somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জ্বীন দেখার কাহিনী(শতভাগ সত্যবয়ান)

৩১ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিরোনামেই বলেছি এটা একটা সম্পূর্ন সত্য ঘটনা। তাই অবিশ্বাসীরা ভ্রু কুঁচকে তাকালে আমার কিছুই করার নেই। ঘটনার ভয়াল বিবরণে সত্যিকারের নামগুলো প্রকাশ করা অস্বস্তিকর ঠেকছে আমার কাছে। তাই বন্ধুদের সবার নিকনেম ব্যবহার করব।
ঘটনাটা আমার ভার্সিটি লাইফের। ২০০১ এ, তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। হলে সিট পাইনি, বাইরে মেসে থাকি। আমাদের মেসটা ছিলো একটু দূরে। ডাকাতিয়া বিলের কাছাকাছি। গভীর রাতে আমরা চা সিগারেট (তখনও ধরিনি এটা) খেয়ে নিঝুম নির্জন বিলের ধারে বসে গান গাইতাম, বেশ কাটছিলো জীবন। এর মাঝে এক বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের সিআর পয়মাল এসে জানালো যে, ওদের মেসে মেকানিক্যালের একটা ছেলে -মোসাদ, নাকি জ্বীন দেখাতে পারে। আমি তো শুনে হেসেই উড়ি্যে দিই আর কি! কিন্তু আমার রুমমেটদের কাউকে কাউকে বেশ সিরিয়াস মনে হল। বিশেষ করে টম কে। কারও অবিশ্বাস কারো সংশয় আর কারো উদগ্র ইচ্ছা, সব মিলে যা দাঁড়ালো, তা হল জ্বীন দেখার উদগ্র কৌতূহল।
যেতে যেতে কথা হচ্ছিলো পয়মালের সাথে। ও তখন সদ্য তাবলীগের এক চিল্লা কমপ্লিট করে ফিরেছে।মুখে চাপদাঁড়ি, জোব্বাজুব্বা পরে ঘুরে বেড়ায়। মাথায় পাগড়ীর মত কি যেন একটা পরে, আর কিছুক্ষণ পর পর বাঁজখাই কন্ঠে আমাদের চমকে দিয়ে "আল্লাহু আকবর" বা অন্যান্য প্রশংসাসূচক বাণী উচ্চারণ করে যথেষ্ঠ পরিতৃপ্তি লাভ করে। নির্জন, অন্ধকার পথে ওর মুখে জ্বীন দেখার কাহিনী শুনতে শুনতে অবিশ্বাসী আমারো গা ছমছম করে ওঠে।
"উপদেষ্টা" যথারীতি এই বিষয়ে তার জ্ঞান জাহির করতে থাকে
মাদি'টা অন্যান্যদিনের চেয়ে অনেক চুপচাপ।
আঁতেল টাইপের "সোনামনি" ভ্রু কুঁচকে কিসের হিসেব মেলানোয় যেন ব্যস্ত।
"বরযাত্রী" অবশ্য বরাবরের মতই টেনশনবিহীন।
সবচেয়ে ছটফট করছিলো "টম"। ওর নাকি জ্বীনকে কি যেন জিজ্ঞাসা করার আছে।
আর আমি কৌতুহলে ছটফট করছিলাম।

(সবার আসল নাম প্রকাশ করতে না পারার জন্যে আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি। ঘটনাটা ঠিক যা হবার কথা ছিলো তা হয়নি, এখনো মনে পড়লে.....থাক পরেই বলি)

ওদের মেসে যাওয়ার পরে দেখা হল ব্যাম্বিনো, সুন্দরী সবার সাথে। ওদেরকে খুঁচিয়ে আসল ঘটনা বের করার চেষ্টা করলাম। সুন্দরী বেশি কথা বলতে চাইলোনা ও ব্যাপারে। ব্যাম্বিনো মহা আগ্রহের সাথে বয়ান করে চলল ওর অভিজ্ঞতা। আজকেও জ্বীন নামানো হব শুনে ওর মাঝে কৌতুহল এবং আতঙ্কের মিশ্রণ। সেদিন অল্পের জন্যে ভয়াবহ কিছু ঘটেনি, আজকে যে কিছু হবেনা তার নিশ্চয়তা কি? শঙ্কিত দেখালো ওকে।
একটু পরে মোসাদের সাথে দেখা হল। একে আগে দেখিনি, এই নাকি জ্বীন দেখাবে। ও আমাদের সবাইকে একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে গেলো। জলদগম্ভীর কন্ঠে জানালো যে একটু পরেই জ্বীন আসবে।
আমরা যেন নীরবতা পালন করি।
কোনরকম বেয়াদবি না করি।
শরীর যেন সম্পূর্নভাবে পবিত্র থাকে। সবাইকে অযু করে আসার নির্দেশ দিলো।
টম ভাঙা ভাঙা কন্ঠে ঢোক গিলে কোনমতে জিজ্ঞাসা করল যে জ্বীনকে দুটো প্রশ্ন করা যাবে কিনা। মোসাদ জানালো, একটি প্রশ্ন করা যেতে পারে, এবং প্রশ্নটি অবশ্যই এমন হতে হবে যেন উনি রেগে না যান। এখন কিসে "উনি" রাগ করেন আর না করেন ভেবে তো আমরা প্রমাদ গুনলাম।

মোসাদ জানালো জ্বীন আসার সময় কোনরকম আলো থাকা চলবেনা। স্বাভাবিক। এরকমই শুনে এসেছি সবসময়। কিন্তু যখন মেইন সুইচ নিভিয়ে পুরো ঘর অন্ধকার করে দেয়া হলো, বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠলো। খোদা জানেন,কি অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে। আগে যদি ঘুনাক্ষরেও জানতাম যে এমন অভিজ্ঞতা হবে তাহলে কি আর ওখানে থাকতাম!

লাইট নিভিয়ে দেয়া হলো।
আমরা সবাই দল বেঁধে অযু করে আসলাম, ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর।
এখন জ্বীন দেখার অপেক্ষা। বুকের ভেতর হাতুড়িপেটা হচ্ছে। মোসাদ বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। ওর স্বর ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে। টম আমাকে খামচে ধরে আছে। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। ঠিক সেইসময়...



ঠিক সেইসময় কোন বেকুব যেন বাতি জ্বালিয়ে দিলো। আর প্রচন্ড একটা অট্টহাসির শব্দ। পাশে বসে থাকা টমের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। একি, সবার এই দশা হলো কেন!!


সবার মুখে লাল রং! হারামজাদাগুলো বাথরুমের বালটির পানিতে কড়া লাল রং মিশিয়ে রেখেছিলো, অযু করার সময় যেটা আমাদের মুখে লেগে মোটামুটি জ্বীন বা ভুত,যাই হোক কিছু একটার সুকৃতি দিয়েছে!

পয়মাল,ব্যাম্বিনো,সুন্দরী আর মোসাদের হাসতে হাসতে ফুসফুস ক্ষয়ে যাবার দশা! কোনমতে কেউ একজন বলল, "দেখ শালা, নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখ! একদম জ্বীনের বাদশা সেজে আছে একেকজন!"

আমাদের বলার কিছুই ছিলোনা! সবাই বেশ মজা পেলেও টম খানিকটা আপসেট হয়েছিলো ওর মহামূল্যবান প্রশ্নগুলো জ্বীনকে করতে না পারায়!

পরিশিষ্ট: তবে আমরাও ছাড়িনি! এ ঘটনা বিহারী,গিদর এদের মেসে প্রচার করে দিয়েছিলাম, এবং ওরা মোসাদ গংকে জ্বীন দেখানোর মজা টের পাইয়ে দিয়েছিলো! অযু করার সময় গিদরগোষ্ঠি বালটি থেকে পানি ঢেলে ওদের মেঝে, বিছানা চাদর সব একাকার করে ফেলেছিলো! পাপ ছাড়েনা বাপকে!


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩০
১৫৭টি মন্তব্য ১৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×