somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যার যত কাজ তার তত অবসর!

২২ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাফায়েত সাহেব একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে চাকুরি করেন। কাজের চাপ প্রচণ্ড। পরিবারের বড় ছেলে হওয়াতে সাংসারিক দায়িত্বও কম না। আরো খুঁটিনাটি ব্যস্ততার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার পরেও তিনি প্রতি বছরে একটি করে বই লেখেন। কীভাবে পারেন? সন্দেহ নেই যে তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমী, এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তবে সেই সাথে তিনি জানেন টাইম ম্যানেজমেন্ট। এজন্যেই প্রচুর কাজ করার পরও তার অবসর সময় কম থাকে না! শাফায়েত সাহেব কীভাবে তার টাইম ম্যানেজমেন্ট মেইনটেন করেন, এটা তারই ভালো জানার কথা। আমরা বরং কিছু থিওরি জেনে নেই চলুন!
আমাদের কাজকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় গুরুত্বের ভিত্তিতে। Important, এবং Urgent. একটা কাজ কতটুকু জরুরী তার ভিত্তিতে Important-কে মোটা দাগে দুই ভাগ করে ফেলুন! Important, এবং Not important. আর আর্জেন্সির ভিত্তি হবে কাজটা কখন দরকার, তার ভিত্তিতে। কোনো কাজ যদি এক্ষুণি লাগে, তাহলে সেটা হলো Urgent, আর যদি এখন না হলেও চলে, তাহলে সেটা হলো, Not urgent.
তাহলে একটা গ্রাফ করে ফেলুন এরকম-


দেখুন, কী সুন্দরভাবে কাজগুলো প্রায়োরাটাইজ করা যায় এখন!
Not urgent and Not important= 1, Urgent but not important=2, Not urgent but important=3 আর Urgent and important=4.

তাহলে কোন ক্যাটাগরির কাজকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত? নিঃসন্দেহে 4, অর্থাৎ Urgent and important কাজগুলিকে, তাই না?
এটাই হলো শুভঙ্করের ফাঁকি! আসলে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে ৩ নাম্বার ক্যাটাগরির কাজগুলোকে। যেগুলো হলো ইমপরট্যান্ট কিন্তু আর্জেন্ট না। গোল বেঁধে গেলো? একটু ব্যাখ্যা করা যাক। আর্জেন্ট কাজ হতে পারে দুই ভাবে। ধরুন, হঠাৎ আপনাকে বলা হলো একটি কাজ এই মুহূর্তেই করতে হবে, সেটি করা ছাড়া উপায় নেই। তবে কিছু কিছু আর্জেন্সি তৈরি হয় আমাদের অবহেলার কারণে। যেমন ধরুন, আপনাকে আজ কারেন্ট বিল দিতে হবে, না হলে লাইন কেটে দেবে। এই আর্জেন্সি কিন্তু আপনার সৃষ্টি করা। এটাকে এতদিন আপনি নট ইমপরট্যান্ট ভেবে এসেছেন বলেই আজ তা আর্জেন্ট হয়ে গেছে। কিন্তু যদি একদিন একটু ইমপরট্যান্স দিয়ে কাজটি করতেন, তাহলে এটি আর আর্জেন্ট হিসেবে গণ্য হতো না। এভাবেই আমরা তৈরি করি অনেক আর্জেন্ট কাজ, যার ফলে ইমপরট্যান্ট কাজগুলো করা হয় না, সেই ইমপরট্যান্ট কাজগুলো আবার পরবর্তীতে হয়ে যায় আর্জেন্ট কাজ, আর আমরা বাঁধা পড়ি সময়ের দুষ্টচক্রে।

তাহলে আমাদের প্রায়োরিটি হওয়া উচিত এমন-
১। আর্জেন্ট না, তবে ইমপরট্যান্ট
যেমন ধরুন আপনার ভার্সিটির ক্লাশ। একটা ক্লাশ না করলে কিছু এসে যাবে না, তবে প্রতিটা ক্লাশ করলে অনেক উপকার হবে।
২। আর্জেন্ট, এবং ইমপরট্যান্ট
সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেয়া। একই সাথে এটি সিগনিফিকেন্টও বটে (এ আলোচনায় পরে আসছি)।
৩। ইমপরট্যান্ট না, তবে আর্জেন্ট
জিম্বাবুয়ে বনাম শ্রীলংকা ওয়ানডে ম্যাচের শেষ দশ ওভার দেখা। দেখলে তখনই দেখতে হবে, কিন্তু না দেখলেও তেমন ক্ষতি নেই।
৪। ইমপরট্যান্ট এবং আর্জেন্ট কোনোটাই না।
হতে পারে এই পোস্টটি পড়া! হাহা!

তো এই সিস্টেমে বেশ কিছু দিন চললো। এরপর ররি ভাডেন নামক একজন ভদ্রলোক নিয়ে এলেন নতুন এক ধারণা। সেটা হলো “সিগনিফিকেন্স”। আমাদের জানতে হবে কোনো কাজ কতটুকু সিগনিফিকেন্ট? সিগনিফিকেন্স নির্ণয়ের ভিত্তি হিসেবে তিনি বললেন একটি কাজের দীর্ঘস্থায়ীতার কথা। আপনি একটি কাজ করলেন, সেটি একবার করার ফলে সারা জীবন ধরে কাজে লাগলো। এটাই হলো সিগনিফিকেন্ট কাজ। সুতরাং আপনি যদি সিগনিফিকেন্ট কাজ বেশি করেন, তাহলে আপনার ইমপরট্যান্ট এবং আর্জেন্ট কাজের পরিমাণ অনেক কমে আসবে। বেড়ে যাবে অবসর! উদাহরণ দেয়া যাক!

ধরুন, আপনি একটি ট্রেনিং প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর। আপনাকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ক্লাশ নিতে হয়। এটা হলো ইমপরট্যান্ট কাজ। প্রতি মাসে আপনাকে একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বক্তৃতা দিতে হয়। এটি হলো আর্জেন্ট। এখন যদি আপনাকে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে ২ ঘন্টা ধরে বক্তৃতা দিতে না হতো, আপনি সেই সময়ে অন্য ইমপরট্যান্ট কাজ করতে পারতেন। কী করা যায় তাহলে?
একটা ভিডিও বানিয়ে ফেলতে পারেন বক্তৃতার, যেটা প্রতি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রোজেক্টরে দেখানো হবে! একবার কষ্ট করে এই কাজটি করার ফলে আপনার অনেক আর্জেন্ট কাজ কমে গেলো! বেঁচে গেলো সময়!
তবে এখানেও কিন্তু কথা আছে। সিগনিফিকেন্ট কাজের প্রায়োরিটিও করতে হবে ইমপরট্যান্সের ভিত্তিতে। ধরুন আপনি একটি কোর্সের কো-অর্ডিনেটর। আপনাকে সপ্তাহে ১টি ক্লাশ নিতে হয় কোর্সের। এটি ইমপরট্যান্ট। আবার মাসে একবার ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বক্তৃতা দিতে হয়। এটা আর্জেন্ট, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে শুধু আপনাকেই দিতে হবে এটি। আপনি কি একটি সিগনিফিকেন্ট কাজ করে এই আর্জেন্সি প্রতিস্থাপন করতে পারেন?
কিন্তু এটা কি ইমপরট্যান্ট? এটা না শিখলে কি আপনার কাজ থেমে থাকছে? না। তাহলে এটার প্রায়োরিটি কেমন হবে তা আপনিই বিবেচনা করুন!
এখন তাহলে বলে ফেলুন, টাইম ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত এরকম আরো আর্টিকেল পড়া আপনার জন্যে ইমপরট্যান্ট, আর্জেন্ট, নাকি সিগনিফিকেন্ট?
যত ভালোভাবে আপনি আপনার কাজের প্রায়োরিটি নির্ধারণ করতে পারবেন, ততই দেখবেন প্রচুর কাজ করা সত্ত্বেও হাতে থাকছে অবসর!

প্রথম প্রকাশ- এগিয়ে চলো ডট কম
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬
৫২টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×