দুপুরের সূর্য হেলে পড়েছে অস্তাকাশে। আমি দাঁড়িয়ে আছি এক্সপো মিলানোর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের সামনে। বাংলা এবং ইংরেজিতে বাংলাদেশের নাম ও পতাকাখচিত ছোট্ট একটা প্যাভিলিয়ন। সর্বসাকুল্যে এক’শ কুড়ি-পঁচিশ বর্গফুট হবে। ভেতরে মানুষ গিজগিজ করছে। সকলের চোখেমুখে খেলা করছে হরেক রঙের কৌতূহল। ৫/৬ জন প্যাভিলিয়ন কর্মী দর্শনার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমি অপেক্ষা করছি ভিড় একটু হালকা হলে ভেতরে প্রবেশ করব। কিন্তু তা আর হলো না, কিছু সময়ের মধ্যে বুঝে গেলাম ভেতরে ঢুকতে হলে ভিড় কেটেই ঢুকতে হবে। আমার মতো আরও অনেক দর্শনার্থী বাইরে অপেক্ষা করছেন। তারাও সুযোগ খুঁজছেন কখন একটু ফাঁকা হয়। এক চির জায়গা পেলেই তারা ঢুকে পড়ছেন পিলপিল করে। আমিও তাদের মতো পিপিলিকা হলাম। সুড়ৎ করে ঢুকে পড়লাম প্রিয় বাংলাদেশের পটমণ্ডপে।
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের সহকারী পরিচালক এবং অপারেশন ম্যানেজার মো. আবদুল মতিনকে পটমণ্ডপের ভেতরেই পেয়ে গেলাম। তরুণ নির্মাতা কাজী টিপুকে বগলদাবা করেছিলাম মিলানোয় পা রেখেই। আবদুল মতিন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আমাদের স্বাগত জানালেন। লালসবুজের পতাকাখচিত ব্যান্ড বেঁধে দিলেন কপালে। এক্সপো মিলানো লেখা কোর্টপিন গেঁথে দিলেন বুকের বাম পাশে, ঠিক হৃৎপিণ্ডের ওপর। আমরা প্রিয় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। ছবি তুললাম। এরপর বেরিয়ে পড়লাম অন্যান্য দেশের প্যাভিলিয়ন দেখতে।
ইতালির অন্যতম প্রধান ব্যবসা নগর মিলানোয় এক্সপো ২০১৫ শুরু হয় ১ মে, শেষ হয় ৩১ অক্টোবর ২০১৫। ছ’মাসব্যাপী এই বিশমেলায় ১৪৫টি দেশ, ১৭টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ২১টি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। ‘ফিডিং দ্য প্ল্যানেট, এনার্জি ফর লাইফ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এক্সপো মিলানোর মূল ভেন্যু নির্মাণ করা হয় ২০০ হেক্টর বা ৪৯০ একর জায়গাজুড়ে। দর্শনার্থীর প্রত্যাশা করা হয় ২ কোটি। মিলানোর বাইরে ভেনিসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে ছোট ছোট ভেন্যু নির্মাণ করে মানুষকে এক্সপো মিলানো সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। মিলানো শহরের প্রধান সড়কগুলো এক্সপোয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। থ্রি-ডির মাধ্যমে তুলে ধরা হয় এক্সপোজিশনের মূল থিম এবং খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তার নানা বিষয়। বাংলাদেশের মতো হাতেগোনা ক’টি দেশ বাদে অন্য সকল অংশগ্রহণকারী দেশ/সংস্থা তাদের নিজ খরচে বিশাল বিশাল, চোখ ধাঁধাঁনো প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেছে। মিলানোয় এক্সপোর এটি দ্বিতীয় আসর। প্রথম আসরটি বসেছিল ১৯০৬ সালে। তখন মোট ২৫টি দেশ ওই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে।
আমরা প্রথমেই গেলাম স্বাগতিক দেশ ইতালির প্যাভিলিয়ন দেখতে। সেখানে গিয়ে তো চোখ চড়কগাছ। হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আছে লাইনে। ছোট ছোট দল ভাগ করে প্যাভিলিয়নে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। হিসাব কষে দেখলাম আমরা যদি লাইনে দাঁড়াই ভেতরে ঢুকতে সময় লাগবে কমপক্ষে চার ঘণ্টা। বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকলাম। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের করিৎকর্মা অপারেশন ম্যানেজার ফোন করলেন ইতালীয় প্যাভিলিয়নের ম্যানেজারকে। নিজের পরিচয় দিয়ে জানালেন দু’জন বাংলাদেশি সাংবাদিক এসেছেন ভেনিস থেকে। এতটুকুতেই কাজ হয়ে গেল। একজন কর্মকর্তা এসে আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ে গেলেন গ্রীন চ্যানেলে। অভিন্ন উপায়ে আমরা স্পেনসহ আরও ক’টি দেশের প্যাভিলিয়ন দেখলাম। প্রত্যেকটি দেশের প্যাভিলিয়নে অসাধারণ কিছু নিজস্বতা আছে। খাদ্য, পুষ্টি, কৃষি প্রযুক্তি, নিজেদের সফলতা এবং সংস্কৃতি তারা উপস্থাপন করেছে নান্দনিকভাবে। প্রতিটা দেশের পটমণ্ডপের এক একটি প্রতিপাদ্য আছে। তারা তাদের নিজস্ব চিন্তা ও আভিজাত্যের কথা বলেছে ওইসব প্রতিপাদ্যে। শিরোনামের সাথে মানানসই উপস্থাপন দক্ষতা দেখিয়েছে। চীন, জাপান, কুয়েতসহ অধিকাংশ দেশ তাদের প্যাভিলিয়নগুলো এমনভাবে নির্মাণ করেছে যে বাইরে থেকে দেখলেই বোঝা যায় তাদের রুচি এবং নিজস্বতা। অনেক দেশ তাদের ঐতিহাসিক বা ব্যাপকভাবে বিশ্বপরিচিত স্থাপনা, নিদর্শন এবং সংস্কৃতির মৌলিক অবয়ব দিয়ে প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেছে। স্পেন তাদের প্যাভিলিয়নের শিরোনাম করেছে ‘দ্যা ল্যাঙ্গুয়েজ অব টেস্ট’। আলবেনিয়ার শিরোনাম হলো আওয়ার ফুড, আওয়ার স্টোরি, আওয়ার মিসটেরি’। আফগানিস্তানের শিরোনাম ‘দীর্ঘায়ুর জন্য খাওয়া’। মরুর দেশ কুয়েতের প্রতিপাদ্য ‘পানিই বাঁচার মন্ত্র’। আমাদের দেশের প্রতিপাদ্য হলো ‘পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় ধান উৎপাদনের স্থিতিশীলতা।
প্রায় সব প্যাভিলিয়নের সাথে রেস্ টরেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে নিজ নিজ দেশের মজাদার এবং পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা হয়। একটা রেস্টুরেন্ট থেকে আমরা সন্ধ্যাকালীন হালকা খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম এশিয়ান দেশগুলোর প্যাভিলিয়ন দেখতে। সেখানেও দেখি মানুষ গিজগিজ করছে। তাছাড়া এত এত প্যাভিলিয়নের ভিড় ঠেলে আমাদের কাক্সিক্ষত প্যাভিলিয়ন খুঁজে বের করতে এবং সে পর্যন্ত পৌঁছাতে রীতিমতো পা ব্যথা হয়ে যাওয়ার যোগাড়। কিন্তু আমাদের খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের সহকারী পরিচালক আবদুল মতিন অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের অনেক প্যাভিলিয়নে নিয়ে গেলেন এবং সব প্যাভিলিয়নেই গ্রীন চ্যানেল দিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দিলেন।
এক্সপো মিলানোকে নয়টি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়। বাংলাদেশকে প্যাভিলিয়ন দেয়া হয় রাইস ক্লাস্টারে। এই ক্লাস্টারের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্যাভিলিয়নের সামনে ধান চাষ করা হয়। বেশ কিছুটা জায়গাজুড়ে একদম ন্যাচারাল ধানের চারা রোপণ করে এক্সপো কর্তৃপক্ষ। যা দর্শনার্থীদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে। এক্সপোর ছ’মাসে ধীরে ধীরে সেই চারা বড় হয়ে তাতে ধান ফলে। এক সময় ধান পেকে সোনালি রং ধারণ করে। পাকা ধান কেটে দর্শনার্থীদের জন্য মুঠি বেঁধে রাখা হয়। আমরা ধানক্ষেতের মুগ্ধতা অতিক্রম করে রাইস ক্লাস্টারের অন্য প্যাভিলিয়নগুলো দেখতে যাই। মিয়ানমার, লাউস, সিভালিয়ন এবং কম্বোডিয়ার প্যাভিলিয়ন দেখে ভালো ভাগে। তারা তাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এবং সংস্কৃতি দারুণভাবে উপস্থাপন করেছে। তাদের দেশ থেকে বিশাল বিশাল মূর্তি এবং কৃষি যন্ত্রপাতিসহ সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপনযোগ্য অনেক কিছু টেনে এনেছে। মিয়ানমার থ্রি-ডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের গোটা দেশকে তুলে ধরেছে। কম্বোডিয়া ধান উৎপাদনের বড়াই দেখিয়েছে বড় করে। রাইস ক্লাস্টারের প্রধান সিনথিয়া ফিলিপ্পোসহ পটমণ্ডপগুলোর তত্ত্বাবধায়করা সবাই আবদুল মতিনের ভক্ত বলে মনে হলো। তারা আমাদের বেশ সমাদর করেন। তাদের দেশের ছোট ছোট সুভেনির উপহার দেন। আমাদের সাথে ছবি তুলতেও ভুল করেন না।
আমরা ফিরে এলাম বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে। ততক্ষণে রাত ৯টা পেরিয়ে গেছে। অথচ দর্শনার্থীদের ভিড় একটুও কমেনি। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে রাতের খাবার কিনে খাচ্ছে। পোলাও, বিরিয়ানি, সাদা ভাত, রুটি, সবজি, ডাল, মুরগির গোস্ত, গরুর গোস্ত, কোরমা, শিঙ্গাড়া, সমুচা, সবই আছে সেখানে। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে আমাদের দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের ধান, চাল, মুড়ি, চানাচুর, ডাল ভাজা, মোয়া, চিড়া, জুস, চকোলেট, বিস্কুট, টোস্ট, চিপ্স, চাসহ বিভিন্ন মসলা, তেল, শুকনা মরিচ এবং ছোট ছোট সুভেনির রাখা হয়েছে। উৎসুক দর্শনার্থীরা সেগুলো সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি যন্ত্রপাতি হিসেবে রাখা হয়েছে একটি কোদাল এবং একটা বিজ ছিটানোর যন্ত্র, দু’একটা কাঁচি ও নিড়ানি। সুভেনির হিসেবে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের পতাকা আঁকা কোর্টপিন এবং কাঠের শো’পিস, দু’বান্ডিল বাংলাদেশের টাকা। চুড়ি, ফিতা, টিপ, তাঁতের মাফলার, টি’শার্ট, প্যান্ট, জামা, চটের ব্যাগ, পাটের স্যান্ডেল, চামড়ার জুতা এবং কাপড়ের পুতুলও রাখা হয়েছে পটমণ্ডপে। দেশি পণ্যের কিছু পোস্টার দেখা গেল প্যাভিলিয়নের দরজায়। দেয়ালে লটকানো একটি মাঝারি সাইজের মনিটরে জেম্সসহ বিভিন্ন শিল্পীর মিউজিক ভিডিও বাজাতে দেখা যায়।
এক্সপো মিলানোর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন নিয়ে প্রবাসীদের অভিযোগ ব্যাপক। তারা অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন দেখতে এসে হতাশা প্রকাশ করেছেন। মিলানোয় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের অভিযোগের কথা বলেছেন। তাদের অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ দূতাবাস মিলানো শাখার সাধারণ দূত রেজিনা আহমেদের সহযোগিতায় সরকারি কর্মকর্তারা ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। অভিযোগকারীরা বলেন, ২০ সেপ্টেম্বর এক্সপোর ‘বাংলাদেশ ডে’ অনুষ্ঠানে মিলানোয় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার থাকলেও দূতাবাস কর্মকর্তারা তা হতে দেয়নি। তারা টিকেট বিক্রি করে সে টাকা নিজেদের পকেটে পুরেছে। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে শুধু প্রাণ এবং বিডি ফুডের পণ্য রাখায় তারা অভিযোগ করে বলেন, ওই দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থনৈতিক অবৈধ সুবিধা নিয়ে আমাদের দেশের অন্য কোনো পণ্য বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করতে দেয়া হয়নি। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে আমাদের ব্যবসায়িক প্রসার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রবাসীরা প্রাণ এবং বিডি’র পণ্যমান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, মিলানোয় ১৫ হাজারেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস থাকলেও দূতাবাস কর্মকর্তারা প্যাভিলিয়নের কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে নেপালি মেয়ে এবং কাশ্মীরী বাবুর্চি। তারা বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে আমাদের দেশি খাবারের পরিবর্তে পাকিস্তানি বিরিয়ানি, পোলাও বিক্রি করেছে। মিলানোয় একাধিক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট থাকার পরও রান্না করা খাবার কিনে এনেছে একটি পাকিস্তানি রেস্টুরেন্ট থেকে। দূতাবাস কর্মকর্তারা এসব করেছে তাদের দুর্নীতি গোপন করার জন্য। প্যাভিলিয়নে স্থানীয় বাংলাদেশি ছেলেমেয়েদের কাজ দিলে, বাংলাদেশি বাবুর্চি রাখলে, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিলে তাদের দুর্নীতির গোমর ফাঁক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা এতসব অপকর্ম করেছে। প্রবাসীদের সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো এক্সপো কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের জন্য আরও বড় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিলেও আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্যাভিলিয়নের অর্ধেক ছেড়ে দিয়েছে নেপালিদের জন্য।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের অপারেশন ম্যানেজার আবদুল মতিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি জানি না কারা, কোথায় এবং কেন এসব অভিযোগ করেছে। তবে এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো বেশ ক’টি দেশের প্যাভিলিয়ন তৈরি করে দিয়েছে এক্সপো কর্তৃপক্ষ, এখানে আমাদের বা দূতাবাসের কিছু করার নেই। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পদ না যে ইচ্ছা করলেই অন্য কাউকে ভাগ দেয়া যায় বা বিক্রি করা যায়। বিডি এবং প্রাণের পণ্য সম্পর্কে বলেন, ইচ্ছা করলেই আমরা আমাদের সব পণ্য প্যাভিলিয়নে রাখতে পারি না। এক্সপো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দরকার হয়। তারা পণ্যের মান যাচাই করেই অনুমোদন দেয়। তাছাড়া পাবলিক ডিমান্ডের কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হয়। প্যাভিলিয়নে বিদেশি কর্মচারী নিয়োগের বেপারে বলেন, আমরা কমিউনিটির অনেকের সাথে যোগাযোগ করেছি আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের জন্য, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। দু’একজন যাদের খোঁজ পেয়েছি তারা বাংলা জানে তো ইতালিয়ান জানে না, ইতালিয়ান জানে তো ইংরেজি জানে না। এমন কাউকে তো প্যাভিলিয়নে দাঁড় করানো যায় না যার অন্তত ইতালিয়ান এবং ইংরেজিতে ভালো দখল নেই। তিনি বলেন, ইতালির কোনো মেলায় কাজ করার জন্য শুধু বাংলা জানলে তো চলে না, ইতালিয়ান এবং ইংরেজি ভাষায় ভালো দক্ষতা থাকতে হয়। তেমনটা না পাওয়ায় আমরা বাধ্য হয়েছি অন্যদেশের কর্মচারী নিয়োগ দিতে। বাংলাদেশ ডে’র টিকেট সম্পর্কে আবদুল মতিন বলেন, এসব অভিযোগ খুবই হাস্যকর। এক্সপোর টিকেট বিক্রি করা না করার এখতিয়ার একমাত্র এক্সপো কর্তৃপক্ষের হাতে, এখানে বাংলাদেশ দূতাবাস কেন, প্রভাবশালী কোনো দেশের দূতাবাস বা প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষেরও কিছু করার নেই। এমনকি প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষের ছেলেমেয়েরাও যদি এক্সপোতে প্রবেশ করতে চায় তাদেরও টিকেট করতে হয়।
উল্লেখ্য, প্রবাসীদের এসব অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাস মিলানো শাখার সাধারণ দূত রেজিনা আহমেদ ব্যস্ততার অজুহাতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অপারগতা জানান।
‘ফিডিং দ্যা প্ল্যানেট, এনার্জি ফর লাইফ’ শিরোনামে এক্সপো মিলানোর (২০১৫) মূল ভাবনা ছিল খাদ্য, পুষ্টি, আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি এবং উৎপাদনকে কেন্দ্র করে। বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে জনজীবনে যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, কৃষি উৎপাদন যে গতিতে হুমকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা থেকে বেরিয়ে আসার এবং ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের নিজস্ব খাবার, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং কৃষি আবিষ্কার, উৎপাদন তুলে ধরেছে বিশ্ববাসীর সামনে। গোটা দুনিয়ার মানুষ নিজেদের মধ্যে খাদ্য এবং কৃষিপ্রযুক্তি বিনিময় করেছে। উন্নত দেশগুলো প্রতিযোগিতামূলকভাবে তাদের খাবার, কৃষিপ্রযুক্তি এবং ভাবনা তুলে ধরেছে বিশ্বদরবারে। এবারের এক্সপো মিলানোয় ব্যাপক আকারে থ্রি-ডি প্রযুক্তির ব্যবহার দেখানো হয়েছে। নানা আকৃতির বিশাল বিশাল পর্দায় থ্রি-ডি প্রদর্শনীর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পর্যটন এবং সমসাময়িক কৃষি ভাবনা তুলে ধরেছে। যা দর্শনার্থীদের দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। অনেক দেশ লাইভ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। শুধু ধনী দেশগুলোই নয়, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের কাছের দেশগুলোও থ্রি-ডি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অসাধারণভাবে তুলে ধরেছে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং কৃষি উৎপাদন।
১৯০৬ সালে মিলানোয় প্রথম এক্সপোর আসর বসে ঐতিহাসিক কাসলেল্লোর (রাজবাড়ি) পেছনের বিশাল আঙ্গিনায়। যেটি পারকো সেমপিওনে বা সেমপিওন পার্ক নামে অধিক পরিচিত। সে সময় ২৫টি দেশ ওই মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। জনপরিবহন নিয়ে মানুষের চিন্তা এবং আবিষ্কার তুলে ধারা হয়েছিল ওই মেলায়। আজকের মিলানো যে বিশ্ববাণিজ্য এবং ফ্যাশন জগতের একটি প্রভাবশালী নগর এর পেছনে অনেক বছর আগের ওই আয়োজনের অবদান অনস্বীকার্য।
(বাকি অংশ আগামী সংখ্যায়)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০০