আমার এক বন্ধু থাকে ইউ.কে তে।বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু।বন্ধুত্বের প্রগাঢ় টানে আমাকে মাসে বেশ কয়েকবার ইউ কে তে যাতায়াত করতেই হয়।সম্প্রতি শুনতে পেলাম,সে বেশ অসুস্থ্য।ওখানে প্রপার ট্রিটমেন্ট হচ্ছেনা।তাই আবারও আমাকে যেতে হল মানবিক কারণে।সামান্য সর্দি জ্বর,তাতেই কত সামাজিকতা,আনুষ্ঠানিকতা।যাই হোক,আমি লক্ষণ বিচার পূর্বক তৎক্ষনাৎ তাকে ইউ কে থেকে পিজিতে স্থানান্তরের ব্যবস্থ্যা করে ফেললাম।ওদের ওখানে আসলে চিকিৎসার অবস্থা খুব একটু ভাল নয়।উত্তর কাফরুলের মত যায়গায় আপনি আর কিই বা আশা করতে পারেন?(Uttar Kafrul=U.K )
তবে আমার বন্ধুর কল্যাণে ইদানিং আমার সম্মান সাময়িকভাবে বেড়ে গ্যাছে।নিকট মানুষেরা আসল ব্যাপার জানে,তবে একটু লতায় পাতায় দূরের মানুষেদের সামনে সুযোগ পেলেই আমি আমার ঘনঘন ইউ কে যাবার ব্যাপারটা বেশ ভাব নিয়ে বলি।তারা প্রথমে বেশ সমীহের দৃষ্টিতে তাকায়।তারপর বিস্তারিত জানার প্রয়াস নিলে কৌশলে সটকে পড়ি।অবশ্য সাময়িকভাবে স্ট্যাটাস বৃদ্ধি পেলেও মাঝেমাঝে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।যেমন,এই তো সেদিন পাড়ার হার্ট থ্রব সুন্দরী সুস্মিতা(তার আসল নামটা দিলামনা,কারণ তার অপরূপ সৌন্দর্যের সাথে সেটা খাপ খায়না।আমার সামনে বন্দুক ধরলেও আমি স্বীকার করবনা যে তার আসল নাম ফরিদা) বললো,
"কি হাসান ভাই,ফরেন মিনিস্ট্রিতে চাকরি পেয়েছেন নাকি?" স্পষ্টতই খোঁচা,আমি যুৎসই একটা জবাব খুঁজছি প্রাণপনে।কিন্তু আমাকে কোনোরকম সুযোগ না দিয়েই সে দ্বিতীয় খোঁচাটা দিল।আমার ডিফেন্স মেকানিজম ঠিকমত কাজ না করায় বেশ রক্তও ঝরলো।
"এই সব ধান্দাবাজি বাদ দেন,বুঝলেন হাসান ভাই?ইউ কে মানে যে উত্তর কায়েতটুলি,এটা আমি খুব ভাল করেই জানি,হুঁহ!"
এই ঘটনার পরে আমি খোঁজ নিয়েছিলাম উত্তর কাফরুল আর উত্তর কায়েতটুলি এই দুই জায়গার মধ্যে কোনটার স্ট্যাটাস বেশি।পূর্ণাঙ্গ স্ট্যাটিসটিক্স এখনও আসেনি,গবেষনা চলছে।
যাই হোক,আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইউ কে নিয়ে আর লুকোছাপা নয়।আমি এবার সত্যিসত্যি ইউ কে তে যাবো।ফরিদা,থুক্কু সুস্মিতাকে দেখিয়ে দিব আমিও বিশাল এক চুনোপুঁটি।বাগধারার ব্যবহারটা কি ঠিক হল?এনিওয়েজ,হু কেয়ারস?বাংলা ব্যাকরণ আমার নখদর্পনে না থাকলেও চলবে।আমি আই.ই.এল.টি.এস করবো।এই কথাটা ওকে বলতে গিয়ে অবশ্য আরেকবার বিব্রত হতে হয়েছিল।
আই.ই.এল.টি.এস এর সঠিক বর্ণনাক্রমটা ভুলে গিয়ে বলে ফেলেছিলাম এল.ই.টি.আই.এস,অর্থাৎ "লেটিস"!এটা শুনে ও বলেছিলো "গেটিস দিয়ে আর কতদিন হাসান ভাই?"।চরম বিব্রতকর অবস্থা।
আপাতত আমি এখন পিজির ওয়ার্ডে আমার ইউ.কে নিবাসী বন্ধুর জন্যে কয়েকটা ডাব নিয়ে মুখে কৃত্রিম চিন্তার ভাব নিয়ে বসে আছি।আমার বন্ধু কিছুক্ষণ ডাবের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বললো,"তোকে ইউ.কে আসার ভিসা দিয়ে তোর স্ট্যাটাস এত বাড়িয়ে দিলাম,তার প্রতিদানে পেলাম ডাব?ডাব নিয়ে আসে কোন স্ট্যাটাসঅলা লোকে?এর চেয়ে একটা ইউরো কোলা আনলেও তো পারতি।যত্তসব ক্ষ্যাত....ইত্যাদি ইত্যাদি..।
এই সব ঘটনার পরে আমি বুঝেছি স্ট্যাটাস রক্ষা করা কত কঠিন।তাই ইদানিং উত্তর কাফরুলে যাবার সময় আর ইউ.কে বলিনা।সুস্মিতাও এখন আর আমাকে আগের মত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেনা।অবশ্য সে সুযোগই পায়না।কিছুদিন হল তার বিয়ে হয়ে গেছে।সে এখন শ্বশুরবাড়িতে থাকে।তাই আমি আদর্শ ভগ্নহৃদয় প্রেমিকের মত নিয়মিত বিরহের গান শুনে যাচ্ছি,আর জ্বালাময়ী সব এ্যান্টি প্রেমের এ্যান্টিক কবিতা লিখে যাচ্ছি।
এর মধ্যে একদিন শুনলাম,"সে" এসেছে।পথে দেখাও হল একদিন।এ কথা সে কথার পর জানলাম,তার ইউ.এস.এ যাওয়া ঠিকঠাক।আগামী মাসেই চলে যাবে।
"ওর ব্যবসাটার জন্যে ঐ জায়গাটাই স্যুটেবল হাসান ভাই" বললো সে।"উত্তর শনির আখরা জায়গাটা কিন্তু খারাপ না একেবারে,কি বলেন?" বলে ফিক করে হেসে দিল প্রাক্তন হার্টথ্রব।
হুমম Uttar shanir akhra=U.S.A বানিয়েছে।সেন্স অফ হিউমার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে বোঝা গেল।
ঠিক সেই মুহুর্তে তার নধরকান্তি স্বামী যেন কোথা থেকে আবির্ভুত হল হুড়মুড় করে "এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?বাসায় চল।সামু ব্লগে হাসান মাহবুব নাকি খুব মজার একটা পোস্ট দিয়েছে,পড়বানা?"
"তা কি আর মিস করা যায়!" বলে খিলখিলিয়ে হেসে চলে গেল নিষ্ঠুর নারী।
হায়রে সামু!কোথায় যামু!নাহ এই ভালবাসার দিনে আমি আজ কোথাও যাবনা।ইউ.কে তো দূরের কথা।এর চেয়ে সামু ব্লগেই বসে থাকি।দেখি "সুস্মিতা' এসে যদি কোনো কমেন্ট টমেন্ট করে!!
#আমার এই লেখাটি উন্মাদ অক্টোবর ২০০৮ এ ছাপা হয়েছিলো।শেষের অংশটুকু পরিবর্তন করেছি বলাই বাহুল্য!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৭