somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চক্ষে আমার তৃষ্ণা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"আপনাকে তিনটে বিকল্প দেয়া হবে। এর মধ্যে থেকে যেকোন একটি বেছে নিতে পারবেন। বিকল্প তিনটি হল, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র এবং গ্রন্থ। যেকোন একটি বেছে নেবার পরে সেটির আয়ুস্কাল সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দেবে আমাদের উচ্চতর কর্তৃপক্ষ। মনে রাখবেন, বেছে নেয়া বিষয়টির উপভোগ্যতার সাথে আপনার আয়ুস্কাল প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকবে। যেমন, আপনি যদি নির্বাচন করেন "চলচ্চিত্র" এবং আমাদের পরবর্তী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলচ্চিত্রের উপভোগ্যতার কাল '১০' নির্ধারণ করা হয়, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আর সর্বোচ্চ দশটি চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারবেন। যদি দুইদিনেই দশটি দেখে ফেলেন, তাহলে আপনার আয়ু হবে দুইদিন। আর যদি মনস্থির করেন যে বাকি জীবন আর কোন চলচ্চিত্র উপভোগ করবেন না, অথবা নয়টি চলচ্চিত্র দেখার পরেই ক্ষান্ত দেবেন, তাহলে স্বাভাবিক আয়ুস্কাল পাবেন। আমরা আপনার সুস্থ এবং নিরাপদ জীবনের জন্যে সমস্ত সুব্যবস্থা করব। শৈল্পিক অনাচার বন্ধ করে একটি বাস্তবসম্মত এবং উৎপাদনশীল পৃথিবী তৈরি করতে আপনার অবদান আমাদের একান্তই কাম্য। অধিবাস্তব পঙক্তি, লেন্স-ননসেন্স, আর তুলির আঁচড় দিয়ে যারা পৃথিবীর মানুষকে মোহগ্রস্থ, আমরা বলব 'বিভ্রান্ত' করে অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাতো, উদ্ভট চিন্তার অনুৎপাদনশীল সেসব মানুষ এবং তাদের প্রশস্তিকারীদের হত্যা করা হয়েছে। আপনাকে বাঁচিয়ে রাখাটা অবশ্য আমাদের পরিকল্পনারই অংশ। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন আপনাকেই বেছে নেয়া হল। একজনকে বাঁচিয়ে রেখে আমাদের পরিকল্পনার সাফল্যের সাক্ষী করে রাখা, ব্যাপারটা এভাবে ভাবতে পারেন। যাই হোক, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার কাছে পৌঁছে যাবে বিষয়ের তালিকা, আপনি যেকোন একটি বেছে নেবেন। আপনাকে আনন্দের সাথে জানানো হচ্ছে যে, শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে আপনাদের তথাকথিত শিল্পকলার আরো কয়েকটি শাখা যোগ করা হয়েছে, এবং উপভোগ্যতার মান নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হল দশ। আপনি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ আর দশটি বই পড়তে পারবেন, অথবা দশটি চলচ্চিত্র দেখতে পারবেন, অথবা দশটি গান শুনতে পারবেন, অথবা দশটি চিত্র দর্শন করতে পারবেন। বেছে নিন। "

*
আমি বেছে নিয়েছিলাম চলচ্চিত্র। শিল্পবিরোধী অভ্যুত্থান হয়ে গেলো কিছুদিন আগে। সারা পৃথিবী জুড়ে চলল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। যাদের হাতের ছোঁয়ায় কাগজে তৈরি হত শব্দঅরণ্য, সেলুলয়েডে অনুভূতির চলমান দৃশ্যকল্প তৈরি হত তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, সুরস্রষ্টা, গায়ক, অভিনেতা, জাদুকর সহ সবরকম শিল্পচর্চাকারীকে। শুধু তাই না, যারা তাদের অনুরাগী ছিল, বিদগ্ধ সমঝদার বা উন্মাদ ভক্ত, সকলকেই এই বিশাল হত্যাযজ্ঞের আওতায় আনা হয়েছে। কোন সমন না, পূর্বসতর্কতামূলক বাণী না, আচম্বিতে তারা হামলা করে একেবারে নিকেশ করে দেয় সকল শিল্পানুরাগীকে। সামান্যতম প্রতিরোধ করার সুযোগ পায়নি কেউ। কারণ তাদের বেশিরভাগই বুঁদ হয়েছিলো নতুন সৃষ্টির অন্বেষায় অথবা উপভোগে। তারা প্রস্তুত ছিলোনা, অবশ্য প্রস্তুতি থাকলেও কদ্দুর কী করতে পারতো তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ! তারা সৃষ্টি করতে জানতো কেবল, ধ্বংস না। পৃথিবীতে গান-গল্প-সিনেমা এসব পছন্দ করে না এমন মানুষ কয়জনা? কিন্তু আক্রমণকারী দলের লক্ষ্যবস্তু ছিলো তারাই, যারা এসবকে জীবনের অঙ্গ মনে করে। যাদের কাছে শিল্পের জন্যে জীবন, জীবনের জন্যে শিল্প না। আক্রমণকারীদের সাথে পরবর্তী সংক্ষিপ্ত আলাপে আমি জানতে পারি, তাদের এই অতি ভাবপ্রবণ মানসিকতাকে পৃথিবীর উন্নতির জন্যে অন্তরায় বলে মনে করে তারা। সেজন্যে বৈষয়িক জ্ঞানহীন সেসব মানুষ নামক আপদকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার সৎকর্মের গুণে তাদের মুখে আত্মপ্রসাদের হাসি ফুটে ওঠে। বাকি ছিলো যারা, যাদের কাছে শিল্প এবং সৃষ্টি দৈনন্দিন জীবনের সময় কাটানোর উপলক্ষ্য মাত্র, তাদেরকে একটি সমন ধরিয়ে দেয়া হয় এবং তাতে বর্ণিত থাকে শিল্পবিহীন জীবন মানুষকে কীভাবে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে। সেইসাথে হুমকিও দেয়া হয় তাদের কথামত না চললে পরিণতি কেমন হতে পারে। এই দলটাকে তারা খুব সহজেই কব্জা করে নেয়। তারা সানন্দে একটি প্রত্যয়ন পত্রে স্বাক্ষর করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে, আর কখনও তুলিজাত, কলমজাত, অথবা ক্যামেরাজাত এমন কিছু উপভোগ করবে না যা তাদের মনকে ক্ষতিকর আবেগ দ্বারা উদ্বেলিত করতে পারে। অবশ্য সে সুযোগও ছিলো না, কারণ পৃথিবী থেকে সমস্ত শিল্পকর্ম ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিলো। অল্প কিছু রেখে দেয়া হয়েছে এক্সপেরিমেন্টের জন্যে, যার সাথে সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে আমি জড়িত হয়ে গেছি। আক্রমণকারী এবং বেঁচে যাওয়া মানুষদের যৌথ তদারকিতে আছি এখন। বেঁচে যাওয়া দলটি অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ মানিয়ে নিয়েছে আক্রমণকারীদের সাথে। তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত শিল্পবিনাশী দলটি হাতে মারণাস্ত্র নিয়ে টহল দেয় আমার চারপাশে। অন্যেরা কাজে লেগে গেছে কলকারখানা, অফিস এবং ফ্যাক্টরিতে। আক্রমণকারীদের আশ্বাসে নতুন উদ্যম ফিরে পেয়েছে তারা। অপ্রয়োজনীয় আবেগ বিবর্জিত উন্নততর পৃথিবীর স্বপ্নে বিভোর, যেখানে সমস্ত ভাবপ্রবণতাকে পেশী এবং গ্রন্থিতে প্রবাহিত করে কর্মশক্তিতে রূপান্তরিত করা হবে। শিল্পীদের গোরস্থানে কলকারখানার বাৎসরিক উন্নয়নের বিবরণ পেশ করে অনুষ্ঠিত হবে আনন্দমেলা। যা ইচ্ছে করুক তারা, সেসব দেখার জন্যে আমি এক বছর বেঁচে থাকলে তো! আমার জীবন এখন দশটা সিনেমা দেখার মোট সময়কালের সমান। স্বাভাবিকভাবে সবকিছু চললে দশটা সিনেমা দেখতে আমার সর্বোচ্চ সময় লাগতো এক সপ্তাহ। কিন্তু এটা স্বাভাবিক সময় না। আমাকে সিনেমা দেখার সময় নিজের আয়ু বন্ধক রাখতে হবে একটু একটু করে। অবশেষে অপরিশোধের দায় নিয়ে আমি মারা যাবো। কার এত দায় পড়েছে এত হিসেব করতে? যেখানে মন মাতাল করা সুর নেই, বিষাদরাতের সঙ্গী হিসেবে প্রিয় পঙক্তিরা নেই, মন ভালো করার জন্যে ত্রিরত্নের নৌবিহারের সময়কার হাস্যকর কর্মকান্ড পাঠের সুযোগ নেই, হাতে আছে গুটিকয়েক সিনেমা আর পুষ্টিকর খাদ্য। এই বেঁচে থাকাকে আমি অস্বীকার করি। যত তাড়াতাড়ি এর যতি টানা যায় তত ভালো।

তারা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আমার আকাঙ্খিত যেকোন চলচ্চিত্র সরবরাহ করা হবে।

মনের মধ্যে মৃত্যুচিন্তা ছাপিয়ে তোলপাড় তুলেছে এখন সম্ভাব্য ওয়াচলিস্ট। কত কী দেখার আছে বাকি! ফেলেনির নাইট অফ ক্যাবিরিয়াতে গণিকার চরিত্রে তার সহধর্মীনি জিওভান্নি ম্যাসিনি কেমন করেছে? রাতের রোমের রাস্তায় সে কি ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিলো? লা স্ত্রাদার অবহেলিত ভাঁড়বালিকা এখানেও কী হৃদয় ভাঙার শব্দ শুনতে পাবে? মাইকেল হ্যানিকের নতুন ছবিটার অনেক প্রশংসা শুনেছি। সত্যজিত রায়ের অপু ট্রিলজি এখনও শেষ করা হয়নি, কী লজ্জা! টারান্টিনো...

*
-আমাদের সদ্যসমাপ্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর দশ মিনিটের মধ্যে আপনাকে দশটি সিনেমার লিস্ট দিতে হবে। যদি তা না দিতে পারেন, তাহলে আপনাকে শিল্প অনুরাগী ভেবে নিয়ে হত্যা করা হবে অথবা অন্যদের মত ফ্যাক্টরির কাজে লাগিয়ে দেয়া হবে। জলদি করুন।
আমি আর বেশি ভাবতে গেলাম না। দশ মিনিটের জায়গায় এক মিনিটের মধ্যেই ওয়াচলিস্ট দিয়ে দিলাম। এত দ্রুত ওটা দেয়ার ফলে সে বেশ অবাক হল, সেইসাথে এক্সপেরিমেন্টের সূচনালগ্নে উপনীত হয়ে উৎফুল্ল হয়ে আমাকে তাদের কার্যকালাপের কিছু বিবৃত করল, অনেকটা সাফাই গাইবার ভঙ্গিতে,
-দেখুন, আপনার মধ্যে হয়তো একটা ধারণা প্রথিত হয়েছে যে আমরা যাবতীয় অনুভূতির হন্তারক। এটা একদমই ভুল ধারণা। মানুষের মধ্য থেকে অনুভূতি বিলীন করে দেইনি আমরা। তারা কাজ করবে, ভালোবাসবে, জোছনা রাতে চাঁদ দেখে মুগ্ধ হবে, কিন্তু অনুভূতির কোনরকম কাগুজে, সুরেলা বা লেন্সাবদ্ধ প্রতিলিপি তৈরি করতে পারবে না। এসব অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার। আমাদের অভ্যুত্থানটা মূলত শিল্প এবং সৃষ্টিবিরোধী। একমাত্র একটা জিনিসই আপনারা সৃষ্টি করতে পারেন এখন,
ঠোঁটে একটা শ্লেষের হাসি ঝুলিয়ে রেখে সে বলল,
সেটা হল, সন্তান উৎপাদন।
-আমি কি জানতে পারি, কেন এবং কিসের জন্যে এসব? আর আপনারা কারা?
-আপনার অনুসন্ধিৎসু মনকে আমরা সবসময়ই স্বাগত জানাই। কেন এবং কিসের জন্যে সেসব বলতে গেলে দীর্ঘসূত্রিতার অবতারণা ঘটবে। এর চেয়ে আপনার নিজস্ব প্রজ্ঞার ওপর আমরা ভরসা করি বরং, কী বলেন? আর আমরা কারা? কখনও শিল্পের ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহিতা চেয়েছেন তার অস্তিত্ব সম্পর্কে? আপনারাই তো সেই মানুষ যারা শিল্পের প্রলম্বিত ছায়ায় মনকে সঁপে দিয়ে অসীমের মাঝে নিজেদের লীন করে দিতে চেয়েছিলেন। বিশাল বিশ্বব্রহ্মান্ডকে কলমের নিবে অথবা বেহালার তারে ধারণ করতে চেয়েছিলেন। মরণশীলতার জুজুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেঁচে থাকার মতলব করেছিলেন শতাব্দীর পর শতাব্দী।
-সেটা কি খুব অন্যায় কিছু ছিলো?
-ন্যায়-অন্যায়ের কথা এখানে বাদ রাখুন! যুদ্ধ পরবর্তীকালীন সময়ে হাঙ্গেরির বিষাদী মানুষদের যখন বিষণ্ণ রোববারের সুর শুনিয়ে দলে দলে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেন তখন কি ন্যায় অন্যায়ের কথা কিছু ভেবেছিলেন আপনারা? এতগুলো প্রাণনাশের দায় সেই শিল্পীর ওপর বর্তালে আপনারা কি তা মেনে নেবেন?
-এটাই তাহলে অভিযোগ?
-অভিযোগ বা উদাহরণ কোনটাই না। ধরে নিন আমরা অপশিল্পী, আমরা শিল্প এবং শিল্পী হন্তারক। কিংবা ধরে নিন আমরা স্রেফ কৌতূহলের বশে একটা পরীক্ষা করে দেখছি, সুর, চিত্র, গ্রন্থবিহীন পৃথিবী কেমন হয়। সবকিছুরই তো একটা বিপরীত মেরু থাকে তাই না? কেন আপনার ইচ্ছে করে না, শিল্পবিহীন পৃথিবী কেমন হবে তা দেখতে? এটাও কিন্তু বেশ জবরদস্ত একটা শিল্প ভাবনা হতে পারে, কী বলেন? এটা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যেতে পারে, গান তৈরি হতে পারে, উপন্যাস লেখা যেতে পারে, হয়েছেও এমন। অসীমকে সসীমের মধ্যে ধারণ করার যে কুটকৌশল আপনারা উদ্ভাবন করেছিলেন তারই প্রতিবর্তী ক্রিয়া এই আক্রমণ। যাই হোক, আর বেশি কথা বাড়াবো না। হ্যাপি মুভি মোমেন্টস! বিদায়!

*
আমার মত একজন সিনেফিল, সিনেমা যার কাছে খাবারের মত, তাকে দশটি সিনেমা দিয়ে কদিনই বা জীবন্মৃত অবস্থায় জিইয়ে রাখা যায়? বেশ বুঝতে পারছি, আমাকে নির্বাচন করার ব্যাপারটা কোনমতেই দৈবক্রম না। তারা এমন একজনকেই বেছে নিয়েছে, যার জীবন, স্বপ্ন, অনুভূতি সবই সিনেমাকে ঘিরে আবর্তিত। সিনেমা দেখার জন্যে আয়োজনে কোন খামতি রাখেনি তারা। হোম থিয়েটার, সুদৃশ্য কভারের অডিও কমেন্ট্রি এবং আরো নানাবিধ ফিচার সমৃদ্ধ ডিভিডি, পপকর্নটাই দেয়নি শুধু হাহা! তবে এমনিতে খাবার দাবারের আয়োজনেও কোন কমতি নেই। অপশিল্প অভ্যুত্থান এবং হত্যাযজ্ঞের আগে আমার জীবন যেভাবে চলত ঠিক সেভাবেই রাখা হয়েছে। এবং মজার ব্যাপার হল, এই যে পৃথিবীতে এত মৃত্যু, এতসব বিশাল পরিবর্তন সংঘটিত হল, তা আমার প্রতি তেমন প্রভাব ফেলেনি। আমি এই মুহূর্তে ভাবছি কোন সিনেমাটা দিয়ে শুরু করা যায় মৃত্যুর দিকে পদযাত্রা। তারা একদম ঠিক মানুষটিকেই বেছে নিয়েছে পরীক্ষার জন্যে।

তিন দিনে আমি পাঁচটা মুভি দেখে শেষ করলাম। অন্য বিকল্পগুলোর চেয়ে সিনেমা বেছে নেয়াতে সুবিধে হয়েছে। এর মধ্যে বাড়তি হিসেবে গান এবং নাচও পাওয়া যায়। এখন মনে হচ্ছে ছবি নির্বাচনে ভুল করে ফেলেছিলাম কিছুটা। সিনেমার এই বহুশৈল্পিকতাকে ঠিকঠাক কাজে লাগানো উচিত ছিলো। তালিকায় মিউজিক্যাল মুভি যদি রাখতাম বেশি করে, তবে ভালো হত। সিংগিং ইন দ্যা রেইন, সাউন্ড অফ মিউজিক এর গানগুলো শুনতে ইচ্ছে করছে খুব। ওগুলোকে তালিকায় রাখিনি অনেকবার দেখা বলে। প্রচুর পরিমাণে সাইকোলজিক্যাল ড্রামা দেখার ফলে আমি আমার মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন কীভাবে হবে এ সম্পর্কে সচেতন ছিলাম ভালোভাবেই। তাই অতি আকাঙ্খিত এবং দূর্লভ চলচ্চিত্রগুলো হাতে পেয়ে আমার প্রাথমিক উচ্ছাস এবং সিনেদর্শন পরবর্তী সময়ে ঘোরগ্রস্থতা একসময় কিছুটা থিতিয়ে যাবে এবং গ্রাস করবে মৃত্যুভয় এ তো সহজেই অনুমেয়! সিনেমার চিত্রনাট্য হিসেবে আমার বর্তমান পরিস্থিতি যথেষ্টই কাব্যিক। শৈল্পিকও বটে! সিনেমা দেখতে দেখতে মৃত্যু... পর্দা নেমে এলে পরে আমার জীবনের বাতিও নিভে যাবে! সেই মুহূর্তে বার্গম্যান এর দ্যা সেভেন্থ সিলের মত মৃত্যুদেবতা কি নেমে আসবে, দেখা দেবে আমাকে? নাকি টেক্সাস চেইন স ম্যাসাকারের লেদারফেসের মত রক্তলোলুপ উন্মত্ততায় যান্ত্রিক করাত দিয়ে বিদীর্ণ করবে আমার বুক? আমি জানি, আর দুটি সিনেমা দেখার পর মৃত্যুবিষয়ক রোমান্টিক ভাবনা উবে গিয়ে আতঙ্ক গ্রাস করবে আমায়। সময় বুকের ওপর চেপে বসবে জগদ্দল পাথরের মত। শিল্পভাবনা স্থগিত করে রাখতে হবে হয়তোবা চিরজীবনের জন্যে। মিশে যেতে হবে অপশিল্পীদের ভীড়ে। আর কখনও সিনেমা দেখা হবে না, গান শোনা যাবে না, বই পড়তে পারবো না। দীর্ঘ ক্লান্তিকর এক জীবন আমার সামনে অপেক্ষা করছে। এই অর্থহীন, অনুভূতির রূপান্তরে অপারগ জীবন কি আমার কখনও কাম্য ছিলো? এই জীবন কি আমি যাপন করতে পারবো? কখনই না!
বিলি ওয়াইল্ডার এবং আগাথা ক্রিস্টির অসামান্য মেলবন্ধনে নির্মিত "উইটনেস ফর দ্যা প্রসিকিউশন" দেখা হয়নি এখনও। আমার এক সিনেফিল বন্ধু বলেছিলো এটার টুইস্টটা আমি কোনভাবেই অনুমান করতে পারবো না আগে থেকে, দেখা যাক কতটুকু সত্যি হয় তার কথা!

*
-কেমন চলছে আপনার সিনেমাদর্শন? এক সপ্তাহে আটটা দেখে ফেলেছেন। লোভ সামলানো দায়, তাই না? হাহা!
-আমার প্রতি সার্বক্ষণিক নজরদারী রাখা হয়েছে, ভালো! নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে হচ্ছে।
-তো, আপনার স্ট্রাটেজিটা কি ঠিক করলেন? আজকে রাতের মেন্যুতে কি ডিশ? নাকি তল্পিতল্পা গুছিয়ে রেখে আত্মসমর্পণ করবেন?
-আত্মসমর্পণ করে কী হবে? আপনারা আমাকে কী দেবেন? কিসের লোভে আমি আত্মসমর্পণ করব?
-ভেবে দেখুন, আপনার জীবনের মূল্য কি অবশিষ্ট দুটি চলচ্চিত্রের সমান? এতদিন যাবৎ এত এত মাংস চর্বি জমা করলেন শরীরে, মগজের নিউরন আলমারিতে কত কত বৈদ্যুতিক প্রবাহ বয়ে গেল, সমৃদ্ধ হল, ঋদ্ধ হল ব্রেইনশোকেস, এখনও কুমারত্ব অটুট রেখেছেন। আপনি একজন সঙ্গিনী পেতে পারেন, সন্তানের জন্মদাতা হতে পারেন...
-তো? তাদেরকে আমি গান গেয়ে শোনাতে পারবো না, আমার সন্তান রঙচঙে রঙিন রূপকথার বই পড়তে পারবে না কখনও, পিক্সারের এ্যানিমেশন ফিল্ম দেখতে পাবে না...
-কিন্তু সভ্যতার অন্য সব উপকরণই পাবে তারা। ভেন্ডিং মেশিন থেকে কোকাকোলা-যেখানে সেখানে, খেলার জন্যে আধুনিক উপকরণ, নরম বালিশ, সার্বক্ষণিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, বাঙ্গি জাম্পিং, প্যারাসুট, বিনোদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধাই পাবে আপনার সন্তান। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সমস্ত সুফল আপনারা ভোগ করতে পারবেন। আমাদের কর্মীরা নিরলস খেটে যাচ্ছে ফ্যাক্টরিতে। আর শুনুন এক মাসের মধ্যে আপনাকেও ফ্যাক্টরিতে যোগ দিতে হবে, যদি ফিল্মগুলো দেখা শেষ না করেন। বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর দিন সীমিত।
-মৃত্যু অথবা ফ্যাক্টরি, মৃত্যুফ্যাক্টরি! এই মৃত্যুফ্যাক্টরিকে আমি অস্বীকার করছি। এখানে মানুষ আছে, মানুষের অনুভূতি আছে, কিন্তু তাকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এটা কতটা কষ্টের হতে পারে বেশ আঁচ করতে পারছি। মনে হয়না একমাস পরে আপনারা আমাকে দেখতে পাবেন এখানে। হয় বাকি দুটো সিনেমা দেখে শৈল্পিক মৃত্যুবরণ করব, অথবা দ্বিধার দোলাচলের ঝাঁকি অসহনীয় রকম কষ্টকর হয়ে গেলে আপনাদেরকে সুযোগ না দিয়ে নিজেই নিজের জীবন কেড়ে নেব।
-আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আপনি বেশ হালকাভাবে নিয়েছেন মনে হচ্ছে। ক্ষুণ্ণ কন্ঠে বলল সে। "কীভাবে ভাবলেন যে আমাদের ফাঁকি দিয়ে, আমাদের পরীক্ষাকে অবজ্ঞা করে এত সহজেই পার পাবেন? আত্মহত্যা করার মত মানসিক শক্তি আপনার নেই তা আমরা ভালোই জানি। এর চেয়ে এক কাজ করুন, সিনেমা দেখে জীবনের অপচয় না করে বরঙ নতুন কোন কন্সপিরেসি থিওরি আবিস্কার করুন। আমরা কারা, কেন এসব করছি এসব প্রশ্নের একটা সিনেমাটিক, টুইস্টেড জবাব বের করুন। কে জানে হয়তো বা নতুন কিছু পেয়েও যেতে পারেন। কোন অসঙ্গতি থাকলে সেসব নিয়ে ভাবুন। নেভার গিভ আপ ওল্ড বাডি! চা'ও!"

*
অসঙ্গতির কথাগুলো উল্লেখ করার পর আমি ব্যাপারটা নতুন এক দৃষ্টিকোণ থেকে খতিয়ে দেখতে শুরু করি আবার। চোখে পড়ার মত বেশ কটি অসঙ্গতিই আছে, আমার চোখে পড়েনি কেন আগে? প্রথমত: আমাকে বন্দী করে হত্যাযজ্ঞের কথা, শিল্প বিনাশের কথা, অদ্ভুত শর্তাবলীর কথা বলতে কেবল একজনই আসে। কেন? তার সাথে মুখোশ পরিহিত কিছু সঙ্গী থাকে, তিন চারজনের বেশি কখনই না। অশৈল্পিক অপশক্তির সাংখ্যিক বিবরণ কি তাহলে মিথ্যা? দ্বিতীয়ত: আমাকে ঘর থেকে বের হবার সুযোগ দেয়া হয়নি কখনও। ম্যাসাকার এবং ফ্যাক্টরি কার্যক্রম ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। আমি বাস্তবে তা হতে দেখিনি। তবে কি এটা একটা সেট আপ? আমাকে নিয়ে খেলছে কেউ? আর আমিই বা কেন অবলীলায় সব বিশ্বাস করে গেছি, কখনও যাচাই করে দেখতে চাইনি, কেন, কোন ড্রাগের প্রভাব? অসঙ্গতিগুলো প্রকট হয়ে ফুটে ওঠে আমার চোখে। আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি। কেউ বা কারা যেন খেলছে আমাকে নিয়ে, খুব ইন্টারেস্টিং একটা খেলা। ক্রিয়েটিভ, নিঃসন্দেহে! হয়তোবা কোন পাগলা ডিরেক্টর, নয়তো কোন ব্যর্থ গল্প লিখিয়ে, নাহ ভালোই ফেঁদেছে গপ্পোটা। বেশ ভালো চিত্রনাট্য। আইএমডিবি রেটিংয়ে আট পাবে। আমি মরছি না, দশম সিনেমা দেখার সাথে সাথে আমার শৈল্পিক মৃত্যু হবার কোন সম্ভাবনাই নেই! বিশাল বড় প্লটহোল ছিল কিছু তাদের চিত্রনাট্যে, কেন যে আগে খেয়াল করিনি! ঠিক আছে, এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, শিল্প, জীবন, নান্দিকতা এসবের দ্বৈরথকে আমার পাশে বসিয়েই দেখবো নবম চলচ্চিত্রটি, আমার লিস্টের একমাত্র মিউজিক্যাল "মেরি পপিন্স"। সিনেমাটা দেখার পর মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। চিরসবুজ জুলি এন্ড্রুস এবং দেবশিশুরা। দারুন প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত এ্যানিমেশন, মাইন্ড রিফ্রেশিং একটা ছবি। সেই কেতাদুরস্ত নিয়মানুবর্তী ব্যাংকারের সব নিয়ম ভাঙার আনন্দটা যেন আমি অনুভব করতে পারছি, গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করছে,
"Let's go fly a kite
Up to the highest height!"
ঠান্ডায় গলা বসে গেছে। গলা দিয়ে স্বর বেরুচ্ছে না। এই দুটো লাইন খুব সুন্দর। অনুবাদ করা যেতে পারে। অনুবাদ শেষে পরবর্তী 'তথাকথিত' শেষ মুভিটা দেখবো। এ্যারনোফ্সকির "দ্যা ফাউন্টেন"। খাতা-কলম, কি বোর্ড কিছুই অবশ্য নেই সাথে। তাতে কী! মাথায় জমা থাকুক। আমি "দ্যা ফাউন্টেন" এর ডিভিডি ছেড়ে দিলাম।

*
ছবি দেখায় এত মগ্ন ছিলাম, খেয়ালই করিনি কখন নিঃশব্দে কারা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে।
-আজকে কিন্তু আমি একা না। আরো অনেকেই এসেছে আমার সাথে।
আমি চমকে ফিরে তাকালাম তার দিকে।
-রং গেইজ মিস্টার, বাট আই লাইকড দ্যা ওয়ে অফ ইয়োর থিঙ্কিং! খেয়াল করেছেন আপনি এই কয়দিনে একবারও গান গাইতে পারেন নি। মেরি পপিন্সের অনুবাদও আপনি করতে পারবেন না।
-তার মানে...?
-হ্যাঁ, আমরা কিচ্ছু বানিয়ে বলিনি। আপনার সন্দেহ নিরসনে সবাই একটি করে কাটা মাথা নিয়ে এসেছি অপশিল্প অভ্যুত্থানে পরাজিত এবং নিহতদের। দেখুন না, যাচাই করে দেখুন। আপনার পরিচিত অনেককেও পেতে পারেন।
-দেখুন না, একদম ফ্রেশ মাথা, নট ফেইক। স্টুডিওর সরঞ্জাম না এগুলো।
-এ্যাই তোরা কিন্তু বেচারাকে ছবি দেখতে দিচ্ছিস না। এটা ঠিক না। বেচারার জীবনের শেষ ছবি। আরাম করে দেখুক। দেখেন মিস্টার, আপনি ছবি দেখেন।

এবার আর অবিশ্বাস করার উপায় থাকে না। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের জৈবিক অংশটা চিৎকার করে জানিয়ে দেয়, ওরা এসেছে। ওরা এসেছে জীবনের নান্দনিক সত্তাকে হত্যা করতে। ওরা অনুভূতির বিবর্ধনকারীদের হত্যা করতে এসেছে যারা বিশ্বাস করত মানুষ মারা যায়, শিল্প মরে না, তাই শিল্পের মধ্যে অসীমকাল ধরে বেঁচে থাকার অনন্য সুন্দর উপায় বের করেছিলো, গান, সিনেমা, চিত্রকর্ম ইত্যাদির রূপে। আমি এসবের কিছুই পারতাম না, তারপরেও বেঁচে থাকার সঞ্জীবনি শক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম শিল্পকে, বিশেষ করে সিনেমাকে। এখন যে ছবিটি দেখছি, সেটা যেন আমার এই অনুভূতির অবিনশ্বরতা তত্ত্বের সাথে অদ্ভুতভাবে মিলে যায়। ফাউন্টেন! ভালোবাসার শাশ্বত রূপের খোঁজে অভিযানে বেড়োয় তিন কালের তিন মানুষ। একজন মায়ান যোদ্ধা, একজন ডাক্তার, একজন মহাকাশচারী। ভালোবাসার অবিনশ্বরতা অথবা নিত্যতা সূত্র, কী হাস্যকর লাগছে ভাবতে এখন। আমি দুই হাত তুলে সারেন্ডারের ভঙ্গিতে এগিয়ে যাই তাদের দিকে।
-আপনারাই জয়ী হলেন। আমি বেঁচে থাকতে চাই। নিরামিষের মত। যন্ত্রের মত। পেটমোটা কেরাণীর মত। আপনাদের ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে চাই। চলুন।
-কিন্তু আমাদের তো এখন ফেরার কোন উপায় নেই মিস্টার। সর্বশেষ সভায় আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, সর্বশেষ ছবিটি তিন-চতুর্থাংশের বেশি দেখা হয়ে গেলে সেটাকে ওয়াচড বলে গণ্য করা হবে। সুতরাং, আপনার যেটা প্রাপ্য, অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড, সেটার জন্যে প্রস্তুত হন। শেষ সময়টা ছবি দেখতে থাকুন। সময়টা ভালো কাটবে।
সবাই খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠলো এই অদ্ভুত প্রস্তাবে।
-অথবা এমন ভেবে সান্ত্বনা পেতে পারেন যে, আর্ট মাস্ট ফাইন্ড আ ওয়ে। মানুষ গান গাইতে পারবে না তো কী হয়েছে? তাদের হয়ে পাখি গান গাইবে। চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারবে না তো কী হয়েছে, দীঘির জলে আকাশের ছায়াচিত্রে সৃষ্টি হবে নতুন চলচ্চিত্র, মৃত্যুকালীন সময়ে এমন মহত্তর চিন্তা ভাবনা নিঃসন্দেহে আপনার আত্মাকে উচ্চতর স্থানে নিয়ে যাবে।
এবারের রসিকতাটায় তারা আরো বেশি আমোদ পেল। হাসির শব্দে কান ফেটে যাবার যোগাড়।
সিনেমাটা শেষ হতে আর মিনিট দশেক বাকি। এ্যারোনফসকি যথারীতি তার সিগনেচার স্টাইলের ক্রেইজি ক্যামেরা মুভমেন্ট আর প্যারালাল স্টোরিটেলিং দিয়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছে স্ক্রিন। আমি নিথর চোখে তাকিয়ে দেখছি তা। মৃত্যুভয় আর শূন্যতা ছাড়া কোন অনুভূতি কাজ করছে না। অপশিল্পবাদীরা খুব আনন্দ পাচ্ছে। আমার মৃত্যুর পর পৃথিবীতে রাজত্ব করবে শুধুই তারা। আমি জানি, কোন উত্তরাধিকারী রেখে যেতে পারবো না, জানি আমার বিরুদ্ধাচরণে তাদের কিছুই এসে যাবে না। প্রতিশোধের নেশা নেই, বাঁচার আকুতি নেই আমার। শুধু মনে হল বলেই অথবা আমার অবচেতনে হয়তোবা ধারালো যুক্তিবাদী কটূবাক্যের ঢিল ছুড়ে তাদেরকে ঘায়েল করার কোন ইচ্ছে ছিলো, সেই উদগ্র বাসনা নাকি অটোমেটিক ডিফেন্স রিফ্লেক্স থেকে আমি বলতে শুরু করলাম,
-পৃথিবীতে শিল্পীদের তৈরি নৈরাজ্য সৃষ্টি হোক, অথবা অপশিল্পীদের সুখরাজত্ব, কোনকিছুতেই কিছু এসে যায়না আমার। স্রেফ মনে হচ্ছে আমার, তোমরা সবাই ব্যর্থ শিল্পী ছিলে। শিল্পী হতে না পারার যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খেতো বলে নিজেদের অক্ষমতাকে পুঁজি করে এই বিশাল চক্রান্ত করেছো এবং সফলও হয়েছো। তাই শিল্পের ওপর দায় চাপাও, হাঙ্গেরিয়ান শিল্পীর বিষণ্ণ রবিবারের সুর শুনে আত্মহত্যার মিছিলে শামিল তরুণ তরুণীদের তোমরাই পরিচালিত করতে চেয়েছিলে। পারোনি। শিল্পবিদ্বেষী হওয়া সুখের ব্যাপার। কিন্তু ব্যর্থ শিল্পী হওয়াটা অনেক কষ্টের।

*
মৃত্যুর আগ মুহূর্তে সে বুঝতে চেয়েছিলো কীভাবে মারা যাচ্ছে। কাকতালীয়ভাবে তার বচন শেষ হবার সাথে সাথে সিনেমাটাও শেষ হয়ে যায়। তাই সে জানতে পারেনি অপশিল্পবাদীদের তৈরি নিখুঁত স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার ফলে নাকি তাদের প্রতিহিংসাপরায়ন আচমকা আক্রমণে তার মৃত্যু ঘটেছিলো। ব্যর্থ শিল্পী অথবা অপশিল্পবাদী, দুটো শব্দের সাথেই শিল্প জুড়ে আছে। মৃত্যুর সময় এ বোধটা যদি সে কোনভাবে ছড়িয়ে দিতে পারতো! পেরেছিলো কী না তা নিশ্চয়ই জানা যাবে একদিন!


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৪
১২০টি মন্তব্য ১২০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×