somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উৎসব(গল্প)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইদানিং সবাই বলে আমি নাকি অসামাজিক হয়ে গেছি।এটা অবশ্য ইদানিং না,অনেক আগে থেকেই আমাকে শুনতে হয়।কারও বিয়ে(বিয়ের অনুষ্ঠানের মেকানিজমটাই আমার কাছে ঠিক স্পষ্ট না।গায়ে হলুদ,বৌ ভাত,বিবাহোত্তর সম্বর্ধনা,কোনটা ছেলের বাড়ীতে আর কোনটা মেয়ের বাড়ীতে হয়,কোনটা আগে,কোনটা পরে-সবকিছুই আমার কাছে দূর্বোধ্য ব্যাপার!)জন্মদিন অথবা বয়সন্ধিপূর্ব বিশেষ অঙ্গ কাটার অনুষ্ঠানে যেতে আমার ভাল লাগেনা।ধর্মীয় উৎসবোত্তর পূনর্মিলনি,অথবা মৃত্যুর চল্লিশদিন উপলক্ষে উদযাপিত অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তেহারির প্যাকেট সাবাড় করতে করতে দেশের গোশ্ঠি উদ্ধারকারীদের দলে আমি পড়িনা।মোট কথা,মানুষের ভীড় আমার কাছে বিরক্তিকর।আমি একলা মানুষ,আমার নিজের ছোট্ট সুন্দর জগৎটায় ঘাপটি মেরে থাকতে পছন্দ করি।মানুষের ভীড় আমার অসহ্য লাগে,অস্বস্তিকর লাগে যেকোন ধরনের উৎসব।
সেন্টের শিশি উপুড় করে নিজেকে সুরভিমন্ডিত করে তোলার অপচেষ্টা করে যেসব স্যুটেড ব্যুটেড আহাম্মক,তাদের তো বটেই,আরও বেশি খারাপ লাগে তাদের দেঁতো হাসি।আর মধ্যবয়স্ক সেসব গয়নাদার,ওজনদার মহিলা?ওদের কথা আর কি বলব!নিজেদের সুন্দর দেখানর যখন এতই অভিপ্রায়,তাহলে শরীরটাকে ঠিক রাখার জন্যে একটু ব্যায়াম করলেই পরেন,অথবা চেষ্টা করতে পারেন নিজেদের জিহবাটাকে সামলে রাখার।আর কিছু না পারুব,খাবার সময় একটু ছোট হাঁ করলেই তো হয়!আপনি খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা?ঠিক!অথচ এসব মহিলাই নিজেদের বিয়ের সময় কোন অলৌকিক উপায়ে দাঁত বের না করে,ঠোঁট ফাঁক না করে কিভাবে সুখাদ্যসমূহ গলাধঃকরণ করেছিলেন ভাবলে অবাক হতে হয়।এসব আমার ভাল লাগেনা।যেসব যায়গায় না গেলেই নয়,সেসব জায়গায় অনিচ্ছাস্বত্তেও গিয়ে কাষ্ঠহাসি হেসে,মুরগীর ঠ্যাং চিবিয়ে চলে আসি।ধোপদূরস্থ মানুষের চেয়ে ন্যাংটো মুরগী ভাল,কি বলেন!হাহাহা।আমার অবশ্য পোষাকপড়া মুরগীও দেখতে খারাপ লাগেনা।বিয়ের অনুষ্ঠানে ওরকম দেখা যায় কনেদের ডিমে তা দেয়ার ভঙ্গিতে বসে থাকতে।উজবুক যতসব।চারিদিকে উৎসবের ডামাডোলে বড়ই বিপন্ন মনে হয় নিজেকে।আমি ঘৃনা করি উৎসব।ঘৃনা করি মানুষের ভীড়।
উৎসবের প্রতি আমার এই ঘৃনার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারবেন?থাক আর বিশ্লেষণে যেতে হবেনা।কারণ আমাকে যেতে হচ্ছে তেমনই এক জায়গায়।না গিয়ে উপায় নেই,অফিসের বড়কর্তার মেজশ্যালিকা অথবা.....যাই হোক,তেমনই কোন এক আধাঘনিষ্ট আত্নীয়ের বিবাহোত্তর সম্বর্ধণা আজ।না গেলে আবার উনি মনে করতে পারেন আমি "হুজুরের একান্ত অনুগত" নই।আচ্ছা,আপনি কি "জাতে মাতাল,তালে ঠিক" বাগধারাটার অর্থ জানেন?এইতো হয়েছে।
আচ্ছা,এসবের মানেটা কি?দুজন মানুষ আজ রাতে একসাথে শোবার সামাজিক সনদ পাবে,এ জন্যে আমাদের,আচ্ছা ঠিক করে দিচ্ছি "আমাকে" কেন এত ভোগান্তি সহ্য করতে হবে?হ্যাঁ,ভোগান্তিই তো।আমি ঘৃনা করি ,ভীড়,উৎসব।উৎসব আমার ধাতে সয়না।আমি ভালবাসি আমার ছোট্ট,নিস্কলুস,সুন্দর জগৎটা....
এই যেমন এখন....ব্যস্ত সড়কটায় মানুষের বৃত্তাকার জোট পাঁকিয়ে উঠেছে কোন একটা ঘটনাকে কেনদ্র করে।কেন্দ্রবিন্দুতে কে,জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।কিন্তু মানুষের অগ্রগামী ভীড়ের গতিমান স্রোত আমাকে সামনে টেনে নিচ্ছে।অনেকখানি সামনে এগিয়ে এসেছি আমি।ঘটনার কেন্দ্রের প্রায় কাছে।কোন কথাসর্বস্ব ক্যানভাসারের দুর্দান্ত কোম্পানি প্রোডাক্টের হ্রাসকৃতমূল্যে বিক্রয়ের অভাবনীয় সুযোগের চটকদার ফিরিস্তি কি?নাকি কোন শ্রীহীন জাদুকরের বিস্ময়কর কলাকৌশল?
নাহ,সেসব কিছুইনা।দুইজন তরুণকে জনতা ধরে পেটাচ্ছে খুব।নিশ্চয়ই কারও পকেট মেরেছে।যা সন্দেহ করেছিলাম!"এক লেডিছের চেইন ধইরা টান দিছিল"-জানাল পেটাতে পেটাতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া একজন বিশ্রাম নেবার ফাঁকে।
আমি আরেকটু সামনে আগাই।এত্ত ভীড় কেন মানুষের?আমি ঘৃনা করি মানুষের ভীড়।
এত্ত ভীড় কেন মানুষের?কিচ্ছু দেখতে পারছিনা আমি।
একটু সরুন।দয়া করে একটু সরবেন??আরে সরেননা মিঞা!কিছু দেখতে পারছিনা।
কিচ্ছু দেখবার পারতাছিনা।ঐতো দেহা যায়!!!ঐতো বাইন্ধা রাখসে!রক্তে ভাইসা যাইতাছে ওগো দুই চউখ।ভীড় বাড়তাছে।উৎসব হইতাছে যেন।"চোখ উপড়ায় ফেল" চিল্লাইতাছে সবাই।ভীড় বাড়তাছে।আমি ভীড়ের মইদ্যে মিশা যাইতাছি।উৎসব উৎসব লাগতাছে।তয় আমি আমার শার্টে রক্ত লাগামুনা।আমি খালি দেখুম।দেখনের মইদ্যেও মজা আছে।ভীড়ের মদ্যে মিশা যাইতে যাইতে আমি চিল্লাইতে থাকি"চোখ উপড়ায়া ফেল!চোখ উপড়ায়া ফেল!"উৎসব উৎসব লাগতাছে আমার!
(পরিশিষ্ট)
বিয়েবাড়ীর বিরক্তিকর সৌজন্যমূলক আচার পালন করতে হচ্ছে আমাকে এই মুহুর্তে।অসহ্য ভীড়ে হাঁপিয়ে উঠেছি আমি।আমি ঘৃনা করি মানুষের ভীড়।ঘৃনা করি উৎসব.....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৭
৫৪টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×