somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিউজিক্যাল সিনেমা, এবং মিউজিসিয়ানদের নিয়ে সিনেমা;কিছু প্রিয় নাম।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হলিউডে একসময় মিউজিক্যাল মুভির রমরমা অবস্থা ছিলো। এখনও মিউজিক্যাল তৈরী হয়, তবে আগেকার মত আশ্চর্য সরলতায় ভরা অদ্ভুত সুন্দর সব ছবি আর পাওয়া যায়না। ওগুলোতে সুইট সিক্সটিজের একছ্ত্র অধিকার! মিউজিক্যাল মুভি যে খুব বেশি দেখেছি তা নয়। কিন্তু যেগুলোই দেখেছি,বেশিরভাগই ভালো লেগেছে। তাই প্রিয় তালিকা করতে গেলে, দেখা প্রায় সব ছবির নামই চলে আসবে!

প্রথমেই বলি সাউন্ড অফ মিউজিকের কথা।

এটার কথা অবশ্য মুভিখোরদের কাছে বলার কিছুই নেই। যারা খুব কম সিনেমা দেখেন তাদের অনেকেও হয়তোবা এটা দেখেছেন। না দেখে উপায়ই বা কি! এটা এমন একটা ছবি, যে কারো ভালো লাগতে বাধ্য। অসাধারণ জুলি এন্ড্রুজ। দেবদূত শিশু সব। আহা মায়া! আর অসম্ভব সুন্দর সব গান। মাস্ট সি মুভি।

Grease-

নিটোল প্রেমের ছবি। সস্তা কাহিনী। কিন্তু অনেকগুলো গান। আর সেইসময়কার ক্রেজ জন ট্রাভোল্টা এবং অলিভিয়া নিউটন জন। Summer days এর মত মজার গান, আর সেই বিষণ্ণ বোকা মেয়ের গান যে একজন গার্ডিয়ান এ্যানজেল খুঁজে বেড়ায়.. আরো কতক বিরহের গান..... গানে গানে ভরা! শুধুমাত্র গান গুলি দেখার জন্যে ছবিটা দেখতে পারেন। হতাশ হবেন না নিশ্চিত।

Fiddler on the roof-

একটি ইহুদি পরিবারের জীবনযপনের চালচিত্র, রাশিয়ার প্রেক্ষাপাটে। গ্রামে। ধর্মপ্রাণ মানুষজন, পারিবারিক জীবন, কিশোরী বয়স পার না হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা, আর সে স্বপ্নেই মেয়েরা আকূল।তাই তারা গেয়ে ওঠে "Matchmaker matchmaker make me a match" প্রেম করা সেখানে পাপ। কিন্তু তারপরেও সময়ের আবর্তনে পরিবর্তন ঘটে সমাজ কাঠামোয়। রাশভারী, একগুঁয়ে গোঁড়া বাবাও শেষ পর্যন্ত মেনে নেন মেয়ের পছন্দ করা পাত্রকে। রাজনীতির পট পরিবর্তনে একসময় বসতভূমি ছেড়ে যায় তারা। তিন ঘন্টার মহাকাব্যিক সিনেমা একটা। এত বড় দৈর্ঘ্যের সিনেমা বলে আবার মনের মধ্যে দোনোমনা চলছে নাকি আপনার! আমি কিন্তু ছবিটা কয়েকবার দেখেছি!

West side Story-

রোমিও জুলিয়েটের কাহিনীর আধুনিক, মিউজিক্যাল সংস্করন। দুই শত্রু শিবিরের দুইজন নরনারীর প্রেম কাহিনী, অবশেষে ট্রাজেডী, আর মাঝখানে কোরিওগ্রাফি'র সর্বোচ্চ মেধার খেলা! বারবার দেখার মত একটা ছবি।


The wizard of Oz-


ছোট্ট মেয়ে ডরোথি হঠাৎ এক ঝড়ের দিনে উড়ে চলে যায় রুপকথার দেশে। সাথে তার প্রিয় কুকুরটা। ওখানে দেখা হয় ভালো ডাইনী খারাপ ডাইনী, বোকা বাঘ আর টিনমানব, অনেকের সাথে। মজার এই অভিযাত্রায় অংশ নিতে চাইলে ছবিটা দেখতে ভুলবেননা কিন্তু!


Chicago-

এ সময়কার ছবিগুলোর মধ্যে শুধু এটাকেই রাখলাম। অস্কারজয়ী এই ছবিটা আমার অন্যতম পছন্দের একটি ছবি। এটা একটা মিউজিক্যাল হলেও, এবং গানের সংখ্যা অনেক হলেও আমার সেরকম পছন্দের কোন গান নেই, কিন্তু গান পছন্দ হওয়া বা না হওয়াটা এই ছবিটা পছন্দের মাপকাঠি না। এখানে রয়েছে তীব্র স্যাটায়ার, হলিউডের খ্যাতির ইদুর দৌড়ের প্রতি শ্লেষ আর ক্যথেরিন জেটা জোনস, রেনি জেলওয়েগার এর অসাধারণ অভিনয়। গানের মাধ্যমে ছবির কাহিনী বলার অতি চমৎকার ফরম্যাটটা এখানে দারুনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

The Broadway melody-

১৯২৯ সালের ছবি। এমন কিছু ভালো ছবি নয় এটা। কিন্তু সিনেমাটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কারণে এটাকে লিস্টে রাখলাম। প্রথমত; এটা অস্কারজয়ী প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। দ্বিতীয়ত, এটাই মিউজিক্যাল ছবিগুলোর মধ্যে এটাই প্রথম অস্কার জেতে। এখনকার অস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মানের সাথে এটার আকাশ পাতাল তফাৎ।
হাই মেলোড্রামা, দূর্বল এডিটিং...তারপরেও ভালো লাগে, অন্যরকম একটা সরলতার জন্যে।

Singing in the rain-

এটা শুধু আমার প্রিয় মিউজিক্যাল না, প্রিয় ছবির অতি সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও এই ছবিটা আসবে। কাহিনী, অভিনয়, নাচ, গান, কমেডি, রোমান্টিকতা সবকিছুর মিশেলে আশ্চর্য সুন্দর এক ছবি। আমি আর আমার ছোটভাই একসময় প্রতিদিনই ছবিটা দেখতাম! বৃষ্টির মাঝে ভিজতে ভিজতে যখন বাইরে থেকে বাসায় ফিরি, তখন মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠি, "Singing in the rain/singing in the rain/what a glorious feelings I'm happy again"
হলিউডের নির্বাক যুগ থেকে সবাক যুগে প্রত্যাবর্তনের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই ছবিটা। বলার ভঙ্গিটা অনবদ্য। অদ্ভুত মজার সব দৃশ্য আছে, যা দেখতে গিয়ে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। আর নাচের মুদ্রাগুলো রীতিমত অবিশ্বাস্য। এই ছবির নায়ক Gene Kelly ছিলেন চেইন স্মোকার। কিন্তু অসম্ভব কষ্টকর নাচগুলো পারফর্ম করার জন্যে তিনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুধু গান আর নাচর কথা বলছি দেখে নাক সিঁটাকাবেন না! স্টোরিলাইনটা এক কথায় অসাধারণ। আমার কথায় ভরসা না পেলে একটা তথ্য দিই, বৃটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সেরা দশ ছবির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তালিকায় এই ছবিটি আছে সিটিজেন কেইন, এইট এ্যান্ড হাফ এর মত ছবির সাথে। কোনভাবেই মিস করা উচিৎ নয়।

এবার সংক্ষেপে কিছু সিনেমার নাম বলি, যেগুলো মিউজিক্যাল নয়, তবে মিউজিক রিলেটেড।

Ray- আমার দেখা জেমি ফক্সের প্রথম ছবি। অভিনয় দেখে অভিভূত। অন্যতম সেরা মেল পারফরম্যান্সের তালিকায় থাকবে।অন্ধ কৃষ্ণাঙ্গ জ্যাজ শিল্পী রে চার্লসের জীবনের উত্থান পতনের কাহিনী।

Walk the line- কিংবদন্তী কান্ট্রি সিঙ্গার জনি ক্যাশ এর জীবন নিয়ে তৈরি ছবি। ভালো লেগেছে।

Tenacious, D in the path of destiny- গুরু জ্যাক ব্ল্যাকের হাহাপগে রক কমেডি।

This Is Spinal Tap- এটা আমার গুরু জ্যাক ব্ল্যাকের প্রিয় ছবি। তার ভাষ্যমতে এটাই প্রথম ছবি যা তার পশ্চাদ্দেশে লাথি দিয়েছিলো। একটা কিক এ্যাস রকুমেন্টারি!!


School of Rock- আমার ধারনা এই ছবিটায় জ্যাক ব্ল্যাক শুধুমাত্র অভিনয় করার জন্যে অভিনয় করেননি, রক মিউজিকের প্রতি তার অসম্ভব প্যাশন প্রতিটা ডায়ালগ, মনোলগ আর মুভমেন্টে প্রকাশ পেয়েছে। ছবিটার কাহিনীতে অনেক দূর্বলতা আছে, তাতে কি! আমার অন্যতম প্রিয় ছবি।

Control- বৃটিশ ফিল্ম। সাম্প্রতিককালের, কিন্তু সাদাকালো। অসম্ভব মুডি একটা ছবি। স্টাইলিশ, এবং বিষণ্ণ।

Sid and Nancy- বৃটিশ পাংক গ্রুপ সেক্স পিস্তলের মেধাহীন বেজিস্ট সিড ভিশিয়াসের জীবন, তাদের ব্যান্ডের চিয়ারলিডার ন্যান্সির সাথে প্রেমের সত্যি কাহিনী অবলম্বনে তৈরী ছবি।
সিডকে কেউ কখনই ভালো বেজিস্ট বলবেনা, কিন্তু পাংক জেনারেশনের আইকন হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবে সিড, মাত্র ২২ বছর বয়সে হেরোইন ওভারডোজের কারণে মারা যাওয়া এই তরুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৭
১০৯টি মন্তব্য ১০৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×