটে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে গেলো ১১৫ কিলোমিটার পথ। ইরোস্টার বা ফ্রেচ্চা বিয়াংকায় ভাড়া একটু বেশি, ২৩ ইউরো। সাধারণ রেজনাল ট্রেনে গেলে ভাড়া কম, মাত্র ৮ ইউরো ৬০ সেন্ট। গুড় কম- মিঠাও কম, সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। ভেরনায় নেমে আমরা হালকা জল-খাবার করলাম। এরপর বাসের টিকেট করে রওনা করলাম জুলিয়েটের বাড়ির উদ্দেশে। সর্বসাকুল্যে দুই ঘণ্টার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম জুলিয়েটের ঐতিহাসিক বাড়ির দরজায়।
রোমান সভ্যতার হাজারো নিদর্শন মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভেরনার ‘কাজা দি জুলিয়েত্তা’ (জুলিয়েটের বাড়ি) নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। ইতিহাস গবেষকরা বলেন, শেকসপিয়র কোনো দিনই ভেরনায় যাননি, তিনি ভেরনাকে উপজীব্য করা বিভিন্ন গল্প ধার করে তিনটি নাটক রচনা করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং হৃদয় ছোঁয়া নাটকটি হলো রোমিও এন্ড জুলিয়েট। যে বাড়িকে আজ জুলিয়েটের বাড়ি জেনে লাখ লাখ মানুষ ছুটে যায় আদৌ তার কোনো সত্যতা নেই। উইলিয়াম শেকসপিয়রের জাদুকরি লেখাই এমন একটি বাড়ির জন্ম দিয়েছে। দক্ষ ব্যবসায়ী ইতালিয়ানরা সুযোগটা লুফে নিয়েছে। তারা জুলিয়েটের কাল্পনিক বাড়িটিকে এমনভাবে বাজারজাত করেছে, তামাম দুনিয়ার প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে বাড়িটি এখন প্রেমতীর্থে পরিণত হয়েছে।

৫.
ইতালীয় ভাষায় রোমিওকে বলা হয় ‘রোমেও’ এবং জুলিয়েটকে বলা হয় ‘জুলিয়েত্তা’। আমরা ঢুকে পড়লাম জুলিয়েত্তার বাড়ির অন্দরে। সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠে গেলাম দো’তলায়। মাঝারি আকারের একটা কক্ষ, সেখানে বসে আছেন দু’জন সুন্দরী মহিলা। তারা টিকেট দেখতে চাইলেন, আমি একটু মজা করার চেষ্টা করলাম- এখানে ঢুকতে টিকেট লাগে নাকি? কই, জানি নাতো! সুন্দরীদের চোখ ততক্ষণে ছানাবড়া, তাদের একজন বললেন, নিচে তুমি টিকেট কাউন্টার দেখনি?
বললাম, দেখেছি তো।
-তো? টিকেট ছাড়া চলে এলে কীভাবে?
বললাম, হেঁটে হেঁটে চলে এসেছি।
এবার তারা বুঝে ফেললেন, আমি মজা করছি। ততক্ষণে আমাদের পেছনে আরো কয়েকজন দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে গিয়েছে, তাই কথা আর লম্বা করলাম না। পকেট থেকে টিকেট দুইটা বের করে বললাম, দেখতো এই দুইটা হলে কী তোমাদের চলবে? তারা হেসে ফেললেন। বললেন, এবারের মতো চলবে।
আমি বললাম, তোমাদের অনেক মেহেরবানি।
তাদের একজন বললেন, তোমাদের কোনো সাহায্য দরকার হলে বলতে ভুল করো না। আর হ্যাঁ, সাহায্যের জন্য টিকেট দেখাতে হবে না, শুধু ‘পেরফাভোরে’ (অনুগ্রহ করে) বললেই চলবে।
আমি বললাম, তাহলে আর দেরি কেনো? তড়িঘড়ি আমাদের দু’জনের একটা ছবি তুলে দাও ‘পেরফাভোরে’।
একজন সুন্দরী হাসি মুখে আমাদের ছবি তুলে দিলেন। অন্যজন ব্যস্ত হয়ে গেলেন অন্য দর্শনার্থীদের নিয়ে। আমরা দেখলাম কক্ষটাজুড়ে বিভিন্ন রকমের পেইন্টিং দিয়ে ঠাসা। সেখানে ক্যামেরার আলো জ্বেলে ছবি তোলা নিষেধ। পুরনো আমলের কিছু চেয়ার টেবিলও আছে ওই কক্ষে। কিন্তু ওগুলো বসার জন্য না, দেখার জন্য। এই কক্ষের সাথেই লাগোয়া ছোট্ট একটা বেলকোনির সামনে ছোট-খাট একটা ভিড় দেখলাম। বুঝতে অসুবিধা হলো না, এটাই সেই বিখ্যাত বেলকোনি। যেখানে দাঁড়িয়ে জুলিয়েট অপেক্ষা করতেন তার প্রেমিক রোমিও’র ডাক শোনার জন্য। সবাই অপেক্ষা করছেন বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য। আমরাও লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। বেলকোনিটা এতই ছোট যে দু’জন মানুষ এক সাথে দাঁড়ালে তৃতীয় কেউ দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। ওখানে দাঁড়িয়েই ঠাসাঠাসি করে ছবি তুলছে সবাই। প্রেমিক প্রেমিকারা একে অপরকে উষ্ণ চুম্বন করছে। কেউ কেউ বালকোনিতে গিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তার প্রেমিককে ইশারা করছে তার নাম ধরে ডাকার জন্যে। কিন্তু হায় কে তার প্রেমিক...! বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা শতশত প্রেমিক একযোগে চিৎকার করে উঠছে ‘জুলিয়েট’ বলে। এতগুলো প্রেমিকের চিৎকারের ভিড়ে হয়তো প্রেমিকা তার আসল প্রেমিকের ডাক শুনতেই পায়না।
আমরা চলে যাই পরের কক্ষে। ওটাই জুলিয়েটের শয়নকক্ষ। সেখানে রাখা আছে সুসজ্জিত কাঠের খাট, জুলিয়েটের পোশাক, রোমিও’র পোশাক এবং দু’জনের যুগল ছবি। খাটের ওপর নকশা করা তোষক চাদর সবই আছে। কাঁচের আলমারিতে বন্দী পোশাকগুলো দেখেই বোঝা যায় ওগুলো হাজার বছরের পুরনো নিদর্শন। বিত্ত এবং আভিজাত্যের সাক্ষী। শয়নকক্ষের দেয়ালের কারুকার্যগুলোও অসাধারণ। কিছু অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। তার পরেও মনে হয় প্রাচীন আভিজাত্য যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। এর পরের কক্ষে রাখা আছে চারটা কমপিউটর। অদ্ভুত আকৃতির ওই কমপিউটরগুলো ইচ্ছা করলে দর্শনার্থীরা ব্যবহার করতে পারেন। ওখানে ইন্টারনেটের সংযোগও আছে। দর্শনার্থীরা সরাসরি তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারেন ওই কমপিউটর ব্যবহার করে। তবে এর জন্য আলাদা পয়সা গুনতে হয়। আমাদের বাংলা প্রবাদের মতো, ফেলো কড়ি- মাখো তেল। কক্ষের ভেতর দিয়ে উপরে উঠে গেছে একটা কাঠের সিঁড়ি। আমরা উপরে উঠলাম। সেখানে রাখা আছে জুলিয়েটের ব্যবহারিত বিভিন্ন গৃহসামগ্রী। এর মধ্যে থালা বাসন, ঘটি বাটি, ঘড়া কড়া এগুলোই বেশি। যার প্রত্যেকটি প্রচীন সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করে। দেয়াল জুড়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পদের আঁকা জুলিয়েটের ছবি। এসব ছবির অধিকাংশই জুলিয়েটের ন্যুড ছবি। বিছানায় সুয়ে থাকা, বসে থাকা নানা ভঙ্গিমার ছবি। এছাড়াও অনেক ধরনের পেইন্টিং, শীতের দিনে কাঠ পুড়িয়ে ঘর গরম করার পুরনো চুল্লিসহ দেখার মতো অনেক কিছুই আছে সেখানে।

৬.
ইট সুরকির গাঁথুনিতে নির্মিত জুলিয়েটের বাড়ির অনেকাংশ পাথর দিয়ে তৈরি। যে বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে জুলিয়েট অপেক্ষা করতেন তার প্রেমিকের জন্য, সেটিও কারুকাজ খচিত পাথর দ্বারা নির্মিত। দেয়ালের অধিকাংশ জায়গার পলেস্তারা খসে পড়েছে। এর পরেও নয়নাভিরাম কারুকাজ এবং আভিজাত্য স্পষ্ট বোঝা যায়। জুলিয়েটের ব্যবহারিত যে থালা বাটি ওখানে রাখা হয়েছে সেগুলো মধ্যযুগের পোড়া মাটি এবং কড়ি মাটির তৈরি। সব মিলিয়ে আস্ত বাড়িটাই যেন রোমান সভ্যতার ঐতিহ্য বহন করে।
আফ্রেসকি মিউজিয়ামের মধ্যে জুলিয়েটের কবর লাল পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রবেশের জন্য আলাদা টিকেট করতে হয়। তবে ৭ ইউরোর বিনিময় ‘একক’ টিকেট করা যায়, যা দিয়ে মিউজিয়াম এবং বাড়ি দুটোতেই প্রবেশ করা যায়। রোমিও’র বাড়ির ফটক সব সময় বন্ধ থাকে। ভেতরে জনসাধারণকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। দেখতে চাইলে বাইরে থেকেই দেখতে হয়। জুলিয়েটের বাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য মঙ্গলবার থেকে রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এবং সোমবার দুপুর একটা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ন’টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মূল ভবনের প্রবেশ মূল্য ৬ ইউরো। গ্রুপ টিকেটের মূল্য (কমপক্ষে ১৫ জন) সাড়ে ৪ ইউরো। স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১ ইউরো এবং ৭ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের ফ্রি।
বাড়ির আঙ্গিনায় জুলিয়েটের বিরাট এক মূর্তি বানিয়ে রাখা হয়েছে। মূর্তির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ইতালীয় ডুমুর (ফিকি) গাছ। মনে হতে পারে গাছের ছায়ায় জুলিয়েট দাঁড়িয়ে আছে। ব্রোনজের তৈরি জুলিয়েটের মূর্তিটির বুক উন্মোক্ত। দর্শনার্থী প্রেমিক প্রেমিকারা মূর্তির ডান স্তনে হাত রেখে ছবি তোলে। তারা বিশ্বাস করে জুলিয়েটের (মূর্তির) স্তনে হাত রাখলে প্রেম বাসনা পূর্ণ হয়। বিখ্যাত ওই মূর্তির সাথে ছবি তুলতে টিকেট লাগে না।


৮.
জুলিয়েটের বাড়ির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে গোটা আঙ্গিনার দেয়াল জুড়ে অসংখ্য ছোট ছোট চিরকুট লাগিয়ে রেখেছে প্রেমিক প্রেমিকারা। তারা ভালোবাসার নানা কথা লিখে রেখেছে ওইসব চিরকুটে। অনেকে সরাসরি কলম দিয়ে অথবা দেয়ালে চুইংগাম লাগিয়ে ভালোবাসার মানুষের নাম লিখেছে, লাভ চিহ্ন এঁকেছে।
লোহার গেটসহ যেখানেই সুযোগ পেয়েছে প্রেমিক প্রেমিকারা ছোট ছোট হাজারো তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। ভালোবাসার চিহ্ন আঁকা তালার ওপর নিজেদের নামের প্রথমাক্ষর লিখে আটকে দিয়েছে। ইউরোপীয় প্রেমিক প্রেমিকারা এক সময় বিশ্বাস করতো নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় তালা লাগিয়ে চাবি পানিতে ফেলে দিলে ভালোবাসার বন্ধন অটুট হয়, দীর্ঘ হয়। সেই বিশ্বাস থেকেই আজকের তালা সংস্কৃতি। শুধু ভেরনায় নয়, ইউরোপের বিভিন্ন শহরে প্রেমিক প্রেমিকাদের হাজার হাজার তালা ঝুলাতে দেখা যায়। অতি আধুনিকতা বা অতি স্বাধীনতার বিষদংশনে ইউরোপের পারিবারিক বন্ধন এখন বিরাট নড়বড়ে। কোনো সম্পর্কেরই স্থায়িত্ব নেই। বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। সকালে বিয়ে হয়ে বিকেলে তা ভাঙে, এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। যার যাকে ভালোলাগে বহুদিনের সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে দ্বিধাহীনভাবে চলে যায় তার হাত ধরে। সম্পর্কের এই অস্থিরতা ইউরোপীয়দের কাছে ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠছে। তারা এর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ভালোবাসার স্থায়িত্ব চায়। পরিবার, সংসার চায়। কিন্তু কীভাবে তা জানে না। সংস্কার বা কুসংস্কার যাই হোক তারা বন্ধনের প্রতীক তালা ঝুলিয়ে সম্পর্ক বাঁচাতে চায়।
চতুর্দশ শতাব্দীতে ইতালির রাজ্যগুলো স্বাধীন ছিল। সে সময় রাজ্যগুলো শাসিত হতো বিত্তশালী পরিবার এবং রাজাদের দ্বারা। ইতালির বড় বড় প্রায় প্রতিটি শহরে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল রাজবাড়ি, যেগুলোকে ইতালিয় ভাষায় বলা হয় ‘কাসতেল্লো’। ভেরনা শহরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। রাজা দ্বারা শাসিত ভেরনায় একাধিক প্রভাবশালী এবং বিত্তশালী পরিবার ছিল। তারা নানা সময় ঝগড়া কাইজ্জায় লিপ্ত হতো। তবে সমালোচকরা মনে করেন, শেকসপিয়র তার রচনায় যেভাবে ভেরনার কাপোলেত এবং মন্তেগো পরিবারের দ্বন্দ্ব দেখিয়েছেন তা নিতান্তই বাড়াবাড়ি। তাদের মতে, রোমিও জুলিয়েট নামের কোনো প্রেমিক প্রেমিকা জুটির অস্তিত্ব ভেরনায় ছিলনা কোনো দিন। লেখক উইলিয়াম শেকসপিয়র রোমিও জুলিয়েটের যে বেদনাদায়ক প্রেম কাহিনি রচনা করেছেন, মধ্যযুগে স্পেনে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনা গল্প আকারে ছড়িয়ে পড়ে ইতালির বিভিন্ন জনপদে। এক সময় লোকমুখে তা কিংবদন্তীর রূপ ধারণ করে। সে সময় ইতালির জনপ্রিয় লেখক মাত্তেও বানদেল্লো এক উপন্যাসে ওই প্রেমিক যুগলের গল্প তুলে ধরেন। এরপর ১৫৬২ সালে বিলেতি লেখক আর্থার ব্রুকস মাত্তেও’র উপন্যাস থেকে গল্প ধার করে রচনা করেন তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘দি ট্রাজিক্যাল হিস্ট্রি অব রোমিও এন্ড জুলিয়েট’। এরও ৩০ বছর পর, ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে আর্থার ব্রুকসের বই থেকে গল্প ধার করে শেকসপিয়র রচনা করেন রোমিও এন্ড জুলিয়েট।
সমালোচকদের এই মতের সাথে ভিন্নমত দানকারীরা বলেন, রোমিও জুলিয়েটের প্রেমকাহিনি ইতালিতেই সংঘটিত হয়েছিল ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে এবং তা প্রেমের উপাখ্যান হিসাবে ছড়িয়ে পড়ে ১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে।
উল্লেখ্য, রোমিও জুলিয়েটের বেদনাদায়ক প্রেমগাঁথা ইতালিতে কিংবদন্তী হওয়ার প্রায় এক’শ বছর আগে স্পেনে প্রায় অভিন্ন একটি প্রেমের ঘটনা ঘটেছিল বলে গবেষকরা উল্লেখ করেন। তাদের বর্ণনা মতে স্পেনের রোমিও আত্মগোপনে ছিলো। জুলিয়েট ওই সময় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে এবং নববিবাহিত স্বামীকে সাথে নিয়ে আত্মহত্যা করে। তাদের আত্মহত্যার পর রোমিও ফিরে আসে এবং দু’জনের মরদেহ একসাথে সমাহিত করে।

৯.
জুলিয়েটের বাড়ির আঙ্গিনায় দুটি সুভেনিরের দোকান আছে। আমরা সেখান থেকে রোমিও জুলিয়েটের মূর্তিসহ ছোট ছোট কয়েকটা সুভেনির কিনে বেরিয়ে পড়লাম রোমান সভ্যতার অন্যতম শহর ভেরনা দেখতে।
ভেরনা শহরের গোড়াপত্তন হয় খোদ রোমানদের হাতে। রোমের পরে ভেরনা’ই একমাত্র শহর যেখানে রোমানদের নির্মিত দালান কোঠা, প্রাচীন ঐতিহ্য বেশি দেখা যায়। এই শহরের দালান-কোঠা, ঘর-জানালা, প্রাচীর-ব্রিজ এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোর সাথে রাজধানী রোমের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। রোমানদের প্রাচীন ঐতিহ্য ছড়িয়ে রয়েছে এর অলিতে গলিতে।
ভেনেতো প্রভিন্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ভেরনা। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯ সালে গোড়াপত্তন হওয়া এই শহরে রয়েছে বিখ্যাত এরিনা থিয়েটার। ২৫ হাজার আসনবিশিষ্ট বিস্ময়কর ওই থিয়েটারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে গানের দল, নাটকের দল, যন্ত্রসঙ্গীতের দল আসে মানুষকে বিনোদন দিতে। গ্রীষ্মকালজুড়ে সেখানে দেশি বিদেশি দর্শকদের ভিড় লেগেই থাকে।

১০.
একটা মজার তথ্য দিয়ে লেখা শেষ করা যেতে পারে, প্রতিবছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গড়ে এক হাজার চিঠি আসে জুলিয়েটের বাড়ির ঠিকানায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা চিঠিগুলোর অধিকাংশই জুলিয়েটকে উদ্দেশ্য করে লেখা এবং তাতে লেখা থাকে ‘জুলিয়েট আমি তোমায় ভালোবাসি’।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪০
১৪টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×