somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চন্দ্রছাদ

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি চেয়েছিলাম, তুমি চাও নি। তাই ছাদটি হতে পারে নি অসীম মহাশূন্যে ধাবমান উড়োযান। চিলেকোঠার কড়িকাঠ, কার্নিশ, দেয়ালঘড়ি সবাই প্রস্তুত ছিলো উড়ে যাবার জন্যে। কাঠ আর সিমেন্ট মিলে শেষতক কংক্রিটের নির্জীব উপাখ্যানই হয়ে থাকলো। চাঁদ নেমে এলো না, ঘুমিয়ে গেলো মেঘের বালিশে। অথচ তুমি চাইলেই সেদিন চুম্বনের ত্বরণে ছিটকে যেতে পারতাম আমরা যাবতীয় পার্থিবতা থেকে। সেদিন ঝড় ছিলো না, বাতাসের দাপট ছিলো না, বৃষ্টি ছিলো না, তবুও স্বপ্নাকাশে উড্ডীয়মান হবার, দেহানলে সিক্ত হবার কত উপকরণ ছিলো! আমি এসেছিলাম অতিথি পাখির শেষসময়ের হুড়ো নিয়ে, দেশান্তরী হবার আকাঙ্খায়। তুমি ছিলে অলস মাছরাঙার মতো ধ্যাণী আর হিসেবী। কে বলেছিলো তোমায় কুঁজো হয়ে বসে থেকে একটা পুঁটিমাছের জন্যে অপেক্ষা করতে? আমার মৎসকন্যার মত বেআব্রু শরীর দেখে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। আমি যে জলের অতল থেকে, কতটা গহীন থেকে উঠে এসেছিলাম তোমার শুষ্ক পরিমন্ডলে, আমার যে ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো, আমার যে সময় ফুরিয়ে আসছিলো, চুরি করা সময় হাতের তালু থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে কুৎসিত গুঁইসাপের মত হিসহিসিয়ে চলে যাচ্ছিলো নিচে কর্দমাক্ত জলাশয়ে তুমি দেখো নি। কেন দেখো নি? আর তাই আজো আমি ছাদের চিলেকোঠায় আমার ছোটভাইয়ের রকেট বানানোর এক্সপেরিমেন্ট দেখে আশান্বিত হই, রকেটটা বানিয়ে ফেললেই তোমাকে ডাকবো আবার। তুমি, মাছরাঙা যুবক, এতদিনে অনেক মৎস শিকার করেছো, ক্ষুধা আর অভাবের দিনলিপির পাতা শেষ।এবার মৎসকন্যাকে নিয়ে নতুন রাজ্যে পরিভ্রমণের কাহিনী লেখার জন্যে নতুন ডায়েরি কেনো। আমরা উড়বো কাগজের রকেটে, উড়ে উড়ে দেখবো অনন্ত নক্ষত্র বিথীর তারাফুল আর সূর্যের আলোকনামচা।

*
কদিন হলো মিন্টু ছাদে চিলেকোঠার ছাদটা দখল করে কাগজ দিয়ে কী সব যেন বানাচ্ছে। মিন্টু পড়ালেখায় গাফিলতি করলেও এসব কাজে তার ভারী মনোযোগ। টেনেটুনে ইন্টার পাস করার পর যখন ভালো কোথাও ভর্তি হতে পারলো না, তখন থেকেই সে মোটামুটি ধরে নিয়েছে চাকরি-বাকরিতে তার কোন ভবিষ্যত নেই, তাই নিজের দক্ষতাটাকে হাতমকশো করে ভবিষ্যতে ব্যবসা করার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করেছে। সে ভারী চমৎকার কাগজের জিনিস বানাতে পারে। নৌকা, টোপর, পুতুল ইত্যাদি তৈরি করে সে আমার মুগ্ধতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যেই। আমি এসব দেখি, আর ছোটভাইয়ের প্রতিভায় মুগ্ধ হই। একদিন তার কাছে ফরমায়েশ করে ফেললাম বড়সড় একটা রকেট বানানোর। ছোট ভাইরা যেমন হয়, সুযোগ পেয়ে শুরু করলো নানারকম টালবাহানা, আর এটা ওটার দাবী। আমি অবশ্য খুশি মনেই তার দাবীগুলো মিটিয়ে দেই। কারণ, জানি আমার কথা সে কখনও ফেলতে পারবে না। অতীতেও যেমন পারে নি। চিলেকোঠায় বসবাসরত ভ্যাগাবন্ড চালচুলোহীন প্রেমিকের কাছে কাগজে লুকায়িত গোপন আবেগের কথা নিয়ে সে গেছে কতদিন! আর তাই কাগজের ওপর আমার বড় নির্ভরতা। কাগজে লুকিয়ে আছে আমার প্রেমস্মারক, কাগজের তৈরি রকেটে করেই আমি একদিন তাকে নিয়ে চলে যাবো মহাশূন্যের হাইওয়েতে।

*
শাহেদ ভাই এখন বড় চাকুরি করেন। চিলেকোঠায় কায়ক্লেশে থাকার দিন শেষ। শুনেছি ধানমন্ডির দিকে একটা ফ্ল্যাটে একাই থাকেন। বিয়ে করেন নি এখনও। কথাগুলো শুনতে খুব প্রাচীন আর আটপৌরে লাগছে তাই না? পুরোনো প্রেমিকের প্রতিষ্ঠিত হবার অপেক্ষায় থাকা, তার বিবাহ নিয়ে উৎকন্ঠা; আদতে ব্যাপারটা এরকম না। আমি শুধু একদিন, একদিন তাকে নিয়ে উড়বো। উড়ে যাবো মেঘেদের ব্যারিকেড ভেঙে আকাশের শেষ সীমানায়। উড়ন্ত শকটের চারিপাশে নক্ষত্রপুষ্পের সুবাস আর ধূমকেতুর আতশ সাজে চারিদিক ঝলকাবে। আর আমি সমস্ত জীবনীশক্তি প্রয়োগ করে তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখবো। শুষে নেবো ভালোবাসানদীর সমস্ত জল। অপ্রেমের মরুভূমিতে ফোটাবো মেঘফুল। সুতরাং, তার বৈবাহিক বা আর্থিক অবস্থা আমার চন্দ্রাভিযানের বাসনায় আদৌ কোন অর্থ বহন করে না।

*
অপেক্ষা! অপেক্ষা আমাকে ভুগিয়েছিলো খুব। আমি ঘৃণা করি অপেক্ষা। বার্তাবাহক অনুজের কাছ থেকে প্রতিটা চিঠি দেবার পরে আমি সাগ্রহে জিজ্ঞেস করতাম শাহেদ ভাই কিছু বলেছে কী না, তার চোখের তারার রঙ পাল্টেছিলো কী না, মুখে রক্তের ঝলক এসে রাঙিয়ে দিয়েছিলো কী না। আমার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে মিন্টু বিরক্ত হয়ে গিয়ে জানাতো, তার আচরণে প্রথমদিনকার একটু বিস্ময় ছাড়া আর কখনই কোন পরিবর্তন আসে নি। সেই বিস্ময়টাকে আমি বিশ্বাস ভেবে খড়কূটোর মতো আঁকড়ে ধরে রাখতাম। অপেক্ষা করতাম একদিন প্রত্যুত্তর আসবে বলে। কিন্তু তা আসে নি কখনও। তাই একদিন ছাদে কাপড় শুকোনোর নাম করে যখন আড়ি পেতে শাহেদ ভাইয়ের ফোনালাপ শুনে ফেললাম, অপেক্ষার লাভা ছিটকে বেড়ুলো প্রলয়রূপে। আবেগের অগ্নুৎপাত হলো আমার ভেতরে। আমি ভীষণ তাপে কাঁপতে কাঁপতে শুনলাম সে রূপা নামের কোন এক মেয়ের সাথে কথা বলছে। কথার বিষয়বস্তু, তার বর্তমান দীনহীন অবস্থার কথা ভেবে রূপা যেন তার কথা ভুলে যায়, এবং অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলে। এমন অবস্থায় সে কোন বাঁধনে কারো সাথে জড়াতে রাজী না, তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং পারিবারিক সংকটের কথা চিন্তা করে হৃদয়ঘটিত ব্যাপারকে সে সযত্নে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আমার মধ্যে তখন রক্তের নাচন, বাসনার কোমল লতা জেগে উঠছে, কামনার ক্ষুধায় যেন একশ বছরের অনাহারী আমি। আমি জেনেছি আমাকে অগ্রাহ্য করার কারণটা অপছন্দ না, আমি জেনেছি নির্লিপ্ত বোকা যুবকের হৃদয় উঠোনে অন্য কারো ঠাঁই নেই। এসব জেনে আমি সেই শুকনো আঙিনায় পদ্মঘুঙুর পরে নাচতে চাইলাম, আমার হাত জুড়ে অসংখ্য নীলপদ্ম, ছুড়ে দিতে থাকলাম ক্রমাগত। কিন্তু এসবের কোনকিছুই সে দেখছিলো না। তার পাথরচোখ থেকে রাতকাঁচ সরিয়ে দিয়ে আমার হার্দিক প্রলয় তার কাছে দৃশ্যমান করার ইচ্ছেতে কড়া নাড়লাম তার দরোজায়...

*
-শাহেদ ভাই!
-কী খবর রুম্পা?
-ভেতরে আসবো?
জবাব দিতে একটু ইতস্তত করছিলো সে। আমি জানতাম, সেদিন ভেতরে ঢুকলে আর কোন আড়াল থাকতো না আমাদের মাঝে। তার ইতস্ততকালীন সময় বড়জোর দুই সেকেন্ড ছিলো, কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিলো তা দুই লক্ষ বছর। এর মধ্যেই আমি কতকিছু ভেবে নিলাম! ঠোঁটের কোণায় প্রথম চুম্বনের অধীরতা, বুকের ভেতর উজার করে দেয়ার আকুলতা, ক্লিভেজে শক্ত দুটো হাতের স্পর্শাকাঙ্খা, কামিজের ভেতর অন্তর্বাসে সর্বনাশা মহাপ্লাবন।

শাহেদ ভাই সেদিন যদি এতসব দেখে থাকতো, একটু হলেও অনুভব করতে পারতো, তাহলে আর জিজ্ঞাসা করতো না কোন দরকারে এসেছি কী না। তার প্রশ্নটা আমার কাছে একইসাথে অশ্লীল এবং অপমানজনক মনে হলো। সে যদি সত্যিই কোন অশ্লীলতা করে বসতো, তার চোখে যদি নানারকম শঙ্কার বদলে লোভ দেখতাম, সে যদি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে দরোজাটা বন্ধ করে দিতো, সেটাই ওই সময়ের জন্যে সবচেয়ে যথাযথ কার্য হতো। হায় পুরুষ! তুমি ভীড়ের ভেতর কোন নারীর গা ঘেঁসে দাঁড়াও ঠিকই ইচ্ছেমতো, হাতকাটা ব্লাউজ, আঁটোসাঁটো লেগিংস আর খোলা পিঠ দেখলে চেয়ে থাকো বুভুক্ষের মতো। আর আজ এই অগ্নিসময়ে তোমার ভেতর নীতিবোধ, আশঙ্কা ইত্যাদির ভুল হিসেব করে তুমি অপমানিত করো অতৃপ্ত রমণীকে! সেদিন আমি আর কিছু না বলেই চলে এসেছিলাম। তারপর স্নান করেছি অনেকক্ষণ ধরে, ম্লানচোখে দেখেছি কীভাবে গোধূলির আগমনে সূর্যটা অস্তাচলে চলে যায়!

*
মিন্টু, তোর কাগজের রকেট বানানোর কতদূর? তোর ফরমায়েশ পূরণ করতে গিয়ে আমি অধৈর্য্য হয়ে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি শুরু কর না ভাই! কথা দিচ্ছি, বইমেলা থেকে তোকে কাগজের ডিজাইনের ওপর ভালো একটা বই কিনে দেবো। কেন জিজ্ঞেস করছিস অযথা এ দিয়ে আমার কী কাজ হবে? কী বলছিস? শুরু করবি শিগগীরই? আগে বলবি না! যে সে কাগজ দিয়ে তো আর এই রকেট বানানো যাবে না। তোকে আমি একশ খন্ড লাল কাগজ দেবো। প্রতিটা কাগজই লাল কালি দিয়ে লেপটানো। শাহেদ ভাই চলে যাবার পর তাকে উদ্দেশ্য করে যেসব চিঠি লিখেছি, সেসব তো আর তোকে পড়তে দেয়া যায় না! তাই আমি অক্ষরগুলো লাল কালি দিয়ে নিশ্চিহ্ন করেছি। এই চিঠিগুলোর পরতে পরতে চুম্বন, কামনা, অশ্রূ আর অপেক্ষার বর্ণমালা। এখানে আছে একলা রাত্তিরের হঠাৎ পাওয়া স্পর্শাবেশ, আলিঙ্গনের অভিপ্রায়, উড়তে চাওয়ার ইচ্ছে। এই কাগজ দিয়ে রকেট বানালে তা ঠিক ঠিক উড়বে, শুধু আমার হাতেই। তুই অতকিছু বুঝবি না। ছেলেমানুষ আছিস এখনও। একটু দাঁড়া, তোকে কাগজগুলো এনে দেই। খবরদার আর কোন প্রশ্ন করবি না। এই তো কাজ শুরু করে দিয়েছে, লক্ষী ছেলে! যা, তোকে আমি টিনটিনের কয়েকটা ভলিউম কিনে দেবো। এবার খুশি তো? নে এখন মন দিয়ে কাজ কর।

*
-তোমার কাজকর্ম না আপা, খুব অদ্ভুত। আজব এক আবদার করে বসেছো, তার চেয়েও আজব সরঞ্জাম নিয়ে এসেছো।
-অদ্ভুতের আর দেখেছিস কী! যখন রকেটটা নিয়ে উড়ে যাবো না, তুই আমাকে একদম কিম্ভুত ভাববি! অবশ্য সেটা তোকে দেখানোর সুযোগ আমি দেবো না। কাজ শেষ করে চিলেকোঠার ঘরটা ছেড়ে দিবি আমাকে এক সন্ধ্যার জন্যে। তারপর চলে যাবি। ছাদের দরোজার কাছে দাঁড়িয়ে পাহারা দিবি কেউ এলে সতর্ক করে দেবার জন্যে।
-আপা, তুমি আমাকে খুব ছেলেমানুষ ভাবো, তাই না? তোমার এইসব অদ্ভুতুড়ে কাজকর্ম আমি পুরোটা না বুঝলেও, কাকে নিয়ে এসব করছো, তা কিন্তু আমি জানি!
-হু, তা তো জানবিই! নে আর পাকামি করিস না। মন দিয়ে কাজ কর।
-কিছু বললেই তো খালি ন্যাকামি আর পাকামি হয়ে যায়। তুমি তো কোন খোঁজখবর রাখো না। থাকো নিজের জগতে মশগুল হয়ে।
-তোর কাছে কিসের খোঁজ নিতে হবে শুনি?
-খবরটা তোমার জন্যে একদিক দিয়ে আনন্দের, আরেক দিক দিয়ে দুঃখের। কীভাবে যে বলবো বুঝতে পারছি না।
-আরে বল না একেক করে। অত ভনিতা করতে হবে না। আনন্দ-বেদনা নিয়েই মানুষের জীবন।
-তোমার জন্যে খুশির খবর হচ্ছে, শাহেদ ভাই আজকে সন্ধ্যায় বাসায় আসবে। মামনির সাথে টেলিফোনে কথা বলেছিলো, আমি শুনেছি। আর দুঃখের খবরটা হলো, সে আসবে তার বিয়ের কার্ড নিয়ে। নিমন্ত্রণ করতে।
ওর কথা শুনে আমার ভীষণ হাসি পেলো। ভারী এক প্যাকেজ নাটকের কাহিনী বানিয়ে ফেলেছে! শাহেদ ভাই এর বিয়ে, অতঃপর আমার ভেঙে পড়া, রকেটপ্রকল্প বাদ দিয়ে দেয়া-এমনটাই ভেবেছে নাকি আমাকে? হাসতে হাসতে বিষম খাই আমি। মিন্টু অবাকচোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

*
রকেট বানানো শেষ। খুব সুন্দর বানিয়েছে আমার ভাইটা। ওর পিঠ চাপড়ে বাহবা দিলাম আমি। এখন আমার একান্ত সময়, যার জন্যে এতদিন অপেক্ষা করেছিলাম। তুই চলে যা মিন্টু, চলে যা। এই চিলেকোঠা এখন একান্তই আমার। সেই বিছানাটা এখনও আছে। উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কড়িকাঠ, দেয়াল আর দেয়ালঘড়ি। সব যেন আগের মতো হয়ে যাচ্ছে! সেই দিনের মতো! তুই চলে যা মিন্টু। বড়দের সব ব্যাপারে নাক গলাবি না, ভারী ডেঁপো হয়েছিস হতচ্ছাড়া! যা না! না, তোকে পাহারা দেয়ার জন্যেও থাকতে হবে না। একেবারেই চলে যা।

কাগজের রকেটটা হাতে নিয়ে আমি চিলেকোঠার দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি সেদিনের অসমাপ্ত দৃশ্যটাকে সম্পূর্ণ করার জন্যে। ফিরে আসছে, ফিরে আসছে সেদিন! ক্ষয়ে যাওয়া দেয়ালের আনাচে কানাচে রঙ লাগছে, ঘড়ির কাঁটাটা রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে সময়ের নিয়ম ভেঙে অতীতভ্রমণের জন্যে, জানালা দিয়ে হুহু করে বাতাস ঢুকছে রকেটটাকে ওড়বার উপযোগী করতে।

আমি আসবো শাহেদ ভাই? জানি, আপনি আজ কোন দরকারের কথা জিজ্ঞেস করবেন না। আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন অপলকে। প্রশ্নের জবাব দিতে ভুলে যাবেন। আমি দরোজাটা বন্ধ করে বিছানায়, আপনার পাশে এসে বসবো। আপনি হাত ধরতে চাইলে বাধা দেবো, কিন্তু তপ্ত নিঃশ্বাসের অমীয় প্রবাহে আপনার হাতেই বাঁধা পড়বো। তারপর? চলুন শাহেদ ভাই, আমরা দুজন আলিঙ্গনরত অবস্থায় ছাদে নেমে আসা মেঘফুলের গালিচা পেরিয়ে এগিয়ে যাবো মহাশূন্য হাইওয়ের রানওয়েতে। হ্যাঁ, এই রেলিংটাই। এখানে এসে দাঁড়ান, ভয় কী! এই যে আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখছেন না? আমার কি ভয় করছে? কী হলো শাহেদ ভাই! কোথায় যাচ্ছেন আপনি! আপনি তো পড়ে যাচ্ছেন! নেমে যাচ্ছেন! কেন?

ছাদের রেলিংয়ের ওপর কাগজের তৈরি রকেটটা হাতে দাঁড়িয়ে থেকে আমি দেখতে পাই, নিচে শাহেদ ভাই গাড়ি থেকে নামলেন। হাতে একটা কার্ড, সাথে একটা প্রগলভা মেয়ে। যাও, তোমরা ভেতরে যাও। তোমাদের আমি বিরক্ত করবো না। আমার ভ্রম এবং ভ্রমণ সম্পূর্ন করতে দাও। তাড়াতাড়ি যা না, ধিঙ্গি মেয়ে! এত ঢং করছিস কেন?

তারা দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে যাবার পরে আমি আমার উড্ডীয়মান সময়ে ফিরে যাই।

ছাদের রেলিং। আমি। কাগজের রকেট। আর... কেউ কি ছিলো! কারো কি কথা ছিলো আমার সাথে ওড়বার? আঁতিপাতি করে খুঁজে দেখি কেউ নেই। তাতে কী! আজ কেউ একজন, কিছু একটা উড়ে যাবেই। হয় রকেটটা- যাত্রীহীন অথবা আমি।







সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭
৮৪টি মন্তব্য ৮৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×